ঈদের আকাশে শুধু এক ফালি চাঁদের অপেক্ষা।
তারপর কত শত মানুষের মুখের, মলিন হাসি মাখা উজ্জ্বল সব আনন্দের মুখ।
ঘরে ফেরার অপেক্ষায় প্রহর গোনা, সব মানুষ জন।
বাজিতপুর ঘাট থেকে স্টিমারের ভোঁ ভোঁ আওয়াজ।
স্টিমারের গায়ে জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ।
বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখা একরাশ চাপা, নিশুতি রাতের গভীর গোপন ভালোবাসা।
ঠিক যেনো জুঁই ফুলের সুবাস ছড়ায় গরম কালে, সেই ভালোবাসার ধাক্কা লাগে স্টিমারের গায়ে।
জলের ওপর ছড়িয়ে পড়া চাঁদের টুকরো টুকরো আলো গায়ে মেখে, দুলে ওঠে স্টিমার।
জুঁই এর গন্ধ মাখা আলোর টুকরো ভেসে যায় নদীর পাড় ধরে।
সব মিলিয়ে আজ যে আমাদের খুশীর ঈদ।
এই তো কিছু দিন আগেও এই ঈদের দিন শবনম এসেছিল।
যে সেমাই এর পায়েস নিয়ে হাজির হয়েছিল, সুজাতার মতই আমার টালির ঘরে।
যার চোখের পানিতে ভিজে গেছিলো, উঠোন, দাওয়া সব কিছুই।
কেমন যেনো সুখের পরশ পেয়ে খুশি হয়ে ছিলাম আমরা দুজনেই।
আজ আর চাঁদের টুকরো আলোয়, চক চক করে না শবনমের মুখ।
হাজারো চড়াই উৎরাই পেরিয়ে, খুশির জোয়ার আসে না কিছুতেই, এই খুশীর দিনেও।
শবনমের হাতের মুঠোয় ধরা থাকে না পায়েসের বাটি।
শবনমের শুকনো বুকে মুখ লুকিয়ে খাবার খোঁজে ওর কচি ছেলেটা।
যার ঘরের মানুষ বহু আগেই, এমন ঈদের দিনে কোথায় যে হারিয়ে গেলো, কে জানে।
চাঁদের আলোয় সেমাই-এর গন্ধ মাখামাখি হয় না আর।
দূরে মাইক থেকে আওয়াজ ওঠে, ঢাকের বাদ্যি বাজে।
চড়ক তলায় শিবের গাজন গাওয়া বুড়ো সাধুর, আনাগোনা বাড়ে।
মাঠের মাঝে চড়ক এর ক্যাঁচর কোঁচর আওয়াজ ওঠে।
ভোটের বাদ্যির আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায় গ্রামের পথে।
গ্রামের রাস্তায় মাথায় টুপি পরে আনাগোনা শুরু হয় নেতাদের।
হাসি মাখা মুখ, হাতজোড় করে নমস্কার করে তারা সব।
ভোটের ভিক্ষায় ভিখারী সেজে, ঈদের চাঁদ মাখা হাসি মুখে হাজির হয় তারা ঘরের দুয়ারে।
শবনমের ঘরে এবারের ঈদের চাঁদ, রোদে হেসে লুট পুটি করে না আর।
ঘরের উঠোনে দোয়েলের শিসের শব্দ শোনা যায় না।
এক্কা দোক্কা খেলে নিকানো উঠোনে, ঘুরে বেড়ায় না দোয়েল একা একা।
ছেলেকে বুকে জড়িয়ে একফালি চাঁদ দেখে সে ফ্যাল ফ্যাল করে।
আজ যে সত্যিই বড়ই খুশীর ঈদ।
আনাগোনা বাড়ে বাবুদের, বিবিদের।
একফালি চাঁদের আলোয় শবনম দেখে, একদল ভিখারী কেমন আলো গায়ে মেখে, অন্ধকারের পথে এগিয়ে চলেছে ধীরে ধীরে।
যাদের হাসি মাখা মলিন মুখে, কেমন যেনো থমকে গেছে ঈদের চাঁদের আলো।
ঈদের চাঁদের আলো - অভিজিৎ বসু।
নয় এপ্রিল, দু হাজার চব্বিশ।
ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুন