সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

স্যালুট মানব গুহ

আসলে রাত বাড়লেই আমার রোগ বাড়ে। শরীরের যন্ত্রণা আর মনের যন্ত্রণা মিলেমিশে কেমন এক হয়ে যায় আমার। মনে হয় তাহলে এই রাতের অন্ধকারে ফেলে আসা অতীত দিনের সাদা জীবনের কালো কথায় কিছু কথা লিখি আমি এই রাতদুপুরে। রাতের নানা অতিথি আমার মনের জানলায় কেমন করে ভীড় করে তারা। ঠিক যেনো রাতের অন্ধকারের পথ পেরিয়ে আমার জানলার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে তারা চুপটি করে ঘাপটি মেরে। 

আজ তেমন এক জনের কথাই লিখবো আমি। ভেবেছিলাম ওকে নিয়ে কদিন পরে লিখব আমি। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি তাকে নিয়ে লিখতে হবে ভাবিনি আমি কখনো। ফেলে আসা জীবনকথা ধীরে সুস্থে লিখে গেলেই হয়, তাড়া নেই তো কোনো আমার জীবনের। কিন্তু যা ভাবা যায় সেটা কি আর সবসময় মিলে যায়। আমার বোলপুরের ভাড়া বাড়িতে একজন সিকিউরিটি মুগ্ধ হয়ে সারাদিন মোবাইল ফোনে কবে একাদশী আর গ্রহদোষ কি করে কাটবে সেটাই শুনে যায় সারাদিন। একাদশী, পূর্ণিমা পালন করে আর ফ্ল্যাটে পাহারা দিয়ে তাঁর দিন কেটে যায়। মাস কেটে যায়।

তাঁর গলায় কণ্ঠীর মালা। সারাদিন হরিনাম জপ করছেন আর শুনছেন নিজের মোবাইল ফোনে। বয়সে তরুণ না হলেও সে তার নাম কিন্তু তরুণ। বেশ ভালো হাসিখুশি মানুষ। কোপাই এর স্টেশন এর কাছে তাঁর  নিজের বাড়ি। বোলপুরে স্টেশন এর কাছে তাঁর সিকিউরিটির এই কাজ করে খুব অল্প কিছু আয় হয় আর কি। আজ দুপুরে হঠাৎ দেখি তার মোবাইল ফোনে হরেকৃষ্ণ নয় চলছে অন্য কিছু। আমায় দেখতে পেয়ে বলল দেখুন দেখুন একে আপনি চেনেন নাকি। খুব ভালো কথা বলে। বড় সাংবাদিক কিন্তু। দেখলাম The news বাংলার প্রধান কারিগর সেই এক সময়ের বিখ্যাত ইটিভির প্রতিবাদী সাংবাদিক মানব গুহ। 

যার কথা হরি নাম ছেড়ে মুগ্ধ হয়ে শুনছে আমাদের ফ্ল্যাটের সিকিউরিটি তরুণ। আমি একটু নিচু স্বরে  তাঁকে বললাম হ্যাঁ, আমি ওকে চিনি। এক সময় একসাথে কাজ করতাম আমি ওর সঙ্গে। তাতে আমার এই কথা শুনে ওর খুব একটা যে সে বিশ্বাস করলো সেটা ওর মুখ দেখেই আমি বুঝতে পারলাম। না আমি যে নিজেকে টোটো চালক বলি সে এই বিখ্যাত সাংবাদিক মানব গুহ কে চেনে এটা নির্ঘাত মিথ্যা কথা বলেই ধরে নিয়ে নিজের ছোটো সেই টুনটুনি মোবাইল ফোনে মানবের জ্বালাময়ী বক্তৃতা শুনতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল সে। আমার দিকে তাছিল্য ভঙ্গিতে তাকিয়ে। আমি ভাবলাম একবার আমার ফোন থেকে মানবকে ধরি ওর সাথে কথা বলিয়ে দিয়ে বলি যে দেখো তুমি তো বিশ্বাস করলে না আমার কথা। এই দেখো তুমি যার কথা মোবাইল ফোনে শুনছো সেই আমার ফোন নম্বর ধরলো কিন্তু। 

