বসন্তের শেষ রাত! আজ চৈত্র সংক্রান্তি।
আচ্ছা... বসন্তের কি শেষ বলে কিছু হয়? শান্তিনিকেতনে? বসন্তের শেষ হয় কি?
না বোধহয়। শান্তিনিকেতন তো চিরবসন্তের দেশ। সেই চির বসন্তের দেশে সংক্রান্তির দিন আমরা বেরিয়ে পড়লাম দুজনে মিলে। মাথায় কাঠ ফাটা রোদ্দুর নিয়ে। উদ্দেশ্য ছিল মা কঙ্কালীতলা মন্দির দর্শন। মেলার ভীড়ে হারিয়ে যাওয়া। মিলে মিশে একাকার হওয়া। টোটোতে চেপে আমি গান ধরলাম মনে মনে,
বসন্ত যায়— ললিত রাগে বসন্ত চলে যায়।
এ চৈত্র দিনে মরি হায়— হায়!
সত্যিই এই বুড়ো বয়সেও যে মরতে সাধ হয় বড়ো। বুড়ো বয়সে আফশোষ হয় আমার বসন্ত চলে যাওয়া দেখে। উদাসী বাউন্ডুলে চৈত্রের খাঁ খাঁ দুপুর রোদে কিছুটা এগিয়ে রাস্তা জ্যাম আর যাবে না টোটো। অগত্যা মাঠে নেমে পড়া দুজনের। হেঁটে হেঁটে এগিয়ে চলা চড়াই আর উৎরাই পেরিয়ে। জীবনের এই শেষ বয়সে এসে চড়াই আর উৎরাই পার করতে আমার বেশ ভালোই লাগে। আমার এলোমেলো এলেবেলে বিন্দাস জীবন নিয়ে বেশ ভালই লাগে এই ভাবে ঘুরে বেড়াতে। আর তাই বোধহয় ভীড়ে মিশে যাওয়া।
আকাশ পানে তখন সুয্যি মামার গনগনে উত্তাপ। শহুরে জীবনের রোদ চশমা পড়ে আমাদের একে অপরকে হাত ধরে এগিয়ে চলা। জীবনের সুখ দুঃখের অনুভূতিকে সঙ্গে নিয়ে। জীবনের ফেলে আসা দিনের কথাকে ভুলে গিয়ে। একে অপরকে নিয়ে পথ চলা কিছুটা বিশ্বাস নির্ভরতা আর ঝগড়া করে। তাহলে তো সত্যিই বসন্তের মৃদু বাতাস এই চৈত্রের খাঁ খাঁ দুপুর রোদে পুড়েও আমরা কেমন নতুন করে ভাবলাম। চৈত্র আসলে ঘর-ছাড়া বৈরাগী। তাকে কি কখনও আটকে রাখা যায়? আর তাই বছরের শেষ দিনে মার কাছে পৌঁছে গেলাম আমরা দুজন।
সত্যিই যেখানে একদিন বসে থাকতাম আমি গাছের তলায় অল্প কিছু জিনিস বিক্রির আশায়। যেখানে আমরা কজন অপেক্ষা করতাম কখন একটু বিক্রি হবে লোক আসবে আমার কাছে। ভীড়ে ঠাসা মন্দির, উপচে পড়া ভীড়, সেই গাছের তলায় নানা মানুষের পাত পেড়ে খেতে বসা, সেই ফাঁকা মন্দিরে আজ অন্য ছবি। যে ছবি দেখে কিছুটা হলেও অবাক হলাম। আমার চেনা সেই পথ, চেনা সেই গাছের নিচে বসে থাকার জায়গা, সেই মানুষজন সব যে হারিয়ে গেছে। যাঁদের জন্য আমি ছুটে এলাম তাঁরা কেউ নেই। তবু বছর শেষের শেষ দিনে মার কাছে পৌঁছে মনে মনে জানালাম মা অন্ধকার জগতে তুমি আলোর প্রবেশ করিয়ে আমাদের সবার জীবন থেকে অন্ধকার ঘুচিয়ে আলোর দিশা দেখাও মা।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। রোদের উত্তাপ কমে গেলো ধীরে ধীরে। বছর শেষের শেষ দিনে আকাশ ঝেঁপে বৃষ্টি এলো। গাছেরা একে অপরের ওপর নুয়ে পড়লো। পরস্পর পরস্পরকে ছুঁয়ে দিচ্ছে যেনো। রতনপল্লীর রাস্তায় তখন আকাশ ফালা করা বিদ্যুতের ঝলকে। সেই বছর শেষের দিনে উপাসনা গৃহে তখন গানের সুরে ভেসে যায় চারিদিক। এসো হে বৈশাখ এসো এসো। স্মৃতি মুছে, গ্লানি মুছে, অগ্নিস্নানে শুচি হয়ে, নতুন বছরকে স্বাগত জানাই। শুভ বাংলা নববর্ষ ১৪৩২।
স্বাগত নববর্ষ - অভিজিৎ বসু।
চৌদ্দ এপ্রিল দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য নিজের মোবাইল।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন