দেখতে দেখতে বছরের পর বছর গড়িয়ে যায়। আসলে এই অচলাবস্থা আর অকর্মণ্য দিনযাপনের একটা জীবন কাটিয়ে দিতে দিতে বেশ আমি কেমন যেন এডজাস্ট করে নিয়েছি নিজের সাথে নিজেরই এক অদ্ভুত সহাবস্থান। আমার জীবনের সাথে ক্রমেই দ্রুত কমতে থাকে যেনো মৃত্যুর দূরত্ব। দীর্ঘ দিনের জীবনের ঘন্টা ধ্বনিতে কেমন অচেনা সুরের সুর মূর্ছনা বেজে ওঠে ঠিক যেনো ওই গির্জার ঘরে জিঙ্গেল বেল, জিঙ্গেল বেল এর সুরের মতই আচমকা রাত বারোটা বাজলেই এই একত্রিশ মে।
যার তাল, লয় আর ছন্দে আন্দোলিত হয় এই জীবন আর জীবনের নানা জলছবি। যে ছবির কোলাজে ধরা পড়ে হাসি কান্না, সুখ আর দুঃখের নানা অনুভব। যে অনুভূতির জারক রসে আমি জারিত হই প্রতি মুহূর্তে। আর তাই তো বোধহয় সেই ছোটবেলার দিন এর কথা মনে পড়ে গেলেই সেই ঝাপসা হয়ে যাওয়া ধূসর হয়ে যাওয়া সেই ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা হয় আমার বড়ো এই আজকের দিনে।
সেই পুরোনো দিনের ভালোবাসার স্পর্শ আর স্মৃতি রোমন্থন করা একটি ছবি। মায়ের নিরাপদ কোলে ঠিক নয় চুপটি করে পাশে বসে আছি আমি একদম ফিট ফাট হয়ে আপন মনে ভদ্র শান্ত ছেলের মতোই যা আমি মোটেও নয়। আজকের সেই এলোমেলো, এলেবেলে বিন্দাস জীবন নিয়ে নয়। সাজানো গোছানো স্টুডিওর সেই সাদা কালো ফ্রেমের ছবি দেখে কেমন যেন মনটা উচাটন হয়ে পড়ে আমার এই আজকের দিনে। আমার মনে পড়ে যায় মায়ের কথা। আমার হারিয়ে যাওয়া মায়ের কথা। যে দিনটা শুধুই আমার মায়ের দিন ছিল তার শুধুই বাবুর জন্যই বরাদ্দ। যে বিশেষ দিনটা দৌড়ের জীবনে ভালো করে তাঁকে দিতেই পারিনি আমি। আর যখন আমার জীবনের দৌড় শেষ, কর্মের জীবন শেষ তখন তো আর মা নেই আমার পাশে এই বিশেষ দিনে।
এই বুড়ো বয়সে টোটো চালকের জন্মদিনের দু দিন আগে থাকতেই তো কেমন শুভেচ্ছার বন্যার ঢল পড়ে যায় এই বছর। যা দেখে আমার কেমন যেন অবাক লাগে বেশ একটু। সেকি অবাক করা দৃশ্য দেখে আমি উত্তেজিত হয়ে পড়ি কেমন এই এতোদিন পরেও। জীবন আর মৃত্যুর এই যোগ সাজশ আর পাশাপাশি অদ্ভুত সহাবস্থান দেখে মনে মনে ভাবি সত্যিই জীবন বড়ই অদ্ভুত আর বিচিত্র। যে জীবনে জড়িয়ে আছে সুখ। আবার যে জীবনে জড়িয়ে আছে মৃত্যু। একে অপরকে কেমন যেন আশ্লেষে জড়িয়ে ধরে বেঁচে থাকে তারা গা ঘেঁষাঘেঁষি করে। ঘরের কোণে ঘাপটি মেরেই লুকিয়ে থাকে জীবনের মাঝে মৃত্যুর পরোয়ানা হাসি মুখে।
আর তাই আমার এলোমেলো এলেবেলে বিন্দাস জীবনে, যে জীবনে তাল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে তাল তুলে আর তাল কুড়িয়ে কেটে যায় দিন। যে জীবনের পরতে পরতে ঠাট্টা, মশকরা আর অপমান সহ্য করেই এগিয়ে চলতে হয় আমায়। যে জীবনে গুটিকয় মানুষ এর সাহায্য নিয়েই বেঁচে থাকতে হয় আমায়। সেই জীবনও কেমন করে যে বদলে যায় রূপোর কাঠির জাদুর ছোঁয়ায় কে জানে। যে জীবনের সাদা কালো জীবনের রেখায় ফুটে ওঠে করুন হাস্যকর জীবনের প্রতিচ্ছবি সেই জীবনেও কেমন যেনো রঙের উজ্জ্বল প্রলেপ। যে রঙ মেখে বেঁচে থাকতে বড়ই ভালো লাগে আমার আজকাল।
আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া কতজনের আনাগোনা আর তাদের শুভেচ্ছার বার্তা দেখে মনে মনে আমার হেরে যাওয়া জীবনকে কেমন যেনো বড্ড ভালবাসতে ইচ্ছা করে আমার। যে জীবন হেরে যাওয়া জীবন। যে জীবন হারিয়ে যাওয়া জীবন। যে জীবন এলোমেলো, এলেবেলে আর বিন্দাস জীবন। যে জীবন আজ একা, একদম একা। সেই পুরোনো দিনের সাদা কালো ফ্রেমে বন্দী নিটোল জীবন নয়। যে জীবন বড্ড অগোছালো আর এবড়ো খেবড়ো একটা জীবন।
যে জীবনে আর কেউ আমায় বলে না যে,বাবু আজ তোর জন্মদিন। বাবাকে দিয়ে নতুন গেঞ্জি পাঠালাম পড়ে দেখিস তুই। আর আম, মিস্টি কিনে দিলাম রাতে অফিস থেকে ফিরে খাস তুই। যে জীবন আজ একদম একা। এতো ভালোবাসার মানুষের শুভেচ্ছার বার্তা পেয়ে আমি আপ্লুত। তবু কেন জানিনা আজ আমার একজনের ভালবাসা পেতে মনটা বড্ড ছটফট করছে যেনো। এই রাতের অন্ধকারে আমার দেওয়ালে উপচে পড়ছে ভালোবাসার জনদের নানান শুভেচ্ছার বার্তা।
আর আমি সেই সাদা কালো ফ্রেমের ধূসর ছবিকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চাইছি আবার। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি আমি আবার। যে স্বপ্ন দেখা ভুলে গিয়েছিলাম একদিন এই জীবনের শেষ প্রান্তে এসে। সেই সাদা কালো জীবন, সেই আঁকাবাঁকা অক্ষর, আঁকিবুঁকি ব্লগ, সবকে নিয়ে সবার ভালোবাসা আর শুভেচ্ছা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাইছি আমি। জীবন আর মৃত্যুর সীমারেখা অতিক্রম করে ফের নতুন করে। যেখানে শুধুই জীবন, জীবন আর জীবনের ছন্দময় গদ্য মাখা মেঠো পথ। যে পথের বাঁক ধরে দূরে অপেক্ষা করে মৃত্যু। তবু তো এই জন্মদিনের দিন জীবনকেই বেশি করে আঁকড়ে ধরতে ইচ্ছা হয় আমার।
এলোমেলো, এলেবেলে বিন্দাস জীবন ও জন্মদিন - অভিজিৎ বসু।
৩১ মে, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন