সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

২৪ ঘণ্টার প্রবাল

সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় আজ প্রবালের কথা। সেই নাটকের মঞ্চে অভিনয় করা প্রবল, সেই টিভির পর্দায় ক্রাইম ব্রাঞ্চ এর প্রবাল। সেই ডেস্ক এর কপি লেখা প্রবাল। সেই নিউজ রুমে আমায় এক বাংলার বিখ্যাত জনপ্রিয় অ্যাঙ্কর চোখে চোখ রেখে কথা বলা সাংবাদিক যিনি আমার জামার কলার ধরে মেরে মাটিতে ফেলে আমায় অনেককে সিধে করে দেবার মতই আমায় সিধে করার নিদান দিচ্ছেন আর সেই সময় আমায় মাটি থেকে হাত ধরে এগিয়ে এসে তুলে ধরে সাহায্য করা সেই প্রবাল। সেই হাসিখুশি সুন্দর একটা ছেলে। যার সাথে আমার খুব বেশি দিন কাজ করা হয়নি কিন্তু ওর কথা, মিষ্টি হাসি, ওর ভালো ব্যবহার এর কথা মনে পড়ে যায় আজও। 


সেই টিভির পর্দায় নানা ধরনের ক্রাইম রিপোর্টার এর অনুষ্ঠানকে ঘিরে ওর দৌড়ে বেড়ানো ছুটে বেড়ানো জীবন। সেই অনির্বাণ চৌধুরীর সুখের নিরিবিলি নিভৃতে মিডিয়ার সংসার। যে সংসারে প্রবাল, কুশল, সোমনাথ, প্রদীপ, দেবাশীষ, পত্রলেখা, তিন্নি, শ্রাবণী, দেবমতী, এমন কত যে লোকজন ছিল সেই আমলে। কেউ বেশি কাছের আর কেউ একটু দূরের জন। কিন্তু দাদাকে জড়িয়ে ধরে বেঁচে থাকার একটা দুর্লভ সংসার। যে সংসারে ছিল নানা সুখ আর দুঃখের আবেশ। তবু বেশ মজা করে ভালোই কেটে যেতো দিন গুলো আমাদের সবার। সেই সংসারে প্রবাল বেশ আমায় না চিনেও কেমন করে যেন একটা ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয়ে গেছিলো আমাদের মধ্য। সেটা হয়তো ওর গুণ। দূরের অচেনা মানুষকে নিজের করে নেওয়া। সেটা হয়তো ওর ভালো মন বলেই। 

সেই পোদ্দার কোর্টের অফিস এর গ্রীন রুমে রং মেখে স্টুডিওতে ওর প্রবেশ গম্ভীর মুখে। সেই ওর গাড়ি করে স্পটে গিয়ে দৌড় ঝাঁপ করে ক্রাইম শো এর জন্য অ্যাঙ্কর এর কাজ করা। সেই ওর সুন্দর উপস্থাপনা যেটা অনেকটাই হতো সেই ওর নাটকের মঞ্চে অভিনয় করার জন্য। যে অভিনয় ওর নেশা। যে অভিনয় ওর ভালোবাসা। সেই অভিনয়কে ভালবাসে ও খুব আজও। ওর মেয়ের সাথে সুন্দর হাসি মাখা মুখের ছবি দেখে বেশ ভালই লাগে আমার। বাবা আর মেয়ের সুন্দর মুহূর্ত। যা দেখে বেশ ভালো লাগে আমার। চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে আসার পর মাঝে মাঝেই কথা হতো ওর সাথে। বদলে গেছে ওর সেই চাকরির জায়গা। সেই দাদার চেনা সংসারে আজ আর কেউ নেই প্রায়। নেই দাদা নিজেও। তবু পড়ে থাকা সংসার, সেই সংসারের কুশীলব, সেই সংসারের নানা টুকরো টুকরো স্মৃতি ঝলমল দিন সেই দিনের ছায়া ঘেরা মায়াময় সংসার আর সংসারের ভালোবাসার দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায় আমার। 

