সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সরকারী প্রেস কার্ড

শীত পড়লেই যেমন পরিযায়ী পাখিরা এসে হাজির হয়। ঠিক তেমনি করেই ডিসেম্বর মাস পড়লেই নতুন কার্ড এসে হাজির হয় সাংবাদিকদের পকেটে। সরকার স্বীকৃত সাংবাদিক এর পরিচয় বহন করা ছাপ মারা সুদৃশ্য কার্ড। নীল সাদা কার্ড থেকে অন্য স্মার্ট সুন্দর রঙের উজ্জ্বল সব কার্ড এর প্রাপ্তি ঘটে সাংবাদিকদের। আজ এই রাতের বেলায় ব্যাগের কোণে পড়ে থাকা এই দুটো পুরোনো সরকারী প্রেস অ্যাক্রিডেশন কার্ড দেখে কত কিছুই যে মনে পড়ে যায় আমার। একসময়ে বছর শেষের আগেই আমার পকেটে হাজির হতো এই নতুন কার্ড 


যদিও এই কার্ড দিয়ে সাংবাদিক এর বুকে সাহস বা বল বা শক্তি যোগানো যায়না কিছুতেই। তাদের মনে সাহস জাগিয়ে সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলে যে কাউকে হাসি মুখে প্রশ্ন করার সাহস সৃষ্টি করা যায়না কোনোভাবেই। শুধুই আমি সরকার এর স্বীকৃতি পাওয়া একজন সাংবাদিক হিসেবে গণ্য হয়েছি এটা বলা যায় মাত্র। মন্দিরে, মসজিদে, গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা সভায় কি ছাড় পাওয়া যায় এই করে দেখিয়ে জানা নেই আমার। শুধু এই মা মাটি মানুষের আমলে অবসরে অল্প কিছু টাকার পেনশন পাওয়া যায় এই যা।


আসলে পকেটে যতই সরকারি সিলমোহর মারা কার্ড থাক তাতে কি আর সরকার পক্ষ আর বিরোধী পক্ষ কেউ রেয়াত করে তাদের স্বার্থে আঘাত লাগলে। তাদের পছন্দের মনের মত খবর না হলে কি আর কি পকেটে সরকারী কার্ডের ছাপ দেখে ছেড়ে দেয় না বোধহয়। হ্যাঁ, ওই দুর্গাপুজোর লাইনে একটু বিশেষ সুবিধা পেলেও পাওয়া যেতে পারে আর কি। বড়ো জোর বারাসাতের কালী, চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজোয়। তাহলে আর এই কার্ডের মাহাত্ম্য কি রইলো।
 
যে কার্ডের জন্য এত হা হুতাশ করা, পকেটে কার্ড না থাকলে দুঃখ পাওয়া, কার্ড এর সিনিয়রিটি কমে গেলে কপাল চাপড়ানো, কোনোভাবে ফ্রিল্যান্স কার্ড করে বছরে নিজের নামে পঁচিশটা লেখা জমা দিয়ে কার্ড বাঁচিয়ে রাখা এমন কতই না সুন্দর ব্যবস্থা করা আছে। তাহলে আর এই ভাবে রাতদুপুরে কার্ড নেই কার্ড নেই করে বুক চাপড়ে কান্না কেনো। পুরোনো রাম আমলের কার্ড বের করে তার ছবি তুলে আপলোড করা কেনো। 

কিছুই যখন কার্ড এর গুণ, মাহাত্ম্য নেই শুধুই সরকারী ঠাণ্ডা বাসে ওঠা আর নামা ছাড়া তাহলে আর কি জন্য এত কালি খরচ করা। ষাট বছরের জন্যে কি এখন থেকেই চিন্তা ভাবনা করে এগোনো যদি অবসর এর পরে যৎসামান্য অল্প কিছু জুটে যায় ক্ষতি কি। সে মোটা মাস মাহিনা পাওয়া লক্ষাধিক টাকার বেতন পাওয়া সাংবাদিক কিম্বা কম টাকার নুন আনতে পান্তা ফুরোনো সাংবাদিক হোক। সবার চিন্তাই কি এক তাহলে কে জানে।

তখন ইটিভির নতুন চাকরি শুরু করেছি আমি। শুনি সরকারি কার্ড এর জন্য বছর শেষে অ্যাপ্লাই করতে হয়। কিন্তু তিন বছর কাজ না করলে সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা না থাকলে সরকারি কার্ড অ্যাপ্লাই করা যায়না কিছুতেই। ভয়ে ভয়ে আশীষ ঘোষ দাকে বললাম আমি। বললেন হ্যাঁ তুই চলে আয় বইমেলায় আমি সই করে দেবো। গুটি গুটি পায়ে আমি পার্কস্ট্রীটে বইমেলায় ফর্ম পূরণ করে হাজির হলাম আমাদের নিউজ এর হেড এর কাছে। সেই কালো বা নীল রঙের সোয়েটার পড়ে মুখে হাসি নিয়ে এসে আমার অ্যাক্রিডেশন এর ফর্মে সই করে দিলেন তিনি কিছু না দেখেই। 

জমা পড়ে গেলো সেই সরকারী কার্ড এর আমার অ্যাপ্লিকেশন। কি আনন্দ আমার। বুকটা ঢিপ ঢিপ করছে পাবো তো কার্ড। আশীষ দা বললেন ঘোর বইমেলায় বউকে নিয়ে। বলে চলে গেলেন খুব সম্ভবত কোনো স্টলে। আমরা দুজন ঘুরে বেড়ালাম বউ মেলায়। এই ছিল আমার জেলায় কাজ করে কার্ড পাওয়ার প্রথম ধাপ এর কাহিনী। হ্যাঁ, কার্ড এলো অবশেষে। জানালাম আমি আশীষদাকে দাদা কার্ড পেলাম। নতুন কার্ড সবাইকে দেখলাম। মা, বাবা, পরিজন, আত্মীয় সবাইকে। গর্বে বুক ভরে যায় আমার। এই কার্ড দেখিয়ে ভোটের সময় ভোটের কেন্দ্রে কাজ করার অনুমতি মেলে। ভোটের সময় হলে বেশ একটা ভালো লাগে আমার। সরকারী কার্ড আছে তাহলে ইলেকশন কমিশন এর পরিচয় পত্র পেতে অসুবিধা নেই কোনও। 

এইভাবেই জেলায় একবার কার্ড হয়ে যাবার পরেই আর কোনোও‌ অসুবিধা নেই। প্রতিবছর শেষের আগেই রিনিউ করে নেওয়া। আর কি চাকরির অফিস বদলি হলে কার্ড এর জন্য কোনো অসুবিধা নেই কার্ড এর গায়ে তার হাউস এর নামটা শুধু বদলে যায় কার্ড তো থেকে যায় আর সেই সাংবাদিক এর সাংবাদিক সত্ত্বাও থেকে যায়। শুধু কোন হাউস এর কার্ড হলো সেটাই একটু নজর দিয়ে দেখতে হয়। যদিও আমার ইটিভির কাজের সুবাদে জেলায় দীর্ঘদিন কাজের সুবাদে এক কার্ড রয়ে গেছিলো। পরে যদিও কলকাতায় গেলে সেই কার্ড তার সিনিয়রিটি হারিয়ে আবার নতুন কার্ড শুরু হয়। 

জেলার কার্ড এর কাজের বয়স গণ্য হবে না কলকাতায় বদলি হয়ে এসে। যে সরকারী কার্ড আমার প্রায় দশ বা বারো বছর ধরে পেলাম সেই এক হাউসের কলকাতার অফিসের কার্ড একধাক্কায় বদলে গেলো। সরকারের নিয়মে জেলার খবর করা সরকার এর কার্ড পাওয়া সাংবাদিক এর সিনিয়রিটি কার্ডের মাহাত্ম্য নিয়ে প্রশ্ন উঠলো মহাকরণের অন্দরে। একযুগ ধরে পাওয়া জেলার কার্ড এর সাংবাদিক কলকাতা শহরে পা দিয়ে আবার নতুন করে সব কিছু শুরু করলো। হাঁটি হাঁটি পা পা করে নতুন ক্লাস থেকে শুরু হলো তার সাংবাদিকের জীবন। সত্যিই অসাধারণ এই ব্যবস্থা। 

উপায় নেই দেখে সেটাই করতে হলো যে অকুতোভয় সাহস নিয়ে জেলা থেকে কলকাতা এলাম আমি কিছুটা যেনো নতুন কার্ড পেয়ে গুটিয়ে গেলাম আমি। যে কার্ডের বয়স মাত্র এক হলো কিন্তু বেশিদিন সেই কার্ড থাকলো না আমার। চলে গেলাম বদলি হয়ে হায়দরাবাদ। অনেক করে অনুরোধ করলাম ইটিভি নেটওয়ার্ক এর গ্রুপ এডিটর রাজেশ রায়না কে আমার কার্ডটা যদি একটু রিনিউ করে দেন তাহলে সে আবার বয়স হারিয়ে ফেলে না। মিষ্টি হাসি মুখে মধুর কন্ঠে বললেন সেটা করা যাবে না। আর মনে মনে বললেন তিনি ওই জন্যে তো এইখানে নিয়ে এসেছি আমি বদলি করে। যাতে তোমার এই ক্ষতি হয়। আমি ধীরে ধীরে কেমন ভেঙে পড়লাম। কলকাতার কার্ড আবারও নষ্ট হলো আমার গর্ভের সন্তান নষ্টের মতোই। আমি চুপ করে বসে রইলাম হায়দরাবাদ এর ন্যাশনাল ডেস্কে। 

কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে এলাম আমি কলকাতায়। অনির্বাণ চৌধুরীর হাত ধরে চব্বিশ ঘণ্টা চ্যানেলে কাজে যোগ দিলাম প্রতিদিন কাগজ ছেড়ে। আবার কার্ডের অ্যাপ্লিকেশন করা হলো। প্রথমবার কার্ড হলো না। সেই সময় বিশ্ব মজুমদার এই কার্ড দেখভালের সর্বময় কর্তা। পরের বার চব্বিশ ঘন্টার কার্ড পেলাম কলকাতার রাজপথে ঘুরে খবর করার কার্ড। অনিবার্য চৌধুরী বলেন তোর কার্ড হয়ে গেছে এইবার। এই ফোনটি পেয়ে সেদিন পোদ্দার কোর্টে বসে কি।আনন্দ যে হয়েছিল আমার। বহুদিন পর এমন আনন্দের খবর শুনলাম আমি। কার্ড পেলাম আবার সুতপা সেন সেই কার্ড এনে দিলো। ওর ব্যাগ থেকে হেসে কার্ড বের করে দিলো আবার। কিন্তু চব্বিশ ঘন্টা ছেড়ে দিলাম আমি আবার কার্ড মূখ থুবড়ে পড়ল। পরে কলকাতা টিভির ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় মালিককে বললাম যদি আমার কার্ডটা করে দেওয়া হয় একটু। করে দিলেন কার্ড সেই কার্ড নবান্ন থেকে এনে দিলো দেবাশীষ সেনগুপ্ত দাড়িওলা। ভাবলাম যাক পেলাম সেই ভালোবাসার কার্ড। তারপর আর কার্ড হয়নি আর। নানা জায়গায় কাজ করেও।


আজ এই বর্ষশেষের আগে এই পুরোনো দিনের কার্ড দেখে নানা কথা মনে পড়ে যায় আমার। মনে হয় তাহলে কার্ড নেই বলে কি আমার আজ সাংবাদিক সত্তা, খবরের প্রতি ভালোবাসা, টান, দুর্বলতা, নেশা সেই পুরোনো দিনের দৌড়ে ঝাঁপিয়ে খবর করা সব কিছুই কর্পূরের মতো উবে গেছে একদম না, মনে হয়। তাহলে কি আর এই রাতের অন্ধকারে এখনও এমন করে খবরকে ভালোবেসেই খবরের দুনিয়ায় ফিরতে চাই আমি। 

তাহলে তো কার্ড নয়, কার্ডের সিনিয়রিটি নষ্ট হয়ে যাওয়া নয়, সেই বুকে কার্ড থাকলেই যে শাসক দলের নেতা মন্ত্রীর সামনে গলা উঁচিয়ে প্রশ্ন করা নয়। আসল হলো একজন সাংবাদিক, একজন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি সারা জীবন ধরেই সে বেঁচে থাকে তার কাজের মধ্যে দিয়ে। সে তার পকেটে সরকারী সিলমোহর মারা প্রেস কার্ড থাক বা নাই থাক।

 রাতের অন্ধকারে আমার ব্যাগে পড়ে থাকা দুই কার্ডের গায়ে আলতো করে হাত বুলিয়ে বড়ই ভালো লাগে আমার। কত স্মৃতি যে জড়িয়ে আছে এই কার্ডের গায়ে। সেই মহাকরণে সেন্ট্রাল গেট দিয়ে প্রবেশ করা বুক ফুলিয়ে, সেই বিধানসভায় পৌঁছে যাওয়া, সেই জেলায় মুখ্যমন্ত্রীর সভায় নিজের নাম লিখিয়ে কার্ড দেখিয়ে প্রেস জোনে ঢুকে পড়া, সেই কার্ড দেখিয়ে ভোটের কাজ আছে বলে বুথে ঢুকে নিজের ভোট দেওয়া। আসলে সবকিছুই যে এই ছোট্ট কার্ডের দৌলতেই। 

আজ আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে সেই আমার জীবনের সব হারানোর মধ্যে হারিয়ে যাওয়া সেই কার্ডের কথাও লিখে ফেললাম আমি। সত্যিই জীবন বড়ই অদ্ভুত। একসময়ে বছর শেষে এই কার্ডকে নিয়েই কত উত্তেজনা শিহরণ খেলে যেতো আমার মনে আর আজ সেই মানুষটা কেমন যেনো সব কিছুকে বুকের মাঝে চেপে রেখেই হাসি মুখেই মেনে নেয়। জীবনে কোনও কিছুই নিত্য নয়, হারিয়ে যাওয়া যে জীবনের ধর্ম। আর সেই হারিয়ে যাওয়াকে মেনে নিয়েই তো জীবনে হাসি মুখে চলতে হয়। সুখ দুঃখ, ভালো মন্দ,
হাসি কান্নাকে বুকে জড়িয়ে। 

সরকারী প্রেস কার্ড - অভিজিৎ বসু।
চব্বিশ ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি নিজস্ব মোবাইল ফোন থেকে তোলা।

মন্তব্যসমূহ

  1. সত্যি কত আশা, প্রত্যাশা, দোলাচলে জড়িয়ে থাকে মানুষের জীবন।সংসারের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও কেটে যায় জীবনের অনেকটা সময়, তৈরি হয় কত টানাপড়েন ,ভাল লাগা, মন্দ লাগা। লেখা জুড়ে লেখকের এই নানা অনুভব বড় মাত্রা এনে দিল।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...