কিছু কিছু মানুষের এই ছবি দেখে কিছু না লিখে আর থাকা যায়না কিছুতেই। সেই কাকদ্বীপ থেকে যাত্রা শুরু বেঙ্গালুরুর পথে। বাবার দৌড়ে যাওয়া নতুন চাকরি পাওয়া সেই ছোট্টো ছেলের কাছে। তার আগে কত উত্তেজনা, কত প্ল্যান করা, কত কথা বলা ছেলের কাছে যাওয়া হবে বলে একে ওকে, ঘরে বাইরে হাসিমুখে। এক বুক টাটকা বাতাস নিয়ে দৌড়ে চলে যাওয়া ছেলের কাছে। সেই কত ছোটো থেকে মা হারা ছেলেকে বুকে পিঠে কোলে করে মানুষ করা। সেই ছোটো ছেলের ঘর বাড়ী ছেড়ে, ঠাকুমাকে ছেড়ে, বাবাকে ছেড়ে, সবাইকে ছেড়ে নতুন কাজের জগতে ডুবে যাওয়া।
মাত্র তিন রাত দু দিন এর এই অভিজ্ঞতা এই কটি দিন এর এই একসাথে থাকার পর আবার ফের ছেলেকে ছেড়ে ঘরে ফিরে আসা। বাবা আর ছেলের এই সুন্দর অমলিন জুটি দেখে মনটা কেমন যেনো খারাপ হয়ে গেলো আমার। সেই একসাথে বেঁধে থাকার দিন আমাদের শেষ। সেই একসাথে জুড়ে থাকার দিন শেষ। সেই কোল ঘেঁষে বাবা ছেলের সাইকেল চালিয়ে নদীর ধারে ঘুরে বেড়ানোর দিন কবেই শেষ হয়েছে। এখন শুধুই অপেক্ষা আর অপেক্ষার পালা শুধুই প্রহর গোনা। সত্যিই ছেলে মেয়েরা বড়ো হলে বোধহয় এমনই হয়।
আজ উৎপলদা ছেলেকে ছেড়ে চলে এলো দেখে মনে হলো কিছু লিখি আমি। সত্যিই তো আবার ফিরে আসা দূরে অনেক দূরে নিজের ঘরে। সেই একসাথে কদিন বাবা ছেলের ঘুরে বেড়িয়ে হেসে সময় কেটে গেলো কোথা থেকে বোঝাই গেল না। আর দেখতে দেখতে বিদায় জানানোর পালা চলে এলো। স্টেশনে বাবাকে পৌঁছে দিয়ে অপেক্ষা করা ছেলের। একে অপরকে আঁকড়ে ধরে অপেক্ষার প্রহর গোনা। তবু বেশ এই ছবিটা দেখে আমার বড্ড ভালো লাগলো বেশ। আরও কদিন থেকে যেতে পারতো উৎপলদা। ভালই হতো তাহলে বোধহয়।
সেই যাবার আগে আমার সাথে কত গল্প করা ছেলের কাছে যাবে বলে। সেই ট্রেন ধরে দীর্ঘ জার্নি করে পৌঁছে যাওয়া। তারপর দিন শেষ হয়ে যাওয়া ফিরে আসা। আমার এই ছবিটা দেখে মনে পড়ে গেলো বাবার পানিশমেন্ট ট্রান্সফার এর সময় বুটা আমায় দেখতে গেছিলো হায়দরাবাদে। সেই কতদিন পর ওদের দেখলাম। সাত দিন কোথা থেকে যে কেটে গেলো কে জানে আমাদের। সেই হায়দরাবাদ স্টেশনে দুজন দুজনকে জড়িয়ে আঁকড়ে ধরে দাঁড়িয়ে থাকা। ট্রেন আসার অপেক্ষায়। ট্রেন এলো ওরা চলে গেলো আমায় ছেড়ে। বুটার কান্না আর আমার কান্না মিলে মিশে একাকার হয়ে গেলো আমাদের দুজনের যাত্রাপথে।
আজ উৎপলদা আর ছেলের এই ছবি দেখে আমার মনে পড়ে গেলো এই পুরোনো দিনের কথা। ভালো থেকো তুমি উৎপলদা। সেই ছোটো ছেলে আজ চাকরি করছে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছে এটাই অনেক গর্বের। তোমার এই লড়াইকে কুর্ণিশ জানাই আমি। ভালো থেকো তুমি মন খারাপ করোনা একদম। আর পারলে এরপর চলে এসো বোলপুরে ঘুরে বেড়াই তুমি আর আমি।
অপেক্ষার প্রহর গোনা - অভিজিৎ বসু।
তেইশ ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন