সমীরন পাল বলেছিল একদিন আসবে বোলপুরে, কিন্তু ওর হাজার দৌড় আর ব্যস্ততায় আসা হয়নি ওর কোনো ভাবেই আর বোলপুরের লাল মাটিতে। সমীরন বলেছিল একদিন দেখা হবে আমাদের দুজনের না সেটাও আর করা হয়নি আমাদের কোনোও ভাবেই। সমীরন পাল ইটিভির সেই পুরুলিয়ার পিছিয়ে পড়া জেলার বিখ্যাত ভালো ছবি আর মন ভালো করা স্টোরি করা এক কৃপণ রিপোর্টার। সেই ওর ক্যামেরাম্যান ইন্দ্র এখন পুরুলিয়ার বিখ্যাত সাংবাদিক বলে কথা শুনতে পাই মাঝে মাঝেই নানা জনের কাছে।
সেই পুরুলিয়া থেকে বারাসাত চলে আসা ওর । সেই ব্যারাকপুরের অরুনকে নিয়ে ওর সুখের ঘর আর খবরের সংসার। আর সেই ক্যাসেট জয়ন্তর হাতে ক্যাসেট দিয়ে হা পিত্যেস করে বসে থাকা কখন আসবে ক্যাসেট তারপর ছবি যাবে হায়দরাবাদ এর অফিসে ধীরে সুস্থে। সেই ভীড় ঠেলে মহেশের রথের মেলায় আমার মেয়েকে নিয়ে কাঁধে করে হাসিমুখে ঘুরে বেড়ানো। জিলিপি আর পাঁপড় ভাজা খাওয়া। আর সেই ওর জেলায় বেড়াতে গেলেই নাকি ও ভালো মন্দ খাওয়াতো না বলে এমন অভিযোগ শোনা যেতো বারবার অনেকের কাছেই। সত্যিই অসাধারণ এই সাংবাদিক জীবন ওর।
আর সেই এক নম্বর টিভির চ্যানেলের পর্দায় দেখা যায় বারবার হাসি মুখে ওকে লাইভ দিতে নানা ঘটনায়। সেই ওর বিখ্যাত কথা একটা রোল দিলেই খবর হেডলাইন হয়ে যাবে রে। আর সেই রোল খেয়ে ইটিভির চাকরি করা মামা যিনি সেই অভিজিৎ দাশগুপ্ত বিখ্যাত সাংবাদিক কম গুরুত্বপূর্ণ খবরকে হেডলাইন করে দিতেন হাসতে হাসতেই বলেই শোনা যেতো ওর মুখেই। সেই সব দিনগুলো বেশ ভালই ছিল কিন্তু একসময় আমাদের দুজনের এই পুরোনো দিনের সাংবাদিক জীবন। যে জীবনে জড়িয়ে ছিল নানা সুখের আবেশ আর সুখের স্মৃতি।
সেই সব ফেলে আসা দৌড়ময় এই নানা স্বাদের খবরের জীবন আর সেই জীবনের মাঝে জমে থাকা বন্ধুত্বের অমলিন সম্পর্ক বেশ ভালই ছিল কিন্তু একটা সময়। যে সম্পর্কের মাঝে সরকারী বাস না পেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা নিয়ে হাসি ঠাট্টা ইয়ার্কি ছিল আমাদের দুজনের। সেই হঠাৎ করেই একদিন ওর সাথে ভীড় বাসে দেখা হয়ে যাওয়া সেই অফিস যাওয়ার সময়। ওর সেই ছেলে আর মেয়ের বড় হয়ে যাওয়া দেখতে দেখতে। সেই দীপক আর পলাশের গল্প শোনা ওর মুখে রাতের বেলায়।
সেই ইটিভির অফিস এর পুরোনো দিনের নানা মজার গল্প করা রাতের বেলায় সেই অম্বরীষ দত্ত দা, সৌম্য সিনহা, অরূপ কালী, হীরক কর, গৌতম সরকার, নবেন্দু গুহ কতজন এর কথা যে হতো ওর সাথে আমার সত্যিই বেশ ভালো কেটে যেতো দিনগুলো। সেই সব দিনগুলো বেশ ভালই ছিল কিন্তু এক সময়। সেই ওর ইটিভি বাংলা ছেড়ে স্টার আনন্দে চাকরি হয়ে যাওয়া কিছুটা সেই মামার সুপারিশেই হয়তো। আর আমার না হওয়া শুনেছিলাম সুমন দের কাছে ইন্টারভিউ দেওয়ার পর যদিও সেটা ডেস্ক এর চাকরি ছিল আমার রিপোর্টার এর নয় মামা আমায় একটু পাকা আর সব জান্তা ছেলে বলায় আমার চাকরির সুযোগে একটু চোনা পড়ে যায় আর কী। সে যাকগে কি আর করা যাবে।সেটা নিয়ে কোনোও আফশোষ নেই আমার আজও এই জীবনে।
সেই বিখ্যাত এখনো দৌড়ে যাওয়া হাসি মুখের সাংবাদিক আমাদের সমীরন পাল। যে দৌড়ে কোনোভাবেই আর ওর অফিসের ওর প্রাক্তন সব বন্ধুদের কোনোদিন ধরতে পারবে না জেনেও কেমন দৌড়ে যায় এই বয়সেও হাসতে হাসতেই একটু মন খারাপ করে। সত্যিই ওকে দেখে আমি ভাবি এমন জীবনে শিক্ষালাভ যদি আমি একটু করতে পারতাম তাহলে কী ভালই যে হতো আমার এই জীবনে। সবার কাছেই কিছু কিছু জিনিস শেখার আছে। ওর এই ধৈর্য্য, ওর কষ্ট করেও কাজের প্রতি নিষ্ঠা, আর কাজের প্রতি ভালোবাসা, মেনে আর মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা এই গুণগুলো যদি কিছুটা হলেও আয়ত্তে আনতে পারতাম আমি তাহলে হয়তো আমার জীবনেও কিছুটা লাভ হতো আর কী।
আজ হঠাৎ করেই দেখলাম ওর জন্মদিন এর দিন। ওর সেই ট্রেন করে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানোর মজার দিন। সেই বাঁকুড়াতে ওর শশুড়বাড়ী যাবার দিন। সেই ওর ছেলে আর মেয়েকে নিয়ে ইছামতির তীরে ঘুরে বেড়ানোর দিন। আর তাই মনে পড়ে গেলো নানা ফেলে আসা দিনের কথা। নানা ঘটনার সাক্ষী থাকার কথা। যে সব দিনের মধ্যেই আমাদের দুজনের গভীর ভালোবাসা আজও কিছুটা শুকিয়ে গেলেও রয়ে গেছে টিমটিম করে। আজ ও একজন বিখ্যাত সাংবাদিক আর আমি একজন টোটো চালক তবু বেশ মজা লাগে এই দুজনের অসমান বন্ধুত্বের কথা লিখতে আমার।
যে জীবনে জড়িয়ে আছে আমাদের ফেলে আসা দিনের মধুর কিছু স্মৃতি আর মুহূর্ত যাকে আঁকড়ে ধরে আর মনে করে বেঁচে থাকতে বেশ ভালো লাগে আমার এই এখন বুড়ো বয়সে। সেই ব্যারাকপুরের গঙ্গা পার হয়ে ওর শ্রীরামপুরে আসা খবর পৌঁছতে। দিনের শেষে পাখির ডানা মেলে ঘরে ফেরার মতই ওর ঘরে ফিরে যাওয়া। নানা সুখ দুঃখের গল্প কথা বলে একটু নিজেদের জুড়িয়ে নেওয়া। সত্যিই অসাধারণ এই জীবন। যে জীবনে দৌড় কম ছিল বন্ধুত্ব আর মেঠো সম্পর্ক অনেক বেশি ছিল মনে হয় সেই সময়।
আজ ওর জন্মদিনের দিন অনেক কিছুই মনে পড়ে গেলো আমার। সেই ওর পুরুলিয়ার জল নিয়ে করা সুন্দর মন ভালো করা স্টোরি। আশীষদার প্রশংসা পাওয়া। সেই পাহাড়ের কোল বেয়ে আদিবাসী রমণীদের ছেলে কোলে করে বাটি করে ঝর্নার জল তুলে নিয়ে ঘরে ফেরা। সেই মাথায় হাঁড়ির ওপর বাটির দোল খাওয়া বিখ্যাত সেই ছবি যা আজও চোখের সামনে ভাসে আমার। উঠোনে ন্যাঙটো শিশুর বসে থাকা মুরগীর ঘুরে বেড়ানো আর সেই মন কেমন করা তাদের ডাক। সত্যিই আমি তো সেই সমীরন পাল এর বন্ধু আর সেই সমীরন পাল এর গুণমুগ্ধ খবরের এক একনিষ্ঠ ভক্ত।
একজন রিপোর্টার জেলায় থেকেও কেমন দিব্যি হাসি মুখে ব্যাট করতে পারে। আর রাতের নাইট ডিউটি করার সময় বলতে পারে এরপর আর বের হবো না রে ঘুমোতে হবে কিন্তু অভিজিৎ একটু। সারাদিন অনেক খাটাখাটনি হয়েছে রে। সত্যিই অসাধারণ এই ওর বর্ণময় সাংবাদিক জীবন। যে জীবনে নানা ওঠা আর নামা, হাসি আর কান্না অনেক কিছুই আছে যা আমি জানিনা একদম। তার মাঝেও ওর জীবনকে নিয়ে এমন আনন্দে উপভোগ করা আর খবরকে নিয়ে দৌড়ে বেড়ানো ছুটে বেড়ানো আছে। যা দেখে বেশ ভালো লাগে আমার। শুভ জন্মদিন ভাই। ভালো থাকিস তুই।
ইটিভির সমীরন পাল - অভিজিৎ বসু।
সাত ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন