ভূতের ভবিষ্যৎ এর পর এখন ভোটের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় আছে শাসক দল তৃণমূল। যদিও এতে আমার মনে হয় ভূতেরাও বেশ বিরক্ত হয়ে পড়েছে একটু। বেশ সুখেই দিন কাটছিল তাঁদের হঠাৎ করেই কেনো যে এই ভূত ধরার অভিযান শুরু হলো রাজ্যে জুড়ে কে জানে। তবে না দিদির নির্দেশ বলে কথা। ভূত ধরতে তাই সকলের নেমে পড়া মাঠে ময়দানে। দলের ছোটো , বড়ো, মেজো, সেজো, এমনকি কোলের বাচ্চারও জরুরী ভিত্তিতে ভূত ধরার অভিযানে অংশ গ্রহণ করা।
জেলায় জেলায় এখন ভূত ধরার কাজ চলছে জোর কদমে। তবে শুধু ভূত ধরলেই হবে না কত ভূত ধরা হলো। কেমন ধরনের ভূত ধরা হলো তার হিসেব পেশ করতে হবে সপ্তাহে সপ্তাহে দলীয় কার্যালয়ে। মামদো না শাকচুন্নি তারা। শুধু হিসেব পেশ করলেই হবে না ভূত ধরার কাজে সত্যিই পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায়, জেলায় জেলায়, লোক রাস্তায় সব বাড়িতে বাড়িতে গেছে কি না তার ছবিও প্রকাশ করতে হবে। সেই ছবি আপলোড করে জানাতে হবে, হ্যাঁ ভূত ধরার অভিযানে তাঁরা সামিল হয়েছেন সত্যিই সত্যিই। কেউ ফাঁকি মারেনি একদম কাজে। কেউ কাজ না করে ঘরে বসে থাকলেই সে কিন্তু বাদ পড়ে যাবে। একদম কড়া নির্দেশ দলের নেত্রীর।
কিন্তু হঠাৎ করেই এই ভূত ধরতে নেমে পড়া কেনো। তাহলে কি সত্যিই ভূতেদের অত্যাচার বেড়েছে চারি দিকে রাজ্যে জুড়ে। রাজনীতির ময়দানে ভূতেদের উপদ্রব বেড়েছে একটু। আর যার কারণে চিন্তিত স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। রাত পোহালেই আর বছর ঘুরলেই যে বিধানসভার ভোট এর দামামা বেজে গেছে প্রায়। সেই বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে ভূত ধরার অভিযান চালিয়ে কিছুটা হলেও দলের কর্মীদের ওয়ার্ম আপ করাতে চাইছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস পর পর তিনবার জিতে যাওয়া একটা দল। যে ঘাস ফুলের ওপর জোড়া ফুলের মাথা দোলানো সেই ছোট্ট দল আজ আড়েবহরে বেশ ভালই বেড়ে উঠেছে ধীরে ধীরে।
সংসদে, বিধানসভায় অনেক লোক লস্কর নিয়ে ভরা সংসার এখন তৃণমূলের। যে সংসারে এখন আর দলের সেই পুরোনো আন্দোলন করা ডাকাবুকো কর্মীর থেকে সিনেমার নায়ক, নায়িকা, মাঠের খেলোয়াড়, গান আর কবিতা আর আবৃত্তি জগতের লোকদের বেশি সংখ্যাধিক্য। আর তাই দলের পুরোনো কর্মীদের চার্জড করতে ব্যস্ত রাখতে আর এলাকায় জনসংযোগ বাড়াতে এই নতুন ভূত ধরার অভিযান শুরু করা। যে অভিযানে সামিল হয়ে সাপও মরবে আবার লাঠিও ভাঙবে না। হয় ভূত ধরো নয় নিজের রাস্তা দেখো। দল এখন আর তৃণমূল স্তরের কর্মীদের জন্য নয় দল এখন অনেক ঊর্ধ্ব উচ্চস্তরের মানুষের জন্য। যাঁদের সাথে অন্ততঃ মাটির যোগ আর রাজনীতির যোগ খুব কম।
আর তাই এখন ভোটার তালিকায় ভোটের ভবিষ্যৎ! ‘ভূত’ তাড়াতে গোটা সংগঠনকে ময়দানে নামতে নির্দেশ মমতার।জেলায় জেলায় সাংগঠনিক ভাবে যে কাজ হচ্ছে, তিন দিন অন্তর তৃণমূল ভবনে তার রিপোর্ট পাঠাতে হবে জেলা সভাপতিদের। রাজ্য স্তরে একটি কমিটিও তৈরি করে দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। যা নিয়ে বেশ নড়াচড়া শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে। এলাকার গোষ্ঠী রাজনীতিতে জেরবার পাড়ার পল্টু আর বিল্টু দুজনেই ভূত ধরতে রাস্তায় নেমে পড়েছে জোরকদমে। কে সাংসদ এর লোক আর কে বিধায়ক এর লোক তাদের আর চিন্তায় ঘুম আসছে না কিছুতেই। যদি ভূত ধরার কাজে কেউ একটু পিছিয়ে যায় তাহলেই যে বিপদ। ভূত তার নিজের ঘাড় মটকে দেবে অলক্ষ্যে।
সত্যিই বেশ অসাধারন এই খুড়োর কল ভূত ধরতে হবে সবাইকে। ভোটার তালিকা যাচাইয়ের কাজ করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় ভোটার তালিকায় ‘ভূতুড়ে’ ভোটার ঢুকিয়ে দেওয়ার অভিযোগ কয়েক দিন আগেই করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলের সর্বস্তরের নেতাদের বৈঠকে সেই ‘ভূত’ তাড়ানোকেই এই মুহূর্তের ‘একমাত্র কাজ’ বলে উল্লেখ করেন দলের সর্বময় নেত্রী। সেই কাজ করতে গোটা সংগঠনকে ময়দানে নামার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি হুঁশিয়ারির সুরে এ-ও বলে দিলেন, যে জেলা সভাপতিরা ওই কাজে অনীহা দেখাবেন, তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হবে।
মমতার কথায় স্পষ্ট, ভোটার তালিকার উপরেই নির্ভর করছে ভোটের ভবিষ্যৎ। দলের ভবিষ্যৎ। আর যারা এই কাজ করছেন সেই সব কর্মীদের নিজের ভবিষ্যৎ। জয় মা মাটি মানুষের জয়। জয় ভূতেদের জয়। ভূত ধরবেন আর ছবি তুলবেন। আর সেই ছবি ফেসবুকের দেওয়ালে আপলোড করবেন। তাহলেই আপনি নিশ্চিত, আপনার রাজনৈতিক জীবন নিশ্চিত। ভূত ধরে আর দেওয়ালে ছবি সেঁটে দিন আর হাসি মুখে বেঁচে থাকুন আপনি। পলিটিক্স এর প্যাঁচ পয়জারের মাঝে একটু টিক্স করে অন্য ভাবে বেঁচে থাকা। সত্যিই বিচিত্র এই রাজনীতি। কাজ নয়, দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা নয়, বছর বছর রোদে জলে ভিজে পার্টি করা নয়। শুধু ভূত ধরার অভিযান করে ছবি তুলে নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে নিয়ে বেঁচে থাকা। চারিদিকে এখন ভূতেদের জয় জয়কার। আর মা মাটি মানুষের নেত্রীর জয় জয়কার।
ভূত ধরার অভিযান ও রাজনীতি - অভিজিৎ বসু।
ঊনত্রিশ মার্চ দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য গুগুল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন