সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মধুদার স্মরণ সভা

ফুলে, মালায়, গানের মূর্ছনায় নানা গুণী জনের স্মৃতিচারণায় তাঁর দুই সন্তানের উপস্থিতিতে খোলা শান্তিনিকেতনের আকাশের নিচে মধুদার শোকসভার এক সাদামাটা অনুষ্ঠান হয়ে গেলো। যে সাদামাটা জীবন তাঁর খুব প্রিয় ছিল। হৈ চৈ হুল্লোড় এর জীবন নয় একদম সাদামাটা একটা নিস্তরঙ্গ জীবন কাটিয়ে যাওয়া। যে শান্তিনিকেতন তাঁর খুব প্রিয় জায়গা ছিল সেখানেই এই রতনপল্লীতে হলো এই অনুষ্ঠান। যে অন্তরঙ্গ স্কুলে তিনি শিশুদের সাথে শিশুর মতই অন্তরঙ্গ হয়ে মিশে যেতেন, পড়াতেন ওদের ভালোবেসে ফেলেছিলেন সেই স্কুলের চত্বরে হলো মধুদার এই স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান। 


আসলে এই শোকসভার অনুষ্ঠান তো স্মৃতির সরণী বেয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলার অনুষ্ঠান। সেই চলে যাওয়া মানুষকে মনে মনে বিদায় জানিয়ে যাওয়া আমাদের সবার নিজের মত করেই। তাঁর নির্জন দ্বীপে বিদায় নেবার কথা জেনেও তাঁকে তর্পণ করা। তাঁর যে গুণমুগ্ধ ভক্তকূল বা এত অনুসরণকারী মধুদা তৈরি করেছিলেন এই জায়গায় এই কম সময়ে সে কথাই ভাবতে ভালো লাগছিল আমার বললেন অনিমেষ দা। সত্যিই দেখুন আমার সাথে এই মধুদার জার্নির সময়কাল খুব বেশিদিন এর নয়। তবুও মধুদার স্মরণ সভায় হাজির থাকতে পেরে কেমন যেন বারবার মনে হচ্ছিল এই মানুষটা বড্ড দ্রুত জীবন আর মৃত্যুর সীমারেখা পার করে তিনি আমাদের সবাইকে ছেড়ে হাসতে হাসতেই কেমন চলে গেলেন। যে চলে যাওয়াটা একদিন হতই কিন্তু সেটা এত তাড়াতাড়ি হবে ভাবিনি আমরা কেউ। 

মধুদার চুপ চাপ উপস্থিতি আমায় কেমন যেন আচ্ছন্ন করে রাখে। সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, রাজনীতির এক মতাদর্শে বিশ্বাস করা এক কঠিন কঠোর আর্দশবাদী মানুষ, যিনি সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে দ্বিধা করেননি কোনওদিন। অকুতোভয়ে হাসি মুখে নিজের মতো করেই বেঁচে থেকেছেন জীবনে নিজের শর্তে এটাই আসল কথা। নিজের শর্তে নিজের মতো করে এই ধূলিধুসর পঙ্কিল সমাজে বেঁচে থাকা বেশ কঠিন ব্যাপার কিন্তু। যে মুক্ত অর্থনীতির দাপটে বদলে যাওয়া সমাজ বারবার তাঁকে আহত করে। তিনি তো ঠিক মেটিয়ারিয়ালিস্টিক দুনিয়ায় নিজেকে সঁপে দিতে পারেননি কোনোদিন। তাই বোধহয় তাঁর নিজের জার্নি তিনি নিজেই বারবার ভেঙেছেন মার্কস থেকে রবীন্দ্রনাথ। আবার সেখান থেকে এই স্কুলের শিশুদের কাছে নিজেকে সঁপে দেওয়া।

যাঁকে আঁকড়ে তাঁর শেষ বেলায় লেখালেখি ও রিসার্চ করা রবীন্দ্রনাথ ও প্যালেস্টাইন বিষয়ক একটি বই। যা হয়ত অসমাপ্ত থেকে গেলো তাঁর এই বিশেষ লেখার কাজটি। কিন্তু মধুদার এই চিন্তা তাঁর এই জানার পিপাসা যেনো আমাদের কেমন সবাইকে এক খোলা আকাশের নিচে জড়ো করে দিলো এই সন্ধ্যায়। তাঁর নির্জন দ্বীপে বিদায় নেবার পর আমরা সবাই কেমন একসাথে একসুরে মধুদাকে কাছে পেতে চাইলাম আবার নতুন করে, অনুভব করলাম তাঁর অনুপস্থিতি। 

