সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আমাদের মধু দা

দু হাজার চব্বিশ সাল এর মে মাস থেকে আমাদের দুজনের কথা হচ্ছে মোবাইলের মাধ্যমে। একদিন দেখা হবে সাইকেল করে ঘুরতে ঘুরতে বোলপুরের যে কোনোও জায়গায় বা শান্তিনিকেতনের যে কোনোও জায়গায় বা পূর্বপল্লীর সেই মেলা মাঠে কোনও এক সন্ধ্যায় হাঁটতে হাঁটতে। কিন্তু দেখা হয়নি আমাদের দুজনের বহুদিন। কত পরিকল্পনা করেও ভেস্তে গেছে সেই দেখা হওয়া। 


মোবাইলে মেসেজ করে একদিন আমায় পশ্চিম মেদিনীপুরের সাংবাদিক সুপ্রিয় মাইতি জানায় তিনি অসুস্থ একটু যদি খবর নেওয়া যায় অভিজিৎ দেখবে তুমি। এই খবর পেয়ে আমি খবর নিয়েছি কিন্তু সামনে যাওয়া হয়নি তাঁর কাছে আর। তারপর কলকাতার অনেকের মুখেই শুনেছি সেই বিখ্যাত সাংবাদিক মধুদার কথা। সেই একসময়ের শিরদাঁড়া সোজা রেখে মন্ত্রীদের সাথে কথা বলা ইংরাজি কাগজের সাংবাদিক বিশ্বজিৎ রায় ওরফে মধুদা। সেই পরিবর্তন, যুগান্তর আরও নানা বাংলা কাগজে, ম্যাগাজিনে কাজ করে তাঁর কথায় সেই পেটের দায়ে ইংরাজি কাগজে কাজ করা তাঁর একসময়। সেই টেলিগ্রাফ, টাইমস অফ ইন্ডিয়া সহ নানা কাগজে। সেই ভরা বাম আমলে কেমন যেনো একটু অন্য ভাবে নিজের কাজের প্রয়োজনে ছাড়া কোনো লাল পার্টির কোনও নেতা বা মন্ত্রীর অনুগ্রহ না নিয়ে একটা নির্মোহ ভাবে জীবনকে কাটিয়ে দেওয়া তাঁর চুপচাপ করেই কাউকে জানান না দিয়েই। নিজের রাজনৈতিক আদর্শকে আঁকড়ে ধরে সেটাকে কারুর কাছেই বিকিয়ে না দিয়ে। 

সেই কেমন যেন একটা আলগোছে জীবনকে বুড়ি ছুঁয়ে থাকা তাঁর। সেই একবছর হলো সহধর্মীনিকে সদ্য হারিয়েছেন তিনি। দুই ছেলে কর্মসূত্রে দুরে থাকেন তাঁর। ছেলেরা বারবার বললেও কেমন যেনো তাঁদের কাছে যেতে মন চায়না তাঁর। সেই ঘেরাটোপে বন্দী জীবন তাঁর পছন্দ নয় একদম। কলকাতার কোলাহল আর ভীড় একদম ভালো লাগে না তাঁর। ভালো লাগেনা চেন্নাই আর ব্যাঙ্গালোর এর পরিবেশও। আর তাই বার বার ছুটে আসা এই শান্তির শহরে কবির প্রাণের শহরে শান্তিনিকেতনে। ভেবেছিলেন দুজন মিলে একসাথে কাটাবেন এই অবসর জীবন তাঁদের। না সেটা আর হয়ে ওঠেনি তাঁর। কেমন যেন একা একাই কাটিয়ে দেওয়া তাঁর এই নিস্তরঙ্গ দৌড়হীন জীবন।

 যে জীবনে তাঁর একসময় নাম ছিল, যশ ছিল, প্রভাব আর প্রতিপত্তি সেটাও ছিল কিছুটা। সেই নেতা, মন্ত্রী আর পুলিশ ,মুখ্যমন্ত্রী সবার সামনে কাগজ কলম নিয়ে দাঁড়াবার সুযোগ ছিল তাঁর। কত কিছুই যে ছিল সেই সময়। যদিও আজ আর এসব নিয়ে তাঁর কোনোও আফশোষ নেই, ভাবনা নেই, হা হুতাশ নেই, দুঃখ, যন্ত্রণা নেই। সত্যিই ভাবলেও বেশ ভালো লাগে আমার এমন একটি জীবন হয় তাহলে এই পৃথিবীতে। এমন সব থেকেও কিছুকে গ্রহণ না করা একটা একা একা বেঁচে থাকার জীবন। যে জীবনকে আঁকড়ে ধরতে আমরা বড়ো ভয় করি সবাই। সেই জীবনকেই কেমন করে যেন বুকে সাহস করে জড়িয়ে বেঁচে আছেন মধুদা তিনি হাসিমুখেই। 

 আর আজ শুধুই সব কিছু ছেড়ে একা একা দৌড়হীন নিস্তরঙ্গ একটা নিটোল জীবন। যে জীবনে শুধুই রবীন্দ্রনাথ আর তাঁর আদর্শকে অনুভব করা গভীর গোপন ভাবে। যে অনুভূতি কম বয়সে সেটা তাঁর আগে হয়নি। একা বসন্তের মৃদু বাতাসে পূর্বপল্লীর রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মনে হয় সত্যিই তো বাণিজ্যিক এই কবির স্থান যে দ্রুত গতিতে বদলে গেছে। যে বদল তিনি নিজে করতে পারেনি নিজের জীবনে। যে বদল তিনি নিজে হতে পারেন নি। আর তাই বোধহয় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই সেন্ট্রাল লাইব্রেরীতে বসে তাঁর পড়াশোনা করা। কবির সেই নানা অজানা জীবনের নানা কাহিনীকে লিখে রাখা। সেই কাজ তিনি করে চলেছেন একা একাই নিশ্চুপ নীরব হয়ে কাউকে কিছু না বলে।

 সেই মধুদার কথা আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায়। অনস্বীকার্য যে মধুদার কথা কলকাতা থেকে বলেছেন অনেকেই সেই রতন দা, সেই তারা নিউজ এর সমীর যাঁর সঙ্গে মধুদার স্ত্রী দেবযানী রায় কাজ করতেন একসময়। সেই ইটিভির জয়ন্ত চৌধুরী, সেই রূপম দা, সেই অংশু দা। সেই অনিন্দিতা হায়দরাবাদ এর। সেই স্টেটসম্যান এর তরুণ দা। আরও কতজন যে বলেছেন আমায় মধুদার সাথে দেখা করতে। আজ সেই দীর্ঘ একবছর পর তাঁর সাথে দেখা হলো আমার লিপিকা প্রেক্ষাগৃহে এক অনুষ্ঠানে। সেই পূর্বপল্লীর ছেলেদের হোস্টেল এর মধুদার ক্যান্টিনের সামনে। সেই দুজন মিলে হাঁটতে হাঁটতে চা খেতে গেলাম ভীড় উপচে পড়া রাস্তা ধরে সেই এস বি আই মোড়ের কাছে চায়ের দোকানে। যা একদম পছন্দের জায়গা নয় তাঁর। 

মধুদার মতই দেবযানী রায়ও সাংবাদিক হিসেবে ছিলেন অতি কাজের মানুষ। অল ইন্ডিয়া রেডিও, জিটিভি, তারা নিউজ, সিটিভিএন ইত্যাদি জায়গায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন।অগ্রজ, অনুজ এবং সমসাময়িক সহকর্মীদের প্রচুর ভালোবাসা পেয়েছেন।তাঁর হঠাৎ মৃত্যু মেনে নিতে পারেন নি অনেকেই।মৃত্যুর পর কলকাতা প্রেস ক্লাবে তার স্মরণ সভা, ক্লাবের বাৎসরিক স্মরনিকাতে তার সম্পর্কে লেখায় ফিরে ফিরে এসেছে সে সব কথা। 


 
আমি বসে বসে শুনলাম নানা কথা। সেই যে রাজনীতির মাঠে ঘুরে বেড়াতেন সেই ভাঙাচোরা এবড়ো খেবড়ো মাঠে ঘুরে বেড়াতে আর ভালো লাগে না তাঁর। সেই তাঁর প্রতিবাদের চেনা ছাতা এ পি ডি আর এর একদিন ভাগ হয়ে যাওয়া। সেদিন বেশ যন্ত্রণা পেয়েছিলেন তিনি কেন জানিনা নিজে নিজেই।আর তাই এই বয়সে আর ফরমায়েশি লেখা, ফরমায়েশি রাজনীতি করতে ভালো লাগে না তাঁর আর। শুধু কবির কথা স্মরণ করে মনে মনে বলেন তিনি এই জীবন যেনো কাটিয়ে দিতে পারেন তিনি এই ভাবেই। আর তিনি একা সাইকেল চালিয়ে প্রাণের পরশ পেতে মধু দা এগিয়ে চলেছেন মেলা মাঠ এর পাশ দিয়ে পূর্বপল্লীর ছায়া ঘেরা রাস্তায় একা একা। মনে মনে মধুদা গুণ গুণ করে গান গাইছেন ছায়াঘেরা পথ ধরে একা একাই হেঁটে চলে যাচ্ছেন তিনি আর বলছেন,

শুধু তোমার বাণী নয় গো, হে বন্ধু, হে প্রিয়,

মাঝে মাঝে প্রাণে তোমার পরশখানি দিয়ো ॥

যে পরশ এর সন্ধান পেলে আর কিছুই যে ভালো লাগে না এই জীবনে। ভালো থাকবেন আপনি দাদা। এমন এলেবেলে, এলোমেলো, বিন্দাস জীবন কাটিয়ে আপনি ভালো থাকবেন দাদা। একজন চেনা মানুষ কেমন দিব্যি সবার অন্তরালে সংগোপনে বেঁচে আছেন। 

আমাদের মধু দা - অভিজিৎ বসু।
ছাব্বিশ মার্চ দু হাজার পঁচিশ।
ছবি নিজের মোবাইল ক্যামেরায় তোলা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অ্যাঙ্কর মিমির কথা

'আমরা যদি এই আকালেও স্বপ্ন দেখি কার তাতে কী?' বাহ দারুন সুন্দর এই কথা। স্বপ্ন দেখার কি কোনো সময় হয় নাকি। পঞ্জিকার পাতা উল্টে তিথি নক্ষত্র দেখে কি স্বপ্ন দেখা যায়। যে স্বপ্ন বাঁচার খোরাক জোগায়। যা দেখে এই দৌড় ঝাঁপ করা জীবনে কেমন একটা স্বস্তি মেলে সেই স্বপ্ন সফল হোক বা না হোক। যে কোনোও বয়সে এই স্বপ্ন দেখা যায়। ফেসবুকের পাতায় সেই কথা লেখা দেখে মনে মনে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করেই এই রাত দুপুরে ভয়ে কম্পমান হয়েই ওকে নিয়ে লেখার চেষ্টা করা। সেই পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই দুর থেকেই অচেনা জগতের সেই খবরের বিখ্যাত সব নানা ধরনের খবর পাঠিকাদের ভীড়ে তাঁকে দুর থেকে দেখা। একদম অন্য এক গ্রহের বাসিন্দা যেনো। সেই কালামের দোকানে হয়তো কোনোও সময় চা খেতে গিয়ে দেখতে পাওয়া। সেই লিফটের কুঠুরিতে একসাথে ওঠা বা নামা কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেই। কিন্তু সেই অন্য খবর পড়া অ্যাঙ্কর দের সাথে সহজ সরল ভাবে মিশে যাওয়ার সাহস হয়নি আমার কোনোও দিন তাঁর সাথে। আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই ২৪ ঘণ্টার পোদ্দার কোর্টের অফিসের বিখ্যাত অ্যাঙ্কর মিমির কথা। ...

টোটো চালক ও দালাল

আজ আপনাদের এক দালাল আর টোটো চালকের গল্প বলি। যে দালাল টাকা নিয়ে বাংলাদেশের বর্ডার পার করে দেওয়া দালাল নয়। এই দালাল একটু অন্য ধরনের দালাল। আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় যে এলোমেলো এলেবেলে আর বিন্দাস জীবন কাটানো এক টোটো চালকের আজ এই হঠাৎ করেই দালাল হয়ে ওঠার গল্প। যে গল্পের পরতে পরতে রহস্য আবিষ্কার করছি আমি। জীবনের এই মেঠো পথের বাঁকে বাঁকে কত যে নতুন নতুন সব কিছু আবিষ্কার করছি আমি সত্যিই অবাক পৃথিবী অবাক করলে আরও বলতে ইচ্ছা হয় আমার এই রাত দুপুরে।  জীবনের এই শেষ বেলায় এসে এলোমেলো জীবনে যেনো ঝড় উঠেছে হঠাৎ করেই আমার। যে জীবন একদিন স্থবির জীবন ছিল আমার। যে জীবন বধির ছিল। যে জীবন শুধুই নিজের মৃত্যুর কাছাকাছি এসে অপেক্ষার প্রহর গুনছিল আর রাতের অন্ধকারে নিশাচর পেঁচার ডাক শুনত। যে জীবন শুধুই অপমান, অবহেলা সহ্য করেই বেঁচে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গেছিল একসময়। সেই জীবন কেমন স্থবিরতা কাটিয়ে আড়মোড়া ভেঙে জীবনের মেঠো রাস্তায় হাঁটছে টলমল পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে। সেই জীবনে এখন শুধুই ব্যস্ততা আর ব্যস্ততা আর ব্যস্ততা। যে অন্ধকার ঘরে আলো জ্বলতে দেখা ...

এলোমেলো , এলেবেলে বিন্দাস জীবন ও জন্মদিন

দেখতে দেখতে বছরের পর বছর গড়িয়ে যায়। আসলে এই অচলাবস্থা আর অকর্মণ্য দিনযাপনের একটা জীবন কাটিয়ে দিতে দিতে বেশ আমি কেমন যেন এডজাস্ট করে নিয়েছি নিজের সাথে নিজেরই এক অদ্ভুত সহাবস্থান। আমার জীবনের সাথে ক্রমেই দ্রুত কমতে থাকে যেনো মৃত্যুর দূরত্ব। দীর্ঘ দিনের জীবনের ঘন্টা ধ্বনিতে কেমন অচেনা সুরের সুর মূর্ছনা বেজে ওঠে ঠিক যেনো ওই গির্জার ঘরে জিঙ্গেল বেল, জিঙ্গেল বেল এর সুরের মতই আচমকা রাত বারোটা বাজলেই এই একত্রিশ মে।  যার তাল, লয় আর ছন্দে আন্দোলিত হয় এই জীবন আর জীবনের নানা জলছবি। যে ছবির কোলাজে ধরা পড়ে হাসি কান্না, সুখ আর দুঃখের নানা অনুভব। যে অনুভূতির জারক রসে আমি জারিত হই প্রতি মুহূর্তে। আর তাই তো বোধহয় সেই ছোটবেলার দিন এর কথা মনে পড়ে গেলেই সেই ঝাপসা হয়ে যাওয়া ধূসর হয়ে যাওয়া সেই ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা হয় আমার বড়ো এই আজকের দিনে।  সেই পুরোনো দিনের ভালোবাসার স্পর্শ আর স্মৃতি রোমন্থন করা একটি ছবি। মায়ের নিরাপদ কোলে ঠিক নয় চুপটি করে পাশে বসে আছি আমি একদম ফিট ফাট হয়ে আপন মনে ভদ্র শান্ত ছেলের মতোই যা আমি মোটেও নয়। আজকের সেই এ...

যা দেখি…প্রতিদিন মনে পড়ে কত… স্মৃতির পথ ধরে হাঁটি… লিখি…