সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বুটা হ্যাপি বার্থডে

দেখতে দেখতে আমার বুটা বড়ো হয়ে যাচ্ছে। সেই ছোট্ট মেয়েটা হাতে খড়ির দিন পেরিয়ে, স্কুলের জীবন পার করে, কলেজ জীবন এর প্রায় শেষের পথে আজ এসে পড়েছে। পয়লা বৈশাখের প্রথম সকাল এলেই ওর জন্মদিনের কথা মনে পড়ে যায় আমার। সেই কত ছোটো থেকে ওকে ঝড়ঝাপটা সামলে ওকে বড়ো করে তোলা ওর মায়ের। যদিও সবটাই ওর মায়ের অবদান। বাবা হিসেবে বলতে গেলে যদিও আমি একদম ফেল্টু একজন। যদিও গোটা জীবনেই আমি ফেল্টু। আজ তাই আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই ছোট্টো বুটার লেডি হয়ে ওঠার কথা। যে কথা লিখতে আমার ভয় নেই আজ। 


আসলে কী জানেন তো সেই ছোট্টো শিশুকে বুকে আগলে মানুষ করা ওর মার। সেই শ্রীরামপুর ওয়ালস হাসপাতাল থেকে ওকে ঘরে নিয়ে আসা, চন্দননগরে ওকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া ট্রেন পথে। সেই লকডাউন এর সময় কাজ না থাকায় বসে থাকা ঘরে একরাশ চিন্তা নিয়ে। কি করে সংসার চলবে সেই চিন্তায় রাত জেগে বাবা আর মেয়ের রাত্রিযাপন করা। আর হিসাব করা সামনের মাসে বাড়ী ভাড়া দেবো কি করে আমরা। আর কারুর ফোনে একটু আশার সঞ্চার হলে ভালো কাজের খবর পেয়ে মেয়েকে বলা দেখ ঠিক এইবার আমাদের কাজ হবে একটা। আমায় আর লোকের থেকে টাকা চেয়ে বাঁচতে হবে না বুটা। মেয়ের তখন গম্ভীর মুখে আমায় বলা কাজ হলেই কি আর করতে পারবে তুমি। সব জায়গার কাজ ছেড়ে চলে আসো তুমি। মার কী অবস্থা দেখো তুমি। মনে মনে ভাবি সত্যিই তো। সংসার করেও কত বেআক্কেল লোক আমি একজন। 

আজ সেই মেয়ের জন্মদিনের দিন সেই সব কথা মনে পড়ে গেলো আমার এই রাতের বেলায়। জীবন এর কদিনের সম্পর্ক, আসা আর যাওয়া। বাবা আর মেয়ের এই রঙ্গমঞ্চে নাটক করে চলে যাওয়া। কতদিন আর বড়ো জোড় পঞ্চাশ বছরের অভিনয় করা এই মঞ্চে। তার মাঝেই জন্মে যায় ভালবাসা, মায়া, মমতা, স্নেহ, আবার রাগ, অভিমান আরও কত কী। আর রাগ হলেই যে ওর মুখের দিকে দেখি ও তখন হেসে বলে অনেক হয়েছে আর রাগ করতে হবে না খেয়ে নাও তুমি। না খেলে কিন্তু অসুস্থ হবে তুমি তখন মা চিকিৎসা করবে কি করে টাকা কোথায় আমাদের। সত্যিই মেয়েটা বেশ বড়ো হয়ে গেলো। যে চিন্তা আমার নেই সেই চিন্তা ওর আছে। 

সেই কালী পুজোয় বাজি কেনার বায়না করা বুটা, সেই পাখীর হাটে দুজনের ঘুরে বেড়ানো পাখী কেনার আশায়, সেই সারারাত জেগে চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পূজা দেখা, সেই রাত জেগে অন লাইন শপিং করার জন্য রাত জেগে একের পর এক জামা আর প্যান্ট দেখে কিনে নেওয়া, আর সেই হায়দরাবাদে আমায় ট্রান্সফার করে দেবার পর ওর চুপ করে যাওয়া। রোজ আমার বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে থাকা কাউকে কিছু না বলে বু এর প্রতীক্ষায়। আঙ্গু পাঙ্গু আর সেই গাঙ্গুর সংসার থেকে একজনের দূরে চলে যাওয়া। 

কাছে থাকলে মনে হয় কেউ কাউকে দেখতে পারে না। কত মত বিরোধ। আর দূরে গেলেই তার জন্য মন আঁকুপাঁকু করা। এই নিয়েই তো জীবন। যে জীবনে সেই বুটার জন্মদিন এলেই ওর ঠাকুমা ওকে টাকা পাঠিয়ে দিয়ে বলতো তুই জামা কিনে নিস একটা। দিদা ওকে ভালোবেসে কত দামী দামী জামা কিনে দিয়েছে একসময়। আজ সেই ঠাকুমা নেই চলে গেছেন তিনি পৃথিবী ছেড়ে। আর দিদা এখন তো আর আগের মতো নেই একদম। এই সবের মাঝেই ধীরে ধীরে ওর বড় হয়ে ওঠা। 

যে মেয়েটা এখন বলে সে মাকে চাকরী করে খেতে দেবে। কিন্তু তার বু কে মানে আমাকে যে কোনো দায়িত্ব পালন করেনি সংসারে একদম তাকে দেখবে না সে। আর রাতের বেলায় এসব বলেও কেমন করে যেন আমার কোল ঘেঁষে এসে হাজির হয় নানা অছিলায় আমার বিছানায়। এটাই যে আমার বুটা। যে বুটা দেখতে দেখতে আজ প্রায় বাইশ বছর পূর্ণ করে তেইশ বছরে পা দিলো। 

ওকে সবাই আশীর্বাদ করবেন আপনারা যেনো ও যেনো বড়ো হয়। মানুষ হয়। আর মানুষের দুঃখে যেনো ঝাঁপিয়ে পড়ে ও সবসময় এই আশীর্বাদ করবেন আপনারা ওকে এই জন্মদিনের দিন। বুটা হ্যাপি বার্থডে। ভালো থাকিস তুই। আর সত্যিই আমায় নয় মাকে দেখিস তুই। মা মেয়ের এই জুটি দেখে আমার সত্যিই খুব ভালো লাগে। আঙ্গু, পাঙ্গু আর গাঙ্গুর সংসারে আমরা সবাই এইভাবেই মিলে মিশে একসাথে আনন্দে কাটিয়ে দি জীবন। ঝগড়া করে, ভালোবেসে, হেসে,খেলে, আনন্দে। হ্যাপি বার্থডে বুটা। 

বুটা হ্যাপি বার্থডে - অভিজিৎ বসু।
পনেরো এপ্রিল, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য নিজের মোবাইল ফোন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অ্যাঙ্কর মিমির কথা

'আমরা যদি এই আকালেও স্বপ্ন দেখি কার তাতে কী?' বাহ দারুন সুন্দর এই কথা। স্বপ্ন দেখার কি কোনো সময় হয় নাকি। পঞ্জিকার পাতা উল্টে তিথি নক্ষত্র দেখে কি স্বপ্ন দেখা যায়। যে স্বপ্ন বাঁচার খোরাক জোগায়। যা দেখে এই দৌড় ঝাঁপ করা জীবনে কেমন একটা স্বস্তি মেলে সেই স্বপ্ন সফল হোক বা না হোক। যে কোনোও বয়সে এই স্বপ্ন দেখা যায়। ফেসবুকের পাতায় সেই কথা লেখা দেখে মনে মনে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করেই এই রাত দুপুরে ভয়ে কম্পমান হয়েই ওকে নিয়ে লেখার চেষ্টা করা। সেই পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই দুর থেকেই অচেনা জগতের সেই খবরের বিখ্যাত সব নানা ধরনের খবর পাঠিকাদের ভীড়ে তাঁকে দুর থেকে দেখা। একদম অন্য এক গ্রহের বাসিন্দা যেনো। সেই কালামের দোকানে হয়তো কোনোও সময় চা খেতে গিয়ে দেখতে পাওয়া। সেই লিফটের কুঠুরিতে একসাথে ওঠা বা নামা কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেই। কিন্তু সেই অন্য খবর পড়া অ্যাঙ্কর দের সাথে সহজ সরল ভাবে মিশে যাওয়ার সাহস হয়নি আমার কোনোও দিন তাঁর সাথে। আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই ২৪ ঘণ্টার পোদ্দার কোর্টের অফিসের বিখ্যাত অ্যাঙ্কর মিমির কথা। ...

এলোমেলো , এলেবেলে বিন্দাস জীবন ও জন্মদিন

দেখতে দেখতে বছরের পর বছর গড়িয়ে যায়। আসলে এই অচলাবস্থা আর অকর্মণ্য দিনযাপনের একটা জীবন কাটিয়ে দিতে দিতে বেশ আমি কেমন যেন এডজাস্ট করে নিয়েছি নিজের সাথে নিজেরই এক অদ্ভুত সহাবস্থান। আমার জীবনের সাথে ক্রমেই দ্রুত কমতে থাকে যেনো মৃত্যুর দূরত্ব। দীর্ঘ দিনের জীবনের ঘন্টা ধ্বনিতে কেমন অচেনা সুরের সুর মূর্ছনা বেজে ওঠে ঠিক যেনো ওই গির্জার ঘরে জিঙ্গেল বেল, জিঙ্গেল বেল এর সুরের মতই আচমকা রাত বারোটা বাজলেই এই একত্রিশ মে।  যার তাল, লয় আর ছন্দে আন্দোলিত হয় এই জীবন আর জীবনের নানা জলছবি। যে ছবির কোলাজে ধরা পড়ে হাসি কান্না, সুখ আর দুঃখের নানা অনুভব। যে অনুভূতির জারক রসে আমি জারিত হই প্রতি মুহূর্তে। আর তাই তো বোধহয় সেই ছোটবেলার দিন এর কথা মনে পড়ে গেলেই সেই ঝাপসা হয়ে যাওয়া ধূসর হয়ে যাওয়া সেই ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা হয় আমার বড়ো এই আজকের দিনে।  সেই পুরোনো দিনের ভালোবাসার স্পর্শ আর স্মৃতি রোমন্থন করা একটি ছবি। মায়ের নিরাপদ কোলে ঠিক নয় চুপটি করে পাশে বসে আছি আমি একদম ফিট ফাট হয়ে আপন মনে ভদ্র শান্ত ছেলের মতোই যা আমি মোটেও নয়। আজকের সেই এ...

যা দেখি…প্রতিদিন মনে পড়ে কত… স্মৃতির পথ ধরে হাঁটি… লিখি…

ইটিভির অ্যাঙ্কর অঙ্কুর

ভাবা যায় এই ভুবন ভোলানো হাসিমুখের বিখ্যাত অ্যাঙ্করও নকল হতে পারে নাকি কোনোভাবে। হতেই পারে না একদম এটা। কোনোভাবেই এটা মেনে নেওয়া যায় না আর বিশ্বাস করাও যায় না। ওর এই পোস্ট দেখে সেটাই মনে হলো আমার সবার প্রথমেই। আসলে এই জীবনের পথে হাঁটতে হাঁটতে আসল আর নকলের এই গা ঘেঁষাঘেঁষির ভীড়ে পার্থক্য বোঝাই যে দায়। কে আসল বন্ধু আর কে নকল বন্ধু সেটাই বোঝা মুশকিল। সেটাকে নির্ধারণ করা যে বড়ই দুষ্কর কাজ। সেটাই যে আজকাল আর ঠিক করে ঠাওর করতে পারি না আমি এই বুড়ো বয়সে এসে।  আজ সাদা জীবনের কালো কথায় আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে তাই সেই যার কোলে চেপে বাসে করে জীবনে প্রথম বার দুরু দুরু বুকে রামোজি ফিল্ম সিটিতে গিয়েছিলাম আমি বেশ ভয়ে আর আতঙ্কে যদি চেয়ারম্যান এর সামনে যেতে হয় আর ইংরাজিতে কথা বলতে হয় এই ভয়ে। সেই ভীড় বাসে বসতে জায়গা না পেয়ে সেই তাঁর কথা। সেই যে সারাদিন অফিস করে হায়দরাবাদ এর বাংলা ডেস্ক থেকে ধ্রুব রাতে ওর বাড়িতে ভাত খাবার জন্য নেমতন্ন করলো আমায় গরম ভাত, ডাল আর আলুভাজা রান্না করলো রূপা ওর শরীর খারাপ নিয়েও সেদিন কত কষ্ট করে। সেই খেতে দেবার সময় ওদের ঘরে খাবা...

বিনোদন রিপোর্টার দেবপ্রিয়

দেবপ্রিয় দত্ত মজুমদার। ওর সাথে কোথাও একসাথে কাজ করা হয়নি আমার। ওর খবরের ফিল্ড একদম আলাদা এন্টারটেনমেন্ট। আর আমার শুধুই সাধারণ খবর। কখনও জেলার খবর,আর কলকাতার খবর। রাজনীতির খবর নিয়েই ঘুরে বেড়ানো। তবু কেনো জানিনা ওর শান্তিনিকেতনে আসার খবর শুনেই ওকে সাহস করে আমার নম্বর দিলাম। এমনি কোনোও কারণ ছাড়াই যদি যোগাযোগ হয়। যদি দেখা হয়। কলকাতার গন্ধ আছে। মিডিয়ার একটা বলয় গায়ে জড়িয়ে আছে। আর কি শুধুই যদি দেখা হয়ে যায় এই আশায়।  চমক অপেক্ষা করেছিল আমার জন্য। পরদিন ফোনে যোগাযোগ করলো ও নিজেই। কথা হলো দু চারটে আমাদের। কোথায় থাকো তুমি জিজ্ঞাসা করলো। আর সত্যিই আমি টোটো চালকের কাজ করি কি না যেটা নিয়ে ওর নিজেরও একটা সন্দেহ ছিল মনে মনে সেটা পরিষ্কার করে দিলাম আমি ওকে। কিন্তু যেনো কতদিনের চেনা একজন মানুষ। কত আপন ছন্দে কথা বলা ওর। যেটা আমায় আকর্ষিত করলো বেশ। ওর অনুষ্ঠান যেটা হচ্ছে শান্তিনিকেতনে সেখানে আমার মতো একজন বাতিল মানূষকে আসতে বললো ও নিমন্ত্রণ জানালো সপরিবারে।  আমি একটু আবেগ প্রবণ মানুষ। আমি চলে গেলাম সেই অনুষ্ঠানে ওর আমন্ত্রণে। যা সচরাচর আমি কো...