সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সোমাকে অভিনন্দন

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক লড়াই করা নারীর কথা। যে নারী আমার জীবনের অনেকটা অংশ জুড়ে আমায়, আমার পরিবারকে আগলে রাখে দু হাত দিয়ে। যে নারী দশভূজার মত আগলে রাখে আমাদের পরিবারের সবাইকে নিজের হাতে তার তালুর মধ্যে। আসলে আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগ তো নানা জীবনের কথা, গল্প আর লড়াইকে তুলে ধরে তাকে সবার সামনে নিয়ে আসা। যে গল্পের মালায় জড়িয়ে থাকে জীবনের পরতে পরতে নানা ঘটনা আর ঘটনার ঘনঘটা। যেখানে থাকে ভালোবাসা, দুঃখ, যন্ত্রণা, আবেগ, নির্ভরতা, বেদনা, আরও কত কি। থাকে গভীর গোপন ভালোবাসার সম্পর্কের বন্ধন এর নানা রঙের বেলোয়ারি চুড়ির রিনরিনে আওয়াজ। যে আওয়াজে কোনো সময় মন ভালো হয়। আবার কখনও মন ভরে ওঠে দুঃখে আর যন্ত্রণায়। এইসব নিয়েই তো জীবন আর এই জীবনকে ঘিরেই সংসার। 

যাকগে ধান ভানতে গিয়ে শিবের গীত না গাওয়াই ভালো। আসলে এতক্ষণ যাঁর কথা বলছিলাম সেই সোমা,সেই দীপান্বিতা বসুর কথা আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় লিখবো বলে ঠিক করলাম আমি। কিছুই না একজন ম্যানেজমেন্ট পাশ করা উচ্চশিক্ষিতা নারী, যে কোনোদিন কোনো কাজকেই ভয় পায় নি। যে কোনো কাজ হাসি মুখে করে এসেছে নিজের কর্মদক্ষতায় আর বুদ্ধি আর নিজের বিবেচনায়। যেটা আমি কোনোদিন করতে পারিনি।

 আর যে কাজে আমি সফল না হয়ে কাজ ছেড়ে চলে এসেছি। সেই গ্রামে গ্রামে মাঠে ময়দানে ঘুরে ঘুরে বেড়ানো আর সেই গ্রামের বাড়িতে জল দেবার কাজ করতে গিয়ে। সেই কাজেই কেমন হাসি মুখে সফলতা অর্জন করে শংসাপত্র পেলো জন স্বাস্থ্য কারিগরী বিভাগ থেকে বীরভুম জেলায়। সত্যিই বিশ্বাস করুন আপনারা বলবেন এই কথা লিখে আবার বলার কি ছিল। এ আর এমন কি ব্যাপার।

না আসলে সেটা নয়। যেটা বিষয় সেটা হলো একজন যখন কোনো কাজ করতে পারছে না এডজাস্ট করে কোথাও। শুধু মুখে বলছে শিরদাঁড়া সোজা রেখে বেঁচে আছি আমি। সেখানে আর একজন কেমন হাজার ঝড় ঝাপটা সামলে নিয়ে নেতা, মন্ত্রী, সান্ত্রী,পঞ্চায়েত প্রধান, সবাইকে সামলে হাসিমুখে ব্যাট করে যাচ্ছে বীরভূমের মহম্মদ বাজারের পাথুরে রুক্ষ জমিতে চার আর ছয় মেরে। ভাবলে আমার নিজেরই কেমন অবাক লাগে। এই জমিতেই কাজ করতে গিয়ে ব্যাট করতে গিয়ে শক্ত জমিতে মুখ থুবড়ে পড়ে গিয়ে রক্ত বের হয়ে মাথা ফাটিয়ে কাজ ছেড়ে ঘরে ফিরে আসতে হয়েছিল আমায় একদিন। আর সেই এক জমিতে কাজ করে সার্টিফিকেট পেয়ে হাসি মুখে ঘরে ফিরল সোমা। সত্যিই ওর বুকের পাটা আছে বলতে হবে। সত্যিই এটা বেশ বড়াই করে লিখতে আর বলতে ইচ্ছা হলো আমার।

কেনো জানেন যে কাজ এর ধারে কাছে সে কোনোদিন ছিল না, করেনি সেই কাজ কোনোদিন, সেই কাজ হাসি মুখে করে এলো শুধু সংসারের কথা ভেবেই। শুধু মেয়ের পড়ার জন্য হাসি মুখে সংসার সামলে করে এলো সেই কাজ। সত্যিই বলছি এর জন্য আজ আমি গর্ব অনুভব করি। লজ্জাও হয় কি যে পারি আমি। মেয়ের কথাই ঠিক তোমার দ্বারা আর কাজ বাজ কিছুই হবে না। এই অন্ধকার ঘরে বসেই মুখ লুকিয়ে জীবন কাটবে তোমার। শুধু ওই মোবাইলকে বন্ধু করে বেঁচে থাকবে তুমি। 

সত্যিই জীবন এক এক জনের কাছে এক এক রকমের। যে জীবনের মানে এক একজনের কাছে এক ধরনের। আমি তো হারতে হারতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া একজন মানুষের কাছে এই সব শংসাপত্র কেমন যেন আমায় নতুন করে আবার বাঁচার স্বপ্ন দেখায়। মনে হয় সোমার হাত ধরে, বুটার হাত ধরে আমি কর্মহীন হয়েও তো কেমন দিব্যি বেঁচে আছি। তাই ওদের সফলতাকে আমি দারুন ভাবে উপভোগ করি বিশ্বাস করুন আপনারা।

 আর তাই সেই আনন্দ উত্তেজনাকে এই রাতের অন্ধকারে মনে হয় আমার এই আঁকাবাঁকা অক্ষরে আঁকিবুঁকি ব্লগে সেই কথা লিখে রাখি নিঃশব্দে। যে কথার মাঝে লুকিয়ে আছে জীবনের গভীর গোপন ভালোবাসা, যন্ত্রণা, আবেগ, তৃপ্তি, আর একবুক অভিমান, আর টাটকা বাতাস। যে বাতাসকে বুকে জড়িয়ে আমি নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখি। সোমা তোমায় আমি জন স্বাস্থ্য কারিগরী বিভাগের মত কুর্ণিশ জানাই। তোমার এই লড়াইকে আমি সেলাম জানাই। আর যে এই কাজের সুযোগ করে দিয়েছে তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। 

সোমাকে অভিনন্দন - অভিজিৎ বসু।
পাঁচ অক্টোবর, দু হাজার চব্বিশ।

মন্তব্যসমূহ

  1. দীপান্বিতা বসুকে অভিনন্দন তাঁর কাজের জন্যে, সমাজ-সংসার নামক বেঁচে থাকার ময়দালে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য। ধন্যবাদ অভিজিৎ বসুকেও নিজেকে জিরো বলার মত বুকের পাটা রেখে জীবনসঙ্গীর কাজের অসামান্য মূল্যায়ন করার জন্য।একেবারে হেরে যাওয়া নয়, জীবনকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার যুদ্ধে কেউ কেউ কখনও কখনও পিছিয়ে পড়ে। ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নটা আঁকড়ে ধরে এই প্রায় অন্ধকারে পথ হাঁটায় সঙ্গী হিসেবে তার পাশে থাকাটাও মুখের কথা নয়। কুর্ণিশ দীপান্বিতা বসু, অভিজিৎ বসু দুজনকেই।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...