সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় আজ সেই এক সময়ের বিখ্যাত সাংবাদিক পুলকেশ ঘোষদার কথা। সেই আমাদের সবার পুলকেশ দা। আজও যিনি কেমন হাসি মুখে ঠিক কঠিন পিচে ব্যাট করছেন সেই অংশুমান গায়কোয়াড় এর মতো এক স্টাইলে ধরে ধরে। সেই কবে এক সন্ধ্যায় হুগলীর শ্রীরামপুরে পল্লীডাক পত্রিকার অফিসে দেখা হলো ওনার সাথে আমার। চোখে চশমা পড়া, লম্বা বেশ, মুখে মিষ্টি হাসিটা লেগে আছে। প্রবীরদা আমায় ডেকে বললেন এই শোন পুলকেশ রিষড়াতে যাবে। তোদের ওদিকে ও থাকবে। ওর ফ্ল্যাট আছে। যাবার সময় খেয়ে বাড়ী যাবে। তুই ওকে একটু দেখিয়ে দিস বাড়ী যাওয়ার পথে কোথায় দোকান আছে।
আর সেটা শুনে আমার তখন হাতে চাঁদ পাওয়ার অবস্থা। বর্তমান কাগজ, সেই ভগবানকে ছাড়া আর কাউকে ভয় না পাওয়া কাগজ সেই কাগজে যাঁর লেখা পড়ি আমি তাকে নিয়ে যেতে হবে, দেখাতে হবে খাবার এর জায়গা। এর থেকে কোনোও বড়ো কাজ হতে পারে নাকি জীবনে। তারপর তিনি সেই চার নম্বর গেটের কাছে চলে যাবেন নিজের আবাসনের ফ্ল্যাটে। সেই রিষড়া হাউজিং বলে যার নাম সেই জায়গায়। এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে আমি খালি ভাবছি কখন যাবো আমরা ট্রেন ধরে নিজের এলাকায়। একটু তো কথা বলা হবে আলাদা করে। সেই সাংবাদিক এর সাথে কথা বলা। সেই যাঁর লেখা কাগজের পাতায় দেখি ছাপা হয় তাঁর সাথে একসাথে বাড়ী ফেরা। কিছুক্ষণ এর জন্যে হলেও তাঁর সান্নিধ্য পাওয়া। কম সৌভাগ্যের ব্যাপার নয়।
সালটি আজ আর মনে নেই আমার দু হাজার সালের আগে হবে হয়তো। আর ১৯৯৫ এর পরে হবে সেটা খুব সম্ভবত সেই সময় এর ঘটনা। হুগলীর শ্রীরামপুর এর সেই পল্লীডাক এর প্রেস। সেই চার পাতার ছোটো কাগজ। প্রয়াত সাংবাদিক ইন্দুভুষণ মুখোপাধ্যায় এর হাতে তৈরি এই কাগজ। যে কাগজের দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁর ছেলে প্রবীর মুখার্জী। সেই কাগজের হাতে ছাপা অফিস। খট খট আওয়াজ। সেই দুলাল দা আর বিজলী দিদির সুখের সংসার। আর সেই ছাপাখানার চার পাতার কাগজ ঘিরে নানা ধরনের মানুষের আনাগোনা সেই প্রেসে। জেলায় জেলায় তখন বর্তমানের রমরমা বাণিজ্য চলছে। জেলায় তখন দিকপাল সব সাংবাদিকদের আনাগোনা। সেই সময় পুলকেশ ঘোষ এর আগমন হলো এই হুগলী জেলায়।
আমার আজও মনে আছে সেই সাড়ে আটটার সময় ট্রেন ধরে রিষড়ার স্টেশনে নামা। একটু কম কথা বলা পুলকেশদাকে সেই সব থেকে খারাপ ভাতের হোটেল সেই আমলে ওটাই একমাত্র খাওয়ার জায়গা ছিল। সেই জলের মতো ভাতের ফ্যান মেশানো ডাল আর সেই লাল টুকটুকে ডিমের ঝোল। সেটা দেখিয়ে দিয়ে আমার চলে যাওয়া। উনি সেখানে ডিনার সেরে ওনার সেই চার নম্বর গেটের কাছে রিষড়ার হাউজিং এ চলে গেলেন। সেই শুরু ওনার এই হুগলী জেলায় কাজ করা। এরপর মাঝে মাঝেই দেখা হয়েছে কিন্তু সেই খাবার কেমন ছিল সাহস করে আমার আর জিজ্ঞাসা করা হয়নি তাঁকে। সেই ওনার মেয়ে আজ অনেক বড়ো হয়ে গেছে আজ। বৌদি কেমন আছেন জানিনা আমি।
হুগলী থেকে পুলকেশ দা বদলি হয়ে চলে যাওয়ার পর সেই সমৃদ্ধ দত্ত, দেবদাস অধিকারী দা, দেবাঞ্জন দাস দা, আরও কতজন যে এসেছে এই জেলায় কাজ করতে। পরে সেই চুঁচুড়া সদর শহরে স্টেশন এর কাছে বিবি বীথি ছিল বর্তমানের রিপোর্টারদের থাকার ঠিকানা। আর সিপিএমের আমলে তখন বর্তমানের রিপোর্টারদের রমরমা অবস্থা। সেই আকবর আলী খোন্দকার তখন সদ্য জেলা জুড়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন একা একাই। আর তপন দাশগুপ্ত আর আকবরদার মিষ্টি মধুর লড়াই। কে ঘোড়াতে চেপে ঘুরবে আর কে পারবে না সেই নিয়ে দুজনের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা যাকে কাজে লাগিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের দলের সংগঠনকে মজবুত করেছেন। কিন্তু সেই লড়াই দলের স্বার্থে। মমতার নির্দেশ মাথায় নিয়ে। আজ যদিও সেই বরুণ সেনগুপ্তর হাতে তৈরী বর্তমান পত্রিকা অনেকতাই বদলে গেছে এই মা মাটির আমলে।
সেই পুলকেশদা কে পেলাম উড়িষ্যার গোপালপুর গেছেন কোনো কাজে বেশ কয়েক বছর আগে। দেখলাম ট্রেনের মধ্য থেকে আপডেট দিলেন কলকাতা ফিরছেন তিনি। আমিও সেই ট্রেনে ছিলাম দাদা কি খবর বলে কথা হলো। মনে নেই আমার হাওড়া স্টেশনে নেমে দেখা হয়েছিল কি না। সেই প্রেস ক্লাবে মাঝে মাঝে দেখা হয়ে যাওয়া তাঁর সাথে। সেই উত্তরবঙ্গ সংবাদে কোলকাতায় কাজ করা। সেই তাঁর মেদিনীপুরের অভিজ্ঞতা শেয়ার করা। তাঁর দাদার কথা বলা। আর নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে সাংবাদিকতা বিষয় নিয়ে শিক্ষা দান করা। বেশ ভালই লাগে আমার।
বর্তমানের সেই সময়ে এক সময়ের দাপুটে সাংবাদিক পুলকেশ দা আজও এই মিডিয়ায় কাজ করে যাচ্ছেন হাসি মুখে। সত্যিই অসাধারণ কিন্তু এই টিকে থাকা। এই ঘুর্ণি পিচে ব্যাট করা খুব কঠিন। এই মা মাটি আর মানুষের সরকারে কাজ করা খুব কঠিন। মনে হয় সেই।লাল পার্টির আমলের থেকেও। সেই পুলকেশ দার তারকেশ্বর নিয়ে কপি লেখা নিয়ে হুলুস্থুল পড়ে যায় যে লেখা নিয়ে। আর তারকেশ্বর মন্দির এলাকার স্থানীয়। বাসিন্দা কাম এলাকার স্থানীয় সংবাদদাতা ফাল্গুনী দার একটু চাপে পড়ে যাওয়া। যা নিয়ে বেশ হাসি আর ঠাট্টা হতো সেই প্রেসে।
আজও আমার মনে পড়ে যায় সেই সব মিষ্টি মধুর দিনের কথা। সেই সিং দা, সেই দিলীপ যাদব, সেই সাধন সাঁতরা,সেই কেষ্ট মুখার্জী, স্বরাজ মুখোপাধ্যায় সেই কতজন যে ছিল সেই সময়ে তৃণমূলের সেই পুরোনো আমলের সব মানুষজন। আজ তাঁরা বেশিরভাগ মানুষ অনেকেই বেঁচে নেই। আর যাঁরা আছেন তাঁরা সব অনেক পিছনে চলে গেছেন এই জোড়া ফুলের দলে নতুনদের চাপে।
আজ সেই সব নানা কথা মনে পড়ে গেলো আমার পুলকেশদার কথা লিখতে বসে। সেই পুরোনো দিনের পল্লী ডাক প্রেস বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই। সেখানে এখন ঝাঁ চকচকে নতুন বহুতল আর মার্কেট কমপ্লেক্স হয়েছে। রাস্তায় ভীড়ে ঠাসা পথ। চারিদিকে জোড়া ফুলের মালা গলায় নেতাদের উজ্জ্বল উপস্থিতি। আর এইসবের মাঝেই পুরোনো দিনের স্মৃতিকে বুকে আগলে নিয়ে পুলকেশ দা, আমি, আরও বেশ কিছু জনের দাঁড়িয়ে থাকা। ভালো থাকবেন দাদা। কোলকাতা এলে দেখা হবে নিশ্চয়ই। আর বোলপুরে এলে দেখা হবে দুজনের। ভালো থাকবেন দাদা।
বর্তমানের পুলকেশদা ও পল্লীডাক প্রেস - অভিজিৎ বসু।
ত্রিশ মার্চ, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন