সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইটিভির ডেস্কের জয়ন্ত

ফোনটা এসেছিলো দার্জিলিং থেকে ব্যাঙ্গালোরে। কিছুটা অবাক করেই আমার কাছে আজ সকালবেলায়। আজকাল কে আর কার খবর নেয়। জীবনের এই দৌড় আর দৌড় এর মাঝে আত্মসর্বস্ব জীবনের মাঝে কে আর কার জন্য অপেক্ষা করে সময় নষ্ট করে ফোনে যোগাযোগ করে বলতে পারেন। এই চড়াই আর উৎরাই এর পৃথিবীতে এমন কে আর খুঁজে খুঁজে আমায় বের করে আমার লেখা পড়ে। কিছুটা আমার কাছে বাড়তি পাওয়া এই দার্জিলিং এর ফোন।

 সেই কবে ২০০৬ সালে রামোজি ফিল্ম সিটিতে কেউ একজন রাতের নাইট ডিউটি করতেন। কেউ একজন সিঙ্গুরের ছবি পেয়ে খবর লিখতেন ডেস্কে বসে বসে আর মনে মনে স্বপ্ন দেখতেন আরও বড়ো হবার।‌ তাঁকে আমি চোখে দেখার সৌভাগ্য হয়নি কোনোদিন। সেই মানুষটার ফোন পেয়ে অবাক হলাম এতগুলো বছর পর। যিনি আমার লেখা পড়ে মনে মনে ভেবেছিলেন কথা বললে হয় একদিন আমার সাথে। সত্যিই অসাধারণ এই মিডিয়ার জীবন। যে জীবনে এই কত চেনা মুখ এর কেমন করে অচেনা হয়ে যাওয়া দেখতে পাওয়া যায় অনেক উপরে উঠে গিয়ে কাজের ক্ষেত্রে। আবার কত আবছা আলোয় উদ্ভাসিত মুখের কাছে ধরা দেওয়া দেখা যায়। সেই পাহাড় থেকে সাগর পেরিয়ে এই মাটির ধূলি ধূসর পৃথিবীতে। 

সেই কবেকার কথা এইসব। সেই অনেকগুলো জয়ন্তর মাঝে একজন সে। সেই কৃষ্ণনগরে যাঁর বাড়ী। কবে যে রাতের বেলায় তাঁকে ছবি পাঠিয়ে খবরের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতাম আমি কে জানে কত বছর আগের ঘটনা। সারাটা জীবন তো এই খবরের নেশাতেই জীবন যৌবন কেটে বার্ধক্যে উপনীত হলাম আমি আজ। তার জন্য আজ আর আফশোষ হয়না আমার আজ একদম। যা হলাম, যা পেলাম, এই অনেক আর কি। একজনের সেই পরীক্ষা দিয়ে হায়দরাবাদে চাকরি করতে যাওয়া। তারপর মিডিয়ার কাজ করেও কেমন করে যেনো সরকারী চাকরীর পরীক্ষায় বসার নেশায় রাত জেগে পড়তে বসা। সেই কত পুরোনো দিনের সব টাটকা তাজা স্মৃতি যে পাহাড় থেকে আজ মেঘের মত ভেসে এলো আমার কাছে কে জানে। 

সেই কত চেনা মুখের গল্প, সেই ম্যানেজার সৌমেন এর নাম, সেই হিন্দমোটর এর বিভাস এর নাম। সেই পার্থ, শুভ্রাংশু চট্টোপাধ্যায় আর বিশ্বজিৎ আরও কত জনের নাম উল্লেখ করলো সে কথা বলতে গিয়ে। আসলে অতীত বড়ো কঠিন আর কঠোর আবার অতীত পেলব দুধে আলতা মেয়ের মতোই সুন্দর। যে আমাকে কাঁদায় আবার হাসায়। ‌সত্যিই অসাধারণ এই মানুষের জীবন। যে জীবন এইভাবে ফিরে আসে মনে করিয়ে দেয় আমায় আমার কাজের কথা। যে কাজ করেই বেঁচে ছিলাম আমি এতদিন এতগুলো বছর। আজ না হয় আমি টোটো চালক হয়ে গেলাম স্বেচ্ছায়। 

যাকগে এতক্ষণ যাঁকে নিয়ে ভূমিকা লিখে ফেললাম সেই জয়ন্ত কুমার মল্লিক আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায়। যিনি রতনদার স্নেহের আর খুব প্রিয়জন কাছের জন। সেই অনেক ভরসা করেই আমায় সেই এক কাগজের দায়িত্ব পেয়ে লোক জোগাড় এর সময় বলেছিলেন জয়ন্ত তোকে উত্তরবঙ্গে সাহায্য করবে। বলে তিনি নম্বর দিয়েছিলেন আমায়। সেই ঝকঝকে পড়াশোনা করা মেধাবী একজন ছাত্র। দু বছর কোনও ভাবে এই গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের প্রেমে পড়েছিলেন তিনি। বাংলা ছেড়ে হায়দরাবাদে তেলেগু সিনেমায় অভিনয় করতে নয় ভিন রাজ্যে বাংলা চ্যানেলে কাজ করতে চলে যাওয়া তাঁর। আর সেই কাজের সুবাদে কিছুদিন আমার সাথে কাজ করা। সেই হায়দরাবাদ আর হুগলীর যোগাযোগ হয়ে যাওয়া। সেই কথা মনে রেখে আর আমার লেখা পড়ে তাঁর ফোনে যোগাযোগ করা আমার সাথে। এটা যে কত ভালো লাগলো আমার কত যে ভালো অভিজ্ঞতা হলো আমার কি বলবো। 

এখনও পৃথিবীতে তাহলে এমন কেউ আছেন যাঁরা এইভাবেই যোগাযোগ করে মৃত সম্পর্ককে জাগিয়ে তোলেন কফিন থেকে। কিছুটা অবাক হলেও আড়ষ্ঠ ভাব কাটিয়ে দেড় ঘণ্টা কথা হোলো তাঁর সাথে আমার। হাবিজাবি নানা কথা। শিরদাঁড়া সোজা রেখে চলার কথা। তেলবাজির যুগে এইভাবেই তাঁর সরকারী চাকরিতে টিকে থাকার কথা। আর ক্রমাগত নানা কাজ শিখে নিজেকে বদলে নেবার কথা। জ্ঞান আহরণের নেশা তাঁকে এতদূর পৌঁছে দিয়েছে আজ। না হলে সেই রামোজি ফিল্ম সিটির রাস্তা পার হয়ে দর্জিলিংয়ে পৌঁছে গেলেন কি করে। নিষ্ঠা আনুগত্য আর কৃতিসম্বেগ এই তিন এর মাধ্যমে তাঁর এগিয়ে চলা। বেশ ভালোই লাগলো আমার কথা বলে। যে লেখা নিয়ে নানা জন নানা কথা বলেন আমায় সেই লেখা লিখতে বললেন তিনি। একজন হলেও পাঠক পাবেন বলে ভরসা দিলেন সেই আমার রাতের সিঙ্গুর আন্দোলনের সময়ে রাতের ডিউটি করা এক প্রাক্তন সহকর্মী। যিনি বলেন হ্যাঁ আপনি কাজ করেছিলেন সেই সময়ে খুব ভালো ভাবেই। সেই কথা তিনি নাকি অনেককে গল্প করতেন। 

তাহলে আমিও পারতাম একসময় এই মিডিয়ায় কাজ করতে। কোনও ভাবেই কাউকে তেল না দিয়ে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে। সেই একঘণ্টা পর পর সেই মাত্র পাঁচ মিনিটের খবর করে কী খুশী থাকতাম আমরা
সেই সময়ে। সেই জেলার খবর আমার বাংলার কী দাপট ছিল সেই আমলে। দাপট ছিল হায়দরাবাদের কিছু লোকজনের আর কর্তাদেরও। ধীরে ধীরে দাপট কমে গেলো চ্যানেলের হাত বদল হলো আমাদের নিশ্চিত রিপোর্টার এর জীবন যাপন কেমন স্থবির বেনাপোল সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে হত হলো। আরও কত কী যে হোলো সেই সময় ধীরে ধীরে। আজ কত কিছুই যে মনে পড়ে যাচ্ছে আমার ওর ফোন পেয়ে। সেই সুন্দর ফিল্ম সিটির রাস্তা, সেই নীল সাদা বাস,সেই ক্যান্টিন এর ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ আর গরম সিঙ্গাড়ার গন্ধ,সেই খাবার খেতে লাইন দিয়ে ভীড় করা কিছু জীবন। যাঁরা বাংলা ছেড়ে ভিন রাজ্যে এসে বেশ সুখেই ছিলো একদিন। 