আর দূরে বসে সন্ধ্যার চাঁদের আলো মাখা পথ ধরে এগিয়ে চলা সেই নির্মোহো মানুষটি কেমন হাসতে হাসতেই আমাদের বললেন এই তো আমি এই পথে বেশ ভালই আছি তোমরাও ভালো থেকো সবাই। যে পথের বাঁক ধরে আমাদের মধুদা সেই কাঁধে ঝোলা নিয়ে এগিয়ে চলেছেন ধীরে ধীরে। তাঁর নিজের লক্ষ্যে সেই আদর্শ, তাঁর সেই ভাবনা আর চিন্তাকে সাথে নিয়ে। যে আদর্শ তাঁকে কেমন মোহহীন করে কোনোও নিনড় বন্ধনে বেঁধে রাখতে পারে নি কোনওদিন কোনোও সময়। 

কেমন এলোমেলো এলেবেলে বিন্দাস জীবন নিয়ে মধুদা হাসতে হাসতেই আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে গেলেন। আমি জানি না স্বর্গ বা নরক বলে কিছু আছে কি না। তাঁর নিজের জগতে যেখানে হয়তো তিনি ঠিক এই ভাবেই নিজের বিশ্বাস, নিজের আদর্শ আর নিজের জীবনবোধ নিয়ে এই নিজের শর্তে বেঁচে থাকা নিয়ে বেশ ভালই থাকবেন। ভালো থাকুন মধুদা। আপনার এই গভীর জীবনবোধ আমায় বেশ আকৃষ্ট করে। মনে মনে প্রনাম জানিয়ে ফিরে এলাম আমি শুধু বললাম আর কটা দিন বেশি আপনার সঙ্গ পেলে হয়তো আর একটু বেশি করে তাঁর এই নিজের শর্তে বেঁচে থাকার শিক্ষাটা গ্রহণ করতে পারতাম আমিও। ভালো থাকবেন আপনি দাদা। আমার প্রনাম নেবেন আপনি। 

মধুদার স্মরণ সভা - অভিজিৎ বসু।
২৫ মে, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি নিজের মোবাইল ক্যামেরায় তোলা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অ্যাঙ্কর মিমির কথা

'আমরা যদি এই আকালেও স্বপ্ন দেখি কার তাতে কী?' বাহ দারুন সুন্দর এই কথা। স্বপ্ন দেখার কি কোনো সময় হয় নাকি। পঞ্জিকার পাতা উল্টে তিথি নক্ষত্র দেখে কি স্বপ্ন দেখা যায়। যে স্বপ্ন বাঁচার খোরাক জোগায়। যা দেখে এই দৌড় ঝাঁপ করা জীবনে কেমন একটা স্বস্তি মেলে সেই স্বপ্ন সফল হোক বা না হোক। যে কোনোও বয়সে এই স্বপ্ন দেখা যায়। ফেসবুকের পাতায় সেই কথা লেখা দেখে মনে মনে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করেই এই রাত দুপুরে ভয়ে কম্পমান হয়েই ওকে নিয়ে লেখার চেষ্টা করা। সেই পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই দুর থেকেই অচেনা জগতের সেই খবরের বিখ্যাত সব নানা ধরনের খবর পাঠিকাদের ভীড়ে তাঁকে দুর থেকে দেখা। একদম অন্য এক গ্রহের বাসিন্দা যেনো। সেই কালামের দোকানে হয়তো কোনোও সময় চা খেতে গিয়ে দেখতে পাওয়া। সেই লিফটের কুঠুরিতে একসাথে ওঠা বা নামা কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেই। কিন্তু সেই অন্য খবর পড়া অ্যাঙ্কর দের সাথে সহজ সরল ভাবে মিশে যাওয়ার সাহস হয়নি আমার কোনোও দিন তাঁর সাথে। আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই ২৪ ঘণ্টার পোদ্দার কোর্টের অফিসের বিখ্যাত অ্যাঙ্কর মিমির কথা। ...

এলোমেলো , এলেবেলে বিন্দাস জীবন ও জন্মদিন

দেখতে দেখতে বছরের পর বছর গড়িয়ে যায়। আসলে এই অচলাবস্থা আর অকর্মণ্য দিনযাপনের একটা জীবন কাটিয়ে দিতে দিতে বেশ আমি কেমন যেন এডজাস্ট করে নিয়েছি নিজের সাথে নিজেরই এক অদ্ভুত সহাবস্থান। আমার জীবনের সাথে ক্রমেই দ্রুত কমতে থাকে যেনো মৃত্যুর দূরত্ব। দীর্ঘ দিনের জীবনের ঘন্টা ধ্বনিতে কেমন অচেনা সুরের সুর মূর্ছনা বেজে ওঠে ঠিক যেনো ওই গির্জার ঘরে জিঙ্গেল বেল, জিঙ্গেল বেল এর সুরের মতই আচমকা রাত বারোটা বাজলেই এই একত্রিশ মে।  যার তাল, লয় আর ছন্দে আন্দোলিত হয় এই জীবন আর জীবনের নানা জলছবি। যে ছবির কোলাজে ধরা পড়ে হাসি কান্না, সুখ আর দুঃখের নানা অনুভব। যে অনুভূতির জারক রসে আমি জারিত হই প্রতি মুহূর্তে। আর তাই তো বোধহয় সেই ছোটবেলার দিন এর কথা মনে পড়ে গেলেই সেই ঝাপসা হয়ে যাওয়া ধূসর হয়ে যাওয়া সেই ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা হয় আমার বড়ো এই আজকের দিনে।  সেই পুরোনো দিনের ভালোবাসার স্পর্শ আর স্মৃতি রোমন্থন করা একটি ছবি। মায়ের নিরাপদ কোলে ঠিক নয় চুপটি করে পাশে বসে আছি আমি একদম ফিট ফাট হয়ে আপন মনে ভদ্র শান্ত ছেলের মতোই যা আমি মোটেও নয়। আজকের সেই এ...

যা দেখি…প্রতিদিন মনে পড়ে কত… স্মৃতির পথ ধরে হাঁটি… লিখি…

ইটিভির অ্যাঙ্কর অঙ্কুর

ভাবা যায় এই ভুবন ভোলানো হাসিমুখের বিখ্যাত অ্যাঙ্করও নকল হতে পারে নাকি কোনোভাবে। হতেই পারে না একদম এটা। কোনোভাবেই এটা মেনে নেওয়া যায় না আর বিশ্বাস করাও যায় না। ওর এই পোস্ট দেখে সেটাই মনে হলো আমার সবার প্রথমেই। আসলে এই জীবনের পথে হাঁটতে হাঁটতে আসল আর নকলের এই গা ঘেঁষাঘেঁষির ভীড়ে পার্থক্য বোঝাই যে দায়। কে আসল বন্ধু আর কে নকল বন্ধু সেটাই বোঝা মুশকিল। সেটাকে নির্ধারণ করা যে বড়ই দুষ্কর কাজ। সেটাই যে আজকাল আর ঠিক করে ঠাওর করতে পারি না আমি এই বুড়ো বয়সে এসে।  আজ সাদা জীবনের কালো কথায় আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে তাই সেই যার কোলে চেপে বাসে করে জীবনে প্রথম বার দুরু দুরু বুকে রামোজি ফিল্ম সিটিতে গিয়েছিলাম আমি বেশ ভয়ে আর আতঙ্কে যদি চেয়ারম্যান এর সামনে যেতে হয় আর ইংরাজিতে কথা বলতে হয় এই ভয়ে। সেই ভীড় বাসে বসতে জায়গা না পেয়ে সেই তাঁর কথা। সেই যে সারাদিন অফিস করে হায়দরাবাদ এর বাংলা ডেস্ক থেকে ধ্রুব রাতে ওর বাড়িতে ভাত খাবার জন্য নেমতন্ন করলো আমায় গরম ভাত, ডাল আর আলুভাজা রান্না করলো রূপা ওর শরীর খারাপ নিয়েও সেদিন কত কষ্ট করে। সেই খেতে দেবার সময় ওদের ঘরে খাবা...

বিনোদন রিপোর্টার দেবপ্রিয়

দেবপ্রিয় দত্ত মজুমদার। ওর সাথে কোথাও একসাথে কাজ করা হয়নি আমার। ওর খবরের ফিল্ড একদম আলাদা এন্টারটেনমেন্ট। আর আমার শুধুই সাধারণ খবর। কখনও জেলার খবর,আর কলকাতার খবর। রাজনীতির খবর নিয়েই ঘুরে বেড়ানো। তবু কেনো জানিনা ওর শান্তিনিকেতনে আসার খবর শুনেই ওকে সাহস করে আমার নম্বর দিলাম। এমনি কোনোও কারণ ছাড়াই যদি যোগাযোগ হয়। যদি দেখা হয়। কলকাতার গন্ধ আছে। মিডিয়ার একটা বলয় গায়ে জড়িয়ে আছে। আর কি শুধুই যদি দেখা হয়ে যায় এই আশায়।  চমক অপেক্ষা করেছিল আমার জন্য। পরদিন ফোনে যোগাযোগ করলো ও নিজেই। কথা হলো দু চারটে আমাদের। কোথায় থাকো তুমি জিজ্ঞাসা করলো। আর সত্যিই আমি টোটো চালকের কাজ করি কি না যেটা নিয়ে ওর নিজেরও একটা সন্দেহ ছিল মনে মনে সেটা পরিষ্কার করে দিলাম আমি ওকে। কিন্তু যেনো কতদিনের চেনা একজন মানুষ। কত আপন ছন্দে কথা বলা ওর। যেটা আমায় আকর্ষিত করলো বেশ। ওর অনুষ্ঠান যেটা হচ্ছে শান্তিনিকেতনে সেখানে আমার মতো একজন বাতিল মানূষকে আসতে বললো ও নিমন্ত্রণ জানালো সপরিবারে।  আমি একটু আবেগ প্রবণ মানুষ। আমি চলে গেলাম সেই অনুষ্ঠানে ওর আমন্ত্রণে। যা সচরাচর আমি কো...