সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

স্নিগেন্ধুর কথা

ওর দু কানে দুটো ফোন। একবার সিঙ্গুরের মাঠে তো। আবার কখনও লালগড় এর ঘন জঙ্গলে। আর কিছু দিন পরেই অযোধ্যা পাহাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিক ওদিক শুধুই খবরের সন্ধানে নাওয়া খাওয়া ভুলে উষ্কখুষ্ক চুল নিয়ে আর মুখে হাসি নিয়ে আর একপেট ক্ষিদে নিয়ে। শুধুই জল, জঙ্গল, পাহাড় পর্বত পেরিয়ে আদিবাসীদের গ্রামে হাসি মুখে খবর খুঁজে বেড়ানোর নেশায় বুঁদ হয়ে ছুটে বেড়ায় ও দিনরাত। আমার সাথে সিঙ্গুরে প্রতিদিন দেখা হতো ওর সেই সময় সেই ২০০৬ সালে সেই টাটাদের সিঙ্গুরে কারখানা তৈরির সময়। সেই চাষীদের জোর করে জমি অধিগ্রহণ এর সময়। 


সেই যেদিন থেকে টাটার গাড়ি আটকে দিলো গ্রামের মহিলারা ঝাঁটা হাতে বাজেমেলিয়া উজ্জ্বল সংঘের সামনে সেদিন থেকেই আমার আর ওর ঘুরে বেড়ানো সিঙ্গুরের মাঠে এদিক ওদিক খবরের খোঁজে আর খবর করে আনন্দ পাওয়ার আশায়। তারপর সেই তাপসী মালিকের মৃত্যু, সুহৃদ দত্ত আর দেবু মালিকের এক সাথে গ্রেফতার হওয়া, সিঙ্গুরে চাষের জমিতে কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে জমি ঘিরে ফেলা। সেই সিঙ্গুর কৃষি জমি রক্ষা কমিটির আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া মেধা পাটেকর এর। জমির জন্য, জমি রক্ষার জন্য। সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেক বিলি আটকে দেওয়া সিঙ্গুর বিডিও অফিসে। সেই ২৫ সেপ্টেম্বর এর রাতে জোর করে পুলিশ দিয়ে বিডিও অফিস খালি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বের করে দেওয়া পুলিশ দিয়ে বিডিও অফিস অন্ধকার করে। আর বাকি সবটাই তো ইতিহাস এর পাতায় লেখা আছে। 

সেই জমি আন্দোলন এ প্রতিদিন নিজের নামে খবর করতো সে হাসি মুখেই। কখনও বাংলা কাগজে পড়ে ইংরাজি কাগজে নিজের নামে। সেই বিখ্যাত সাংবাদিক স্নিগেন্ধু ভট্টাচার্য্য। সেই মাওবাদীর গোপন ডেরায় হাসিমুখে যে চটি পরে আর নোটবুক নিয়ে হাজির সে হাসিমুখে কাউকে ভয় না পেয়েই। যার ফলে তার লেখা বই লালগড় ও কিসেনজি আজও সমান ভাবেই জনপ্রিয় হয়ে আছে। আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগে সেই বিখ্যাত সাংবাদিক স্নিগেন্ধু ভট্টাচার্য্যের কথা। 

জেলায় কাজ করেও তার থেকে বেশি সুযোগ পেয়ে ও চারিদিকে নানা খবর করে আজ ও একজন প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক হয়ে উঠেছে নিজের কর্মদক্ষতায় আর নিজের ভালো কাজের জন্যে। সেই ওর সৌগত রায় এর সিটিভিএন চ্যানেলের রিপোর্টার এর সাথে মোটর সাইকেল করে সিঙ্গুরে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানো, নাওয়া খাওয়া ভুলে। এটাই বেশ ভালই লাগত কিন্তু সেই লাল পার্টির আমলে আমাদের এই সাংবাদিক জীবনে কাজ করতে দৌড়ে ছুটে বেরিয়ে। 

সেই জঙ্গলমহলে আলতা দিয়ে কাগজে লেখা বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক বলা সেই আমলে। সেই সাংবাদিকদের সামনে দাঁড়িয়ে পিছন করে বাইট দিচ্ছেন বিপ্লবের স্বপ্ন দেখানো এক কঠিন কঠোর ইস্পাত এর মত ঋজু মনের নেতা। যাঁর দুচোখের স্বপ্ন দেখে জঙ্গলমহলের লাল মাটির রাস্তায় ধুলোর ঝড় ওঠে সেই সময় বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুরের নানা গ্রামে। এখন তো সব এই মা মাটি মানুষের আমলে সব কেমন যেন বদলে গেছে ধীরে ধীরে। স্তিমিত হয়ে গেছে সব কিছুই। বদলে গেছে রাজনীতির এই নানা গভীর গোপন অভিসার আর রাজনীতির নানা মিষ্টি মধুর রসায়ন। আর খবরের নানা ধরনের বিষয়বস্তুও। এখন খবর হয় ফিতে মেপে, বুঝে শুনে, কিছুটা গা বাঁচিয়ে রেখে। নিজেকে বাঁচিয়ে আর রাজনীতির ময়দানে ঘুরে বেড়ানো দাপুটে মানুষদের বাঁচিয়ে। সত্যিই অসাধারণ এই খবরের দুনিয়ায় অভিযোজন ঘটে যাওয়া। 

আজ রাতের অন্ধকারে আমার মনে পড়ে গেলো সেই সাংবাদিক স্নিগেন্ধুর কথা। আজ ও অনেক বড়ো হয়ে গেছে বেশ বিখ্যাত হয়ে গেছে বর্তমানে। বেশ কিছুদিন আগে একটা লেখা পড়ে কথা হয়েছিল আমার সাথে ওর অল্পক্ষণ ফোনে। ওর সেই জল জঙ্গল ছেড়ে ওর বিদেশ চলে যাওয়া পড়াশোনা করতে দূরে। ফিরে এসে আবার নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা আর লিখে যাওয়া ওর নানা গুরুগম্ভীর বিষয় নিয়ে। নিজের মত করে ব্যক্ত করা‌ নিজের স্বাধীন মত। এটা দেখে বেশ ভালো লাগে আমার। আর তাই লিখে ফেললাম অল্প কিছু কথা ওকে নিয়ে। 

সেই আমার হারিয়ে যাওয়া হুগলী জেলার সাংবাদিক জীবনের কথা। যে জীবনকে আমি খুব ভালোবাসতাম একসময়। যে জীবনে খবর করার স্বাধীনতা ছিল। যে জীবনে রাজনীতির দাপুটে লোকদের কাছে মাথা নিচু করে খবর করতে হতো না আমাদের। যেখানে লাল পার্টির রক্তচক্ষু থাকলেও সাংবাদিকরা নির্ভয়ে বুক ফুলিয়ে পকেটে কলম নিয়ে লিখতে পারত আসল সত্য কথা আর ঘটনা। সেটা নিয়ে এত চাপাচাপি আর ভয় এর বাতাবরণ থাকতো না সেই সময়ে। মনে হতো না খবর করে চাকরি চলে যেতে পারে সেই কথাও। 

কিন্তু দিন বদলে গেলো, লাল পার্টির রাজ্য সম্মেলন এই হুগলীর ডানকুনিতে হলেও ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখেও ক্ষমতায় নেই তারা অনেকদিন ধরেই। সেই জঙ্গলমহলে দাপুটে হুলা পার্টি মাওবাদীরা অনেক আগেই রাজ্য ছাড়া হয়েছে কবেই। স্বপ্ন দেখানো সেই বিখ্যাত নেতার মৃত্যু হয়েছে এই জঙ্গলেই মুখ থুবড়ে পড়ে থেকে একদিন। এখন শুধুই মা মাটি আর মানুষের কল্যাণের রাজনীতির দখিনা বসন্তের মৃদু মন্দ শান্তির বাতাস বইছে চারিদিকে। সেই বাতাস গায়ে মেখে সাংবাদিকরা মেপে মেপে পা ফেলে কষ্ট করে বেঁচে আছে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের প্রধান স্তম্ভ হয়ে। আর তার মাঝেই আমার মনে পড়ে গেলো সেই আমার পুরোনো দিনের ভয়ডরহীন বন্ধু স্নিগেন্ধুর কথা। ভালো থেকো তুমি। ভালো ভালো লেখা লেখো তুমি। যা পড়ে আমরা সবাই মুগ্ধ হই আর তৃপ্ত হই। ভালো থেকো তুমি। 

স্নিগেন্ধুর কথা - অভিজিৎ বসু।
চব্বিশ ফেব্রুয়ারী দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অ্যাঙ্কর মিমির কথা

'আমরা যদি এই আকালেও স্বপ্ন দেখি কার তাতে কী?' বাহ দারুন সুন্দর এই কথা। স্বপ্ন দেখার কি কোনো সময় হয় নাকি। পঞ্জিকার পাতা উল্টে তিথি নক্ষত্র দেখে কি স্বপ্ন দেখা যায়। যে স্বপ্ন বাঁচার খোরাক জোগায়। যা দেখে এই দৌড় ঝাঁপ করা জীবনে কেমন একটা স্বস্তি মেলে সেই স্বপ্ন সফল হোক বা না হোক। যে কোনোও বয়সে এই স্বপ্ন দেখা যায়। ফেসবুকের পাতায় সেই কথা লেখা দেখে মনে মনে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করেই এই রাত দুপুরে ভয়ে কম্পমান হয়েই ওকে নিয়ে লেখার চেষ্টা করা। সেই পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই দুর থেকেই অচেনা জগতের সেই খবরের বিখ্যাত সব নানা ধরনের খবর পাঠিকাদের ভীড়ে তাঁকে দুর থেকে দেখা। একদম অন্য এক গ্রহের বাসিন্দা যেনো। সেই কালামের দোকানে হয়তো কোনোও সময় চা খেতে গিয়ে দেখতে পাওয়া। সেই লিফটের কুঠুরিতে একসাথে ওঠা বা নামা কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেই। কিন্তু সেই অন্য খবর পড়া অ্যাঙ্কর দের সাথে সহজ সরল ভাবে মিশে যাওয়ার সাহস হয়নি আমার কোনোও দিন তাঁর সাথে। আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই ২৪ ঘণ্টার পোদ্দার কোর্টের অফিসের বিখ্যাত অ্যাঙ্কর মিমির কথা। ...

এলোমেলো , এলেবেলে বিন্দাস জীবন ও জন্মদিন

দেখতে দেখতে বছরের পর বছর গড়িয়ে যায়। আসলে এই অচলাবস্থা আর অকর্মণ্য দিনযাপনের একটা জীবন কাটিয়ে দিতে দিতে বেশ আমি কেমন যেন এডজাস্ট করে নিয়েছি নিজের সাথে নিজেরই এক অদ্ভুত সহাবস্থান। আমার জীবনের সাথে ক্রমেই দ্রুত কমতে থাকে যেনো মৃত্যুর দূরত্ব। দীর্ঘ দিনের জীবনের ঘন্টা ধ্বনিতে কেমন অচেনা সুরের সুর মূর্ছনা বেজে ওঠে ঠিক যেনো ওই গির্জার ঘরে জিঙ্গেল বেল, জিঙ্গেল বেল এর সুরের মতই আচমকা রাত বারোটা বাজলেই এই একত্রিশ মে।  যার তাল, লয় আর ছন্দে আন্দোলিত হয় এই জীবন আর জীবনের নানা জলছবি। যে ছবির কোলাজে ধরা পড়ে হাসি কান্না, সুখ আর দুঃখের নানা অনুভব। যে অনুভূতির জারক রসে আমি জারিত হই প্রতি মুহূর্তে। আর তাই তো বোধহয় সেই ছোটবেলার দিন এর কথা মনে পড়ে গেলেই সেই ঝাপসা হয়ে যাওয়া ধূসর হয়ে যাওয়া সেই ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা হয় আমার বড়ো এই আজকের দিনে।  সেই পুরোনো দিনের ভালোবাসার স্পর্শ আর স্মৃতি রোমন্থন করা একটি ছবি। মায়ের নিরাপদ কোলে ঠিক নয় চুপটি করে পাশে বসে আছি আমি একদম ফিট ফাট হয়ে আপন মনে ভদ্র শান্ত ছেলের মতোই যা আমি মোটেও নয়। আজকের সেই এ...

যা দেখি…প্রতিদিন মনে পড়ে কত… স্মৃতির পথ ধরে হাঁটি… লিখি…

ইটিভির অ্যাঙ্কর অঙ্কুর

ভাবা যায় এই ভুবন ভোলানো হাসিমুখের বিখ্যাত অ্যাঙ্করও নকল হতে পারে নাকি কোনোভাবে। হতেই পারে না একদম এটা। কোনোভাবেই এটা মেনে নেওয়া যায় না আর বিশ্বাস করাও যায় না। ওর এই পোস্ট দেখে সেটাই মনে হলো আমার সবার প্রথমেই। আসলে এই জীবনের পথে হাঁটতে হাঁটতে আসল আর নকলের এই গা ঘেঁষাঘেঁষির ভীড়ে পার্থক্য বোঝাই যে দায়। কে আসল বন্ধু আর কে নকল বন্ধু সেটাই বোঝা মুশকিল। সেটাকে নির্ধারণ করা যে বড়ই দুষ্কর কাজ। সেটাই যে আজকাল আর ঠিক করে ঠাওর করতে পারি না আমি এই বুড়ো বয়সে এসে।  আজ সাদা জীবনের কালো কথায় আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে তাই সেই যার কোলে চেপে বাসে করে জীবনে প্রথম বার দুরু দুরু বুকে রামোজি ফিল্ম সিটিতে গিয়েছিলাম আমি বেশ ভয়ে আর আতঙ্কে যদি চেয়ারম্যান এর সামনে যেতে হয় আর ইংরাজিতে কথা বলতে হয় এই ভয়ে। সেই ভীড় বাসে বসতে জায়গা না পেয়ে সেই তাঁর কথা। সেই যে সারাদিন অফিস করে হায়দরাবাদ এর বাংলা ডেস্ক থেকে ধ্রুব রাতে ওর বাড়িতে ভাত খাবার জন্য নেমতন্ন করলো আমায় গরম ভাত, ডাল আর আলুভাজা রান্না করলো রূপা ওর শরীর খারাপ নিয়েও সেদিন কত কষ্ট করে। সেই খেতে দেবার সময় ওদের ঘরে খাবা...

বিনোদন রিপোর্টার দেবপ্রিয়

দেবপ্রিয় দত্ত মজুমদার। ওর সাথে কোথাও একসাথে কাজ করা হয়নি আমার। ওর খবরের ফিল্ড একদম আলাদা এন্টারটেনমেন্ট। আর আমার শুধুই সাধারণ খবর। কখনও জেলার খবর,আর কলকাতার খবর। রাজনীতির খবর নিয়েই ঘুরে বেড়ানো। তবু কেনো জানিনা ওর শান্তিনিকেতনে আসার খবর শুনেই ওকে সাহস করে আমার নম্বর দিলাম। এমনি কোনোও কারণ ছাড়াই যদি যোগাযোগ হয়। যদি দেখা হয়। কলকাতার গন্ধ আছে। মিডিয়ার একটা বলয় গায়ে জড়িয়ে আছে। আর কি শুধুই যদি দেখা হয়ে যায় এই আশায়।  চমক অপেক্ষা করেছিল আমার জন্য। পরদিন ফোনে যোগাযোগ করলো ও নিজেই। কথা হলো দু চারটে আমাদের। কোথায় থাকো তুমি জিজ্ঞাসা করলো। আর সত্যিই আমি টোটো চালকের কাজ করি কি না যেটা নিয়ে ওর নিজেরও একটা সন্দেহ ছিল মনে মনে সেটা পরিষ্কার করে দিলাম আমি ওকে। কিন্তু যেনো কতদিনের চেনা একজন মানুষ। কত আপন ছন্দে কথা বলা ওর। যেটা আমায় আকর্ষিত করলো বেশ। ওর অনুষ্ঠান যেটা হচ্ছে শান্তিনিকেতনে সেখানে আমার মতো একজন বাতিল মানূষকে আসতে বললো ও নিমন্ত্রণ জানালো সপরিবারে।  আমি একটু আবেগ প্রবণ মানুষ। আমি চলে গেলাম সেই অনুষ্ঠানে ওর আমন্ত্রণে। যা সচরাচর আমি কো...