খাতায় কলমে ফেসবুক ঘুম থেকে উঠতে জানিয়ে দিলো আজ এর জন্মদিন কাল ওর জন্মদিন। এটা একটা ভালো গ্যাঁড়াকলের বিষয় কিন্তু। মনে না থাকা মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়া। স্মৃতির পাতা থেকে হারিয়ে যাওয়া মানুষকে উদ্ধার করে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। সেই অতল সমুদ্রের গহ্বর থেকে। বেশ ভালই ব্যাপার কিন্তু এটা।
স্মৃতিকে উস্কে দেওয়া। সেই দেবাশীষ চৌধুরী সম্ভবত ভালো নাম। ডাক নাম বাবুন। যদিও সেই ছোটো বেলায় যাঁকে আমরা ভালো ছাত্র, বইতে মুখ গুঁজে পড়ে থাকা স্টুডেন্ট হিসেবেই জানি। সেই এঁদোপুকুর এর পাড়া, সেই এঁদোপুকুর লেন পরে যা বিবেকানন্দ লেন হয়। আর সেই বিবেকানন্দ সোশ্যাল ইউনিটি সেন্টার এর সেই বিখ্যাত দুর্গাপুজোর শুরুর স্মৃতি।
আসলে ফেলে আসা দিন। সেই ওদের বাড়ীর বড়ো বড় জানলা, সেই ওই বিখ্যাত বাড়ীর ভেজানো দরজা, সেই সব রাশভারী মানুষজন, সেই মিহিরদা, ওর মা, ওর বোন আর সেই ছোট্ট মাঠে দুর্গাপুজোর ঢাকের বাদ্যি সব যে মিলে মিশে একাকার হয়ে আছে আমার এই জীবনের সাথে। সেই পাড়ার পূজো শুরু হওয়া। সেই প্রথম শোলা কেটে ডিজাইন করে অতি সাধারণ মন্ডপকে অসাধারণ করে তোলার চেষ্টা করা।
ভোরবেলায় দুগ্গা মায়ের সেই উজ্জ্বল মুখ, চোখ জ্বালা করছে কেমন রাত জেগে সেই ধোঁয়া ওঠা মাটির চায়ের ভাঁড়। সেই ভজা, হারু, ভাইমামা, টাকুম মামা, বাপি মানে মৃণাল, বিশু, মধু আর স্বপনের সুন্দর জুটির চেনা আমাদের সংসার। সেই আরও কতজন যে জড়িয়ে ছিল এই ছোট্ট পাড়ার নতুন পুজোয়। আসলে সেই লাহিড়ী পাড়া আর গোস্বামী পাড়ার মোড়ে পুজোয় আমাদের কেমন বহিরাগত হয়ে যোগ দেওয়ার পর এই নিজেদের পাড়ার পুজোয় মেতে ওঠার মজা আলাদা। আর সেই পুজোয় বেশী বিজ্ঞাপন জোগাড় করে এনে দিয়ে সাহায্য করা বাবুন এর বাড়ির লোকদের।
সেই আমলে পাড়ায় এমন দু একজন মানুষ থাকতেন। যাঁরা সবার বিপদে আপদে ঝাঁপিয়ে পড়তে দ্বিধা করতেন না। সেই পূজোর মণ্ডপে আমার হাতে নতুন এগারো বারো ক্লাসের বই কিনে তুলে দেওয়া। সেই মল্লিকদের দোকান এর বই। সেই মোটা বই এর গন্ধ আজও নাকে লেগে আছে আমার। জীবনের এই হারিয়ে যাওয়া গন্ধ, পূজোর গন্ধ, ঢাকে কাঠি পড়া, সেই পূজোর প্রসাদ আর ভোগ খাওয়া, সেই প্রথম কাউকে শাড়ি পড়ে দেখে মুগ্ধ হয়ে যাওয়া, আর সেই আমার কলেজের এক বান্ধবীর পূজো দেখতে আসা পরিবারের লোকদের নিয়ে। আমার দুর থেকে তাদের দেখে আলগোছে লুকিয়ে পড়া মণ্ডপের ভীড়ে।
ইট পাতা রাস্তা, লাইট পোস্টে হলদে আলো, সেই নেরুর পিসি মনে হয় মায়া মাসীর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা, সেই ঝুমা, পুঁটি, ঝুনু, সেই অপা, মুনমুন, আরও কতজন যে ছিল পুরোনো এই মামার বাড়ীর পাড়ায়। সেই গলি রাস্তা, সেই নানা ধরনের মানুষজন যাঁদের ঘরে যেতে কথা বলতে দ্বিধা হয়নি আমার কোনো সময়। আজ সেই বাবুনের জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে এমন হাজার কথা মনে পড়ে গেলো আমার। সেই ওর নানা ছবি দেখে সেই বই এর মাঝে আটকে পড়া ছবি দেখে মনে পড়ে গেলো এইসব নানা পুরোনো কথা।
ওর বাড়ীর সেই উঠোন, সেই আম গাছ, সেই বাড়ীর ভেতর প্রবেশ করলেই বুক ঢিপ ঢিপ করা। গম্ভীর মুখে সবার বসে থাকা। সেই পুজোয় ভীড় করে জড়ো হওয়া সবার। সেই ঠাকুর নিয়ে গঙ্গার ঘাটে যাওয়া মাকে বিদায় জানাতে। সেই ক্লাবের ভিতর পড়তে বসা ফ্রী কোচিং সেন্টার এ বিজয় মামার কাছে। সেই ক্লাবের ক্যারাম বোর্ড, উজ্জ্বল আলো, সেই টালির চালের ঘরে জড়ো হওয়া লোকজন আজ যা পাকা ঘর হয়ে অনেক টাই বদলে গেছে।
বদলে গেছে এই পাড়ার নানা মানুষজন। বদলে গেছে সেই পূজোর মিষ্টি গন্ধ। আজ ওর জন্মদিনের দিন শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে মনে হলো আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় এই সব কিছু কথা লিখে ফেলি আমি। যে অকথিত কথা বলতে ইচ্ছা হলো আমার এই সকাল বেলায়। যে সকালে এই এঁদোপুকুর এর খুব কাছে থেকেও কেমন অনেক দূরে সরে আছি আমি। শুভ জন্মদিন দাদা। ভালো থেকো তুমি। আমার সেই মেয়ের বিদেশী ভাষা নিয়ে পড়ার সময় কত কথা হতো আমার সাথে। সত্যিই অসাধারণ এই ফেলে আসা জীবন। যে জীবন আমায় বারবার নতুন করে জীবনকে দেখতে শেখায়। ভালো থেকো তুমি দাদা।
শুভ জন্মদিন বাবুন - অভিজিৎ বসু।
তেরো জুন , দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন