গুপী বাঘা ফিরে এলোর মতই জটাশঙ্কর ফিরে এলো বহুদিন পরে। হারিয়ে যাওয়া, উধাও হয়ে যাওয়া, উবে যাওয়া, সেই বিখ্যাত সাংবাদিক জটাশঙ্কর লাহিড়ী আমার জীবনের এবড়ো খেবড়ো রাস্তায় হঠাৎ করেই ফিরে এলেন আবার। কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই চমকিত হয়েই ফিরে পেলাম তাঁকে। আসলে হারিয়ে যাওয়া মানুষেরা সাধারণত তাদের আর মনে পড়ে না আমার কিছুতেই। যে হারিয়ে যায় সেতো হারিয়েই যায়। কদিন ধরেই সেই হারিয়ে যাওয়া নাম। হারিয়ে যাওয়া অতীত আবার ফিরে এলো আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের সাদা কালো অক্ষরে। যে সাদা কালো অক্ষরের নানা কথা, নানা ফেলে আসা দিনের স্মৃতি ঝলমল করে ওঠে এই রাতের বেলায়। আর তাই বোধহয় আজ সেই এক সময়ের ইটিভির সহকর্মী সেই জটাশঙ্করের কথা আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায়।
সেই কালান্তর পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিক জীবনের শুরু খুব সম্ভবত ওর। আর সেই ইটিভি বাংলা চ্যানেলে কলকাতার কর্পোরেশন বিটের একনম্বর রিপোর্টার সে সেই আমলে। কারণ সুব্রত মুখোপাধ্যায় এর খুব ঘনিষ্ট সে বরাবর। পরে হায়দরাবাদ এর ডেস্ক এর একজন স্তম্ভ হয়ে যায় ধীরে ধীরে আর নানা জনের নানা সমস্যার সমাধান করা একজন মানুষ বিশেষ করে কলকাতা থেকে কেউ বদলি হয়ে সেই হায়দ্রাবাদে কেউ গেলেই আশ্রয়দাতা হলেন আমাদের সবার জটাদা। অফিস এর কর্মরত সাংবাদিকদের থেকে তাদের ঘরের পর্দানশীন গৃহিণীদের কাছে তিনি বেশ জনপ্রিয় খুব শুধু তাঁর মিষ্টি মধুর মোলায়েম ব্যবহার আর সুন্দর হাত চেটে খাওয়া রান্নার জন্যই।
সেই সকাল সাতটার মর্নিং খবরে আমার শ্বশুড়ের পড়ে থাকা একটা টাইট ফিটিং পুরোনো কোর্ট পড়ে নির্বাচনের সময় শ্রীরামপুরে ভিস্যাট সেন্টার থেকে আমার লাইভ নেওয়া আর আমায় সুযোগ করে দেওয়া হঠাৎ করেই একদিন। সেই ডিসেম্বর মাসের ছুটিতে গোপালপুর বেড়াতে গিয়ে টিকিট না পেলেও কোন রকমে ওর কথায় হায়দরাবাদ পৌঁছে যাওয়া তিন জনের পরিবার নিয়ে ওর বাড়িতে গিয়ে উঠে পড়া। সেই ওর বিখ্যাত হাতের নানা পদের মনোমুগ্ধকর রান্না আর আতিথেয়তা গ্রহণ করে হায়দরাবাদ ঘোরা, রামোজি ফিল্ম সিটিতে ভ্রমণ করা, ইটিভির অফিসে চাকরি করা নানাজনের সাথে আমার পরিবারের আলাপ হওয়া, সিদ্ধার্থ সরকারের কাছে যাওয়া তাঁর বাড়িতে দেখা করতে যাওয়া, এইসব ভোলা যাবে না কোনও ভাবেই কিছুতেই আজও।
সেই বর্ধমানের সোমনাথ কি ওর নাম আমার মেয়েকে নিয়ে ওর ছবি তোলা হাসিমুখে কতদিন পর ওর নামটাই মনে পড়ছে না আর আমার। সেই ইটিভির স্টুডিওতে আত্রেয়ী, জয়িতা, আর রেডিওর শাশ্বতীদির সাথে দেখা হওয়া। শুধু এই গোলকুন্ডা ফোর্টের একটা ছবি খুঁজে পেয়ে কত কিছুই না মনে পড়ে গেলো আমার আজ এই গভীর রাতে। সেই জটা, বুটা আর সোমা বসে আছে সেই ছবিতে। সেই কলকাতা পার্ক স্ট্রীট এর অফিস থেকে হায়দরাবাদ বদলি হয়ে আমার চলে যাওয়া একবুক যন্ত্রণা নিয়ে আমার সাংবাদিক জীবনের ইতি হয়ে যাওয়া, সেই নব মহাকরণে প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় এর ঘরে সন্ধ্যায় আড্ডা দেওয়া আমরা দুজন মিলে আর সুব্রত দার সেই মজার গল্প করা।
সেই বিকেল হলেই ৫৫ বি মির্জা গালিব স্ট্রীট এর অফিস থেকে বেরিয়ে দুজন মিলে ট্রাম লাইনের ধার ধরে হেঁটে চ্যানেল টেন এর অফিস এর কাছে মিষ্টির দোকানে পেট পুরে মিষ্টি খেতে যাওয়া, সেই কলকাতা অফিস এ আমাদের সবার নিউজ কো অর্ডিনেটর সিদ্ধার্থ সরকারের আসা আর আমরা তিনজন মিলে কফি খেতে যাওয়া সিদ্ধার্থদা কে নিয়ে। পকেট হাতড়ে দুজন মিলে তিনশো কত টাকা বিল মিটিয়ে শূন্য পকেটে ঘরে ফেরা, সেই হায়দ্রাবাদ এর ঘুরতে যাওয়ার সময় সোমাকে নজর লেগে যাবে বলে ওর নখ কেটে দেওয়া।
সেই শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় এর সাথে ওর বউ আর পরিবার নিয়ে একসাথে থাকা, সেই পূজোর সময় ওর খড়দার বাড়ী যাওয়া, ওর দিদির হাতে পেটপুরে লুচি আলুর দম খেয়ে বাড়ী ফেরা, সেই রিক্সা থেকে ছিটকে পড়ে যাওয়া সব মনে পরে যায় আজ। সেই ইটিভির কলকাতার অফিস থেকে হিন্দুস্থান টাইমস এর অফিসে রেসিডেন্ট এডিটর অনির্বান চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়া, সেই ধ্রুব ইটিভির দায়িত্ব নিয়ে অফিসে প্রবেশ করতেই ওকে হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানিয়ে এসো এসো বলা আর ধ্রুবর উত্তর দেওয়া আর ধরে ঠুকঠুক করে খেললে হবে না দাদা উইকেট আঁকড়ে পড়ে থাকলে হবে না এইবার চার আর ছয় মারতে হবে না হলে আউট হয়ে মাঠের বাইরে চলে যেতে হবে কিন্তু। সেই জটাই ফিরে এলো হঠাৎ করেই আমার কাছে এই রাত দুপুরে ঠিক গুপী বাঘার মতই।
সত্যিই তো যাঁকে ভুলতে চেয়েও পারলাম না কিছুতেই এতোদিন পরেও আমি। হঠাৎ করেই এক সন্ধ্যায় কলকাতায় তাঁর সামনে নয় দুর থেকেই শুনলাম আমি তাঁর নাম। কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই চমকিত হলাম আমি। হারিয়ে যাওয়া অতীত, হারিয়ে যাওয়া অতীতের নানা রকম উল্লেখযোগ্য ঘটনা মনে পড়ে গেলো আমার এতদিন পরেও। সেই সমীর এর মুখে ওর কথা শুনলাম আমি। সেই দূরদর্শনের জ্যোতির্ময় দত্তর কাছে ওর কথা শুনলাম আমি। আর তাই লিখে ফেললাম কিছু কথা। আর কিছু কথা অকথিত আর অলিখিত থেকে গেলো।
শুধু এটাই একমাত্র জানা গেলো যে হারিয়ে যাওয়া জটাশঙ্কর লাহিড়ী আবার ফিরে এলো আমার এই টোটো চালকের জীবনে। খারাপ কি নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া, হারিয়ে যাওয়া মানুষকে খুঁজে পেলে কার না ভালো লাগে বলুন তো। ভালো থেকো তুমি জটাদা। হারিয়ে যাওয়া অতীত। হারিয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজ এর সেই বিখ্যাত ফেলে আসা দিনের স্মৃতি, সেই হায়দরাবাদ এর জীবনের নানা মজার কাহিনী, সেই ফিল্ম সিটির লাল বাসে করে ঘোরা, সেই রাতে তোমার ঘরে আড্ডা দেওয়া, সেই সবাই মিলে হৈ হুল্লোড় করে দিন কাটানো, বছর শেষে ছুটির দিনে মজা করে তোমার বাড়িতে উপভোগ করা, সেই পিয়ালী, মৌসুমী, দীপালি আর শাবানার সুখের সংসার।
সেই হাসিমুখের ম্যানেজার সুদীপ্ত রায়চৌধুরী, সেই ক্যামেরার দেবাশীষ মৈত্র তাঁর বিভাগ নিয়ে সব সময় ব্যস্ত সেই ফান্টা, মানস , রাও আর দীলিপদা তো নেই।সেই ভি স্যাট এর অমিতাভ সেনগুপ্তের হাশিখুশির সংসার। জীবনটা বেশ মন্দ ছিলো না কি বলো জটাদা। আজ সাদা জীবনের কালো কথায় লিখতে বসে এমন নানা কথাই মনে পড়ে যায় আমার। সব শেষে আবার বলি ভালো থেকো তুমি।
হারিয়ে যাওয়া জটাদা - অভিজিৎ বসু।
নয় ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্যে নিজের সংগ্রহ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন