সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রাজনীতি নয় বিকাশের ভরসা মানুষের ভালোবাসা

রাজনীতি নয় বিকাশের ভরসা মানুষের ভালোবাসা। 


নাম বিকাশ রাজোয়ার। বয়স ৩০ এর নিচে। বীরভূম জেলার ঝাড়খন্ড সীমানায় মহম্মদ বাজার ব্লকের শেষ প্রান্তের চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হলেন বিকাশ। ওর বাড়ী বীরুপুরে। ছোটো থেকেই তার পরের উপকার করা একটা বদ স্বভাব বলা যায়। আর তাই সে ছোটো থেকেই গ্রামের মেঠো মানুষদের সাহায্য করে বেড়ান ঘুরে ঘুরে। এই চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর প্রায় বেশির ভাগ মানুষ আদিবাসী সম্প্রদায় এর লোক। আর এই সব পিছিয়ে পড়া আদিবাসীদের অধিকার ও সরকারি প্রকল্পের অনুদান কি করে মিলবে সেটা তারা ঠিক করে জানতে পারে না বা বুঝতে পারে না। কোথায় যেতে হবে সেটাও জানেনা তারা। 

সিউড়ির কলেজ পাশ করে গ্রাজুয়েট হয়ে বিকাশ মুরগী পালন করে। বাড়িতে সব মিলিয়ে তার দশজনের সংসার। বাবা কাজ করেন ফরেস্টে। দাদা ছোটখাটো ব্যবসা করে। এই করেই দিন চলে যায় তার। কিন্তু দিন চলে গেলেও কি আর নেশা ছেড়ে যায়। দিন চলে গেলেও কি আর সেই গ্রামের মেঠো মানুষদের ভুলে যাওয়া যায়। আর তাই সে তার ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে ফোনের মাধ্যমে লাইভ করে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কথা বলে দেয় তার নিজের আদিভাষী ভাষায়। যা শুনে চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েতের করিয়া নিমদাসপুর, বেনাচাপরা, বামুনডিহা, টাংশুলি, আমজোলা চর, বিরুপুর সহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষরা উপকৃত হন। তারা সবাই বুঝতে পারেন সরকারী প্রকল্প কবে কোথায় গেলে মিলবে। সরকারি সুবিধা কবে কোথায় আসছে। সেটা বিকাশ এর জন্য তারা খবর পেতেন। 

ওর এই ইউটিউব চ্যানেল এর গ্রাহক নয় নয় করে প্রায় দশ হাজার হবে। যাঁরা ওর ফেসবুকের লিংক ফলো করে লাইভ শুনে উপকৃত হয়। আর তাতে হাসি ফোটে বিকাশের মুখে। সে মনে মনে ভাবে এই জঙ্গলে বাস করা মাটির মানুষদের জন্য কিছু তো উপকার করা যাচ্ছে। তাতেই সে খুশি হয় বেশ। কিন্তু গল্পের শেষ এখানেই নয়। এতো গল্পের শুরু সবে। কথায় কথায় জানতে চাইলাম আমি তাঁর কাছে প্রধান হলেন কি করে। বললেন তিনি, সেটা তো এই আমার গ্রামের লোকদের কথায়। তারা সবাই বললেন প্রধান হলে কাজ বেশি করা যাবে। দেখুন আমি ঠিক রাজনীতি বুঝিনা। আমি শুধু এটাই বুঝি যে মানুষের উপকার করতে হবে। যে কোনো ভাবেই আর সেটা আমার একটা নেশা। গ্রামের গরীব মানুষদের পাশে দাঁড়ানো। যাতে তারা কিছুটা হলেও সরকারী সূযোগ সুবিধা পায়। সেটাই তো আসল রাজনীতি। 

আমি একটু থমকে গেলাম ওর কথা শুনে। কি বলছে বিকাশ রাজনীতি না করে, না বুঝে, শুধু মাত্র মানুষের কথা ভেবে তার জীবন কাটিয়ে দেওয়া। আর তাই এলাকায় বিকাশের এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে তৃণমুল কংগ্রেস বিকাশকেই এই চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান করেছে। শুধুই বিকাশের এই জনসংযোগ, সততা, সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সদিচ্ছা দেখে। আর বিকাশ রাজোয়ার সেই পুঁজিকে সম্বল করেই গ্রামের সাধারণ মানুষকে সাহায্য করে এগিয়ে চলেছে। তার কথায় রাজনীতি সেতো রাজার নীতি। সে শুধু জানে যে নীতি যে আর্দশ থেকে রাজনৈতিক আঙিনায় শুধু জনগণের অধিকার রক্ষা আর জনগণের সেবা করার থেকে কিছুই বড়ো হতে পারে না। সেটাকে সম্বল করেই বিকাশ এগিয়ে চলেছে হাসিমুখে।

রাজনীতি নয় বিকাশের ভরসা মানুষের ভালোবাসা - অভিজিৎ বসু।
তেরো মার্চ, দু হাজার পঁচিশ।
ছবি সৌজন্য ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...