টুলু আর আকবরদার এই ছবিটা দেখে আমার বেশ ভালো লাগলো এতদিন পরেও। শালী আর জামাই বাবুর সেই অমলিন মিষ্টি মধুর সম্পর্কের একটি উজ্জ্বল রঙিন ছবি। মৃত্যুর এতো বছর অতিক্রান্ত হবার পরেও কেমন উজ্জ্বল হয়ে আছে আজও। সেই মোটর সাইকেল করে আকবরদার হুগলী জেলার এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে ছুটে বেড়ানো। লাল পার্টির সন্ত্রাসের বিরূদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। বড়ো ভাই বলে কেউ ডাকলেই সেই ডাক শুনেই সবার পাশে দাঁড়িয়ে পড়া বুক চিতিয়ে হাসি মুখে তাঁর হয়ে কাজ করা আর সাহায্য করা যেটা আজকাল উঠেই গেছে প্রায়।
রাজনীতির বৃত্ত ছেড়ে, রাজনীতির ঘেরাটোপে বন্দী বা আবদ্ধ না হয়ে কাউকে তোয়াক্কা না করে যে কোনো মানুষকে সাহায্য করা দলমত নির্বিশেষে। সে সুকাই চাচা হোক, ভজা হোক, তরুণ পান হোক, মগরার রঘু হোক, কিম্বা সেই আকবরদার দক্ষিণ হস্ত ডাকাবুকো উত্তরপাড়ার সদ্য নেতা তৈরি হওয়া দিলীপ যাদব হোক, সেই পাণ্ডুয়ার আনিসুল, চন্ডিতলার অনিল দা, সেই বর্তমানের বিখ্যাত নেতা ও আধুনিক কবি সেই আমলে এত বিখ্যাত হয়ে উঠতে পারেননি তিনি সেই বর্তমানে ড সুবীর মুখোপাধ্যায়। আমরা তো তাঁকে সেই চন্ডিতলার সুবীর বলেই জানতাম। সেই সুগন্ধার সাধন সাঁতরা, নাট দা, অজয়, পিন্টু, শ্যামলেন্দু, ধনেখালির অসীমা আমাদের সেই বিজু শ্রীরামপুরের আর অমিত মিত্র ( ট্যাবো) আরও কতজন যে ছিল সেই সময়।
এখন যদিও সেই সব চেনা নেতা চেনা মানুষ অচেনা হয়ে গেছেন অনেকেই এতদিন এত বছর পরে। আর সবার মাঝেই একমুখ হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো আমাদের সবার সেই মেজদি, টুলু, মেজদির ভাই নামটাই এই বয়সে মনে পড়ে না আজকাল আরও অনেকেই ছিল সেই পুরোনো তৃণমূলের সংসারে। শ্রীরামপুরের চাতরার সেই দুর্গা চরণ দত্তের বাড়ী, সেই পল্লীডাক প্রেস, সেই প্রেসের ভাঙা কাঠের টেবিল, সেই প্রবীর মুখার্জীর গম্ভীর মুখে বসে থাকা। সেই সাংবাদিকদের ভীড় উপচে পড়ছে ছোট্ট প্রেসে। সেই ঘুরতে ঘুরতে এমন একদিন সন্ধ্যায় আকবরদার মোটর সাইকেল চেপে লাল টকটকে জামা পড়ে টুলুর প্রবেশ। সেই ওর মোটর সাইকেল এর ওপর পা ঝুলিয়ে বসে থাকা। রাজনীতির বাইরের সম্পর্কে মিশে যাওয়া সব সাংবাদিকদের সাথে ঘরের লোকের মতই। এটাই যে সেই আমলের চেনা ছবি ছিল। যা আজ অনেকটাই বদলে গেছে।
আসলে দিনটা পুরোনো আমলের, দিনটার স্মৃতির উত্তাপ আজ আর উত্তপ্ত করে না আমায় বা কাউকেই। তবু আজও মৃত্যুর ২৩ বছর পরেও কেনো জানিনা কেমন করে আজও প্রাসঙ্গিক হয়েই বেঁচে আছেন আমাদের আকবর দা, কারুর বড়ো ভাই, কারুর রাজনৈতিক গুরু, কারুর আরও অনেক কিছু। কিন্তু টুলুর এই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছবি সেই জামাইবাবুর সাথে ওর মিষ্টি মধুর সম্পর্কের নিনড় বন্ধনের কথা মনে পড়ে গেলো আজ আমার। যিনি এই রাজনীতির অন্ধকার জগতের মায়া কাটিয়ে, ক্ষমতার মোহ কাটিয়ে অন্য লোকে চলে যান তিনি তো মোহহীন মোহমুক্ত হয়েই চলে যান এই পৃথিবী ছেড়ে। রেখে যান কিছু টুকরো টুকরো স্মৃতি ঝলমল মুহূর্ত।
তবু মৃত্যুর এতগুলো বছর পার করেও আজ আমার মনে হয় সেই শেওড়াফুলির গঙ্গার ধার, সেই পার্টি অফিসে বসে থাকা ভীড় করে বড়ো ভাই এর অতি সাধারণ এসি হীন অফিস, সেই ফুলে ঢাকা দেহ হয়ে চলে আসা সবার বড়ো ভাই এর বিদায় নেওয়া হঠাৎ করেই একদিন আমাদের কাছ থেকে। আজ বড়ো ফাঁকা মনে হয়। সত্যিই রাজনীতির ময়দানে ঘুরে বেড়ানো হাজার হাজার মানুষের ভীড়ে আজও কেমন হাসি মুখে টুলুর বড়ভাই, আমাদের আকবর দা আজও বেঁচে আছেন আমাদের মনের মনিকোঠায়। ভালো থেকো তুমি আকবর দা।
ভালো থেকো আকবরদা - অভিজিৎ বসু।
২৪ এপ্রিল, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
আকবর আমার খুব কাছের মানুষ ছিল। এমন মানুষ এখন রাজনীতিতে খুঁজে পাওয়া যায় না।
উত্তরমুছুন