রাত পোহালেই মাহেন্দ্রক্ষণ, কাল রাজ্যে শুধুই জয় জগন্নাথ
অভিজিৎ বসু
চারিদিকে শুধু দীঘা মন্দিরের ছবি আর ছবি। চারিদিক জুড়েই জয় জগন্নাথ ধ্বনিতে মুখরিত আকাশ বাতাস। গোধূলি বেলায় জগন্নাথ মন্দিরকে সাক্ষী রেখে সূর্যের অস্তাচলে চলে যাওয়া। সমুদ্রের নোনা জলে তখন মিঠে রোদের ছায়া মাখা গোধূলি গড়াগড়ি খাচ্ছে। দুরে মন্দিরের ভিতর অপেক্ষার প্রহর গুনছেন প্রভু জগন্নাথ চুপটি করে মিটমিট করে মুচকি হাসছেন তিনি, এই সব কিছুর আয়োজন দেখে। রাত পোহালেই যে আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
বুধবার দীঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনের আগে মঙ্গলবার মন্দিরের শীর্ষচুড়োতে উড়ল ধ্বজা। মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে ধ্বজা নিয়ে চুড়োয় উঠে ধ্বজাস্থাপন হল। করজোড়ে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলেন তিনি ঊর্ধ্বে তাঁর দৃষ্টি নিবদ্ধ। ঠিক সেই হীরক রাজার দেশে সিনেমার দৃশ্যে সেই রাজার মূর্তিস্থাপন এর মতই যেনো বিষয়। সেই আমলে শুরু হয়েছিল হীরকাব্দ। জানি না এই মা মাটি মানুষের আমলে কোন অব্দের আবার সূচনা হবে। সেই নতুন অব্দে আর কী কী ঘটনা ঘটবে।
তবে এটা তো ঠিক যেনো এক নতুন ইতিহাসের সূচনা করা। যে ইতিহাস স্থাপন করা হবে আর এক রাতের পরেই। যে ইতিহাস তৈরীর কারিগর হলেন মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরী ধামে গিয়ে আর জয় জগন্নাথ বলে মাথা ঠুকতে হবে না আমাদের। দীঘার সমুদ্রের ঢেউ সামলে নিয়ে স্নান সেরে জগন্নাথ মন্দিরে পূজো দিয়ে দর্শন করে পুণ্য অর্জনের প্রশস্ত রাস্তা। যে রাস্তা তৈরির কারিগর হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিছু দিন আগেই যেমন সারা দেশ জুড়ে হৈ চৈ হুল্লোড় করে রামের মূর্তি স্থাপন করলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী। জয় শ্রী রাম ধ্বনিতে আকাশ বাতাস মুখরিত হলো। একভাবেই নানা আয়োজন করে সেই ত্রেতা যুগের রামকে স্মরণ করে তাঁর প্রতিষ্ঠা হলো। দেশের প্রধানমন্ত্রী রামকে স্মরণ করেই দেশে রামরাজ্য প্রতিষ্ঠা করে তাঁর স্বপ্নকে সার্থক করে দেবার চেষ্টা করলেন। দেশ জুড়ে রামমন্দির দর্শনের হিড়িক পড়ে গেলো।
ঠিক তেমনি করেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ এর মন জয়ের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই নতুন প্রজেক্ট। হিন্দুত্বকে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে চলা। যে হিন্দুত্ব আর এস এস এর পেটেন্ট বলেই অভিহিত হয় সারা দেশ জুড়ে। যে হিন্দুত্ব বিজেপির একমাত্র ভরসা। যে হিন্দুত্ব হিন্দুত্ব স্লোগান দিয়ে দিন কাটে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে পদ্মফুলে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারীর। যিনি মনে করেন হিন্দুত্বকে আঁকড়ে ধরে একমাত্র রাজ্যে পরিবর্তন সম্ভব।
আর সেটা বুঝতে পেরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সমুদ্রের তীরে গড়ে ফেললেন জগন্নাথ দেবের মন্দির কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে। যে জগন্নাথ, বলরাম আর সুভদ্রা হিন্দুদের অতি প্রিয় দেবতা। যে হিন্দু আর মুসলমান নিয়ে এখনও ভোটের বাজারে রাজনীতির ময়দানে সক্রিয় ভাবে ঘুরে বেড়ানো রাজনীতির লোকজন তাঁদের ব্যবহার করেন ভোটের সময়। আর তাই আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে কিছুটা মুসলিম তোষণ আর কিছুটা হিন্দু সেন্টিমেন্টে সুড়সুড়ি দিয়ে হোক না জগন্নাথ এর মন্দির প্রতিষ্ঠা। হোক না হাত হীন প্রভু জগন্নাথ এর মাধ্যমে ভোটের বৈতরণী পার হওয়া।
ক্ষতি কি তাতে সেই শিক্ষা , সংস্কৃতি , কর্মসংস্থান, আর জি কর, অভয়া, যোগ্য আর অযোগ্যদের চাকরি নিয়ে আন্দোলন, রাজ্যের শিল্প বাণিজ্য কারখানা, এসব না হয় লাটে উঠেছে, এসব নিয়ে ভাবার সময় অনেক আছে। এখন শুধুই হিন্দুত্বের লড়াই । হিন্দুত্ব কে আঁকড়ে ধরে নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় ফলাও প্রচার করে এগিয়ে চলা। সমুদ্রের নোনা জলে ভাসতে ভাসতে প্রভু জগন্নাথের আশীর্বাদ প্রনামী বাক্সের মত ব্যালট
বাক্সও ভরে তুলবে তো !
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন