সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সিং দা ও আমি

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমাদের সবার পরিচিত সেই সিং দার কথা। আসলে আমরা মানে সাংবাদিকরা সিং দাকে বোধহয় ওঁর আসল নামে কোনো দিনই ডাকিনি কোনোদিন। ওর খবর নিয়ে জানতে চাইনি এতদিন পর কেমন আছেন রাজনীতির বৃত্ত থেকে অনেকটা দূরে সরে থাকা আমাদের সেই সিং দা। যে একসময় রাজনীতির এই পাঠশালায় অনেক কাজ চুপচাপ করে করে দিয়েছেন কাউকে জানতে না দিয়ে। যার সুফল পেয়েছেন রাজনীতির কুশীলবরা নানা ভাবেই।

আসলে এমন কিছু কিছু মানুষ রাজনীতির বৃত্তে নেতাদের সাথে জড়িয়ে থাকেন তাদের কথা মনে থেকে যায় আমাদের সবার। অথচ রাজনীতির ময়দানে দৌড়ে বেড়ান না তাঁরা, রাজনীতির ক্ষমতা ভোগ করেন না তাঁরা, এম পি, এম এল এ হন না তাঁরা কোনোদিনই। এসব থেকে অনেকটাই দূরে থাকেন তাঁরা। কিন্তু এসব কিছু না হয়েও যেনো অনেকটা জুড়ে থাকেন রাজনীতির এই ঘূর্ণাবর্তে। ক্ষমতার এই বৃত্তে। 
ঠিক তেমনই মানুষ আমাদের সবার সিংদা। সেই চিত্তরঞ্জন সিং। আকবর আলী খোন্দকার এর একমাত্র সব সময়ের বিশ্বস্ত সহচর বলা যায় তাঁকে। কি করে যে সিংদা আকবরদার শেওড়াফুলির ছাতুগঞ্জের বাড়িতে হাজির হলো সেটা আমার ঠিক জানা নেই। কোথা থেকে এলো সেটা জানার চেষ্টাও করিনি আমি। শুনেছিলাম আকবর দা সিং দাকে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু এটা জানি যে সেই কবে থেকেই তো সিং দা ছিল ওই অফিস এর আর ওই আকবরদার বাড়ির একমাত্র বিশ্বস্ত সহচর। যাকে ছাড়া সেই পার্টি অফিস অচল ছিল। 

আর সেই সিংদাই তো ধীরে ধীরে সেই সময় থেকেই আকবর আলী খোন্দকার এর হাত ধরেই তাঁর কাজ এর সুবাদে সবার কাছে আমাদের সিংদা হয়ে গেলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর কাছে সিং, তুই এটা দেখে দে। সিং দার উত্তর হ্যাঁ দিদি। মুকুল রায় এর কাছে সিং এটা দেখ তুই। হ্যাঁ দাদা। সুব্রত বকসীদার কাছে সিং কে বলে দিলেই হবে। এটাই ছিল সিং দার এক সময়ের আসল পরিচয়। দলের নানা ছোটো, বড়ো, মেজো, সেজো নেতাদের কাছে একমাত্র যে কোন কাজের সমাধান করার একটাই লোক সিং জি। দলের যে কোনো বার্তা পৌঁছে দেবার একটাই বিশ্বস্ত মানুষ। 
আর তাই এই মানুষটা যখন আকবর আলী খোন্দকার বিধায়ক হলেন তখন থেকেই ধীরে ধীরে নানা ভাবে নানা রূপে আমাদের কাছে একটা বিশেষ পরিচয় নিয়েই থাকতেন। একটা বেশ ভালো জুটি ছিল আকবরদা আর সিংদার। যে জুটিকে জেলায় অনেকেই হিংসা করতো সেই সময়। যাকগে আজ বহুদিন পর শ্রীরামপুর স্টেশনে আমার সাথে সিংদার দেখা হলো হঠাৎ করেই। কোনো এক কাজ সেরে সিংদা শ্রীরামপুর স্টেশনে নেমেছেন। আমিও বহুদিন পর শ্রীরামপুর এসেছি বোলপুর থেকে নিজের কাজে নিজের বাড়িতে। দেখা হয়ে গেলো আমাদের দুজনের। মোবাইল এর মাধ্যমে ছবি তুলে রাখলাম। ধরে রাখলাম একে অপরকে আঁকড়ে জড়িয়ে পাশে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে।
 সিংদার মাথার চুল সব সাদা। আমার চুলেও পাক ধরেছে অনেক। দুজনের বয়স হয়েছে। তবুও কেমন যেন অল্প সময়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে কিছু পুরোনো দিনের স্মৃতি ঝলমল রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া আর কি। ঠিক যেমন করে রেল লাইনের ট্র্যাক দিয়ে ট্রেন ছুটে চলে যায়। রাজনীতির বৃত্ত থেকে এখন অনেকটাই দূরে সরে গেছেন তিনি। ছেলে কলেজে পড়ছে। বলতে বলতে একটু যেনো বিহ্বল আনমনা হয়ে গেলেন তিনি। ট্রেন আসার সময় হলো। দু চার কথা হলো তারপর ট্রেন ধরে চলে গেলেন সিংদা বাড়ির পথে। আমি হাত নেড়ে বললাম দাদা তুমি ভালো থেকো। 
আসলে আমি জীবনের এই সব হারিয়ে যাওয়া জীবনকে খুঁজে বেড়াই। হারিয়ে যাওয়া মানুষকে খুঁজে বেড়াই। হাতড়ে বেড়াই সেই সব জীবনের কথা। যারা একসময় রাজনীতির কত উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত হয়ে ছিলেন। ক্ষমতার মসনদে বসা লোকদের কত কাছ থেকে দেখেছেন। তাদের নানা কাজে সাহায্য করেছেন। তারপর ধীরে ধীরে নিজেই নিজের প্রয়োজনে এই সব ক্ষমতার বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া মানুষদের থেকে কিছুটা দূরে সরে গেছেন।
 কারণ হয়তো সেই প্রয়োজন আর পড়েনি তাদের কোনো সময়। দলের কাছে ও নেতাদের কাছেও ফুরিয়ে গেছে প্রয়োজন। এটাই বোধহয় আসল কথা। যেটা কিছুটা হলেও পরে বুঝতে পেরেছেন তিনি এই এতদিন পরে। আর তাই বোধহয় নিজের উদ্যোগে বাঁচার চেষ্টা করছেন এখন একা একাই। ছেলেকে মানুষ করার চেষ্টা করছেন তিনি। যাতে তাঁর জীবন যেমন হয়েছে হোক ছেলেটা যেনো নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। এইভাবে তাঁর মতো ঘুরে মরতে না হয় রাস্তায়। 
আমি বললাম তুমি বলেছিলে শ্রীরামপুর এলে জানাতে তোমায়। দেখা হবে দুজনের তাই তোমায় বললাম আমি এসেছি। খুব ভালো হলো দেখা হলো তোমার সাথে কতদিন পরে বলো। হয়তো সিং দা নিয়ে অনেকে অনেকে অনেক কথা বলেন। কিন্তু আমি একটু সেসব কিছুকে আমল না দিয়ে একটু অন্যরকম ভাবে সিংজী কে আজ দেখলাম। যে সিংজী আজ একদম অন্য এক মানুষ। যার কথায় যার ফোনে কত কিছুই না কাজ হয়েছে। যাকে ভরসা করে বিশ্বাস করে কত নেতা, নেত্রী রাজনীতির ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছেন। 
বহুকাল আগের, বহু বছর আগের একটা দিনের কথা মনে পড়ে গেলো আমার। প্রতি বছর পুজোর সময় আকবরদা এই সিংদার হাত দিয়ে কাপড় পাঠিয়ে দিতেন সাংবাদিকদের বাড়িতে বউদের। নতুন বিয়ে হয়েছে আমার। সেই শ্রীরামপুরের বটতলার নন্দী মাঠের ইটিভির অফিসে সিংদা হাজির সন্ধ্যা বেলায় মোটর বাইক নিয়ে আর প্যাকেট নিয়ে। আমায় বলল অভিজিৎদা বড় ভাই পাঠালো আমায়। আমি বললাম না গো দাদা, এটা তো নেওয়া যাবে না দাদা। তারপরেও কতবার যে সিং দা এইভাবে এসেছে প্রতি পূজো, দেওয়ালিতে মিষ্টি নিয়ে তার কোনো হিসাব নেই। কোনো সময় ফিরিয়ে দিয়েছি হাসি মুখে। আবার কোনো সময় হাত পেতে নিয়েছি সেই জিনিস।কিন্তু রাগ করতে দেখিনি কোনদিন তাঁকে।
কিন্তু যে কোনো পরিস্থিতিতে সব সময় মুখে হাসি নিয়ে যে কোনো কঠিন কাজ আর কঠিন পরিস্থিতি সামলে দিয়েছেন হাসি মুখে তিনি। যে কোনো রাজনীতির কঠিন কাজকে সহজেই উৎরে দিয়েছেন তিনি ঠিক যেনো অনুঘটকের কাজ করে। আমার বিয়ের পর সাংসদ আকবর আলী খোন্দকার এর কোটায় দিল্লী যাবার জন্য সিংদাকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। যে আমার রাজধানীর টিকেট কেটে দেয়ার নির্দেশ দেয় আকবর আলী খোন্দকার। সে তখন সাংসদ শ্রীরামপুর লোকসভা। অনেক সাংবাদিক তখন দিল্লী দর্শনে গিয়েছিল। 
কিন্তু আমি সেটা না নেওয়ায় আকবার দা একটু রাগ করলেও, সিং দা কিন্তু হাসি মুখে সেটা মেনে নেয়। কিন্তু কোনোদিন এসব নিয়ে কোনো কথাই বলেননি তিনি। অনেকের অনেক খবর জানলেও একদম ডান হাত আর বাম হাত কেউ জানতে পারেনি তার মাধ্যমে কোন হাত কি কাজ করছে। আর এটাই ছিল সিং দার বিশেষ একটা গুণ। যার জন্য রাজনীতির মানুষরাও সিং দাকে পছন্দ করতেন খুব। 
 এমন সব গভীর গোপন সম্পর্ক ছিল আমাদের সবার সাংবাদিকদের সাথে সিং দার।আর তাই দিল্লিতে কাজ করা সমৃদ্ধ দত্ত, সেই পুলকেশ ঘোষ, দেবাঞ্জন দাস থেকে দেবদাস অধিকারী থেকে শুরু করে গৌতম বন্দোপাধ্যায়, ফাল্গুনী বন্দোপাধ্যায়, তরুণ মুখোপাধ্যায় নীলরতন কুন্ডু সবার সাথেই ছিল দাদা ভাই এর সম্পর্ক তাঁর। এমনকি পুলিশের উচ্চপদে কাজ করা মানুষরা, ডিএম, এসপি সকলেই জানতো এই সিং জী আসল লোক এমপি সাহেবের। তাই সবাই গুরুত্ব দিয়ে চলতো তাঁকে।
আসলে এই ধরনের মানুষের সংখ্যা দ্রুত কমছে। সেই পনেরো টাকার মান্থলি টিকেট এর জন্য শেওড়াফুলির বাড়িতে কি লাইন। সব সকাল থেকে একা সামাল দিচ্ছেন এই সিং দা।আমি ফোন করে বলতাম দাদা এই নামে একটা টিকেট করে দিও গরীব লোক। কত লোকের নাম বলে যে মান্থলী টিকেট করে দিয়েছেন তিনি গরীব মানুষের তার হিসাব নেই। ভিখারী অন্তর্ধান এর সময় যাবতীয় রাজনীতির নানা কাজ করতে আকবর দাকে সাহায্য করেছেন এই সিং দা। 
আর যাকে একসময় নিজের বাড়ী ডেকে পাসপোর্ট করে দেন অজিত পাঁজা নিজেই। কলকাতার বাড়ী থেকে খানাকুল যাবেন অজিত বাবু। সেই সময় তিনি মন্ত্রী কেন্দ্রের। সিং দাকে মন্ত্রীর জিজ্ঞাসা পাশ পোর্ট আছে তোর। না, বলায় বেজায় অবাক মন্ত্রী অজিত পাঁজা। সেকি রে পাসপোর্ট নেই, দাঁড়া। সেখানেই কাগজ এনে অফিসারকে ডেকে পাসপোর্ট করে দেন অজিত বাবু নিজেই। সেই গল্প শুনছিলাম তাঁর মুখে শ্রীরামপুর ষ্টেশনে দাঁড়িয়ে। 

দিল্লির নানা ধরনের দলীয় কাজে তৃণমূলের একমাত্র বিশ্বস্ত লোক ছিলেন এই সিংদা। বিরোধী রাজনীতির অলিন্দে যার ছিল অনায়াস অবাধ যাতায়াত। যাকে একডাকে চিনতেন তৃণমূলের সব হেভিওয়েট নেতা মন্ত্রী সবাই। কিন্তু আজ সেই মানুষটাই কেমন যেনো থমকে গেছেন। পেটের টানে ছুটে বেড়াচ্ছেন এদিক ওদিক নিজের কাজে। ছেলেকে নিজের পায়ে দাঁড় করাবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন তিনি। হ্যাঁ অনেকেই বলবেন এসব বলে লিখে লাভ কি। কি হবে এসব পড়ে। আসলে লাভ এটাই এই সব মানুষরা একদিন হয়তো কত কিছুই না করেছেন নেতার জন্য, নেত্রীর জন্য, দলের জন্য। কিন্তু যে একদম একা সেই মানুষটাই।
 কিছুটা দলকে ভালোবেসে কিছুটা নেশায়। কিন্তু আজ সেই দল ক্ষমতায় এসে হয়ত এইসব মানুষদের আর মনে রেখে দেয়নি। কারণ আর দরকার পড়েনি তাদের। এটা নিয়ে হয়তো লেখার চেষ্টা করে কি লাভ আপনারা বলবেন। তবু এইসব মানুষদের জন্য তো আমরা সাংবাদিকরা অনেক কিছুই খবর পেয়েছি। অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। যেটা হয়তো কিছুটা হলেও সম্পর্কের বন্ধন তৈরি হয়েছে আমাদের। 

সেই সম্পর্কের বন্ধন আলগা হলেও যোগসূত্র রয়ে গেছে আজও। এতদিন পরেও কেমন দুজনে বুড়ো হলেও মনে হয় এই তো সব সেদিনের কথা। আর তাই তো সেই কবে থেকে আমাদের সিং দা সবার দাদা হয়ে গেছেন। আর তাই আমি সাদা জীবনের কালো কথায় সিং দার জন্য মনে হলো কিছু লিখলে ভালো হয়। তাই লিখলাম আমি। 

এমন একটা মানুষের সন্ধান পেয়ে আমি অন্তত গর্বিত। বয়স হয়েছে বেশ সিং দার। আগের মত দৌড়ে বেড়াতে কিছুটা অসুবিধা হয় হয়তো তাঁর। আকবর দা মারা যাবার পরে শেওড়াফুলি ছেড়ে বহুদিন আগেই তিনি চলে গেছেন বাঁশবেড়িয়াতে। আমায় কতবার যে বলেছে, অভিজিৎদা তুমি বৌদি মেয়েকে নিয়ে এসো আমার বাড়ি ডাল ভাত খেয়ে যাও। হংসেশ্বরী মন্দির দর্শন করে যাও। আমি বলেছি হ্যাঁ যাবো দাদা কিন্তু যাওয়া হয় নি আমার। 
আজ বহুদিন পর রাজনীতির বহু পুরোনো দিনের এই মানুষটিকে দেখে বড়ো ভালো লাগলো আমার। মনে হলো জীবনের গড়ে ওঠা সম্পর্ক তো মরে যায় না কোনোদিন কোনোভাবেই। তাই আমার আঁকিবুঁকি ব্লগে আঁকাবাঁকা অক্ষরে কিছু কথা লিখে রাখলাম আমাদের সেই সিং দার জন্য। যার কাছে আমরা অনেকেই সাংবাদিকরাও কিছুটা হলেও অনেক কিছুই পেয়েছি। যার ঋণ আমি অন্ততঃ শোধ করতে পারবো না কোনোদিন। 
রাজনীতির বৃত্ত থেকে দূরে থাকা এই সব মানুষরা ভালো থাকুন। ট্রেন ছেড়ে দিলো। কামরায় উঠে আমাকে হাত নাড়লেন সিং দা। আমিও হাত নাড়লাম প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে। বললাম আবার দেখা হবে। গতি বাড়িয়ে ট্রেন চলে গেলো। ফাঁকা স্টেশনে আমি একা একা দাঁড়িয়ে রইলাম। পরে রইলো কিছু স্মৃতি আর কিছু কথা। যা ভোলা যাবে না এই জীবনে। 

সিংদা ও আমি -  অভিজিৎ বসু।
তিরিশে আগস্ট, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...