সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হ্যাপি নিউ ইয়ার

বছর শেষ হল। আরও একটা বছর পার হয়ে এলাম আমরা কেমন করে। শেষ হল বারোটা মাস, শেষ হল ক্যালেন্ডারের সবকটা পাতা, আরও একটা ক্যালেন্ডারের দিন শেষ হয়ে গেলো দেখতে দেখতে। পেরিয়ে এলাম সবকটা তারিখ এক এক করে ধীরে ধীরে। কতজনের কত জন্মদিন উদ্‌যাপন করলাম আমরা! পালন করলাম আমরা কতজনের কত না মৃত্যুদিন! আর এই সবের মাঝেই শেষ হলো একটা বছর দেখতে দেখতে। কত আয়োজন। কত উদযাপনের প্রস্তুতি সব মিলে মিশে একাকার হয়ে গেলো এক লহমায়।


 ক্রান্তিকাল পার করে রাত বারোটায় সব যেনো এক মায়াময় প্রতীক্ষার অবসান হলো। যার জন্য ঘড়ি ধরে, মিনিট, পল, অনুপল ধরে স্টপ ওয়াচের ছোট্ট ঘড়ির টিক টিক করে এগিয়ে চলা। পিচ্ছিল ভেজা রাস্তা ধরে শামুকের মতো শুঁড় উঁচিয়ে ধীর পায়ে ধীর লয়ে এদিক ওদিক উঁকি মেরে। আর ঠিক রাত বারোটা বাজলেই মুঠোফোনে আছড়ে পড়া সমুদ্রের সফেন উত্তাল ঢেউ এর তরঙ্গ। আর এই নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানানোর হিড়িক দেখে কেমন যেনো অবাক লাগলো আমার। আর এর মাঝেই কেমন করে যেন আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। একত্রিশ আর একের মাঝখানে আনমনে, অকাতরে, নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়া। জানতে না পারা কিছুই। উৎসবের আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ভেসে যাওয়ার গর্জন এর ঢেউকে একদম অনুভব না করা।

 এখন মধ্যরাতে সব চুপচাপ কেমন যেন থেমে গেছে। নিশ্চুপ হয়ে গেছে চারিদিক। উৎসবের ঢেউ ধীরে ধীরে তার গতি হারিয়ে নিজের আপন ছন্দে ঘড়ির কাঁটা ধরে এগিয়ে চলেছে আবার ধীর পায়ে। নতুন ক্যালেন্ডার থেকে আবার খসে পড়বে একটি একটি করে দিন। ৩৬৫ দিনের থেকে কমবে জীবনের দিন ধীরে ধীরে। দূরে রাত পাহারা দেওয়া নাইট গার্ড এর বাঁশির আওয়াজ, শীতের রাতে পাড়ার মোড়ে কুকুরের চিৎকার সব মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। 

যে দিনে জন্মদিন উদ্‌যাপন করলাম আমরা নিজেদেরও, আরও এক জন্মদিন হলো আমাদের। পেরিয়ে এলাম, সম্পূর্ণ অজ্ঞাতে, আরও একবার, অনাগত মৃত্যুর সবকটা সম্ভাব্য তারিখও। জীবনের এ এক আদিম ছলনা, জীবন এইভাবেই প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমাদের মনে ও মননে মৃত্যুকে অতিক্রম করে যাওয়ার মায়া রচনা করে। এই মায়াই আমাদের নশ্বরতার আদি সহজ পাঠ, আমাদের অমরত্বের ভীরু আকাঙ্ক্ষারও। সত্যিই জীবন বড়ই অদ্ভুত আর এই মায়াময় কুয়াশার আস্তরণে ঢাকা এই জীবন। যার আস্তরণ সরিয়ে আনন্দের জোয়ারে ভেসে যাওয়ার আর শব্দের জাল বিছিয়ে অপেক্ষা করা পুরাতনকে ফেলে দিয়ে রাস্তার পাশে সরিয়ে দিয়ে নতুনের জন্যে।

নতুন বছরে আপনারা ভালো থাকবেন সকলে। ভালো থাকতে চাইবেন। ভালো থাকতে চেষ্টা করবেন আপনারা। এই ভালো থাকতে চাওয়া আর ভালো থাকতে চেষ্টা করাটাই তো আসলে ভালো থাকা। জীবনে নতুন বছরে এই চাওয়াকে নিয়েই বেঁচে থাকার চেষ্টা করবেন। এর চেয়ে বেশি ভালো থাকতে হলে মনহীন হতে হয়, নির্বোধ হতে হয়। জীবনের এই মোরাম রাস্তায় ভালো থাকাই আর অন্যকে ভালো রাখাই তো আসল কথা। হ্যাপি নিউ ইয়ার। 

হ্যাপি নিউ ইয়ার - অভিজিৎ বসু।
পয়লা জানুয়ারি, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি নিজের মোবাইল ফোনে তোলা।

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

অমৃত কুম্ভের সন্ধানে চন্দ্রাণী

কখনও কুম্ভ মেলায় হাজির। আবার কখনও রাজনৈতিক দলের ঝাণ্ডা কাঁধে দৃপ্ত ভঙ্গিতে এগিয়ে চলেছেন তিনি রাস্তা দিয়ে একমনে ধীর পায়ে। আবার কোনোও সময় গঙ্গাসাগর সঙ্গমে তো আবার কোনোও সময় হঠাৎ করেই শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে কিম্বা সোনাঝুড়ির হাটে পৌঁছে গেছেন তিনি হাসি মুখে পরিবার নিয়ে। আর এইসবের মাঝে কেউ অসুস্থ হয়েছেন শুনে তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে হঠাৎ করেই অ্যাম্বুলেন্স করে সোজা অন্য দূরের উত্তরপাড়া হাসপাতালে চলে গেছেন তিনি বাড়ীর কাউকে কিছুই না জানিয়েই। একদম স্বতস্ফূর্ত ভাবেই অন্য কারুর বিপদে এই ভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়া হাসি মুখেই। যা আমার মার অসুস্থ অবস্থায় করেছিলেন তিনি কাউকে কিছুই না জানিয়ে রিষড়ার হাসপাতাল থেকে সোজা উত্তরপাড়ার হাসপাতালে চলে গেলেন সেদিন। আবার কোনো সময় সাংবাদিকদের কোনও অনুষ্ঠানে হাসিমুখেই হাজির হয়েছেন তিনি সবার সাথে মিলেমিশে। আর সেই তাঁর সোজা গাড়ী করে ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে রিষড়া রেলগেট পার হয়ে সোজা, একদম সোজা সটান অমৃত কুম্ভের সন্ধানে কুম্ভ মেলায় হাজির হলেন তিনি কোনোও কিছু না ভেবেই চিন্তা না করেই। এতো পাপ মোচন করতে বা পূণ্য সংগ্রহ করতে ...

আমাদের সবার মিল্টনদা

“স্মৃতি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। নতুন স্মৃতির পলি পড়বে। কোনও একদিন যক্ষের মতো কোনও এক নির্জন ঘরে সিন্দুকের ডালা খুলব। ক্যাঁচ করে শব্দ হবে। ভেতরে দেখব থরে থরে সাজানো আমার জীবনের মৃতঝরা মুহূর্ত। মাকড়সার ঝুলে ঢাকা, ধূসর। তখন আমি বৃদ্ধ; হাত কাঁপছে, পা কাঁপছে। চুল সাদা। চোখদুটো মৃত মাছের মতো। এই তো মানুষের জীবন, মানুষের নিয়তি। এই পথেই সকলকে চলতে হবে। বর্তমানের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে না পারলে, অতীত বড় কষ্ট দেয়।” ― সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় , লোটাকম্বল হ্যাঁ, সত্যিই তো, অতীত বড়ো কষ্ট দেয় আমাদের এই রাত বিরেতে। দু চোখের পাতা এক হয় না কিছুতেই। রাত কেটে ভোর হয়, আলো ফোটে তবু সিন্দুকের ডালা খুলে বেরিয়ে আসে নানা স্মৃতি, নানা মুখ, নানা চরিত্র, নানা ঘটনা। হ্যাঁ, আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় হুগলীর বিখ্যাত দাপুটে সাংবাদিক মিল্টন সেন এর কথা। ওর সেই হাসি খুশি মিষ্টি ভদ্র ব্যবহার, সব সময় মুখে ভালো কথা। আমার মত খারাপ বদনাম নেই ওর কোথাও। সবার সাথে নেতা, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে এগিয়ে চলা মিল্টন এর বড়ো প্লাস পয়েন্ট।  সে যাক প্রথম ওর...

আইচ আর মাটির সংসার

আইচ আর মাটি। ফ ব মানে সেই বিখ্যাত কুচবিহার জেলার কমল গুহ আর মাটি মনে দেবমতী এই দুজনের বিখ্যাত মিডিয়ার জুটি। সেই সব সময় যে আইচ অফিস, বাড়ী নিয়ে নানা ভাবেই চাপে নাজেহাল হয়ে থাকে সব সময়। বর্তমানে কাগজে কাজ পেয়েও যে পরে চার কোনা বোকা বাক্স টিভির দুনিয়ায় ঢুকে পড়ল যে আইচ বলে ছেলেটি। যে রাজনীতির পাঠশালায় বেশ ভালই। সেই আমাদের এক সময়ের বিখ্যাত চ্যানেল এর পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই ২৪ ঘণ্টায় বিখ্যাত লোকজনের সাথে ওর কাজ করা। সব আকাশ থেকে নেমে আসা লোকজন আর স্বর্ণযুগের সেই বিখ্যাত সংসার। যে সংসার একদিন আবার ভেঙেও গেলো কেমন করে যেন। যে ভাঙা সংসারে ভাঙনের মুখে আমার কাজের সুযোগও ঘটে।  সেখানেই শুভ্রজিৎ আইচ আর দেবমতীর আলাপ, ঘর, মাটির সংসার পাতা আর নানা ভাবেই ওদের বেড়ে ওঠা একটা সুন্দর পরিবারকে নিজের মত করে গড়ে নিয়ে। কখনও এক মিডিয়ার অফিসে কাজ করে এক দফতর বা সেই ডেস্ক ডিপার্টমেন্ট থেকে অ্যাসাইন মেন্টের টেবিলে বদলি হয়ে চাকরি করা ওদের দুজনের একে অপরকে দূরে সরে গিয়ে। আবার সেখানেও জলের নিচে পা কাটা হাঙ্গরের দলবল ঘুরছে বলে এক চেনা অফিস ছেড়ে অন্য অফিসে চলে যাওয়া ওর ...

ওই খানে মা পুকুর পাড়ে

ওইখানে মা পুকুর-পাড়ে জিয়ল গাছের বেড়ার ধারে হোথায় হবে বনবাসী,           কেউ কোত্থাও নেই। ওইখানে ঝাউতলা জুড়ে বাঁধব তোমার ছোট্ট কুঁড়ে, শুকনো পাতা বিছিয়ে ঘরে           থাকব দুজনেই। বাঘ ভাল্লুক অনেক আছে- আসবে না কেউ তোমার কাছে, দিনরাত্তির কোমর বেঁধে           থাকব পাহারাতে। রাক্ষসেরা ঝোপে-ঝাড়ে মারবে উঁকি আড়ে আড়ে, দেখবে আমি দাঁড়িয়ে আছি           ধনুক নিয়ে হাতে। .......রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টুপ টুপ বৃষ্টির দুপুরে এই কবিতার লাইন গুলো দেখে। মনে পড়ে গেলো মার কথা। বাইরে একটানা বৃষ্টির একটা অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো কখনো বেশ জোরে, কোনো সময় একটু কম। মাথার মধ্যে কেমন ঝিম ঝিম করছে এই বৃষ্টির টানা আওয়াজ শুনে।  একটানা আওয়াজে কেমন যেন একটা অস্বস্তি ভাব। গাছের পাতাগুলো বৃষ্টির জলে ভিজে একদম চুপ চুপে হয়ে গেছে। পাতার ডগা থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল ঝরে পড়ছে নিচে।গাছের পাতাগুলোর অসময়ে স্নান করে ওদের আবার শরীর খারাপ না হয়।  জানলার ধারে সারাদিন ধরে যে পায়রা গুলো বসে থাকতো আর বক বকম করতো।...