সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সিঙ্গুরের বিখ্যাত সাংবাদিক রানা

সাদা জীবনের কালো কথায় একে একে আমি বহুজনের কথা লিখছি। কেউ কেউ বলছেন এসব কোনো কাজ নেই তাই একটু লিখে মিডিয়াতে ভেসে থাকার চেষ্টা করা আর কি। আবার কেউ নাক কুঁচকে বলছেন টোটো চালকের আর কি বা করার আছে এটা ছাড়া এখন। আসলে কিন্তু সেটা নয় একটা গোটা জীবনের এই নানা ভাবে আর নানা ধরনের মানুষের সাথে পরিচয় আর তার কাজের সূত্র ধরেই তো বেঁচে থাকে সম্পর্কের নানা গভীর জীবন মাপের বন্ধন। সেই চেনা বহুদিনের সম্পর্ক কোনো সময় গলি পথের বাঁকে হারিয়ে যায় ধীরে ধীরে দুজনের অজান্তেই। আবার কোনো সময় সেই সম্পর্ক ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকে ঝোপের আড়ালে রাস্তার ধারে। সময় সুযোগ পেলে ঝপ করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে সেই হাসি মুখে। এটাই তো জীবন। যে জীবনকে উপভোগ করি আমি আজও সেই পুরোনো ফেলে আসা দিনের স্মৃতি ঘেঁটে।

 যাকগে যার কথা আমি লিখতে বসেছি আজ সেই বিখ্যাত রানা কর্মকার। হুগলী জেলার সিঙ্গুরের সেই বিখ্যাত আমাদের সবার রানা। হ্যাঁ, সেই পুরোনো আমলের ইটিভির সেই বিখ্যাত ক্যামেরাম্যান রানা কর্মকার। যে ক্যামেরাম্যান থেকে সে গোটা হুগলী জেলার বস হলো ধীরে ধীরে অনেক কসরৎ করে। ওর নামের পাশে রিপোর্টার রানা কর্মকার জ্বল জ্বল করছে এখন টিভির পর্দায়। আজ যেটা ওর বহুদিনের স্বপ্ন ছিল এই মানব জীবনে। একসময় সেটা পূরণ হয়েছে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে। সে কথাই বলব আমি আজ এই আমার আঁকিবুঁকি ব্লগে।
 
ইটিভির হুগলী জেলায় সিঙ্গুরে একটা লোক নেওয়া হবে। স্ট্রিঙ্গার নেওয়া হবে খবরের বিনিময়ে পয়সা পাবে সে প্রতি মাসে মাসে। যতদূর মনে পড়ে সেই সময় একমাত্র তরুণদার হাত ধরেই  রানা আমায় ফোন করে দাদা আমি সিঙ্গুরে কাজ করতে চাই। তরুণদা এই নম্বর দিলো আপনার। আমি ওকে জানালাম তুমি সিভি দাও দেখছি কি করা যায় ভাই। তখন শ্রীরামপুরে কাজ করে সৌরভ ব্যানার্জী, চুঁচুড়াতে সেই বিখ্যাত মিল্টন সেন আমার ক্যামেরাম্যান সেই সময়, আরামবাগ এর ক্যামেরাম্যান সুব্রত যশ।

 যাই হোক সেই রানার সাথে আমার আলাপ এর সূত্রপাত ইটিভির হাত ধরেই। ওর সেই বহু পুরোনো দিনের একটা মোটর সাইকেল যেটাকে আমরা বহুবার জাদুঘরে রাখার কথা বললেও কোনো ভাবেই সেটা চেঞ্জ করেনি ও বহুদিন। এখন সেই গাড়িটা কি করেছে সেটা আমি জানিনা। কারণ বহুদিন ওর সাথে আর যোগাযোগ নেই আমার। যদিও আমার মা মরার খবর পেয়েই ও কিন্তু সোজা রিষড়ার বাড়ীতে গিয়ে হাজির হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে। পরে আবার শ্রীরামপুর এসে দেখা করে আমায় ফল কেনার টাকাও দিয়ে যায় সে আমাকে। 

 রানার একটা বড় গুণ হলো আমার হাজার গাল শুনেও একমুখ হাসি হেসে সবটা কেমন উড়িয়ে দেওয়া। ওর এই যে রাগ না করা আমার গাল শুনেও সেটা ওকে কাজের ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছে বলেই মনে হয় আমার। যেটা অনেকের থাকে না। 
সেই ছোটো ক্যাসেট নিয়ে খবর হলেই সেই সিঙ্গুর থেকে ওর বিখ্যাত দু চাকার গাড়ি নিয়ে চলে আসা দ্রুত। যার আওয়াজ শুনে দুর থেকেই বুঝতাম ও আসছে। ওর গাড়ির আওয়াজ শুনেই অরিন্দম অফিসের কম্পিউটার অন করে দিত। দুপুর, রাত, সকাল বিকেল যে কোনো সময় ও বেরিয়ে পড়ছে খবরের খোঁজে আর খবরের নেশায়। যেটার জন্য ও জীবনে অনেক এগিয়ে গেছে অনেককে পিছনে ফেলে দিয়ে এই বয়সেও। যাক গে বাদ দিন সেই সব কথা। 

রানার সেই সিঙ্গুরে অন্দোলনের সময় রাত নটার খবরে ছবি ধরাতে ছুটে আসা ওর ভাঙা গাড়ি নিয়ে। আর সেই ওর গাড়ি রাস্তার পাশে উল্টে যায়। দিল্লী রোডের ওপর তারকেশ্বর রেল লাইনের কাছে ওপর থেকে নিচে। কিন্তু ওই অবস্থায় উঠে কোনরকমে গাড়ি চালিয়ে এসে খবর পৌঁছে দিয়েছে ও হাসি মুখে শ্রীরামপুরের ভিস্যাট সেন্টার এ। আর সকাল থেকে অভুক্ত থেকে একটা পাঁচ টাকার বাপুজি কেক আর চা খেয়ে দিন কাটত ওর প্রতিদিন। দুপুরে ভাত খেতে বললে প্রথমে না বলেও কেমন সুন্দর করে যে খেয়ে নিত সেটা দেখেও বেশ ভালো লাগতো আমার। এমন সহজ সরল ভাবে কাটিয়ে দিলো ও এই খবরের জটিল দুনিয়ায়। 

আসলে জীবনের এই নানা ঘটনা জড়িয়ে ধরে আছে আষ্টেপৃষ্টে। সেই তখন বুটার সবে মুখে ভাত হয়েছে। মুখে ভাতের অনুষ্ঠানে সেই এক টাকার কয়েন দিলে সেটা ভিতরে চলে যায় একটা খেলনা পেয়েছিল বুটা। একটা ভাল্লুক টাকাকে টেনে নিয়ে নিত ভিতরে। সেই খেলনার ভিতর একটা টাকা দিয়ে যে কি বিপদে পরে গেছিলো রানা একদিন সেই কথা তো আমাদের সবার জানা আছে আজও। সত্যিই বেশ সহজ সরল একটু খবরের বৃত্তে আর ক্ষমতার চারপাশে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসতো ও বরাবর। সেই ভোটের দিন ভোর বেলায় সিঙ্গুরে বোম ফেটে যাওয়া। সেই অনিল বসুর ফাঁকা হুমকি দেওয়া ওকে। ভীতু রানার একদম চুপ করে যাওয়া। পরে আমি গিয়ে তার সামাল দেওয়া। আসলে নেতাদের কাছে কিছুটা গুটিয়ে থাকতে পছন্দ করে রানা। আর ক্ষমতার অধিকারী রাজনীতির লোকদের কাছে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকতে সে বেশ পছন্দ করে। আর তাই সিপিআইএম নেতাদের কাছে সে পৌঁছে গেছে মাথা তুলে হাসতে হাসতে। আবার তৃণমূলের ঘরের লোক হয়েছে হাসতে হাসতে। এটাই ওর আসল ইউএসপি। যা ওকে এতদূর এত উচ্চ আসনে বসিয়ে দিয়েছে।

সেই সিঙ্গুরের সেই পঁচিশে সেপ্টেম্বর এর রাত, সেই সিঙ্গুরে ছাদে উঠে পুলিশ এর লাঠি পেটা করার নিদারুণ বিখ্যাত ছবি। যে ছবি গোটা দেশের কাছে উদাহরণ হয়ে আছে আজও। সেই তাপসীর মৃত্যুর দিন ভোরবেলায় মমতার ফোন পেয়ে আমার কথা শুনে ওর ভোরবেলায় দৌড়ে চলে যাওয়া তাপসী মালিকের বাড়ির পাশের মাঠে। সাথে কলকাতা টিভির গৌতম  ধোলে। আর সেই দগ্ধ তাপসীর দেহের বিখ্যাত ছবি তুলে পুলিশের কাছে চক্ষুশূল হয়ে যাওয়া। সেই সিঙ্গুরের থানার বড়ো বাবু প্রিয়ব্রত বক্সীর কথা মনে পড়ে গেলো এই প্রসঙ্গে। পুলিশ হলেও বেশ ভালো অফিসার ছিলেন তিনি। সেই বেচারাম মান্না, সুহৃদ দত্ত, শ্রীকান্ত চ্যাটার্জী, মহাদেব দাস, সেই ইচ্ছুক আর আনিছুকদের কাছে পোঁছে যাওয়া হাসি মুখে। এমন কত যে লোকজন আমাদের সেই সময় খবরে সাহায্য করত কে জানে। রানা সিঙ্গুরের চাষীদের ঘরের লোক হয়ে গিয়েছিল একদম। 

সিঙ্গুরের চাষীদের জমি আন্দোলন রানার বাড়িতে গিয়ে একপেট খিদে নিয়ে দুপুরে গরম ভাত আর আলুসিদ্ধ খাওয়া খিদে পেটে। রানার বাবা ওর মার হাসি মুখের সুন্দর ব্যবহার। ওর বোনের বিয়েতে সবাই মিলে সিঙ্গুরে ওদের বাড়ি যাওয়া আনন্দ করা। সেই ওর দোতলার ঘর, লাল মেঝে। ক্যাসেট নিয়ে শ্রীরামপুরে এলেই মিন্টে, অরিন্দম, আর সুদীপ এর রানার কাছে সিঙ্গুরের দৈ খেতে চাওয়া। এমন কত ঘটনা যে ভীড় করে কে জানে। তারপর একদিন জেলার রিপোর্টার এর জন্য ওকে হায়দরাবাদ পাঠিয়ে বলে দেওয়া সিদ্ধার্থ সরকারকে। আমার শ্রীরামপুরে ফ্ল্যাট কেনার সময় রানার সেই টাকা ধার দিয়ে আমায় সাহায্য করা। যা কোনো দিন ভোলা যাবে না ওর এই উপকার। বহুদিন আর কথা হয়নি আমার ওর সাথে। দেখা হয়নি অনেকদিন। জেলার ইটিভির খবরের সেই জায়গা এখন নিউজ 18 এর হাতে। রানা সেই খবরের ব্যাট হাতে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে আজও। মাঝে মাঝেই ওর সেই জলে ভিজে একশা হয়ে লাইভ দেখি আমি। ওর সেই দৌড় দেখি। ওর সেই সেজে গুজে কথা বলে সারাদিন ঘুরে না খেয়ে খবর করা দেখি টিভির পর্দায়। বেশ ভালো লাগে আমার। 

আজ আর ইটিভির অফিস নেই শ্রীরামপুরে। ও এই শহরে এলেও ওর আর বোধহয় মনে পড়ে না আমার কথা, এই অফিসের কথা, এই খবরের দুনিয়ায় হারিয়ে যাওয়া এই সব নানা স্মৃতির কথা। বোধ হয় আমার কাছে গাল খাবার জন্য এখন জেলার বস হয়ে গিয়ে কিছুটা রাগ করে আমায় এভয়েড করে যায় ও এখন। ওর ছেলে মেয়ে কত বড়ো হয়ে গেছে আজ কে জানে। কতদিন যে খবর নেওয়া হয়নি কে জানে। জীবনের সেই ফেলে আসা দৌড়ের দিনগুলো বড়ো ভালো ছিল যে। ওর সেই বিদেশ যাওয়া সব যে আজও মনে আছে। 

সেই কুমির জলা রোডের সুইমিং পুলের পাশের অফিস, সেই ছোটো ক্যাসেট নিয়ে দৌড়ে ভাঙা মোটর সাইকেল নিয়ে ওর ছুটে আসা হাঁফাতে হাঁফাতে। সেই অফিসে রাখা ঠাণ্ডা জলের কুঁজো থেকে খালি পেটে ঢক ঢক করে জল খাওয়া। ঘন ঘন সিগারেট খাওয়া। আমায় ভয় পেয়ে এদিক ওদিক লুকিয়ে পড়া। ওর ধরে ধরে সুন্দর ছবি করা সেই পূজোর খবরে। সত্যিই বড়ো ভালো আনন্দের দিন ছিল সেই সব দিনগুলো। যে দিন আর ফিরে আসবে না কোনো দিন। যে দিনের স্মৃতি আর তার উত্তাপ নিয়ে এই বুড়ো বয়সে আমায় বেঁচে থাকতে হয় আজ। স্মৃতি যে বড় কষ্টের, বড়ো যন্ত্রণার।

 তবু এই সাদা জীবনের কালো কথায় এইসব মানুষদের কথা লেখা থাক। খবরের দৌড়ে ইটিভির খবরের সেই দৌড়ে যারা একদিন সক্রিয় সহযোগী ছিল। যাদের জন্য আমি আজ এত কথা এত কিছু অনুভূতির কথা লিখতে পারছি। যাদের খবরের জন্য আমরা আজ জেলায় জেলায় পরিচিত হয়েছি। ওরা নিজেরাও পরিচিতি পেয়েছে। সেই খবরের দুনিয়া থেকে হারিয়ে যাওয়া ইটিভি যে আমাদের সবাইকে অনেক কিছুই দিয়ে গেছে। আজ সে হয়তো নেই কিন্তু না থেকেও ইটিভি বাংলা যে আমাদের সবাইকে কি গভীর বাঁধনে আজও জড়িয়ে ধরে আছে আষ্টেপৃষ্টে সেটাই আমি এতদিন পর অনুভব করি প্রতি মুহূর্তে প্রতি সময়।

 তাই রানা, মিন্টে, সৌরভ, মিল্টন, সৌরভ হাজরা, সুব্রত যশ এরা যেনো আজও আমার কাছে কত কাছের কত আপনার হয়েই আছে আজ এতদিন পরেও। সেই কথা বলতে বা লিখতে লজ্জা কি। আজও তাদের ফোন করে বলতে ভয় হয়না আমার এই যে দ্রুত এই ছবিটা আমায় দাও আমার লাগবে এখুনি। সঙ্কোচ হয়না কোনো। হয়তো ওরা আমার এই চাওয়াকে অন্য ভাবে দেখতে পারে। কেনো আবার ফিরে এলো জেলায়। আমি যে আজও অমলিন সম্পর্কের এই বোঝাকে বয়ে বেড়াতে বড় ভালবাসি। 

সিঙ্গুরের বিখ্যাত সাংবাদিক রানা - অভিজিৎ বসু।
তিরিশে সেপ্টেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...