রাত কেটে ভোর হয় একসময়, ভোরের আলোয় কেটে যায়, রাতের নিকষ কালো আঁধার।
জীবনের আঁধার মাখা, রাত জাগা, প্রহর গোনার পালা শেষ হয়, ঘড়ির ঘন্টা বাজে ঢং ঢং।
অন্ধকার রাস্তায় শেষ হুইসেলের আওয়াজ, লাঠির ঠক ঠক আওয়াজ, ঘরে ফেরে পাহারাদার।
কিন্তু ভোর হলেই মে, আমার দু কামরার ছোট্ট ফ্ল্যাটের বারান্দায়, কেমন হুটোপুটি করতো ওরা।
কেমন যেনো একটা প্রাণপণে, আমায় ডেকে তুলতো ওরা জোর করে।
আজ আর ওরা সবাই মিলে, আমায় ডাকে না আর আজকাল।
বিরক্ত করে না একদম ওরা আর, ঝটপট করে ডানা ঝাপটে, জড়াজড়ি করে এ ওর সাথে ঝগড়া করে না আর,ভোরের আলো দেখে।
ছোটো ব্যালকনির ঝুল পড়া, ধুলো মাখা জায়গাটা, কেমন ভোর বেলায় ফাঁকা ফাঁকা লাগে আজকাল।
বারান্দার কোণে পড়ে থাকা লাঠি, জাল, জং পড়া তার, খাবারের কৌটো, নিজের বুকের মাঝে চেপে বসে।
নিজের অজান্তেই জং পড়া তার দিয়ে জাল বুনি আমি ভোরবেলায়।
জং পড়া তারের খোঁচায় রক্তাক্ত হই আমি।
ওদের জন্য আজ বড়ো মন কেমন করে,
কেমন আছে ওরা সব কে জানে।
সাদা, ধূসর, রঙিন সব আমার ভালোবাসার বোবা পাখির দল।
রাত পোহালেই যারা জল,খাবার চাইতো।
একটু দেরি হলে ঘাড় গুঁজে মুখ ফুলিয়ে অভিমানে, দেখত আমায় ওরা আড়চোখে।
তারপর ধীরপায়ে নেমে এসে জল খেত, খাবার খেত ওরা মুখ বুজে।
একটু আওয়াজ পেলেই কেমন আনন্দে ঝটপট, করতো ওরা।
বন্ধ খাঁচার পাখি গুলো, কেমন যেন বন্ধু, আত্মীয়, স্বজন, পরিজন হয়ে গেছিল আমাদের।
আর আজ তারা নেই, সবাই আমায় ছেড়ে চলে গেছে দূরে, অনেক দূরে।
রাত কেটে ভোর এলো কিন্তু ওদের আওয়াজ আর চুপিসারে কানে এলো না আর আজ।
তিন বাই দুইয়ের ছোটো পশ্চিমী বারান্দায় আজ, সত্যিই বড়ই আঁধার।
ভোরের আলো গায়ে মেখেও, কেমন যেন চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে আমার প্রিয়, এই একচিলতে বারান্দা, একদম চুপটি করে অভিমানে।
বারান্দা - অভিজিৎ বসু।
চব্বিশ এপ্রিল, দু হাজার চব্বিশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন