সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শুভ জন্মদিন বাপি

খাতায় কলমে দুদিন আগেই নাকি বাবার জন্মদিন চলে গেলো। যা আমি বুঝতেই পারিনি একদম। আসলে আমাদের সময়ের সেই বাবা,মা, মামা, মামী, জ্যাঠা, কাকাদের তো আর কোনোদিন জন্মদিন পালন করা হয়নি ঘটা করে এই একান্নবর্তী সংসারে। তাই সেটা জানাও হয়নি কোনওদিন। বাড়ীর এইসব মানুষজন যাঁরা ছাতার মত বাস করেন আমাদের মাথার ওপর। যাঁরা আমাদের ঘিরে থাকতেন তাঁরা আমাদের ছেড়ে চলে গেলে মনে হতো বিরাট একটা স্থান শুন্য হলো যেনো আমাদের জীবনে। যে শূন্যতা ভরাট হবে না কিছুতেই কোনোদিনও কোনোভাবেই। তাই ফেসবুকের পর্দায় দেখলাম বাবার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন অনেকেই ঘটা করে। মা চলে যাবার পর আমাদের বাবা আর ছেলের জীবন কেমন যেনো ভিন্ন খাতে বয়ে চলেছে বেশ কিছুদিন ধরেই। প্রায় দু বছর হলো মা নেই। বাবা একা একাই ঘুরে বেরিয়ে এদিক ওদিক করে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন বেশ দিব্যি। আমিও একা একাই জীবন কাটিয়ে দিলাম কর্মহীন মানুষ হয়ে। বাবা মাকে না দেখে না টাকা দিতে পেরে। শুধুই নিজের জেদ আর অহংকার বজায় রেখে। সততার অহংকার। জানিনা সেটা ঠিক না বেঠিক।  


তবে এই মা আর বাবা। দুই ভিন্ন মেরুর দুই বাসিন্দা। একজনের কাছে সন্তানের ছুটে যাওয়া। আর অন্য জনের কাছে যেতে গিয়েও কেমন করে যেন দূরত্ব বজায় রেখে এগিয়ে চলা একটু পাশ কাটিয়ে। সত্যিই কিন্তু এই যে পার্থক্য এটা বুঝতে পারলাম আমি মা চলে যাবার পর। এক জনের সংসার ছেড়ে চলে যাবার পর। মায়ের এই কাছে টেনে নেওয়া আর বাবার এই শুধুই ছুটে চলা আর ছুটে চলা আমায় কেমন যেন যন্ত্রণা দেয় মাঝে মাঝেই। আর তাই ফেসবুকের দেওয়ালে হেলান দিয়ে বাবার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে কেমন থমকে যাই আমি। সেই ছোটো বেলা থেকেই তো ছুটে বেড়ানো একটা শৈশব। মা বাবাকে হারিয়ে আরামবাগ এর সেই মেঠো পথ ধরে কলকাতায় চলে আসা একটি শৈশব। সেই নেবুতলা পার্ক, সেই ওয়েলিংটন স্কোয়ার, সেই বরানগর, সেই হোমিওপ্যাথি শিশির ওষুধের মিষ্টি গন্ধ, সেই যে কলকাতার ফাঁকা ফুটপাথ, সেই রাতের অন্ধকারে একা একাই ধীরে ধীরে ফুটপাথেই বড়ো হয়ে যাওয়া দিদিদের সংসারে ভর না করেই একটা শৈশব, কৈশোর আর তরতাজা যৌবন। 

সত্যিই বেশ ভালই জীবন। সেই জীবনের জন্মদিন। যে জন্মদিন নিয়ে আমার কোন তাপ আর উত্তাপ নেই একটুও। তবু ফেসবুকের দেওয়ালে সেই জন্মদিন উপলক্ষে আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় কিছু কথা লিখতে ইচ্ছা হলো আমার। যে জীবনে জড়িয়ে আছে শুধুই দুঃখ, হতাশা, গ্লানি, কর্মহীনতা, যন্ত্রণা আর ভগবানকে ভালবেসে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। শুধুই আমারও জীবন আছে এই কথাকে স্মরণ করেই। খারাপ নয় কিন্তু এই জীবন দর্শন। সেই শ্রীরামপুরের ৫ নম্বর এঁদোপুকুর লেন, সেই অমিতা বেকারীর ভাড়া বাড়ী, সেই লিলুয়ার কারখানা, সেই রিষড়ার ছোট্টো টালির ঘর, সেই একসাথে রোদে দাঁড়িয়ে দুই বন্ধুর পাশাপাশি ঘর তৈরি করা, সেই একজনের কিছুদিন আগেই এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া। জীবন কেমন যেনো ছন্দময় একটা গদ্যের মতো।

সত্যিই জীবন বড়ই অদ্ভুত। সেই লাল পার্টি করেফুকার স্লোগান, সেই শ্রমিকের অধিকার আদায় করতে মে দিবসের ডাক দিয়ে ছুটির দিন যাপন করা দুই বন্ধুর একসাথে এক লাল পার্টির আদর্শের প্রতি সম্মান জানিয়ে। তারপর ধীরে ধীরে আলাদা হয়ে যাওয়া। সেই এলকালি কারখানা থেকে কাজ সেরে ক্যান্টিন থেকে মিষ্টি কিনে ঘরে ফেরা। সেই বসিরহাটের মাঠের মাঝে কাজ করে সপ্তাহান্তে মিষ্টি নিয়ে ঘরে ফেরা। একসাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা আমাদের তিনজনের। আর তারপর সব কেমন যেন ছন্নছাড়া হয়ে যাওয়া। সেই ভেঙে যাওয়া সংসার আর জোড়া লাগেনি কোনোদিন। আজও সেই মা চলে যাবার পরে ভেঙে পড়া সংসারে ভাঙন আরও প্রকট হয়েছে যেনো দিনদিন। তবু আজ বাবার জন্মদিনের শুভেচ্ছা বিনিময় দেখে মনে হলো কত কথা। সেই দেওঘর গিয়ে বাবার দাঁড়িয়ে থাকা গোবিন্দর সাথে। সেই রিষড়ার দুই মন্দিরের দড়ি টানাটানি। সেই বাবার নামে অভিযোগ ওঠা। আমার ছুটে যাওয়া দেওঘরে। নিজের পরিচয়ে সব কিছুর সমাধান হয়ে যাওয়া সঞ্জীব মণ্ডলের হাত ধরে আর তাঁর সাহায্য নিয়ে। জানিনা আমি কেমন আছেন তিনি। 

সেই মগরা মন্দিরের লক্ষ্মী দত্ত দা, সেই মাষ্টারমশাই মানে গোপীবল্লভ সাহা, সেই নীরেন চৌধুরী সদ্য প্রয়াত হলেন, অনিল দাস, হরিপদ দা, আর সাধন দা। সেই কেষ্ট মুখার্জী দা, হারান দা আর মন্মথ দা। সেই দেবাশীষ ঘোষ, অধীর দা আর সুজিত দা আর হারাধন দা আর যতীন দা। সেই কোন্নগরের মন্দির, সেই ২১ শে জানুয়ারী উৎসবের আয়োজন, সেই কত যে স্মৃতি রোমন্থন করতে ইচ্ছা হয় আমার এই রাতের বেলায়। সেই মা চলে যাবার পর বাবার কেমন একা হয়ে যাওয়া। সেই মন্দির আর দেওঘর নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। সেই কমল দা, গীতা আর গোবিন্দ, জয় পালদের নিয়ে,গুরুপ্রসাদ রায়কে নিয়ে, বাকিদের সাহায্য নিয়ে লড়াই করে কষ্ট করে টিকে থাকা। জীবন তো এমন যে মানুষটা কোনওদিন একা বেঁচে থাকার চেষ্টা করেনি আজ সে দিব্যি সুখেই হাসি মুখে একাই বেঁচে আছে যেনো। এটাই তো মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়া। জল না গড়িয়ে খাওয়া মানুষটার সব একা হাতে করেই বেঁচে থাকার চেষ্টা করা। আজ মা বেঁচে থাকলে এইসব দেখলে নিশ্চয়ই খুশি হতেন তিনি বোধহয়। 

সেই মাঝে মাঝেই বোলপুরে চলে যাওয়া, সেই এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানো। সেই নানা ফেলে আসা দিনের কথা মনে পড়ে যায় আমার। সেই ব্যান্ডেল স্টেশন যেতে গিয়ে তারকেশ্বর লোকাল ধরে চলে যাওয়া অন্য স্টেশনে। অনেক কষ্টে গাড়ি করে ফিরিয়ে নিয়ে আসা বোলপুর যাওয়ার ট্রেন ধরাতে সাজানদার। সেই কত যে ঝগড়া প্রকাশ্যে চলে আসা আমাদের বাবা আর ছেলের। আর কেমন করে যেনো দূরে চলে যাওয়া আমাদের। আমার কর্মহীন জীবন আর একজনের এই প্রায় আশি বছর বয়সে কর্মের জোয়ারে ভেসে যাওয়া ছুটে বেড়ানো একটা জীবন। যে জীবন এখনও প্রতিষ্ঠা চায়। যে জীবন এখনও সম্মান চায়। যে জীবন এখনও অনেক কিছুই চায়। 

আর তাই বোধহয় এই বুড়ো বয়সেও সেই জীবন ছুটে বেড়ায় এদিক থেকে ওদিক। আসলে এই ছুটে বেড়ানো জীবনের মাঝে নিজেকে কেমন যেন বেমানান লাগে আমার। বড্ড একাও লাগে যেনো আমার। ব্যাগ কাঁধে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বাবাকে বলতে ইচ্ছা হয় কি দরকার আর একা একা বেঁচে থাকার। মা নেই, বাবাও দূরেই সরে থাকেন। আমার বুকের ভেতর একটা কষ্ট দলা পাকিয়ে ওঠে। চোখের কোলে জল চলে আসে। ঝাপসা হয় মোবাইলের লেখা। ভেঙে যায় সাদা কালো অক্ষর। মনে হয় বলি কি দরকার এই ছোট্ট জীবনে এইভাবেই দৌড়ে যাবার। না, সব কি আর সবাইকে বলা যায়। মাকে যা বলা যায় বাবাকে বোধহয় কিছুতেই সবটা বলা যায় না। ভালো থেকো তুমি বাপি। সুস্থ থেকো তুমি। একা একা সাবধানে থেকো তুমি। 

শুভ জন্মদিন বাপি - অভিজিৎ বসু।
দশ জুন, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য নিজের মোবাইল ক্যামেরায় তোলা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...