সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

অন্ধকার রাত

রাতের অন্ধকারে ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করে এগিয়ে চলেছে। আলো আঁধারির মাঝে এক নৈঃশব্দের মাঝেই লুকিয়ে শুয়ে আছি আমি গুটিসুটি মেরে। হালকা ঠাণ্ডায় কাবু হয়ে গায়ে আলগা চাদর জড়িয়ে। কেনো জানিনা এই রাত বেশ আমার খুব প্রিয়। অন্ধকার নিকষ কালো অন্ধকারের রাত। 

যে অন্ধকারের রাতে আমার দুয়ার খুলে যায় ঝড় না হলেও। যে রাতে দু চোখের পাতায় ঘুম আসে না কিছুতেই। হামাগুড়ি দিয়ে যে রাতের অন্ধকার, চরাচর পেরিয়ে, মাঠ ঘাট পেরিয়ে, তাল, খেজুরের বন পেরিয়ে, কোপাই পেরিয়ে, খোয়াই এর প্রান্তর পেরিয়ে, রাতের ডাহুক এর স্বরকে এড়িয়ে চলে আসে আমার কাছে। মনে হয় দিনে কেনো যে ওরা আসে না এমন করে আমার কাছে। কে জানে, হয়তো লজ্জা পায়। অবগুণ্ঠন খুলে বের হতে পারে না ওরা দিনের আলোয়। তাই রাতের অন্ধকারে ঘাপটি মেরে শুয়ে থাকে অপেক্ষা করে ফাঁক পেলেই বেরিয়ে পড়ে। 


দিনের আলোয় গভীর গোপন কথা, সম্পর্কের বন্ধনের নিনড় নিকষ টান, আলতো নরম ভেজা ঠোঁটের স্পর্শ কি পাওয়া যায়। ফিসফিস স্বরে কাছে আসার সেই নরম স্বরের ডাক। যেমন করে কোকিল কাতর হয়ে ডাকে গাছের ঝোপঝাড়ে লুকিয়ে আত্মগোপন করে একা একা বিধুর হয়ে, বড়ো উতলা হয়ে। কিম্বা ওই ছাতার একমনে ঘোলা চোখে খুঁজে বেড়ায় সঙ্গিনীকে আপনমনে। কে জানে, কেনো যে রাত বাড়লেই এমন মনে হয় আমার জানিনা। কতদিন যে লতার খোঁজ নেওয়া হয়নি আমার। কেমন আছে কে জানে।

সেই যে বছর শেষের সময়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে এসেছিল লতা অবগুণ্ঠন খুলে ধীরে ধীরে। এমন শীতের সন্ধ্যায় গঙ্গার তীরে বসেছিলাম আমরা দুজন মিলে। কতদিন আগের সেই সন্ধ্যা নামার আগেই রাত শুরুর আগেই কেমন করে যে মিলিয়ে গেলো কে জানে। কপ্পুরের মতো উবে গেলো সেই আমার লতা। হারিয়ে গেলো কত কিছুই। 

সেই সাদা কালো অক্ষরে লেখা গভীর অনুভূতির চিঠি, গভীর গোপন ভালোবাসার চিনচিনে ব্যাথা, সেই শীতের সন্ধ্যায় গঙ্গার পানির উপর হালকা শীতের গরম পোশাকের ওম মাখা ভালোবাসা, সেই সাইকেলের বেলের ক্রিং ক্রিং শব্দ, সেই যুবক বয়সে হাঁফিয়ে গেলেও ভালোবাসার জনকে কাছে নিয়ে এগিয়ে চলা আলো আঁধারির পথ পেরিয়ে, রাস্তা পেরিয়ে। সে সব আজ শুধুই যে রাতের অন্ধকারে আচমকা স্মৃতির থালায় ভাত দেবার মতই উপচে পড়ে আমার এই জং ধরা মরচে পরা স্থবির জীবনে। 

ঘড়ির কাঁটায় ভর করে ঘুরছে জীবন। ফুরিয়ে যাচ্ছে জীবনের দিনযাপন এর সময়সীমা দ্রুতই। দেখতে দেখতে বছর শেষের দিকে গড়িয়ে যাচ্ছে ক্যালেন্ডারের পাতা। ২০২৪ এর এগারোটা মাস শেষ প্রায়। বাকি আর একটা মাস। তারপর আবার নতুন বছর। আবার নতুন করে পথ চলা শুরু। আমি জানিনা সেই পথচলা কেমন হবে। কঠিন না সহজ। হাসির না কান্নার। দুঃখের না বেদনার। যন্ত্রণার না আনন্দের। কিছুই জানিনা আমি। নতুন কি সত্যিই করেই নতুন হয়ে আসবে আমার কাছে জীবনের একটু স্থিতি নিয়ে, আশা, ভরসা আর আনন্দ নিয়ে। নাকি শুধুই দিনযাপন এর সেই নিশির হা হুতাশের ডাক। কে জানে জানা নেই সেই কথা। 

তবু অন্ধকার রাত বেশ পছন্দের সময় আমার। যে সময়ে আমি একা একাই একদম একা বেঁচে থাকার চেষ্টা করি নিজের মতো করেই। আমার ঘর দুয়ার সংসার আত্মীয় পরিজন পরিবারকে ছেড়ে। মনে হয় জীবনের এই নিকষ কালো নিঃস্তব্ধ অন্ধকার রাত বোধহয় দিনের থেকেও অনেক ভালো। যে রাতে ভীড় উপচে পড়ে না এদিক থেকে ওদিক থেকে। যে রাতে কেউ আমায় বিরক্ত করে না। কেউ আচমকা দুয়ার খুলে ঢুকে পড়ে না। একা একাই কেমন এলোমেলো এলেবেলে হয়ে বিন্দাস জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায় এই নিরুপদ্রব, নিশ্চিন্তির রাত। 

যে রাত কেটে একসময় ভোর হয়। ভেজা কুয়াশা মাখা ভোর। যে ভোর এর গায়ে লেগে থাকে শীতের হালকা হিমের নরম মিষ্টি পরশ। কিন্তু এই রাতের অন্ধকারে আমার সেই গঙ্গা পারের হারিয়ে যাওয়া সন্ধ্যা, সেই লতার নরম ঠোঁটের স্পর্শ, সেই সাইকেলের বেলের ক্রিং ক্রিং শব্দ, সেই ওর গায়ের মিষ্টি মন কেমন করা গন্ধ, কেমন করে যেনো ওই অন্ধকার মাঠ পেরিয়ে এগিয়ে আসে আমার কাছে, খুব কাছে। আমি কেমন চুপ করে বিমোহিত হয়ে যাই। অন্ধকার রাতকে আশ্লেষে জড়িয়ে ধরি আমি। আর শুয়ে থাকি অন্ধকারের মধ্যে একা, একদম একা চুপটি করে ঘাপটি মেরে। আর আমার মাথার ওপর ঘড়ির কাঁটার টিক টিক শব্দ বেজে যায় অবিরাম। 

অন্ধকার রাত - অভিজিৎ বসু।
ঊনত্রিশ নভেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক ও নিজের তোলা।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অ্যাঙ্কর মিমির কথা

'আমরা যদি এই আকালেও স্বপ্ন দেখি কার তাতে কী?' বাহ দারুন সুন্দর এই কথা। স্বপ্ন দেখার কি কোনো সময় হয় নাকি। পঞ্জিকার পাতা উল্টে তিথি নক্ষত্র দেখে কি স্বপ্ন দেখা যায়। যে স্বপ্ন বাঁচার খোরাক জোগায়। যা দেখে এই দৌড় ঝাঁপ করা জীবনে কেমন একটা স্বস্তি মেলে সেই স্বপ্ন সফল হোক বা না হোক। যে কোনোও বয়সে এই স্বপ্ন দেখা যায়। ফেসবুকের পাতায় সেই কথা লেখা দেখে মনে মনে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করেই এই রাত দুপুরে ভয়ে কম্পমান হয়েই ওকে নিয়ে লেখার চেষ্টা করা। সেই পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই দুর থেকেই অচেনা জগতের সেই খবরের বিখ্যাত সব নানা ধরনের খবর পাঠিকাদের ভীড়ে তাঁকে দুর থেকে দেখা। একদম অন্য এক গ্রহের বাসিন্দা যেনো। সেই কালামের দোকানে হয়তো কোনোও সময় চা খেতে গিয়ে দেখতে পাওয়া। সেই লিফটের কুঠুরিতে একসাথে ওঠা বা নামা কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেই। কিন্তু সেই অন্য খবর পড়া অ্যাঙ্কর দের সাথে সহজ সরল ভাবে মিশে যাওয়ার সাহস হয়নি আমার কোনোও দিন তাঁর সাথে। আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই ২৪ ঘণ্টার পোদ্দার কোর্টের অফিসের বিখ্যাত অ্যাঙ্কর মিমির কথা। ...

এলোমেলো , এলেবেলে বিন্দাস জীবন ও জন্মদিন

দেখতে দেখতে বছরের পর বছর গড়িয়ে যায়। আসলে এই অচলাবস্থা আর অকর্মণ্য দিনযাপনের একটা জীবন কাটিয়ে দিতে দিতে বেশ আমি কেমন যেন এডজাস্ট করে নিয়েছি নিজের সাথে নিজেরই এক অদ্ভুত সহাবস্থান। আমার জীবনের সাথে ক্রমেই দ্রুত কমতে থাকে যেনো মৃত্যুর দূরত্ব। দীর্ঘ দিনের জীবনের ঘন্টা ধ্বনিতে কেমন অচেনা সুরের সুর মূর্ছনা বেজে ওঠে ঠিক যেনো ওই গির্জার ঘরে জিঙ্গেল বেল, জিঙ্গেল বেল এর সুরের মতই আচমকা রাত বারোটা বাজলেই এই একত্রিশ মে।  যার তাল, লয় আর ছন্দে আন্দোলিত হয় এই জীবন আর জীবনের নানা জলছবি। যে ছবির কোলাজে ধরা পড়ে হাসি কান্না, সুখ আর দুঃখের নানা অনুভব। যে অনুভূতির জারক রসে আমি জারিত হই প্রতি মুহূর্তে। আর তাই তো বোধহয় সেই ছোটবেলার দিন এর কথা মনে পড়ে গেলেই সেই ঝাপসা হয়ে যাওয়া ধূসর হয়ে যাওয়া সেই ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা হয় আমার বড়ো এই আজকের দিনে।  সেই পুরোনো দিনের ভালোবাসার স্পর্শ আর স্মৃতি রোমন্থন করা একটি ছবি। মায়ের নিরাপদ কোলে ঠিক নয় চুপটি করে পাশে বসে আছি আমি একদম ফিট ফাট হয়ে আপন মনে ভদ্র শান্ত ছেলের মতোই যা আমি মোটেও নয়। আজকের সেই এ...

যা দেখি…প্রতিদিন মনে পড়ে কত… স্মৃতির পথ ধরে হাঁটি… লিখি…

ইটিভির অ্যাঙ্কর অঙ্কুর

ভাবা যায় এই ভুবন ভোলানো হাসিমুখের বিখ্যাত অ্যাঙ্করও নকল হতে পারে নাকি কোনোভাবে। হতেই পারে না একদম এটা। কোনোভাবেই এটা মেনে নেওয়া যায় না আর বিশ্বাস করাও যায় না। ওর এই পোস্ট দেখে সেটাই মনে হলো আমার সবার প্রথমেই। আসলে এই জীবনের পথে হাঁটতে হাঁটতে আসল আর নকলের এই গা ঘেঁষাঘেঁষির ভীড়ে পার্থক্য বোঝাই যে দায়। কে আসল বন্ধু আর কে নকল বন্ধু সেটাই বোঝা মুশকিল। সেটাকে নির্ধারণ করা যে বড়ই দুষ্কর কাজ। সেটাই যে আজকাল আর ঠিক করে ঠাওর করতে পারি না আমি এই বুড়ো বয়সে এসে।  আজ সাদা জীবনের কালো কথায় আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে তাই সেই যার কোলে চেপে বাসে করে জীবনে প্রথম বার দুরু দুরু বুকে রামোজি ফিল্ম সিটিতে গিয়েছিলাম আমি বেশ ভয়ে আর আতঙ্কে যদি চেয়ারম্যান এর সামনে যেতে হয় আর ইংরাজিতে কথা বলতে হয় এই ভয়ে। সেই ভীড় বাসে বসতে জায়গা না পেয়ে সেই তাঁর কথা। সেই যে সারাদিন অফিস করে হায়দরাবাদ এর বাংলা ডেস্ক থেকে ধ্রুব রাতে ওর বাড়িতে ভাত খাবার জন্য নেমতন্ন করলো আমায় গরম ভাত, ডাল আর আলুভাজা রান্না করলো রূপা ওর শরীর খারাপ নিয়েও সেদিন কত কষ্ট করে। সেই খেতে দেবার সময় ওদের ঘরে খাবা...

বিনোদন রিপোর্টার দেবপ্রিয়

দেবপ্রিয় দত্ত মজুমদার। ওর সাথে কোথাও একসাথে কাজ করা হয়নি আমার। ওর খবরের ফিল্ড একদম আলাদা এন্টারটেনমেন্ট। আর আমার শুধুই সাধারণ খবর। কখনও জেলার খবর,আর কলকাতার খবর। রাজনীতির খবর নিয়েই ঘুরে বেড়ানো। তবু কেনো জানিনা ওর শান্তিনিকেতনে আসার খবর শুনেই ওকে সাহস করে আমার নম্বর দিলাম। এমনি কোনোও কারণ ছাড়াই যদি যোগাযোগ হয়। যদি দেখা হয়। কলকাতার গন্ধ আছে। মিডিয়ার একটা বলয় গায়ে জড়িয়ে আছে। আর কি শুধুই যদি দেখা হয়ে যায় এই আশায়।  চমক অপেক্ষা করেছিল আমার জন্য। পরদিন ফোনে যোগাযোগ করলো ও নিজেই। কথা হলো দু চারটে আমাদের। কোথায় থাকো তুমি জিজ্ঞাসা করলো। আর সত্যিই আমি টোটো চালকের কাজ করি কি না যেটা নিয়ে ওর নিজেরও একটা সন্দেহ ছিল মনে মনে সেটা পরিষ্কার করে দিলাম আমি ওকে। কিন্তু যেনো কতদিনের চেনা একজন মানুষ। কত আপন ছন্দে কথা বলা ওর। যেটা আমায় আকর্ষিত করলো বেশ। ওর অনুষ্ঠান যেটা হচ্ছে শান্তিনিকেতনে সেখানে আমার মতো একজন বাতিল মানূষকে আসতে বললো ও নিমন্ত্রণ জানালো সপরিবারে।  আমি একটু আবেগ প্রবণ মানুষ। আমি চলে গেলাম সেই অনুষ্ঠানে ওর আমন্ত্রণে। যা সচরাচর আমি কো...