রাজার দিন পড়ে গেলো, রাজত্ব চলে গেলো সেই একটা মুঠোয় সব রাজ্যের খবর এর দুনিয়ায় ঘুরে বেড়ানো সেই সম্রাট আকবর সেই রামোজি রাও এর সাম্রাজ্য হাত বদল হলো একদিন। আমরা এদিক ওদিক ছিটকে গেলাম আজ জয়ন্তর ফোন পেয়ে এইসব নানা কথাই মনে হলো আমার। সেই পুরোনো দিনের আর এক জয়ন্ত খুব কম টাকার কাজ করতো আর লোকের বাড়ী পূজো করতো সে কোথায় আছে কে জানে আজ আর যোগাযোগ হয়না তার সাথে। ওর মেয়েটা বড়ো হয়ে গেছে আজ। সত্যিই কেনো যে এই ফোন এলো আমার কাছে আজ এতদিন পরে কে জানে। সেই ভাগ্যলতা, সুষমা, কোটাপেট এর নাম মনে পড়ে গেলো আমার। মেধা, অধ্যবসায় আর নিজের চেষ্টায় ওর জীবনের এই সফলতা পাওয়া দেখে মনে মনে ভালো লাগে আমার বেশ। আমরা যেটা পারিনি সেটাই ও করে দেখলো আজ। সত্যিই তো বেশ ভালো লাগে এটা। মিডিয়ার ভূত ঘাড় থেকে নামিয়ে নেশাকে সরিয়ে দিয়ে জীবনে এইভাবেই প্রতিষ্ঠিত হওয়া। যে প্রতিষ্ঠা আর যাই হোক মাথা উঁচু করে বাঁচতে শেখায়। পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকতে শেখায়। আর কী এর থেকে ভালো আর কী হতে পারে বলুন।


ডেস্ক থেকে বেরিয়ে পড়ে সেই মিডিয়ার কাজ ছেড়ে এই ভাবেই ঘুরে দাঁড়ানো একটা জীবন। যে জীবনকে আমি স্যালুট জানাই। ভালো থেকো তুমি জয়ন্ত। হয়তো কোনোদিন দেখা হবে কোথাও আমাদের আবার নাও হতে পারে দেখা। তবে এই ভাবে যোগাযোগ করে আমার অতীতকে উসকে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই আবার আমি। জীবনের ফেলে আসা অতীতকে আগলেই তো আজ আমার বেঁচে থাকা একা একদম একা। আমার আশেপাশে কেউ নেই আজ। শুধু অতীত আর ফেলে আসা দিনের কিছু কাজের স্মৃতি রোমন্থন করে টিকে থাকা আমার।

সেই সিঙ্গুরের ফাঁকা মাঠের মাঝে একা একাই দাঁড়িয়ে থাকা আমার। আর সেই সব কথা লিখে ফেলা আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায়। ভালো থেকো তুমি জয়ন্ত। তুমিই বলে ফেললাম আমি। ভুল লিখলে ক্ষমা করে দিও আমায়। কিছুটা আবেগ প্রবণ হয়েই লিখে ফেললাম আমি এইসব নানা কথা। সেই রাত একটার বুলেটিন, সেই দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ফাঁকা রাস্তা, সেই আন্দোলন আর আন্দোলন এর খেলা, সেই জমি নিয়ে গণ্ডগোল আর বিরোধ। সেই শাসক সিপিএম আর দুর্বল বিরোধী দল তৃণমূলের ব্রিগেড এর তীব্র সংঘাত। আর সেই সংঘাতের টাটকা তাজা সব ছবি সিঙ্গুরের মাঠ থেকে পৌঁছে যাচ্ছে দেড় হাজার কিলোমিটার দূরের রামোজি ফিল্ম সিটিতে বাংলা ডেস্কে ইটিভি বাংলার ওবি ভ্যান দিয়ে। আজ সত্যিই বলছি এই জীবন আমি বড্ড মিস করি আজও। ভালো থেকো তুমি পাহাড়ের রাজ্যে। 

ইটিভির ডেস্কের জয়ন্ত - অভিজিৎ বসু।
সতেরো অক্টোবর দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...