সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আজ জন্মদিন

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ তো শুধুই আমার জন্ম দিনের কথা। যে জন্মদিন নিয়ে একটা গোলক ধাঁধা ছিল বহু দিন ধরে। আজ সত্যিই করেই আমার জন্মদিন।আজ 31 শে মে। বাংলা মাসের সতেরই জৈষ্ঠ্য। সত্যিই তো আমি এমন কোনো কেউকেটা বা মাতব্বর হতে পারিনি জীবনে, যে সেটা ঢাক পিটিয়ে সবাইকে বলতে হবে, জানাতে হবে যে, আজ আমার জন্মদিন ভাই সব। আর আমার এই ছাপোষা জীবনে এমন কোনো বন্ধু, শুভানুধ্যায়ীদের ভীড় নেই যে তারা হুমড়ি খেয়ে সবাই হামলে পড়বে এই আজকের দিনে। সবাই হাসি মুখে বলবে দাদা শুভ জন্মদিন এই বলে শুভেচ্ছা জানাবে চারিদিক থেকে হাজার হাজার মানুষ।

আসলে এই একদম সাধারণ গরীব পরিবারে জন্ম হওয়া আমার ছোটকাল কোনো সময়ই খুব আরাম আর সুখের ছিল না কোনো দিনই। সোনার চামচ মুখে দিয়ে ছোট কাল কাটেনি আমার কোনো দিন। অতি কষ্ট করে বড়ো হতে হয়েছে আমায়। যাই হোক তবুও মা বাবার একমাত্র সন্তান হয়ে দিন কেটেছে চরম দারিদ্র্য আর অভাবকে সঙ্গী করেই। তবু মা বাবা কষ্ট করে, অনেক চেষ্টা করে পড়া করিয়েছেন, মানুষ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু মানুষ আর হতে পারলাম কই। সারা জীবন অমানুষ হয়েই কাটিয়ে দিলাম আমি। 

জীবনের এই জন্মদিনের, কেক কাটার দিনের, ঝড় ঝাপটা তো তেমন আমাদের জীবনে ছিল না তেমন কোনো দিন। সেই সময়ে সমাজ মাধ্যমের কোনো দাপাদাপিও ছিল না একদম। এই  বিশেষ দিনটা একদম সাদা মাটা আর পাঁচটা দিনের মতোই একটা দিন ছিল এই জন্মদিনের দিনটা।

 যে দিন সকাল বেলায় কয়লার রান্না ঘরের উনুনের ধোঁয়ায় চোখ জ্বালা অনুভব করতে করতেও টের পেতাম লুচি ভাজার গন্ধ আসছে দুর রান্নাঘর থেকে। আজ আর বাড়িতে সকাল বেলায় রুটি নয় নরম লুচি। আর পায়েসের ম ম গন্ধে ভরে যেত উঠোন, ঘর, দুয়ার সব কিছুই। কি ভালো যে লাগতো সেই দিনটা আমার। একটু যেনো অন্যরকম একটা দিন। অন্যরকম একটা অনুভূতি।

কেমন একটা ছন্দহীন,গতিহীন, জীবনে চলে আসতো নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখা একটা ভালো দিন। দুপুরে কাঁসার থালায় খেতে দিত মা। বাটি সাজিয়ে সুন্দর করে আসন পেতে। মাথায় ধান দুর্বা দিয়ে আশীর্বাদ করতেন বড়রা সবাই মিলে। যেনো ভালো মানুষ হতে পারি আমি এটাই আশীর্বাদ করতেন তারা। আর সেদিন মার বকুনি খেয়ে মার খেতে হতো না একদম। এটা একটা বড় ব্যাপার ছিল আর বড়ো পাওনা ছিল। 

একটা গরীব পরিবারে জন্মগ্রহণ করে এটা বুঝেছিলাম যে আমাদের আমলে সেই হ্যাপি বার্থডে টু ইউ এর হিড়িক খুব বেশি ছিল না। খুব বেশি কেনো ছিল না বললেই চলে একদম। শ্রীরামপুরের মামার বাড়ির পাড়ার এঁদোপুকুরের তরুণকে একবার জন্মদিনে নেমতন্ন করা হয়েছিল আমার আজও মনে আছে সেই দিনের কথাটা। সেই এক চোখের জলদস্যুর একটা গল্পের বই এনেছিল সেই উপহার হিসেবে। কতদিন ওই জলদস্যুর বইটা বার বার যে পড়েছি। জীবনে কোনো জন্মদিনের এই প্রথম উপহার পাওয়া আমার। দশ বা বারো টাকা দাম ছিল হয়তো সেই বইটার সেই সময়। আসলে সেই বই এর গন্ধ। বইয়ের মলাটে দস্যুর কালো এক চোখ বাঁধা ছবি আমার আজও মনে আছে এত বছর পরেও। যে ছবির কথা, বই এর কথা এত বুড়ো হয়েও ভুলতে পারিনি আমি আজও। 

সেই তরুণ এখন কলকাতা পুলিশের স্যালুট পাওয়া বড়ো চাকরি করে সে বড় পোস্টে হয়তো। আচ্ছা ওর কি মনে আছে সেই সব ছোটবেলার কথা গুলো। গুলি খেলার দুপুর, বিকেল হলেই ফুটবল খেলার জন্য আকুল হয়ে পড়া। কে জানে হয়তো মনে নেই সেই সব কথা। কে আর এসবকে বুকে আগলে করে মনের মধ্য লুকিয়ে রাখে। আর স্মৃতির ভারে ভারাক্রান্ত হয় এমন রাত দুপুরে তাই না। 

আসলে ছোটবেলার সেই জন্ম দিনের স্মৃতি ঝলমল রাস্তায় আরও কত যে মনি মানিক্য লুকিয়ে আছে। এমন জন্ম দিনেই একটু বড়ো বেলায় দেখতাম মা সাদা গেঞ্জি কিনে বাবাকে দিয়ে পাঠিয়ে দিতেন শ্রীরামপুরে। কোনো সময় একটা নতুন লুঙ্গি কিনে দিতেন আমায় মা। ধীরে ধীরে হারিয়ে গেলো সেই ছোটো বেলার দিনগুলো। হারিয়ে গেলো আমার মাও হঠাৎ করেই আমার এই ভাঙাচোরা জীবন থেকে। না মাকে আমি ধরে রাখতে পারলাম না কিছুতেই। 

এমন এক জন্মদিনে আজকের সকাল বেলায় আর মার কোনো ফোন এলো না আমার কাছে। আমিও মাকে ফোন করে বলতে পারলাম না যে, মা ট্রেন ধরলাম অফিস যাচ্ছি আমি। কোনো দিন আসবেও না সেই ফোন আর, বাবু সাবধানে অফিস যাস বাবা। দেখে রেল লাইন পার হোস বাবু। ভাত খেয়েছিস তো। তোর বাবা যাবে আজ আম কিনে দিয়ে আসবে তোকে রাতে খাস তুই অফিস থেকে বাড়ী ফিরে। 

সত্যিই তো সেই সব দিন গুলো যেনো জড়িয়ে ছিল কেমন করে জীবনের নানা রঙে রঙিন হয়ে, উজ্জল হয়ে। আজকের এই সকাল বেলায় জীবনের ফেলে আসা সেই সব দিন গুলোর কথা মনে পড়ে যায় আমার। আসলে জন্মদিন মানেই তো মৃত্যু দিনের আর একটু কাছে এগিয়ে যাবার একটা দিন, একটা সিঁড়ি টপকে আর একটু এগিয়ে যাওয়া আর কি। 

যে জন্মদিন নিয়ে এত হৈ হুল্লোড় মাতামাতি সেই দিনের মাঝেই তো অপেক্ষায় থাকে মৃত্যুর দিনের হালকা একটা পদধ্বনি। তাহলে আর কিসের এই আনন্দ উৎসব। যে দিন আসা মানেই জীবনের নামতার বই এর একটা পাতা উল্টে যাওয়া জীবনের খাতা থেকে। ঠিক যেভাবে শুকনো গাছের ডাল থেকে খসে পড়ে হলুদ পাতা। যে খাতায় অনেক হিজিবিজি আঁচড় কাটা দাগ আছে। যে দাগগুলো বয়স বাড়ার সাথে সাথে কেমন যেনো হারিয়ে যাচ্ছে জীবনের অলিতে গলিতে অলস পায়ে ধীরে ধীরে। ঠিক যেমন করে ছাতা সরাই ওলা হারিয়ে যায় গলি পথে আপন মনে। 

জীবনের এই হারিয়ে যাওয়া দাগ গুলো যে বড়ো মায়ার। যে মায়াজালে বিভোর হই আমি বার বার। আচ্ছন্ন হই বার বার। তাই তো সেই সব কথা মনে পড়ে যায় আমার বার বার। কিন্তু উপায় কি তবুও জন্মদিন এসে হাজির হয় প্রতি বছর। দরজায় কড়া নাড়ে ঠক ঠক শব্দ করে। সত্যিই তো দেখতে দেখতে আমিও কেমন  বুড়ো হয়ে গেলাম আর কি। 

যে ঠক ঠক আওয়াজে ঘুম জড়ানো চোখে বিছানায় শুয়ে আর সাদা লুচির গন্ধ পাই না আমি আর। রান্না ঘর থেকে পায়েসের গন্ধ ভেসে আসে না আর। চোখ বুজে মাকে এদিক ওদিক খুঁজে বেড়াই আমি আজও। কিন্তু কোথায় আমার মা। যে বলবে বাবু সাবধানে কাজে যাস তুই। এখন যে আর কোনো কাজ নেই আমার মা। আমি যে বাতিলের দলে মা। সারা জীবন দৌড়ে কাটিয়ে দিয়েও আজ আমি বাতিল হয়ে গেছি বাংলা মিডিয়া থেকে একদম। তাই কোনো ভাবে টোটো চালক না হয়েও টোটো চালক বলে জীবন কাটিয়ে দি আমি। লুকিয়ে আত্মগোপন করে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়িয়ে বোলপুরের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে দিন কেটে যায় আমার। 

রাস্তায় কত চেনা মুখ গুলো কেমন অচেনা হয়ে এদিক ওদিক না চেনার ভান করে পাশ কাটিয়ে চলে যায় হুস করে। আমায় দেখেও তারা কেউ আর কথা বলে না হাসি মুখে। যারা আগে কত কথা বলত একসময়।অনেকেই আবার জিজ্ঞাসা করেন কোন পথে আমি টোটো চালিয়ে ঘুরে বেড়াই বোলপুরে। কেউ কেউ ফোন করে আমায় বলেন একটু কম পয়সায় কি ঘুরিয়ে দেবে আমায় সস্তায় বোলপুরে আসছি আমি ওই দিন। কেউ আবার কলকাতায় বসে বলেন একটু টোটো চালানোর ছবি পেলে বড়ো ভালো হতো দাদা। খবর করা যেতো তাহলে। খবর পাগল মানুষের এই অবস্থা নিয়ে। আমি যত শুনি আর তত অবাক হই। সত্যিই অসাধারন এই সব কথা শুনি আর মনে মনে আনন্দ উপভোগ করি আমি। ভাবি সত্যিই তো জীবনের কি নিদারুন পরিহাস। এরই নাম জীবন। 

এর মাঝেও  তিন জন মানুষের সাহায্যর জন্য আমি আজও বেঁচে আছি এখনো। আমার পরিবার বেঁচে আছে। আমার মেয়ের পড়া বন্ধ হয়ে যায়নি আজও। যা বলতে কোনো লজ্জা নেই আমার। যাদের জন্য বেঁচে আছি আমি তাদের কাছে সারা জীবন আমি কৃতজ্ঞ থাকবো। এদের মধ্য দুজন সংবাদ মাধ্যমের লোক। আর একজন রাজনীতির লোক যাদের সাহায্য ছাড়া আমি আমার পরিবার বাঁচতে পারতো না কোনো ভাবেই। কিন্তু এই লেখায় তাদের নাম উল্লেখ করলাম না আমি ইচ্ছা করেই।

 এর মাঝে আর একজনের কথা না বললে নয়।আমলকী গাছের পাতার ছায়া দিয়ে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে এমন এক বন্ধুর সন্ধান মেলে আমার। এসবের মাঝে যে আমায় ডেকে কলকাতা টিভিতে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছিল একদিন এই বেকার মানুষকে। যার কাছে আমি কৃতজ্ঞ থাকব সারা জীবন। যে আমায় বলে আবার সুযোগ পেলে আমাকে কাজ দেবে বাতিল বলে দূরে ঠেলে ফেলে দেবে না। এই কথা শুনে সত্যিই তো আমার এই জন্ম দিনের দিনেও বড়ো ভালো লাগে আজ আমার। মনে হয় গোটা পৃথিবীর সব মানুষ এমন স্বার্থপর,আত্মসর্বস্ব হয়ে যায়নি বোধ হয়। কিছু ভালো মানুষ এখনো এই ধুলি ধূসর পৃথিবীতে বেঁচে আছে। 

সত্যিই তো জীবনের এই দিনে দাঁড়িয়ে মনে হয় জন্মদিন মানেই তো মৃত্যু দিনের হাতছানি শুধু নয়। তবু এসবের মাঝেও যে জীবনের রাস্তায় গভীর গোপন কিছু মানুষের ভালোবাসা পেয়ে আমি আজও বেঁচে আছি। এটাই বা কম কি। এই পাওয়ার অনুভূতিটাই বা কম কি বলুন। অনেকে দেখে আমায় এড়িয়ে চলে যান চিনতে না পেরে কথা না বলে। আবার অনেকে বলেন আমরা আছি তো ভয় নেই তোমার। বলে সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দেন। বলে দাদা আমি আছি তোমার পাশে। আমি দুটো ভাত খেতে পেলে তুমিও পাবে দাদা। আমায় বলে ফোনের ওপর প্রান্ত থেকে দাদা, আবার তোমায় আমি কাজের জগতে দেখতে চাই। আমার দু চোখের কোল তখন চিক্ চিক করে ওঠে । কেউ কেউ লাখ লাখ টাকা সাহায্য করে বলে দাদা চিন্তা করো না তুমি। আমি অবাক বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে যাই। ভাবি সত্যিই তো পৃথিবীর এই রং যে দেখিনি আমি কোনো দিন। 

জীবনের এই সব অনুভূতি, এই গভীর গোপন ভালোবাসা পেয়ে আপ্লুত হই আমি বার বার। আবেগ সর্বস্ব মানুষ আমি ভেসে যাই আনন্দে, আবেগে। ভুলে যাই আমি জন্মদিন পালন মানেই শুধু মৃত্যুর দিনের জন্য অপেক্ষা করা নয়। মনে হয় আমার সত্যিই তো অসাধারন আনন্দের এই ছোটো একটা জীবন। যে জীবনে খারাপ এর মাঝে এমন সব ভালো কিছু প্রাপ্তি আসে যাকে ভুলতে পারবো না কোনো দিন। যে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না কোনো দিন।

যে জীবন মাতব্বরদের অবলীলায় মুখের ওপর হাসতে হাসতে জবাব দিতে পারে কোনো প্ল্যান ছাড়াই। যে জীবন ছোটো হলেও হিসেব নিকেশ ছাড়াই কোনো রাজনৈতিক নেতা বা নেত্রীর পদলেহন না করেই বিন্দাস ভাবে নুন পান্তা ভাত আর কলমি শাক খেয়েই বেঁচে থাকে মাথা উঁচু করে দিনের পর দিন। 

 যে বেঁচে থাকার মধ্য কারুর পা ধরে, হাত কচলে বেঁচে থাকা নয়। নিজের শিরদাঁড়ার জোরে বেঁচে থাকে সে। তাই তো মনে হয় আমার ভাগ্যিস এই জন্মদিন এসেছিল এই আজকের দিনে।  তাই তো আমি এত গুলো কথা বলতে পারলাম আমি এই সাদা জীবনের কালো কথায়। যে সাদা জীবনে এখনো কোনো কালো কালির দাগ লাগতে দিই নি আমি আজ পর্যন্ত।

 বহু চেষ্টা করে, কষ্ট করে, চেষ্টা করছি এই ছোটো সাদা জীবনকে সাদাই রাখতে। যাতে সাদা জীবনের কালো কথা নয়। জীবনের বাকি কটা দিন সাদা জীবনের সাদামাটা ভাবে যেনো বেঁচে থাকতে পারি আমি এই পৃথিবীতে। বড়ো মাতব্বর হয়ে দাপট দেখিয়ে বাঁচা নয়। একজন সাদামাটা মাটির গন্ধ মাখা অতি সাধারণ একজন ছোটো মানুষ হয়ে আমি বেঁচে থাকতে পারি। আপনাদের সবার ভালবাসা নিয়ে। তাহলেই হবে আমার এই আজকের জন্মদিনের সেরা উপহার। আপনারা সবাই আমায় সেই আশীর্বাদ করবেন।

আজ জন্মদিন - অভিজিৎ বসু।
একত্রিশে মে, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...