সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

টোটো চালক ও দালাল


আজ আপনাদের এক দালাল আর টোটো চালকের গল্প বলি। যে দালাল টাকা নিয়ে বাংলাদেশের বর্ডার পার করে দেওয়া দালাল নয়। এই দালাল একটু অন্য ধরনের দালাল। আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় যে এলোমেলো এলেবেলে আর বিন্দাস জীবন কাটানো এক টোটো চালকের আজ এই হঠাৎ করেই দালাল হয়ে ওঠার গল্প। যে গল্পের পরতে পরতে রহস্য আবিষ্কার করছি আমি। জীবনের এই মেঠো পথের বাঁকে বাঁকে কত যে নতুন নতুন সব কিছু আবিষ্কার করছি আমি সত্যিই অবাক পৃথিবী অবাক করলে আরও বলতে ইচ্ছা হয় আমার এই রাত দুপুরে। 

জীবনের এই শেষ বেলায় এসে এলোমেলো জীবনে যেনো ঝড় উঠেছে হঠাৎ করেই আমার। যে জীবন একদিন স্থবির জীবন ছিল আমার। যে জীবন বধির ছিল। যে জীবন শুধুই নিজের মৃত্যুর কাছাকাছি এসে অপেক্ষার প্রহর গুনছিল আর রাতের অন্ধকারে নিশাচর পেঁচার ডাক শুনত। যে জীবন শুধুই অপমান, অবহেলা সহ্য করেই বেঁচে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গেছিল একসময়। সেই জীবন কেমন স্থবিরতা কাটিয়ে আড়মোড়া ভেঙে জীবনের মেঠো রাস্তায় হাঁটছে টলমল পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে। সেই জীবনে এখন শুধুই ব্যস্ততা আর ব্যস্ততা আর ব্যস্ততা। যে অন্ধকার ঘরে আলো জ্বলতে দেখা যেতো না কোনওদিন। সেই ঘরে আজ কত মানুষের ভীড় আর আনাগোনা। সত্যিই অসাধারণ কিন্তু এই বদলে যাওয়া এক দালাল এর জীবন। যে জীবন নিয়ে কাটা ছেঁড়া করতে বসে নিজের কাছে কেমন যেনো বড্ড ছোটো লাগে আমার। বহুদিন ধরে সিংহাসনে বসে থাকা মানুষের দেবতা জিউস থেকে হঠাৎ কেমন করে যেনো যমদূত হয়ে যাওয়া। সেই নানা চেনা মানুষের আমলকী গাছের গন্ধ মাখা বন্ধুত্বের অচেনা অজানা হয়ে যাওয়া। আমায় কেমন বিমোহিত করে বারংবার। সত্যিই জীবন বেশ উপভোগের বিষয় কিন্তু। 

সেই দালাল এর ব্যস্ত জীবন এর মাঝে ঢুকে পড়ে কেমন হাসফাঁস করি আমি। পালিয়ে যেতে ইচ্ছা হয় আমার এই নতুন জীবন ছেড়ে। এই দালালির আর দলাদলির জীবন। যে জীবনকে আমি ফেলে এলাম সেই খোয়াই এর ধারে, কোপাই এর ধারে। বর্ষার জলে ঝাঁপ দেওয়া সেই অঞ্জনা নদীর তীরে একদল শিশুর আনমনে জীবন নিয়ে হৈ চৈ হুল্লোড় করা শিশুদের সাথে। সেই সোনাঝুড়ির হাটে মাদলের সুর এর মধ্যে দিয়ে বেঁচে থাকার মধ্য দিয়ে। সেই সবুজ ক্ষেতে মাথা দুলিয়ে উড়ে বেড়ানো পাখির দল। সেই গ্রামের রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো আদুল গায়ে নেংটো শিশুর উলংগ যে জীবন। যে জীবনে সুখ জড়িয়ে নেই খুব একটা। কিন্তু ভালবাসা আছে। যেখানে হিংসা, ঠেলাঠেলি, একে অপরকে টপকে এগিয়ে যাওয়া, আর সবার অগোচরে বসে প্ল্যান করা নেই কি করে দালাল হঠাও অভিযান করা যায়। সত্যিই অসাধারণ এই জীবন। 

সত্যিই কি যে দরকার ছিল আমার এই টোটো চালক থেকে দালাল হবার কে জানে। তাও আবার পাশপোর্ট অফিস এর দালাল নয় আমি। শুধুই এক বাংলা বারো পাতার কাগজের ছিপ নৌকা তৈরীর দালাল। এক বোকা বাক্সের টিভি মিডিয়ার ছোট্ট দালাল। আসলে আজকাল তো দালাল ছাড়া কাজ হয়না কিছুতেই। বাড়ি ভাড়া থেকে শুরু করে, বাড়ীর লোকের মৃতদেহ দাহ করা। সবটাই যে দালালিতে ভর্তি। ফেল কড়ি মাখো তেল। তাই আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগের ছন্দময় পাতায় বদলে যাওয়া জীবনে এই দালাল নিয়েই কেমন আবেগ প্রবণ হয়ে পড়লাম আমি এই রাত দুপুরে।

সত্যিই তো নিজে বাঁচার জন্য এই দালাল হবার কি খুব দরকার ছিল আমার কে জানে। যে মানুষটা কোনওদিন নিজের কথা না ভেবেই এলোমেলো এলেবেলে আর বিন্দাস জীবন কাটিয়ে গেলো নিজের মর্জি মতো। সে কেনো যে হঠাৎ করেই এমন বদলে গেলো কে জানে। হয়তো বার বার হারতে হারতে শেষ বেলায় একটু জেতার শখ হয়েছিল তার। যেটা হওয়া একদম উচিৎ হয়নি আমার। আর তাই বোধহয় আজ আমার পুরো দস্তুর টোটো চালকের জীবন না কি দলাদলির দালালির জীবন কাটিয়ে দেবো কোনটা আমার পক্ষে নিরাপদ সেটাই ভেবে চলেছি আমি। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক, নাকি দালালির জীবন নিপাত যাক। 

এই দোটানায় আমি বড্ড বেশি ক্লান্ত আর অবসন্ন। আমার সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই অবসন্ন এক ক্লান্ত জীবনের কথাই লিখে ফেললাম আমি এই গভীর রাতে। জানি না কেউ বিশ্বাস করবে না হয়তো আমি সত্যিই বলছি আমি দালাল নয় বিশ্বাস করুন আপনারা। আমি একজন সাধারণ মানুষ যে বাঁচতে চায়, যে জীবনে কিছু পেতে চায়, যে জীবনে দাঁড়াতে চায়, যে পরিবারকে কিছু সাহায্য করতে চায়। হয়তো সেটা ভুল আমার। কিন্তু আপনারা বিশ্বাস করুন আমি দালাল নই। তিন চাকার এক বিন্দাস জীবন এর টোটো চালক। যে নিজের জীবনকে নিজের মতো করেই চালায়। কাউকে নিজের শিরদাঁড়া না ঝুঁকিয়ে সে বেঁচে থাকে কোনও হিসেব নিকেষ না করেই। 

টোটো চালক ও দালাল - অভিজিৎ বসু।
২২ জুন, দু হাজার পঁচিশ। 
ছবি সৌজন্য এক বন্ধু।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

অ্যাঙ্কর মিমির কথা

'আমরা যদি এই আকালেও স্বপ্ন দেখি কার তাতে কী?' বাহ দারুন সুন্দর এই কথা। স্বপ্ন দেখার কি কোনো সময় হয় নাকি। পঞ্জিকার পাতা উল্টে তিথি নক্ষত্র দেখে কি স্বপ্ন দেখা যায়। যে স্বপ্ন বাঁচার খোরাক জোগায়। যা দেখে এই দৌড় ঝাঁপ করা জীবনে কেমন একটা স্বস্তি মেলে সেই স্বপ্ন সফল হোক বা না হোক। যে কোনোও বয়সে এই স্বপ্ন দেখা যায়। ফেসবুকের পাতায় সেই কথা লেখা দেখে মনে মনে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করেই এই রাত দুপুরে ভয়ে কম্পমান হয়েই ওকে নিয়ে লেখার চেষ্টা করা। সেই পোদ্দার কোর্টের অফিসে সেই দুর থেকেই অচেনা জগতের সেই খবরের বিখ্যাত সব নানা ধরনের খবর পাঠিকাদের ভীড়ে তাঁকে দুর থেকে দেখা। একদম অন্য এক গ্রহের বাসিন্দা যেনো। সেই কালামের দোকানে হয়তো কোনোও সময় চা খেতে গিয়ে দেখতে পাওয়া। সেই লিফটের কুঠুরিতে একসাথে ওঠা বা নামা কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখেই। কিন্তু সেই অন্য খবর পড়া অ্যাঙ্কর দের সাথে সহজ সরল ভাবে মিশে যাওয়ার সাহস হয়নি আমার কোনোও দিন তাঁর সাথে। আজ আমার এই সাদা জীবনের কালো কথায় আমার আঁকিবুঁকি ব্লগের পাতায় সেই ২৪ ঘণ্টার পোদ্দার কোর্টের অফিসের বিখ্যাত অ্যাঙ্কর মিমির কথা। ...

এলোমেলো , এলেবেলে বিন্দাস জীবন ও জন্মদিন

দেখতে দেখতে বছরের পর বছর গড়িয়ে যায়। আসলে এই অচলাবস্থা আর অকর্মণ্য দিনযাপনের একটা জীবন কাটিয়ে দিতে দিতে বেশ আমি কেমন যেন এডজাস্ট করে নিয়েছি নিজের সাথে নিজেরই এক অদ্ভুত সহাবস্থান। আমার জীবনের সাথে ক্রমেই দ্রুত কমতে থাকে যেনো মৃত্যুর দূরত্ব। দীর্ঘ দিনের জীবনের ঘন্টা ধ্বনিতে কেমন অচেনা সুরের সুর মূর্ছনা বেজে ওঠে ঠিক যেনো ওই গির্জার ঘরে জিঙ্গেল বেল, জিঙ্গেল বেল এর সুরের মতই আচমকা রাত বারোটা বাজলেই এই একত্রিশ মে।  যার তাল, লয় আর ছন্দে আন্দোলিত হয় এই জীবন আর জীবনের নানা জলছবি। যে ছবির কোলাজে ধরা পড়ে হাসি কান্না, সুখ আর দুঃখের নানা অনুভব। যে অনুভূতির জারক রসে আমি জারিত হই প্রতি মুহূর্তে। আর তাই তো বোধহয় সেই ছোটবেলার দিন এর কথা মনে পড়ে গেলেই সেই ঝাপসা হয়ে যাওয়া ধূসর হয়ে যাওয়া সেই ছবির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা হয় আমার বড়ো এই আজকের দিনে।  সেই পুরোনো দিনের ভালোবাসার স্পর্শ আর স্মৃতি রোমন্থন করা একটি ছবি। মায়ের নিরাপদ কোলে ঠিক নয় চুপটি করে পাশে বসে আছি আমি একদম ফিট ফাট হয়ে আপন মনে ভদ্র শান্ত ছেলের মতোই যা আমি মোটেও নয়। আজকের সেই এ...

আমাদের মধু দা

দু হাজার চব্বিশ সাল এর মে মাস থেকে আমাদের দুজনের কথা হচ্ছে মোবাইলের মাধ্যমে। একদিন দেখা হবে সাইকেল করে ঘুরতে ঘুরতে বোলপুরের যে কোনোও জায়গায় বা শান্তিনিকেতনের যে কোনোও জায়গায় বা পূর্বপল্লীর সেই মেলা মাঠে কোনও এক সন্ধ্যায় হাঁটতে হাঁটতে। কিন্তু দেখা হয়নি আমাদের দুজনের বহুদিন। কত পরিকল্পনা করেও ভেস্তে গেছে সেই দেখা হওয়া।  মোবাইলে মেসেজ করে একদিন আমায় পশ্চিম মেদিনীপুরের সাংবাদিক সুপ্রিয় মাইতি জানায় তিনি অসুস্থ একটু যদি খবর নেওয়া যায় অভিজিৎ দেখবে তুমি। এই খবর পেয়ে আমি খবর নিয়েছি কিন্তু সামনে যাওয়া হয়নি তাঁর কাছে আর। তারপর কলকাতার অনেকের মুখেই শুনেছি সেই বিখ্যাত সাংবাদিক মধুদার কথা। সেই একসময়ের শিরদাঁড়া সোজা রেখে মন্ত্রীদের সাথে কথা বলা ইংরাজি কাগজের সাংবাদিক বিশ্বজিৎ রায় ওরফে মধুদা। সেই পরিবর্তন, যুগান্তর আরও নানা বাংলা কাগজে, ম্যাগাজিনে কাজ করে তাঁর কথায় সেই পেটের দায়ে ইংরাজি কাগজে কাজ করা তাঁর একসময়। সেই টেলিগ্রাফ, টাইমস অফ ইন্ডিয়া সহ নানা কাগজে। সেই ভরা বাম আমলে কেমন যেনো একটু অন্য ভাবে নিজের কাজের প্রয়োজনে ছাড়া কোনো লাল পার্টির কোনও নে...

যা দেখি…প্রতিদিন মনে পড়ে কত… স্মৃতির পথ ধরে হাঁটি… লিখি…