সেই প্রবাল আর কুশলের যুগলবন্দী সকালের ডিউটিতে। সেই তিন্নির নেতৃত্বে সকালের অফিসে আমরা সব কাজ করছি আর সবার সাথে হাসিমুখে কুশল বিনিময় করে কুশল ভাবছে একটা কপি কী লিখবে সে। সেই গভীর ভাবনা করে ওর নিজের স্টাইলে। সত্যিই অসাধারণ সেই সব দিন। যে দিন হয়তো আর ফিরবে না কিন্তু বাংলা মিডিয়ার সেই ভালো দিনগুলোকে আজ বড্ড মিস করি আমি। টোটো চালকের জীবন যাপন বেশ নিরাপদ আর ভালো তবু কেনো জানিনা সাত সকালেই আমার প্রবালের সেই কাঁচা পাকা দাড়ি, সেই চেনা হাসি, সেই অভিজিৎ দা কেমন আছো গো তুমি বলা, ওর বউ এর অসুস্থ হয়ে যাওয়া হঠাৎ করে। ওর সেই নতুন করে লড়াই চালিয়ে যাওয়া সেই সব কথাই মনে পড়ে গেলো আজ। 

সেই বাবা আর মেয়ের জুটি। সেই ওর বউকে নিয়ে লড়াই করা চাকরি বজায় রেখে হাসি মুখে। সত্যিই তো জীবনের এই নানা ঘটনায় কেমন যেন লাগে আমার। অফিস এর বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশ পানে ওর তাকিয়ে থাকা। সেই নাটকের মঞ্চে ওর অভিনয় করা। জীবনের নাটকের মঞ্চে কেমন করে লড়াই করে এগিয়ে চলা ওর ধীরে ধীরে। সত্যিই অসাধারণ এই জীবন আর জীবনের নানা ধরনের মানুষ এর সাথে যোগাযোগ হয়ে যাওয়া এই সংবাদ মাধ্যমে কাজের সুবাদে। 

যেখানে হয়তো সেই বহুদিনের চেনা পরিচয় নেই একসাথে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে কাজ করা নেই কিন্তু সেই সব কিছু না থেকেও আমার সেই মিডিয়াসিটির এগারো তোলার অফিস, মাটিতে পড়ে থাকা আর ওর হাত ধরে টেনে তুলে ধরা আমায় বন্ধু হয়ে সেটাই বা কয়জন করে। আজ ভোর বেলায় সেই দিনের কথা মনে পড়ে গেলো আমার। সেই প্রবালের হাসি মুখের কথা মনে পড়ে গেলো আমার। ওর সেই চেনা হাসি মুখের কথা মনে পড়ে গেলো আমার। সেই চায়ের দোকানের আড্ডা, দাদার সাথে গোল হয়ে ঘিরে থাকা সবাই মিলে। অফিস এর কাজ ফেলে দিয়ে। সেই বস হয়েও কেমন যেন একটা ঘেরাটোপে বন্দী না রেখে সবার সাথে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করা আমাদের প্রিয় সেই দাদার। 

সেই দিন গুলো সেই আমাদের সবার দাদাও কেমন যেন একটু বদলে গেলো কী? কে জানে হয়তো আমার বুড়ো বয়সে এটা মনের ভুল বয়স হচ্ছে বলে। বদলে গেছে আমার নিজের জীবন, বদলে গেছে জীবনের শহুরে পথ, মেঠো পথের রাস্তা ধরে আমার এগিয়ে চলা টোটো চালক হয়ে ধীরে সুস্থে। সেই মেঠো পথের ধারে অনেকের মতই প্রবাল আজও উজ্জ্বল রঙে ঝিলমিল করছে আজও। যে আমায় সবার মাঝে হাত ধরে মাটি থেকে তুলেছিল। বলেছিল না এটা কিছুতেই ঠিক কাজ হয়নি। সেই গল্পও একদিন নিশ্চয়ই লিখবো সেই আমায় মেরে সিধে করে দেওয়ার গল্প। যে কাজ আমায় পৃথিবীর কেউ করতে পারে নি। সেই কাজ বাংলার বিখ্যাত দাপুটে এক অ্যাঙ্কর করবেন বলে ছিলেন। আমি মার খেয়ে মাটিতে পড়ে গিয়ে মনে মনে হেসেছিলাম আর বলেছিলাম সেটা বোধহয় করা যাবে না কিছুতেই কোনো ভাবেই। ভালো থেকো তুমি প্রবাল। 
২৪ ঘণ্টার প্রবাল - অভিজিৎ বসু।
বারো এপ্রিল, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

জয় জগন্নাথ

রথযাত্রা, লোকারণ্য, মহা ধুমধাম, ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম। পথ ভাবে আমি দেব রথ ভাবে আমি, মূর্তি ভাবে আমি দেব--হাসে অন্তর্যামী। রথ যাত্রার এই চিরন্তন সত্য লাইন কবি লিখেছিলেন বহুকাল আগেই। যা যুগ যুগ ধরে আমরা সবাই পড়ে আসছি, জেনে আসছি। যে জগন্নাথের রথ যাত্রা আমাদের কাছে একটা বিশেষ দিন। যে দিন জগতের প্রভু, জগৎ প্রভু রথে আরোহন করে বেরিয়ে পড়েন মাসীর বাড়ীর উদ্দেশ্যে। সাথে থাকেন বলরাম আর সুভদ্রা। আর সেই জগৎ প্রভুর রথকে ধরে টেনে নিয়ে যায় সাধারণ মানুষ। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই রথের রশিতে টান দেন। আসলে কি জানেন জগন্নাথ, যিনি আমাদের সবাইকে জগৎ সংসারে ধরে রাখেন, রক্ষা করেন। আজ তো সেই প্রভুকে রথের রশিতে টান দিয়ে একটিবার তাঁকে স্পর্শ করে,ছুঁয়ে দেখার একটা দিন। যে দিন বছরে এই একটিবার আসে। প্রভুর রথের রশিতে টান দিয়ে জীবনের সব কিছু পাপ, তাপ, কালিমা, দুঃখ, কষ্টের অবসান হয়। ভক্তকে এদিন ধরা দেন প্রভু নিজেই। তাই তো জগন্নাথ অর্থাৎ, জগতের নাথ বা জগতের প্রভু হলেন একজন হিন্দু দেবতা। ভারতের ওড়িশা, ছত্তিশগড় (বস্তার অঞ্চল), পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, আসাম, মণিপুর ও ত্...

মহম্মদ নিজামউদ্দিন - এর গল্প

আজ আপনাদের বলবো বর্ধমানের জামালপুরের মহম্মদ নিজামুদ্দিন এর গল্প। আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় আজ এই ঝড়ের রাতে সেই নিজামুদ্দিন এর হাসি মুখ, নামাজ পড়ে যিনি নিজের দাড়িতে হাত বুলিয়ে বলতে পারেন, নেতাদের কথা বাদ দিন আমি আর আপনি তো এক। মানুষ আমরা, বন্ধু আমরা। কেউ কারুর শত্রু নয়। সত্যিই কি অসাধারন জীবন দর্শনের কথা কত সহজেই অবলীলায় বলে দিলেন তিনি হাসতে হাসতে। যা শুনে আমি সত্যিই অবাক হলাম এই ঝড়ের রাতে। বিহারের সমস্তিপুর জেলা থেকে প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে যিনি চলে এসেছিলেন এই বাংলায় এক সময় এই বর্ধমানের জামালপুর এলাকায়। ব্রিটিশ আমলে যাঁর বাবা এক সময় দেশের হয়ে কাজ করেছেন বলে জানান তিনি আমায় কথায় কথায়। যিনি মনে করেন এই তাঁর সাথে আমার পাশে বসে গল্প করার সুযোগ করে দিলেন তাঁর প্রিয় আল্লাহ আকবর আর আমার মা কঙ্কালী ও‌ মা তারা স্বয়ং নিজেই হয়তো।  আর তাই তো এই ঝড় জল এর রাতে তাঁর সাথে কথা বলার সুযোগ হলো আমার কলকাতার বিখ্যাত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ডাঃ সৌমাল্য চট্টোপাধ্যায় এর চেম্বারে বসে তাঁর সেই সুন্দর জামালপুরের গ্রামের বাড়িতে...

ইটিভির অ্যাঙ্কর অঙ্কুর

ভাবা যায় এই ভুবন ভোলানো হাসিমুখের বিখ্যাত অ্যাঙ্করও নকল হতে পারে নাকি কোনোভাবে। হতেই পারে না একদম এটা। কোনোভাবেই এটা মেনে নেওয়া যায় না আর বিশ্বাস করাও যায় না। ওর এই পোস্ট দেখে সেটাই মনে হলো আমার সবার প্রথমেই। আসলে এই জীবনের পথে হাঁটতে হাঁটতে আসল আর নকলের এই গা ঘেঁষাঘেঁষির ভীড়ে পার্থক্য বোঝাই যে দায়। কে আসল বন্ধু আর কে নকল বন্ধু সেটাই বোঝা মুশকিল। সেটাকে নির্ধারণ করা যে বড়ই দুষ্কর কাজ। সেটাই যে আজকাল আর ঠিক করে ঠাওর করতে পারি না আমি এই বুড়ো বয়সে এসে।  আজ সাদা জীবনের কালো কথায় আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে তাই সেই যার কোলে চেপে বাসে করে জীবনে প্রথম বার দুরু দুরু বুকে রামোজি ফিল্ম সিটিতে গিয়েছিলাম আমি বেশ ভয়ে আর আতঙ্কে যদি চেয়ারম্যান এর সামনে যেতে হয় আর ইংরাজিতে কথা বলতে হয় এই ভয়ে। সেই ভীড় বাসে বসতে জায়গা না পেয়ে সেই তাঁর কথা। সেই যে সারাদিন অফিস করে হায়দরাবাদ এর বাংলা ডেস্ক থেকে ধ্রুব রাতে ওর বাড়িতে ভাত খাবার জন্য নেমতন্ন করলো আমায় গরম ভাত, ডাল আর আলুভাজা রান্না করলো রূপা ওর শরীর খারাপ নিয়েও সেদিন কত কষ্ট করে। সেই খেতে দেবার সময় ওদের ঘরে খাবা...

টোটো চালক ও দালাল

আজ আপনাদের এক দালাল আর টোটো চালকের গল্প বলি। যে দালাল টাকা নিয়ে বাংলাদেশের বর্ডার পার করে দেওয়া দালাল নয়। এই দালাল একটু অন্য ধরনের দালাল। আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় যে এলোমেলো এলেবেলে আর বিন্দাস জীবন কাটানো এক টোটো চালকের আজ এই হঠাৎ করেই দালাল হয়ে ওঠার গল্প। যে গল্পের পরতে পরতে রহস্য আবিষ্কার করছি আমি। জীবনের এই মেঠো পথের বাঁকে বাঁকে কত যে নতুন নতুন সব কিছু আবিষ্কার করছি আমি সত্যিই অবাক পৃথিবী অবাক করলে আরও বলতে ইচ্ছা হয় আমার এই রাত দুপুরে।  জীবনের এই শেষ বেলায় এসে এলোমেলো জীবনে যেনো ঝড় উঠেছে হঠাৎ করেই আমার। যে জীবন একদিন স্থবির জীবন ছিল আমার। যে জীবন বধির ছিল। যে জীবন শুধুই নিজের মৃত্যুর কাছাকাছি এসে অপেক্ষার প্রহর গুনছিল আর রাতের অন্ধকারে নিশাচর পেঁচার ডাক শুনত। যে জীবন শুধুই অপমান, অবহেলা সহ্য করেই বেঁচে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গেছিল একসময়। সেই জীবন কেমন স্থবিরতা কাটিয়ে আড়মোড়া ভেঙে জীবনের মেঠো রাস্তায় হাঁটছে টলমল পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে। সেই জীবনে এখন শুধুই ব্যস্ততা আর ব্যস্ততা আর ব্যস্ততা। যে অন্ধকার ঘরে আলো জ্বলতে দেখা ...