সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

স্যালারি ক্রেডিটেড

আজ মাসের শেষ দিন। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক বাজে বিকেল তিনটে বেজে উনষাট মিনিট। আচমকাই আমার মোবাইল ফোনে একটি ব্যাংকের একটি মেসেজ এলো আমার হোয়াটস অ্যাপে। Salary credited? 

মেসেজটা দেখে একটু চমকে উঠলাম আমি বহুদিন পর।  সত্যিই তো অসাধারন ভালো লাগার এই মেসেজটা। যা দেখে আমার বেশ ভালো লাগলো বহুদিন পর। কিছু কিছু খবর, কিছু কিছু বার্তা যেনো কেমন সব ভালোবাসার স্পর্শ আর সুখের অনুভূতি দিয়ে যায় এই ভাবেই হয়তো। যাকে ধরে বেঁচে থাকতে বড়ো ইচ্ছা হয় আমার। 

বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে অবিরাম। অবিশ্রান্ত এই বৃষ্টি ভেজা দুপুরে এই আচমকা একটা মেসেজ কেমন যেন এলোমেলো করে দিলো আমার থমকে দাঁড়িয়ে পড়া জীবনকে। যে জীবনের রাস্তায় বহুদিন আগেই তো এমন মাসের শেষে হঠাৎ করেই চূড়ান্ত কাজের মাঝে, ভিড়ের মাঝে, ব্যাস্ততার মাঝে, দৌড়ে বেড়াবার মাঝে এই ভাবেই তো এমন মেসেজ আসতো একদম নিয়ম করেই। একদম দিনক্ষণ ধরে ঘড়ি ধরে নিয়ম করে তিথি নক্ষত্র মেনে এই মেসেজ আসতো আমার কাছে, আরোও অন্য সবার কাছে। কিন্তু মেসেজ এলেও হাজার কাজের চাপে একঝলক সেই মেসেজে চোখ বুলিয়ে আবার ফিরে যেতাম কাজের জগতে।

 এটাই তো স্বাভাবিক নিয়ম ছিল আমার জীবনের একসময়। যে নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি বছর বছর কোনো দিন। প্রায় কুড়ি বছরের বেশি সময় তো আমরা এই ভাবেই নিয়ম মেনে স্যালারি ক্রেডিটেড এর মেসেজ পেয়েই জীবন কাটিয়ে দিয়েছি। আর ঘড়ি ধরে জীবনে এগিয়ে গেছি নির্ভুল ভাবে। একেবারে ঠিক ঠাকই জীবন কাটিয়ে দিতে পেরেছি সঠিক ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে। মুখ থুবড়ে পড়িনি কোনো দিন।

 তাই আজ বহুদিন পর যে ছবিটা বদলে গেছে আমার নিজের ব্যক্তিগত কারণে নিজের জন্য নিজের জীবনে। সেই মাসের শেষ দিনে এমন পড়ন্ত বিকেল বেলায় সুন্দর এই মেসেজটা পেয়ে মনটা বড়ো উদাস হয়ে গেলো। বৃষ্টি ভেজা দুপুরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে খুব ভিজতে ইচ্ছা হলো আমার বহুদিন পর। জীবনের ফেলে আসা অতীত দিনের কথা আমার মনে পড়ে গেলো আজ বহুদিন পর। 
এই ভাবেই তো নিয়ম মেনে মেপে মেপে পা ফেলে এভারেস্টে আরোহণ করা যাত্রীর মত সময় ধরে বিকেল হলেই মেসেজ ঢুকতো আমাদের সবার মোবাইল ফোনে। হাজার কর্ম ব্যস্ততার মাঝে একটা চাপা স্বস্তির অনাবিল নিঃশ্বাস বয়ে যেতো গোটা অফিস জুড়ে। সেটা কেউ বুঝতে দিত আর কেউ চুপ করে না বোঝার ভান করে দাঁড়িয়ে থাকতো। বুঝতে পারতাম কি অনাবিল সুখ আর আনন্দ উপভোগ করে কাজ করছে সব গুড বয় কর্মীরা।
যাদের জীবনের ওঠা নামা, ভালোবাসা, যন্ত্রণা, প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি সব কিছুই নির্ভর করত এই একটা মেসেজের ওপর। একটাই শুধু ছোটো মেসেজ যেখানে লেখা থাকতো স্যালারি ক্রেডিটেড। আর সেই ছোট্ট একটা মেসেজ পেলেই হাজারো ব্যস্ততার মাঝে বাড়িতে ফোন করে কোনো সময় আমি বলতাম স্যালারি ক্রেডিটেড।কোনো সময় আবার কাজের মাঝে সেটার সময় না পেলে গোটা মেসেজ এর বার্তাটা পাঠিয়ে দিতাম বউয়ের মোবাইল ফোনে। সারা মাসের নিশ্চিন্ত জীবনের সুখের চাবি ছিল এই ব্যাংকের মেসেজ। দৌড়ে বেড়াবার একমাত্র টনিক ছিল এই ছোট্ট একটা মেসেজ। যে মোবাইলের এই ব্যাংকের একটি ছোট্ট ইঙ্গিত যেনো সব কিছু কেমন যেনো একটা গতি এনে দিত। মনে হতো সত্যিই অসাধারন এই অনুভূতি।
 যে অনুভূতির অনুরণন আজ আর আমায় বহুদিন হলো শিহরিত করে না। নিয়ম করে সময় মেপে আর সেই মেসেজ আসে না বহুদিন বহু মাস আমার এই মোবাইল ফোনে। জীবনের স্বস্তি আর অনাবিল আনন্দ সুখের ঠিকানা আমি কবেই হারিয়ে ফেলেছি নিজের অজান্তেই নিজের ভুলে কে জানে। শুধু একটাই কথাকে রাখতে গিয়ে সব কিছুই হারিয়ে ফেলেছি আজ আমি, যে জীবনে শিরদাঁড়া সোজা রেখে চলবো।
 তবু আজ এই বৃষ্টি ভেজা আলসেমি মাখা দুপুরে ভেজা কাকের স্নান দেখতে দেখতে যখন আমি এই মেসেজ পেলাম। ইচ্ছা হলো বহুদিন পর এই বৃষ্টিতে একবার ওই কাকের মত ভিজতে। দু হাত তুলে আকাশ জুড়ে কালো মেঘের চূড়োয় উঠে একবার বৃষ্টিকে ছুঁতে। আর ফের একবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে। 

স্যালারি ক্রেডিটেড -  অভিজিৎ বসু।
একত্রিশ জুলাই, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...