আগে এটা আমি করে দেখাতাম নিজের ক্ষমতা অনেককে। কারণে আর অকারণে কিন্তু পরে দেখলাম এটা না করেও তো দিব্যি বেঁচে থাকা যায়। তাই আর মানবকে ফোন করলাম না আমি আগের মত করেই। আর যদি মানব ব্যস্ত হয়ে আমার ফোন না ধরে, তাহলে তো আমার মান ইজ্জত এমনি চলে গেছে ইতিমধ্যেই সমাজে সংসারে পরিবারে, রাস্তাঘাটে আরও যাবে। এই বলে লিফট ধরে চলে এলাম আমি। আমার ভাড়া বাড়ির সেই তরুণ সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি মন দিয়ে সেই আমাদের ইটিভির সব চেয়ে বড় বিপ্লবী আর বিদ্রোহী রিপোর্টার মানব এর কথা শুনতে লাগলো মন দিয়ে। 

লিফট করে উঠতে উঠতে মনে পড়ে গেলো সেই বোধ হয় হায়দরাবাদ ডেস্ক এর কাজ শুরু করলো মানব গুহ। ঝকঝকে চেহারা। সুন্দর হাসি মাখা মুখ। একদম তরতাজা যুবক। একটু বাড়তি উৎসাহ সব বিষয়ে ওর। আর অন্যদের পিছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা। আর তাতে সফলতা পাওয়া। সেই হায়দরাবাদ এর ডেস্ক থেকে মুক্তি পেয়ে পুরুলিয়া, রায়গঞ্জ এমন নানা জায়গা জেলা ঘুরতে ঘুরতে মানব হয়ে গেলো বিখ্যাত রিপোর্টার।

 জেলা প্রতিনিধি হয়ে ঘুরতে ঘুরতে মানব চলে এলো কলকাতার রিপোর্টার হয়ে। আমিও হুগলী জেলা ছেড়ে কলকাতা চলে এলাম যা আমার জীবনের সব থেকে বড়ো ভুল ছিল। যেটা আজ  আমি সেই জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের বিখ্যাত সাংবাদিক সুজিত ভৌমিককে দেখে অনুভব করি আমি। কিন্তু যাক গে কি আর করা যাবে। যা হওয়ার হয়ে গেছে। আর তো ফিরে আসবে না দিন গুলো নতুন করে আবার। 


আমার থেকেও বড় প্রতিবাদী আর বিপ্লবী মানব গুহ কলকাতার রাজপথে দ্রুত গতিতে দৌড়ে চলেছে। জেলা থেকে কোলকাতাতে কাজ করতে এলে এমন করতে হয়। পড়ে একটু গতি কমে যায় যদিও। যাই হোক সেই মানব, আমি, পার্থ, অরূপ দত্ত, নাবেন্দু গুহ, জয়ন্ত চৌধুরী, জটাশঙ্কর লাহিড়ী, সেই দীপালি, মৌসুমী, পিয়ালি, শাবানা, মৌসুমী, সেই কোর্ট এর দীপক, সেই মিঠু, আশীষ, বিশ্বজিৎ গুহ রায়, ম্যানেজার সুদীপ্ত দা, সেই অমিতাভ ভি স্যাট এর। সেই মণীশ কুমার আই টির এমন কত যে  লোক ছিল সবার নাম মনেও নেই আজ আর। সেই সাধন, সুদীপ, আরও কত লোক। সেই চন্দন, সুশান্ত। ক্যামেরায় দেবাশীষ মৈত্র, ফান্টা, মানস ঘোষাল, সৌমেন, মনোজ, রাও, শুভেন্দু, যাকে গে হঠাৎ আমার  কলকাতা থেকে বদলি হলো হায়দরাবাদ আর তার ঠিক একমাসের মধ্য মানব চলে এলো হায়দরাবাদ আমার পিছু পিছু।

বাক্স নিয়ে অটো থেকে নামতে নামতে ভাগ্যলতার সেই বাড়িতে এসেই মানব এর ডায়ালগ কাকা, অমিও চলে এলাম কলকাতায় আর রাখলো না আমাকেও তোমার মত। তাই তোমার কাছে পাঠিয়ে দিলো কৌশিক গিরি আর জটাশঙ্কর লাহিড়ী দুজন মিলে। জানিনা ওর কি অপরাধ ছিল। আমাদের হায়দরাবাদ এর সেই বাড়িতে তখন পুলকদা আমাদের সবার অভিভাবক। আর সেই শুভাশীষ। যাই হোক ব্যাগ পত্তর রেখে মানবের সেই দিলখোলা হাসি আর ডায়ালগ কি আর করবে আমাদের নিয়ে কে জানে। কিন্তু ওর ভাগ্য ভালো ওকে বাংলা ডেস্কে বদলি করা হয়েছে। আমার মত ন্যাশনাল ডেস্কে নয়। 

আমি যেমন ভেঙে পড়েছিলাম এই হায়দ্রাবাদ বদলি হয়ে মানব যেনো বিন্দাস। পারলে রামোজি রাও এর কাছে চলে গিয়ে বলে স্যার আপনি এর বিচার করুন। সেই বিকেল হলে চা খেতে গিয়ে মানব আর আমি আর এফ সি তে ঘুরে বেড়াচ্ছি। কত যে ছবি তুলে দিয়েছিল আমার সব হারিয়ে গেছে যে। অল্প কিছুদিন পরেই ধ্রুব নতুন ইটিভির দায়িত্ব নিয়ে হায়দরাবাদ গেলো। রাজেশ রায়না সঙ্গে মিটিং করলো। আর দেখলাম সেদিন বিকেল বেলায় একদম তরতাজা যুবক প্রতিবাদী মানব গুহর পকেটে কলকাতায় ফেরার চিঠি নিয়ে ও একমুখ হাসি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে রামোজি ফিল্ম সিটিতে। আর সবাইকে বলছে কলকাতা ফেরার চিঠি পেয়ে গেলাম ফিরে যাচ্ছি আমি। তোমরা সবাই ভালো থেকো। বেশ ভালো লেগেছিল আমার ওর সেই দিলখোলা হাসি আর  পকেটে উঁচু হয়ে থাকা সেই সাদা চিঠি দেখে সেদিন। মানব চলে এলো কলকাতা ধ্রুব আর রাজেশ রায়নার হাত ধরে। আমার ভাগ্যলতার ঘরটা আবার ফাঁকা হয়ে গেলো। আমি একাই আবার বাস করতে থাকলাম। আসলে এটাই তো জীবন। একা একাই হেঁটে চলা আর বেঁচে থাকা এই জীবনে।

সেই মানবের কথা, সেই ওর দৃপ্ত পায়ে চলা, সেই ওকে পুলিশ এর ধরে নিয়ে যাওয়া লালবাজারে রাতের অন্ধকারে, ওর মুক্তির জন্য সবার অপেক্ষা করা, আবার হায়দরাবাদ থেকে কলকাতা ফিরে এসে চুটিয়ে ওর কাজ করা, আবার সেই কলকাতার এক বিখ্যাত ক্রাইম রিপোর্টার এর সু নজরে মানব না থাকায় ইটিভির কাজ ছেড়ে দিয়ে ওর চলে আসা। মামলা করা। এমন হাজারো স্মৃতি জড়িয়ে আছে আমার আর ওর দুজনের এই জীবনের মাঝে এই কটা বছরে। সেই ওর আদালতে হাজিরা দেওয়া। তারপর পনেরো দিন পর ছাড়া পাওয়া। নানা নেতা থেকে শুরু করে অনেকের কাছে প্রতিবাদী চরিত্রের এই সাংবাদিক এর অনেক কিছুই যে আমার জানা সেটা আমার এই ফ্ল্যাটের সিকিউরিটিকে বিশ্বাস করাতে পারিনি আমি আজ। তাই রাতের বেলায় এইসব লিখে বিশ্বাসযোগ্য করার আপ্রাণ চেষ্টা করছি আমি। 

সিঙ্গুরে কিছু একটা ঘটনা হলে বা ওর সেটা আলোচ্য বিষয় হলে আমায় ভালোবেসে ফোন করে ও বলে কাকা, এটা কি একটু বুঝিয়ে বলত আমায় কেসটা কি। আমি ওকে বলি ভাই আমি তো সাংবাদিক নয়, এখন আমি টোটো চালক। ঠোঁট কাটা মানবের সোজা উত্তর কাকা, হুগলীর রিপোর্টার বলতে আমি তোমাকেই একমাত্র চিনি আর কেউ তো আজকাল আর রিপোর্টার নেই সব যে চামচা বেলচা হয়ে গেছে। আমার বেশ ভালো লাগে ওর এই সোজা সাপটা কথা শুনে এই বুড়ো বয়সে মিডিয়াতে বাতিল মাল হয়ে।

 সত্যিই সেই মানবের সোজা সাপটা কথা, ওর চশমা পরে দাড়ি মুখের কথা মন দিয়ে শুনছে সিকিউরিটি তরুণ, আমার বৃদ্ধ বাবা, বোলপুরের বাসিন্দা, বর্ধমানের বাসিন্দা, হুগলীর গ্রামের বাসিন্দারা। যে মানব বুকে সাহস নিয়ে খবরের জগতে আজও বেঁচে আছে বুক ফুলিয়ে সাহস করে। যাকে অনেকে ভেবেছিলো মেরে ফেলবে শেষ করে দেবে তাদের সবার মুখে ঝামা ঘষে। আমার গর্ব হয় ওর জন্যে সত্যিই বলছি বিশ্বাস করুন। সে বিজেপির হয়ে কথা বলুক, তৃণমূলের সমালোচনা করুক, সিপিএমকে গাল দিক। যাই করুক ও মানব গুহ একজন বিখ্যাত সাংবাদিক থেকে আরও বিখ্যাত হয়ে গেছে আজ। 

 মানব দেখিয়ে দিয়েছে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেও কেমন ঘুরে দাঁড়িয়ে পাল্টা থাপ্পড় মেরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হয়। ও বুঝিয়ে দিয়েছে যে এটাই হলো আসল কথা জীবনের। যেটা আমি করতে পারিনি ওর মতো। ও সেটা করে বুঝিয়ে দিয়েছে ছেড়ে আসা ইটিভির কর্তাদের। ও বুঝিয়ে দিয়েছে এই বাংলা মিডিয়াতে মুখ বুজে মাথা নিচু করে বসদের পা ধরে কাজ করা অন্য রিপোর্টারদের , মিডিয়াতে কাজ করা সেই হীরক রাজার দেশের খনি শ্রমিক কর্মীদের যে জীবনে এই ভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে হয় নিজের কলজের জোরে। যেটা আমার অন্ততঃ নেই। তাই স্যালুট মানব গুহকে। 

স্যালুট মানব গুহ - অভিজিৎ বসু।
উনিশ অক্টোবর, দু হাজার চব্বিশ। 
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

  1. আরে কাকা, কাঁদিয়ে দিলে তো। বিদ্রোহীদের চোখে আগুন থাকবে তো নাকি, জল এলে হবে? বর্ধমানের এক 'ভেদো বাঙালি'র জন্য 'হুগলীর কাকা'র অফুরন্ত ভালোবাসা। ধুর তোমার মুখ থেকে দু চার পিস 'নির্ভেজাল গালাগাল' ভালো লাগে, এত প্রশংসা হজম হবে না..

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...