আজ বিধানের জন্মদিন। হুগলীর বিখ্যাত রিপোর্টার বিধান সরকার। সেই আকাশ বাংলা থেকে ২৪ ঘণ্টায় উত্তীর্ণ হওয়া রিপোর্টার বিধান সরকার। যে দিন রাত রোদ জল ঝড়কে মাথায় নিয়ে দৌড়তে পারে সেই খবর এর জন্য যে কোনো সময়ে হাসিমুখে। সেই মিল্টন সেন এর ক্যামেরাম্যান হয়ে আর সেই ক্যাসেট পৌঁছে দিয়ে যার যাত্রা শুরু এই মিডিয়ায় আজ সেই বিধান হুগলীর বিখ্যাত একজন দাপুটে সাংবাদিক সে বর্তমানে। সিপিএমের চ্যানেল এর ২৪ ঘণ্টার সাংবাদিক থেকে আজ সে অনেক বড়ো জায়গায় পৌঁছে গেছে নিজের কর্ম কৃত্বিতে আর নিষ্ঠার জোরে আর কাজের জোরে আর জনসংযোগ এর জোরে। যেটা আমার নেই একদম। তাই আমি আজ টোটো চালক।
সেই হুগলীর কিট্টু আর বিধান। সেই মিল্টন সেন আর বিধান এর বিখ্যাত জুটি। সেই এবিপি আনন্দের সৌরভ আর বিধান এর জেলার জুটি। সেই জঙ্গিপাড়ার সুদীপ আর বিধান। সেই উপেন, তাপস দা, বাপি, মৃণাল দা, মিন্টে, সৌরভ হাজরা, তাপস লাহা, রানা, সৌমেন, পলাশ ,নির্মল তো নেই আজ, নেই সুব্রত যশ। আরও কতজন যে এই জেলায় কাজ করতো আজ অনেকেই নেই। সেই আজকালের নীলুদাও নেই আজ। সেই সিঙ্গুরের মাঠ, সেই চন্দননগরে আর চুঁচুড়াতে ঘুরে বেড়ানো ওর মোটরসাইকেল নিয়ে হাসিমুখে ভয় না পেয়ে। সেই ২৪ ঘণ্টার চ্যানেলে লক ডাউন এর সময় কাজ করা। সেই কত যে স্মৃতি ভীড় করে আসে আমার আর ওর দুজনের। সত্যিই অসাধারণ এই মিডিয়ার জীবন। যে জীবনে শুধুই দৌড়, দৌড় আর দৌড়। যে দৌড় আমার স্থবির হয়ে গেছে একদিন ওর দৌড় আজও রয়ে গেছে।
সেই ২৪ ঘণ্টায় কাজের সুবাদে জেলার সিপিএমের নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে ওর ভালই। সেই বাম আমলে ওর ছিল নেতাদের কাছে যাবার অবারিত দ্বার। সেখানে ইটিভির রিপোর্টার আমায় কিছুটা হলেও লাল পার্টির নেতারা দেখতে পারতেন না একদমই। সেই পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে যায় আমার আজ সিঙ্গুরে শিল্প না জমি সেই জোরদার লড়াই। বেচারাম মান্নার সাথে সিপিএমের। সেই ওর চ্যানেলের শিল্পের হয়ে গলা ফাটানো আর নানা টিভির শো করা সিঙ্গুরের জমিতে। সেই কত কঠিন কাজ করে দেওয়া ওর হাসি মুখে। আসলে এটাই যে কাজ একজন রিপোর্টার এর। যে শুধুই এইভাবেই হাসিমুখে দৌড়ে যাবে আর কাজ করবে যে কোনও পরিস্থিতিতে। সেই আমার যে কোনো দরকার হলেই ওকে ফোন করে নেওয়া। সেই এক চ্যানেলে কাজ করার সময় হোক বা কাজ ছেড়ে টোটো চালকের কাজ করি বলে কোনো লজ্জা লাগে নি আমার ওকে ফোনে যোগাযোগ করতে।
সেই পুরোনো দিনের সব টাটকা তাজা স্মৃতি রোমন্থন করা। ওর বউ এর অসুস্থ হয়ে পড়া। সেই কলকাতা আর ব্যাঙ্গালোরে চিকিৎসা করতে নিয়ে যাওয়া। সেই ওর ছেলেকে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ভর্তি করা। সেই পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে যায় আমার। আগে তো কাজের সূত্রে রোজ কথা হতো আমার আর ওর। আজ আর তেমন কথা হয়না আর। সেই কিছু পুরোনো ছবি দেখে মনটা ভালো হয়ে যায় আমার। সেই জেলা জুড়ে দৌড়ে বেড়ানো। সেই টিসি লিখে ক্যাসেট পৌঁছে দেবার আমল থেকে আজ সেই মোবাইল ফোনে ছবি চলে আসা এক নিমেষে। সেই ওর হাসিমুখে ব্যাট হাতে ছবি দেখে মনে মনে বেশ ভালোই লাগে আমার। সেই সৌরভ বন্দোপাধ্যায় আজ অসুস্থ, সেই কিট্টু মানে বিশ্বজিৎ সিংহ রায় আজ আর মিডিয়ার কাজ করে না, আমি আজ টোটো চালক, আরও কতজন যে এই মিডিয়ার লাইন ছেড়ে বেলাইন হয়ে গেছে কে জানে। তবুও বিধান সরকার কিন্তু লাইনে রয়ে গেছে আজও। লাইনে নেই শ্রীরামপুরের কলকাতা টিভির সৌমেনও।
আসলে এই মিডিয়ার আজ ক্রান্তিকাল। এই গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের আজ কেমন যেনো হাঁফ ধরা একটা অবস্থা। এই মিডিয়ার জীবন আজ যেন কেমন আলুনি আর পানসে লাগে যেনো। সেই সিপিএমের আমল, সেই বামেদের শাসনে রিপোর্টারদের দাপট নিয়ে খবর করা। সেই রক্তচক্ষুর মাঝে আর লাল চা খেয়ে খবর করে খাবার জোটানো আমাদের কম টাকায় সংসার চালানো। সেই একটাও প্রেস ক্লাব তৈরি না হওয়া সেই আমলে। এই আমলে তো পাড়ায় পাড়ায় প্রেস ক্লাব আর তার সুন্দর সাজানো গোছানো অফিস ঘর। যেখানে নেতা মন্ত্রী আসেন হাসি মুখে বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় হয়। এস পি আর ডি এম এসে হাজির হন। শীত পড়লে মাঠে খেলা হয় রিপোর্টার আর পুলিশের।
কই আমি, আরেফুল এদের আমলে এইসব কথা আমরা ভাবতেই পারিনি কোনওদিন। পুলিশ হলো শত্রু আর নেতা মন্ত্রী তো আরও বড় শত্রু আমাদের। এইভাবেই কেটে গেলো আমাদের জীবন। যাঁকে সম্বল করেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসা হাসতে হাসতেই। আর তারপর জেলায় জেলায় সিন্ডিকেট আর সংবাদিকদের বশ করে কেমন করে যেনো ক্ষমতার অধিকারী হয়ে যাওয়া। সব মিডিয়াকে হাসিমুখে ম্যানেজ করে নিয়ে। আর মিডিয়ার দাদা দিদিরা আর মালিকরা সেটাই মেনে নিয়েছেন সবটাই এই মা মাটির আমলে। সত্যিই অসাধারণ এই বাংলার মিডিয়ার ভোল বদল।
আজ ওর জন্মদিনের দিন এইসব কথা বলা উচিত নয় আমার। তবুও তো মনে হল এই বদলে যাওয়া দিন এর কথা একটু লিখে ফেলি আমি আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় আজ। ভালো থাকিস ভাই তুই। শুভ জন্মদিন। তবুও অনেকের এই বেলাইন হয়ে যাবার যুগে এই কঠিন কঠোর হয়ে মিডিয়া নামক পেশায় বেঁচে থাকার যুগে তুই টিকে আছিস সেই ক্যাসেট এর আমল থেকে এই মোবাইল এর যুগে এটাই অনেক বড় ব্যাপার কিন্তু। এর জন্য আমার বেশ গর্ব হয়। সেই খবরের জন্য দৌড়, সেই পুলিশ এর সাথে ঝামেলা, সেই বিখ্যাত সব খবর করে ফেলে কলার তুলে জেলায় ঘুরে বেড়ানো সেই সব দিনগুলো আজ এই বুড়ো বয়সে এসে আমিও বড্ড মিস করি আজ।
খবর এর দিনগুলো বেশ ভালই ছিল আমাদের। সেই চুঁচুড়া শহরে তাপসদার সেই দোকানের আড্ডা, সেই বড়বাজার এর ভরা অফিসে আমার দেখা করতে যাওয়া তপন দাশগুপ্তর কাছে বিপদে পড়ে। সেই মা তারার মূর্তিকে দিয়ে বলা মা দেখবেন। সত্যিই অসাধারণ ছিল কিন্তু সেই সব দিনগুলো আমাদের। আজ আবার ইচ্ছা হয় আমার সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে একটি বার। দৌড় করতেআর শুধুই খবর করতে যে খবর করতে গেলে বাধা আসবে না, নেতা মন্ত্রী আর পুলিশের ফোন আসবে না। সমঝোতা করে চলতে হবে না আমাদের কাউকেই। জানিনা আজ আর সেই সব দিন ফিরে আসবে কি না। তার থেকে এই টোটো চালকের দিন যাপন করা ভালো মনে হয়। শুভ জন্মদিন। হ্যাপি বার্থডে টু ইউ বিধান। ভালো থাকিস তুই।
শুভ জন্মদিন বিধান - অভিজিৎ বসু।
২৬ অক্টোবর দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন