মাইনফিল্ড পেরিয়ে মধুদার নির্জন দ্বীপে বিদায় হয়েছে বেশ কিছু দিন আগেই। সেই নির্জন বিদায় কে স্মরণে রাখতেই আজ মধুদার স্মরণ সভা শান্তিনিকেতনের রতনপল্লীতে। আসলে যে মানুষটার সাথে আলাপ, পরিচয়, সখ্যতা, বন্ধুত্ব কি বলা যায় মনে হয় না কিন্তু ঘনিষ্ঠ হবার চেষ্টা করার সময়কাল আমার খুব কম সময়ের জন্য। তাঁর নির্জন বিদায়ে কেনো যে বারবার আমার মন খারাপ হয় কে জানে। মনের আর দোষ কি।
সেই সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন মধুদা ধীরে ধীরে কাঁধে ঝোলা নিয়ে। ক্লান্ত অবসন্ন শরীরে। একটা প্রতীক হয়ে। তাঁর চেনা মুখ, লম্বা দাড়ি , চেনা চশমার কাঁচ দিয়ে তাঁর জীবনকে দেখা যে জীবন আমার আপনার মত স্বার্থপর নয় ধান্দাবাজিতে পরিপূর্ণ নয়। যিনি বড্ড বেশী ভালো মানুষ ছিলেন আর তাই মনে হয় তিনি বলতে পারতেন আমার ছেলেটার একটা ছোট্ট গাড়ির লাইসেন্সের কাজটাও একটু সাহায্য করতে পারছিনা আমি অভিজিৎ। একটি অসহায় পিতার গলা। যিনি একসময় কলকাতা শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন খবর করছেন, তাঁর লেখা সংবাদে তোলপাড় হচ্ছে আন্দোলিত হচ্ছে। সেই মানুষটার মুখে এমন কথা শুনে আমি একটু অবাক হলাম। তবু মধুদার স্মরণ এর ঠিক আগেই এই সব নানা কথা মনে পড়ে যায় আমার। সেই তাঁর স্ত্রী দেবযানীকে নিয়ে জায়গায় দুজনে একসাথে থাকার ইচ্ছার কথাও বলতেন আমায় বারবার। যে গভীর গোপন কথা মাঝে মাঝেই ব্যক্ত করে ফেলতেন তিনি। আর তারপরেই বলতেন এই রে নিজের কথা বলে ফেললাম কিছু মনে করো না তুমি।
এই ভোরের বেলায় হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে যায়। প্রহর গোনা শুরু হয় আর ক ঘন্টা পরেই সেই তাঁর নানা গুণগ্রাহী আর আপনজনদের নিয়ে হবে মধুদার স্মরণ সভা। যিনি বোধহয় চিরকাল নিভৃতে নির্জনে একাকি বেঁচে থাকার চেষ্টা করতেন। একটু কাউকে ধরা না দিয়ে আলগোছে বেঁচে থাকা সেই তাঁর মত করেই বাঁচা। যে বাঁচার মধ্য তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন এক অনাবিল আনন্দ। কাউকে বিরক্ত বা বিব্রত নয় পরিবার, সমাজকে, বন্ধুকে কোনোও ভাবেই বিপদে ফেলে নয়। এই মাইনফিল্ড ধরে তাঁর একা একাই হাঁটা। ধীরে ধীরে তাঁর হাঁটার শেষ হলো আচমকাই হঠাৎ করেই। যা বোধহয় আমরা কেউই বুঝতে পারিনি।
সেই সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছেন মধুদা ধীরে ধীরে কাঁধে ঝোলা নিয়ে। ক্লান্ত অবসন্ন শরীরে। একটা প্রতীক হয়ে। তাঁর চেনা মুখ, লম্বা দাড়ি , চেনা চশমার কাঁচ দিয়ে তাঁর জীবনকে দেখা যে জীবন আমার আপনার মত স্বার্থপর নয় ধান্দাবাজিতে পরিপূর্ণ নয়। যিনি বড্ড বেশী ভালো মানুষ ছিলেন আর তাই মনে হয় তিনি বলতে পারতেন আমার ছেলেটার একটা ছোট্ট গাড়ির লাইসেন্সের কাজটাও একটু সাহায্য করতে পারছিনা আমি অভিজিৎ। একটি অসহায় পিতার গলা। যিনি একসময় কলকাতা শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন খবর করছেন, তাঁর লেখা সংবাদে তোলপাড় হচ্ছে আন্দোলিত হচ্ছে। সেই মানুষটার মুখে এমন কথা শুনে আমি একটু অবাক হলাম। তবু মধুদার স্মরণ এর ঠিক আগেই এই সব নানা কথা মনে পড়ে যায় আমার। সেই তাঁর স্ত্রী দেবযানীকে নিয়ে জায়গায় দুজনে একসাথে থাকার ইচ্ছার কথাও বলতেন আমায় বারবার। যে গভীর গোপন কথা মাঝে মাঝেই ব্যক্ত করে ফেলতেন তিনি। আর তারপরেই বলতেন এই রে নিজের কথা বলে ফেললাম কিছু মনে করো না তুমি।
আসলে কী জানেন মধুদার ঘরানার মানুষজন যত বেশি কমে যায় আমাদের চারিপাশ থেকে তত কেমন যেনো ভয় হয় আমার। কাদের কাছে গিয়ে দাঁড়াবো আমি বা আমরা আমাদের এই যান্ত্রিক জীবন নিয়ে। যেখানে গিয়ে দু দণ্ড শান্তি পাওয়া যায়। যেখানে মধুদার অকৃপণ ভালোবাসা আর অল্পদিনের মধ্যেই আমাকে নিজের করে নেওয়া, কাছের করে নেওয়া, সেই সব কিছুই বলে ফেলা ধীরে ধীরে সেটা আর হবে না দাদা কোনওদিন। সেই নানা ঘটনার কথা, তাঁর ওলট পালট জীবনের কথা, যে জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে বড়ো ভালোবাসতেন তিনি হাসি মুখেই। হিসেব নিকেশ করে জীবন যাপন নয়। সেই জীবনে তিনি গ্রামের প্রান্তিক মানুষদের জন্য কাজ করতে ভালোবাসতেন। যে মানুষ জন রাজনীতির ঘেরাটোপে বন্দী তাঁদেরকে তিনি বড্ড ভালোবাসতেন। আর তাই তিনি ছুটে চলে যেতেন তাঁদের কাছে সেই আদিবাসীদের গ্রামে। পড়াতে আসতেন এইসব ছোটো ছোটো ছেলে মেয়েদের কাছে।
আজ এই ভোরের বেলায় আমার হঠাৎ করেই মধুদার জন্য বড্ড মন খারাপ করছে। সেই হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে টেলিফোনে তাঁর সাথে অল্প একটু কথার মাঝে তাঁর বারবার হাঁফিয়ে হাঁফিয়ে বলা জানিনা আমি আর কোনদিন শান্তিনিকেতনে ফিরতে পারবো কি না। আমি বললাম ঠিক পারবেন দাদা। আগে সুস্থ হয়ে নিন আপনি। তারপর আমি আর আপনি একসাথে আবার ঘুরবো সেই চেনা পথ ধরে একসাথে চা খাবো আড্ডা দেবো। মধুদা শুনে চুপ করে গেলেন।
আজ আমায় ছেড়ে চলে গেলেন মধুদা একাকী নির্জন পথ ধরে সেই তাঁর নিজের লেখা শব্দ 'মাইনফিল্ড' পেরিয়ে একা একাই। তাহলে তো আমি মিথ্যে প্রবোধ দিয়েছিলাম তাঁকে সেদিন। কে জানে আমি জানি না। আজ এই সকাল বেলায় আমার খুব ইচ্ছা করছে হঠাৎ করেই মাধুদাকে ফোন করতে। গল্প করতে। আড্ডা দিতে। সেই পুরোনো দিনের সাংবাদিকতার গল্প শুনতে। যে ক্ষমতার জীবনকে তিনি কত সহজেই বিদায় জানিয়ে চলে এসেছিলেন এই লালমাটির জায়গায়। যে দাপুটে জীবন আর দাপুটে সাংবাদিক হয়েই আর রবীন্দ্রনাথের জীবন দর্শনকে আঁকড়ে ধরেই তিনি বেঁচে থাকবেন আমাদের সবার কাছে।
ভালো থাকবেন আপনি দাদা। এই নির্জন দ্বীপে একা একাই ঘুরে বেড়ান আপনি আপনার মতো করেই কেউ আর আপনাকে বিরক্ত করবে না কোনোদিন। আর আপনাকে আমিও কোনোওদিন ফোনে বিরক্ত করবো না বলবো না ছেলেদের কথা শুনে ওদের দুজনের আদেশ মেনে আপনাকে এখন চলতে হবে দাদা। যেটা বোধহয় আপনার কোনওদিন পছন্দ হতোনা। আপনি চুপ করে শুনতেন কিছুই বলতেন না। আজ সত্যিই আমি বন্ধুহীন হলাম। আমার এই এলোমেলো আর এই এলেবেলে বিন্দাস জীবনে একজন সত্যিকারের বন্ধুকে হারালাম। ভালো থাকবেন আপনি দাদা। আমার প্রনাম নেবেন।
মধুদার স্মরণে - অভিজিৎ বসু।
২৪ শে মে, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য নিজের মোবাইল ক্যামেরায় তোলা।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন