সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ডাক্তারবাবু ও আমি

আজ সাদা জীবনের কালো কথায় আমি বহু পুরোনো দিনের নানা পেশার মানুষের কথা আমি লিখছি বেশ কিছুদিন ধরেই। আজ একজন চিকিৎসকের কথা বলব আপনাদের। যাকে কখনও দাদা বলে সম্বোধন করেছি। আবার কোনো সময় ডাক্তারবাবু বলেছি। যে কোনো সময় নির্দ্বিধায় ফোন করেছি তাঁকে। হাসি মুখে ফোন ধরে বলেছেন বল কি হয়েছে। 
কবে যে আলাপ হয়েছিল আমার সাথে ডাক্তার বাবুর সেটা আজ আর আমার ঠিক মনে নেই। শুধু এটা মনে পড়ে খবরের সূত্রে ওনার সাথে আমার যোগাযোগ হয়েছিল। সেই চুঁচুড়া সদর ইমামবাড়া হাসপাতালের চিকিৎসক ডাক্তার আশীষ মণ্ডল এর সাথে যোগাযোগ প্রায় সব সাংবাদিকের। ডাক্তারবাবু এই হাসপাতালের গাইনোকোলজিস্ট বিভাগের চিকিৎসক ছিলেন। কিন্তু যে কোনো দরকারে কোনো সমস্যা হলে যে কোনো সময় তাঁকে ফোন করলেই মুশকিল আসান। সে গল্প পরে বলছি। 
বরাবর ডাক্তার বাবুর সাথে সাংবাদিকদের সুসম্পর্ক দেখা যেতো। জেলায় টিভি চ্যানেলে কাজ করার সুবাদে আমার সাথেও ডাক্তার বাবুর ঘনিষ্টতা বেড়ে যায়। শুনেছি ছোটো বেলা থেকেই তাঁর খবরের কাগজের প্রতি বেশ ভালোবাসা ছিল। নিজের গ্রাম হাওড়া জেলার রসপুরে তিনি বহু বিখ্যাত সাংবাদিকদের তাঁর নিজের গ্রামে নিয়ে গেছেন। আসলে চিকিৎসক হলেও ছুরি কাঁচি নিয়ে কাটা ছেঁড়া করলেও খবরের প্রতি এমন নেশা ছিল ওনার সেটা নানা ঘটনায় প্রমাণ মিলেছে বার বার। কেনো জানিনা তিনি আজও নানা খবরের হাউসের লোকজন কে কেমন আছে, কোথায় আছে, তাদের ভেতরের মিডিয়ার সব খবর রাখেন হাসি মুখে এই বয়সেও। 
 যাই হোক আমার আজও মনে আছে চুঁচুড়া সদর হাসপাতালে কোনো এক জায়গাতে বড়ো কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে। অনেকে আহত হয়েছেন সেই ঘটনায়। অনেক দূর থেকে আহতরা চিকিৎসার জন্যে হাসপাতালে আসছে অ্যাম্বুলেন্সে করে। ডাক্তারবাবু সেই সময় ডিউটি করছেন হাসপাতালে। আমি তখন খবর নিচ্ছি কি অবস্থা কেউ মারা গেলেন কি না এই দুর্ঘটনায়। এত চাপ এর মধ্যে কেমন হাসি মুখে ভীড় সামলে ডাক্তারবাবু আমায় নিজেই ফোন করে আপডেট দিচ্ছেন পর পর। এই শোন এখন অবধি হাসপাতালে কুড়ি জন ভর্তি হয়েছে। মহিলা ছ জন, বাকি দশ জন পুরুষ আর চারটি বাচ্চা আছে বুঝলি। নাম গুলো সব লাগবে কি। তিন চারজন খুব সিরিয়াস অবস্থা তাদের। বলে ফোন রেখে দিলেন ডাক্তারবাবু।
 আবার পাঁচ মিনিট পর আবার ফোন করলেন তিনি এই অভিজিৎ শোন, এই মাত্র একজন মারা গেলো রে। বলেছিলাম এই আহত রোগীর অবস্থাটা ভালো নয়। আরও দু একজন মরতে পারে বুঝলি। বলে দেবো আমি তোকে। এমন নিখুঁত খবরের আপডেট দিচ্ছেন একজন চিকিৎসক তাঁর ডিউটি করতে করতে এটা সত্যিই দেখা যায় না। এমন নিখুঁত খবরের প্রতি টান ভালোবাসা সেটা দেখা সত্যিই বিরল বলা যায়।
 একজন সরকারি চিকিৎসক যে কিনা শুধু অর্থ আর তার পসার নিয়েই থাকতে পারতেন সারা জীবন সুখে। তিনি যে কেনো এত খবর ভালোবাসতেন আমি আজও সেটা বুঝতে পারিনি এত দিন পরেও। কত বড় বড় ইনসিডেন্ট এর খবর যে ডাক্তারবাবু ডিউটি করতে করতে আমায় হাসি মুখে অবলীলায় বলেছেন আজ সেটা ভাবলেই আমার অবাক লাগে। সত্যিই তো জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে এমন কিছু মানুষের সাথে দেখা হয়ে যায় যাঁরা একটু অন্যরকম ভাবে জীবনকে উপভোগ করতে ভালোবাসেন। নিজেও বেশ কিছু লেখা তাঁর রিপোর্ট আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে একসময়। শুধু জেলার নয় কলকাতার প্রায় সব বিখ্যাত সাংবাদিকদের চেনেন তিনি। 
আজ তাই ডাক্তারবাবুর কথা লিখতে বসলাম এই রাতদুপুরে। এক চিকিৎসক এর সাথে ছোটো জেলার সাংবাদিকদের গভীর ভালবাসার কথা। যে কথার মধ্য লুকিয়ে আছে টুকরো টুকরো নানা ঘটনা। আমার বেশ ভালো মনে আছে হায়দরাবাদ এ সেই সময় ধ্রুব কর্মসূত্রে বাস করত। ওর বউ রূপা বেশ অসুস্থ হয়ে গেছে সেই সময়। টেলিফোনে ধ্রুবর সাথে কথা হলো সেই বিষয় নিয়ে আমার। ও খুব চিন্তিত কি করবে সেখানে ডাক্তার পাবে কোথায়। যে একটু এই রাতদুপুরে একটু ফোন ধরে ভরসা দেবে।  
আমি ধ্রুবকে সেই পরিস্হিতিতে ওকে বললাম সেই সময় এই ডাক্তারবাবুর কথা। ও এত দুর থেকে প্রায় দেড়হাজার কিলোমিটার দুর থেকে একজন ডাক্তারকে ফোন করবে একটু দ্বিধা হচ্ছিল ওর। কিন্তু আমি ওকে বললাম ডাক্তারবাবু কে নির্দ্বিধায় ফোন করে নাও কিছু মনে করবেন না উনি। ও ফোন করলো একটু সঙ্কোচ নিয়ে। যেনো কত দিনের পরিচিত কেউ ফোন করেছে। তেমন করে বলে দিলো ওকে সেই সময় কি করতে হবে সেই কথা। সেই থেকেই তো ডাক্তারবাবুর সাথে ওর সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেলো। 
আমার হাজারো খবরের কাজের মাঝে এমন নানা ভাবে ডাক্তার বাবুকে আমি ফোন করেছি সময়ে অসময়ে। হয়তো ওটি তে আছেন ফোন ধরে বলেছেন আমি ফোন করছি তোকে অভিজিৎ। সেই ছোটো বেলায় আমার বুটার যে কোনো সমস্যা হলেই ফোন করতাম আমরা। আর তিনি কোনো কিছু মনে না করেই কেমন কি কি হয়েছে শুনেই নির্দ্ধিধায় বলে দিতেন এই ওষুধটা দে। তাহলে কমে যাবে আমরা সেটা মেনে হাতে নাতে ফল পেতাম। 
আসলে আজকাল কে আর এই ভাবে ফোন ধরে বলে দেয়, ভরসা দেয়। এই স্বার্থের পৃথিবীতে এমন করে সাহায্য করা মানুষ তো ক্রমেই কমছে দ্রুত। নিজের কোনো অহংকার না রেখে সহজে এই ভাবে বিপদে পড়া মানুষদের সাহায্য করা, হাত বাড়িয়ে দেওয়া এটাই বা আজকাল কে করে। চিকিৎসক পেশার মানুষজন তো দিনদিন এত অর্থ আর স্বার্থের পিছনে ঘুরে বেড়ায়। সেখানে এমন মানুষ দেখতে পেলে সন্ধান পেলে মনে হয় কিছু কথা লিখে রাখি এঁদের কথা। 
সেই সব কথা যেসব কথা সাদা জীবনের কালো কথার মাঝে লুকিয়ে আছে নানা হিরের দুত্যির মত কিছু মণি মানিক্য। জীবনের মোরাম রাস্তায় যে সব মণি মানিক্য পড়ে থাকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। এই তো কিছুদিন আগেও বুটার যখন একটা মেয়েদের একটা কঠিন রোগ দেখা দিলো আমরা সবাই ভয়ে হাত পা কাঁপছে আমাদের সবার। সেই সময় এই ডাক্তার বাবু ফোনে সব শুনে বললেন ভয় নেই রে কোনও। এটা একটু হরমোন এর সমস্যা থেকে হয় মেয়েদের। তুই এই চিকিৎসা কর আর এই ব্লাড রিপোর্ট কর ঠিক হয়ে যাবে। এই ওষুধটা খেলে একটু চুল পড়ে যায় ভয় নেই ঠিক হয়ে যাবে।
 সেই কটা মাস আমাদের ঘুম উড়ে গেছিলো। কিন্তু পরে ওনাকে চুঁচুড়াতে নিয়ে গিয়ে বুটাকে দেখিয়ে এনে ও এখন সুস্থ আছে ঠিক আছে। আসলে আমাদের এই গড়গড়িয়ে চলা জীবনের মাঝে এই রোগ ব্যাধি আমাদের কেমন দিশাহারা করে দেয়। মনে হয় জীবনের গাড়িটা যেনো আর সঠিক ভাবে চলতে পারছে না। আমরা হাতড়ে বেড়াই সেই সময় কি করবো কাকে বলব এই ভেবে। আর সেই সময় এমন একটা ফোন করে সব কিছু বলার লোক পেলে জে কি ভালো লাগে। 
মেডিক্যাল চিকিৎসা এখন শুধুই টাকার ওপর নির্ভর করে অনেকাংশেই। সেখানে একটু সেবা মনোভাব নিয়ে ভালবেসে রোগীকে ভয় না দেখিয়ে ভরসা দেওয়া চিকিৎসক কোথায়। খরচ কম করে কি করে দ্রুত তাঁকে সুস্থ করা যায় তেমন লোক আর কোথায় আজকাল। দেখতে পাওয়া যায় না এমন মানুষ। আর আমাদের মত সাধারণ মানুষ একটু বিপদের সময় সাহারা পেলে ভরসা পেলে মনে করে কত বড়ো উপকার হলো তার। 
যাক গে ডাক্তার বাবু আপনি সুস্থ থাকবেন। সময়ে অসময়ে যে কোনো সময় আপনাকে যেনো ফোন করতে পারি আমি বা আমরা এটাই আসল কথা। আমার মার অসুস্থতার সময় যে কোনো রিপোর্ট পড়ে শুনে বলে দিতেন এখন কি করতে হবে। আসলে এই সব মানুষদের কথা বলা দরকার। যিনি আমাদের ঘরের মানুষের মতো চেনা অচেনার গন্ডি পার সম্পর্কের বন্ধন পার করে যে কোনো সময় হাত বাড়িয়ে দেন। টাকার বিনিময়ে নয়, মানবিকতার কথা ভেবে। যা আজকের দুনিয়াতে নেই বললেই চলে।
 মনে পড়ে আমার সেই ডাক্তারবাবুর ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে দিল্লী থেকে এসেছিল বর্তমান পত্রিকার সাংবাদিক সমৃদ্ধ দত্ত। কি ঝড় জল হলো সেদিন। কত আনন্দ হলো। এখন তো ডাক্তারবাবু দাদু হয়েছেন। নাতি অন্তরীপ কে নিয়ে আনন্দে সময় কাটে তাঁর। তবুও হাজার ব্যস্ততার মাঝে আমি কেনো যে কেউ ফোন করলেই এই বয়সেও হাসতে হাসতে বলে দেন তিনি এই ওষুধ খেলে ভালো লাগবে। ভয় এর কিছু নেই রে। এমন চিকিৎসক এর কথা বলতে বড়ো ভালো লাগে। যেখানে স্বাস্থ্য চিকিৎসা সবটাই অর্থ নির্ভর। যেখানে অর্থ ছাড়া কোনো ভাবেই কেউ কাউকে একটুও সাহায্য করে না কেউ। সেখানে এমন মানুষ পাওয়া সত্যিই বিরল।
আজ হয়তো আমি খবরের দুনিয়ায় নেই বহুদিন হলো। ডাক্তারবাবুও আর হাসপাতালের চিকিৎসক নেই। তবু যেনো কেমন করে আজ এত বছর পরেও ওনার সাথে আমার সেই কবেকার ক্ষুদ্র পরিচয় আজও অমলিন হয়ে বেঁচে আছে। কোনো দ্বিধা সংশয় ছাড়াই তো যার যে কোনো মেডিকেল রিপোর্ট হোয়াটসঅ্যাপ এ পাঠিয়ে বলি একটু দেখে দেবেন ডাক্তারবাবু আপনি।  সব ঠিক আছে কি না রিপোর্ট ভয়ের নেই তো কিছু। সব দেখে কিছু সময় পরে ফোন করে বলেন হ্যাঁ রে সব ঠিক আছে তেমন খারাপ রিপোর্ট নয়। আর এটা শুনে কেমন বুকের ভয়, ঢিপ ঢিপ ভাব কমে যায়। এর থেকে বড় সাহস ভরসা আর কে দেবে বলুন। 
চিকিৎসক এর এই মহান পেশার মানুষজন কি দ্রুত বদলে যাচ্ছে। বহু কাল আগে কলকাতায় ডাক্তার সুনীল দত্তকে দেখতাম শোভাবাজারে চেম্বার ছিল তাঁর। কত গরীব মানুষকে যে বিনা পয়সায় দেখে দিতেন তিনি তার হিসাব নেই। কত ওষুধ যে তিনি আমায় দিয়ে বলতেন এগুলো নিয়ে যাও কাজে লাগবে তোমার। আমি ব্যাগ ভরে ওষুধ নিয়ে আসতাম বাড়িতে। আর অবসর সময় পেলে কলকাতার রাস্তায় আমায় গাড়ি করে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন আর নানা মিষ্টির দোকানে গিয়ে মিষ্টি খেতেন, আমায় পেট ভরে খাওয়াতেন বলতেন খাও খাও পেট ভরে খাও তিনি বোধ হয় জানতেন সারাদিন তেমন কিছু পেটে পড়েনি আমার। সেই সময় আমি আকাশবাণী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে কাজ করি চুক্তি ভিত্তিক কাজ। 

সেই সব চিকিৎসক আর কোথায় আজ। যে শুধু এই ভাবে গরিবদের শোভাবাজারের সেই পতিতা পল্লীতে বাস করা মেয়েদের রোগ ব্যাধি ধরা পড়লে তারা এই ডাক্তার এর চেম্বারে ছুটে আসত আর বলতো বাবু একটু ওষুধ দেবেন। দেখতাম হাসতে হাসতে সেই ডাক্তার সুনীল দত্ত তিনি তাদের দেখে কোনো ফি না নিয়ে ওষুধ দিয়ে দিচ্ছেন। আর বলছেন সেরে যাবে ভয় নেই কোনো। ওরা প্রনাম করে হাসি মুখে ঘরে ফিরে যেতো। আজ আর কোনো ছবি নেই আমার সেই ডাক্তারের সাথে আমার। সেই সময় তো এসবের চল ছিল না। 

শুধু কিছু গল্প কিছু স্মৃতি জড়িয়ে আছে আমার এই সাদা জীবনে। যার সাথে কলকাতার রাজপথে ঘুরে ঘুরে কত যে মিষ্টি খেয়েছি দুজনে। নিজে মিষ্টি খেয়ে বলতেন দেখো, আমার বাড়িতে যেনো কেউ জানতে না পারে এই সব মিষ্টি খাবার কথা। এই বলে নিজেই গাড়িতে বসে ইনসুলিন নিয়ে নিতেন। এমন সব মিষ্টি মধুর জীবনের অতীত দিনের সুখ জড়ানো কথা বলতে বড়ো ভালো লাগে। যে কথা পড়ে হয়তো আপনাদের ও ভালো লাগবে। 

আমায় সেই ডাক্তারবাবু কলকাতার এক সময়ের বিখ্যাত মেডিসিন এর ডাক্তার সুনীল দত্ত কিছু অর্থ দিয়েও সাহায্য করতেন মাঝে মাঝে আমার খুব বিপদের দিনে। বলতেন এই টাকা গুলো নিয়ে যাও বাড়িতে মার হাতে দিও। এই সব মানুষদের কথা, জীবনের কথা বড়ো লিখতে ইচ্ছা হয় আজকাল। যে সব জীবন আমায় শিক্ষা দেয় প্রতি মুহূর্তে। এখন সেই ডাক্তার আর কোথায়। যাকে নির্ভয়ে বলা যায় বিপদে পড়লে, ডাক্তারবাবু আমার এই বন্ধুকে একটু দেখে দেবেন আপনার কাছে নিয়ে এসেছি। হাসি মুখে সেই রোগীকে দেখে দিয়ে যে বলবে এই ওষুধ গুলো নিয়ে যাও ভয় নেই কোনো। সব ঠিক হয়ে যাবে। 

ডাক্তারবাবু ও আমি - অভিজিৎ বসু।
ত্রিশে জুলাই, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...