সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

স্যালুট মানব গুহ

আসলে রাত বাড়লেই আমার রোগ বাড়ে। শরীরের যন্ত্রণা আর মনের যন্ত্রণা মিলেমিশে কেমন এক হয়ে যায় আমার। মনে হয় তাহলে এই রাতের অন্ধকারে ফেলে আসা অতীত দিনের সাদা জীবনের কালো কথায় কিছু কথা লিখি আমি এই রাতদুপুরে। রাতের নানা অতিথি আমার মনের জানলায় কেমন করে ভীড় করে তারা। ঠিক যেনো রাতের অন্ধকারের পথ পেরিয়ে আমার জানলার কাছে দাঁড়িয়ে থাকে তারা চুপটি করে ঘাপটি মেরে। 

আজ তেমন এক জনের কথাই লিখবো আমি। ভেবেছিলাম ওকে নিয়ে কদিন পরে লিখব আমি। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি তাকে নিয়ে লিখতে হবে ভাবিনি আমি কখনো। ফেলে আসা জীবনকথা ধীরে সুস্থে লিখে গেলেই হয়, তাড়া নেই তো কোনো আমার জীবনের। কিন্তু যা ভাবা যায় সেটা কি আর সবসময় মিলে যায়। আমার বোলপুরের ভাড়া বাড়িতে একজন সিকিউরিটি মুগ্ধ হয়ে সারাদিন মোবাইল ফোনে কবে একাদশী আর গ্রহদোষ কি করে কাটবে সেটাই শুনে যায় সারাদিন। একাদশী, পূর্ণিমা পালন করে আর ফ্ল্যাটে পাহারা দিয়ে তাঁর দিন কেটে যায়। মাস কেটে যায়।

তাঁর গলায় কণ্ঠীর মালা। সারাদিন হরিনাম জপ করছেন আর শুনছেন নিজের মোবাইল ফোনে। বয়সে তরুণ না হলেও সে তার নাম কিন্তু তরুণ। বেশ ভালো হাসিখুশি মানুষ। কোপাই এর স্টেশন এর কাছে তাঁর  নিজের বাড়ি। বোলপুরে স্টেশন এর কাছে তাঁর সিকিউরিটির এই কাজ করে খুব অল্প কিছু আয় হয় আর কি। আজ দুপুরে হঠাৎ দেখি তার মোবাইল ফোনে হরেকৃষ্ণ নয় চলছে অন্য কিছু। আমায় দেখতে পেয়ে বলল দেখুন দেখুন একে আপনি চেনেন নাকি। খুব ভালো কথা বলে। বড় সাংবাদিক কিন্তু। দেখলাম The news বাংলার প্রধান কারিগর সেই এক সময়ের বিখ্যাত ইটিভির প্রতিবাদী সাংবাদিক মানব গুহ। 

যার কথা হরি নাম ছেড়ে মুগ্ধ হয়ে শুনছে আমাদের ফ্ল্যাটের সিকিউরিটি তরুণ। আমি একটু নিচু স্বরে  তাঁকে বললাম হ্যাঁ, আমি ওকে চিনি। এক সময় একসাথে কাজ করতাম আমি ওর সঙ্গে। তাতে আমার এই কথা শুনে ওর খুব একটা যে সে বিশ্বাস করলো সেটা ওর মুখ দেখেই আমি বুঝতে পারলাম। না আমি যে নিজেকে টোটো চালক বলি সে এই বিখ্যাত সাংবাদিক মানব গুহ কে চেনে এটা নির্ঘাত মিথ্যা কথা বলেই ধরে নিয়ে নিজের ছোটো সেই টুনটুনি মোবাইল ফোনে মানবের জ্বালাময়ী বক্তৃতা শুনতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল সে। আমার দিকে তাছিল্য ভঙ্গিতে তাকিয়ে। আমি ভাবলাম একবার আমার ফোন থেকে মানবকে ধরি ওর সাথে কথা বলিয়ে দিয়ে বলি যে দেখো তুমি তো বিশ্বাস করলে না আমার কথা। এই দেখো তুমি যার কথা মোবাইল ফোনে শুনছো সেই আমার ফোন নম্বর ধরলো কিন্তু। 

আগে এটা আমি করে দেখাতাম নিজের ক্ষমতা অনেককে। কারণে আর অকারণে কিন্তু পরে দেখলাম এটা না করেও তো দিব্যি বেঁচে থাকা যায়। তাই আর মানবকে ফোন করলাম না আমি আগের মত করেই। আর যদি মানব ব্যস্ত হয়ে আমার ফোন না ধরে, তাহলে তো আমার মান ইজ্জত এমনি চলে গেছে ইতিমধ্যেই সমাজে সংসারে পরিবারে, রাস্তাঘাটে আরও যাবে। এই বলে লিফট ধরে চলে এলাম আমি। আমার ভাড়া বাড়ির সেই তরুণ সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি মন দিয়ে সেই আমাদের ইটিভির সব চেয়ে বড় বিপ্লবী আর বিদ্রোহী রিপোর্টার মানব এর কথা শুনতে লাগলো মন দিয়ে। 

লিফট করে উঠতে উঠতে মনে পড়ে গেলো সেই বোধ হয় হায়দরাবাদ ডেস্ক এর কাজ শুরু করলো মানব গুহ। ঝকঝকে চেহারা। সুন্দর হাসি মাখা মুখ। একদম তরতাজা যুবক। একটু বাড়তি উৎসাহ সব বিষয়ে ওর। আর অন্যদের পিছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা। আর তাতে সফলতা পাওয়া। সেই হায়দরাবাদ এর ডেস্ক থেকে মুক্তি পেয়ে পুরুলিয়া, রায়গঞ্জ এমন নানা জায়গা জেলা ঘুরতে ঘুরতে মানব হয়ে গেলো বিখ্যাত রিপোর্টার।

 জেলা প্রতিনিধি হয়ে ঘুরতে ঘুরতে মানব চলে এলো কলকাতার রিপোর্টার হয়ে। আমিও হুগলী জেলা ছেড়ে কলকাতা চলে এলাম যা আমার জীবনের সব থেকে বড়ো ভুল ছিল। যেটা আজ  আমি সেই জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের বিখ্যাত সাংবাদিক সুজিত ভৌমিককে দেখে অনুভব করি আমি। কিন্তু যাক গে কি আর করা যাবে। যা হওয়ার হয়ে গেছে। আর তো ফিরে আসবে না দিন গুলো নতুন করে আবার। 


আমার থেকেও বড় প্রতিবাদী আর বিপ্লবী মানব গুহ কলকাতার রাজপথে দ্রুত গতিতে দৌড়ে চলেছে। জেলা থেকে কোলকাতাতে কাজ করতে এলে এমন করতে হয়। পড়ে একটু গতি কমে যায় যদিও। যাই হোক সেই মানব, আমি, পার্থ, অরূপ দত্ত, নাবেন্দু গুহ, জয়ন্ত চৌধুরী, জটাশঙ্কর লাহিড়ী, সেই দীপালি, মৌসুমী, পিয়ালি, শাবানা, মৌসুমী, সেই কোর্ট এর দীপক, সেই মিঠু, আশীষ, বিশ্বজিৎ গুহ রায়, ম্যানেজার সুদীপ্ত দা, সেই অমিতাভ ভি স্যাট এর। সেই মণীশ কুমার আই টির এমন কত যে  লোক ছিল সবার নাম মনেও নেই আজ আর। সেই সাধন, সুদীপ, আরও কত লোক। সেই চন্দন, সুশান্ত। ক্যামেরায় দেবাশীষ মৈত্র, ফান্টা, মানস ঘোষাল, সৌমেন, মনোজ, রাও, শুভেন্দু, যাকে গে হঠাৎ আমার  কলকাতা থেকে বদলি হলো হায়দরাবাদ আর তার ঠিক একমাসের মধ্য মানব চলে এলো হায়দরাবাদ আমার পিছু পিছু।

বাক্স নিয়ে অটো থেকে নামতে নামতে ভাগ্যলতার সেই বাড়িতে এসেই মানব এর ডায়ালগ কাকা, অমিও চলে এলাম কলকাতায় আর রাখলো না আমাকেও তোমার মত। তাই তোমার কাছে পাঠিয়ে দিলো কৌশিক গিরি আর জটাশঙ্কর লাহিড়ী দুজন মিলে। জানিনা ওর কি অপরাধ ছিল। আমাদের হায়দরাবাদ এর সেই বাড়িতে তখন পুলকদা আমাদের সবার অভিভাবক। আর সেই শুভাশীষ। যাই হোক ব্যাগ পত্তর রেখে মানবের সেই দিলখোলা হাসি আর ডায়ালগ কি আর করবে আমাদের নিয়ে কে জানে। কিন্তু ওর ভাগ্য ভালো ওকে বাংলা ডেস্কে বদলি করা হয়েছে। আমার মত ন্যাশনাল ডেস্কে নয়। 

আমি যেমন ভেঙে পড়েছিলাম এই হায়দ্রাবাদ বদলি হয়ে মানব যেনো বিন্দাস। পারলে রামোজি রাও এর কাছে চলে গিয়ে বলে স্যার আপনি এর বিচার করুন। সেই বিকেল হলে চা খেতে গিয়ে মানব আর আমি আর এফ সি তে ঘুরে বেড়াচ্ছি। কত যে ছবি তুলে দিয়েছিল আমার সব হারিয়ে গেছে যে। অল্প কিছুদিন পরেই ধ্রুব নতুন ইটিভির দায়িত্ব নিয়ে হায়দরাবাদ গেলো। রাজেশ রায়না সঙ্গে মিটিং করলো। আর দেখলাম সেদিন বিকেল বেলায় একদম তরতাজা যুবক প্রতিবাদী মানব গুহর পকেটে কলকাতায় ফেরার চিঠি নিয়ে ও একমুখ হাসি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে রামোজি ফিল্ম সিটিতে। আর সবাইকে বলছে কলকাতা ফেরার চিঠি পেয়ে গেলাম ফিরে যাচ্ছি আমি। তোমরা সবাই ভালো থেকো। বেশ ভালো লেগেছিল আমার ওর সেই দিলখোলা হাসি আর  পকেটে উঁচু হয়ে থাকা সেই সাদা চিঠি দেখে সেদিন। মানব চলে এলো কলকাতা ধ্রুব আর রাজেশ রায়নার হাত ধরে। আমার ভাগ্যলতার ঘরটা আবার ফাঁকা হয়ে গেলো। আমি একাই আবার বাস করতে থাকলাম। আসলে এটাই তো জীবন। একা একাই হেঁটে চলা আর বেঁচে থাকা এই জীবনে।

সেই মানবের কথা, সেই ওর দৃপ্ত পায়ে চলা, সেই ওকে পুলিশ এর ধরে নিয়ে যাওয়া লালবাজারে রাতের অন্ধকারে, ওর মুক্তির জন্য সবার অপেক্ষা করা, আবার হায়দরাবাদ থেকে কলকাতা ফিরে এসে চুটিয়ে ওর কাজ করা, আবার সেই কলকাতার এক বিখ্যাত ক্রাইম রিপোর্টার এর সু নজরে মানব না থাকায় ইটিভির কাজ ছেড়ে দিয়ে ওর চলে আসা। মামলা করা। এমন হাজারো স্মৃতি জড়িয়ে আছে আমার আর ওর দুজনের এই জীবনের মাঝে এই কটা বছরে। সেই ওর আদালতে হাজিরা দেওয়া। তারপর পনেরো দিন পর ছাড়া পাওয়া। নানা নেতা থেকে শুরু করে অনেকের কাছে প্রতিবাদী চরিত্রের এই সাংবাদিক এর অনেক কিছুই যে আমার জানা সেটা আমার এই ফ্ল্যাটের সিকিউরিটিকে বিশ্বাস করাতে পারিনি আমি আজ। তাই রাতের বেলায় এইসব লিখে বিশ্বাসযোগ্য করার আপ্রাণ চেষ্টা করছি আমি। 

সিঙ্গুরে কিছু একটা ঘটনা হলে বা ওর সেটা আলোচ্য বিষয় হলে আমায় ভালোবেসে ফোন করে ও বলে কাকা, এটা কি একটু বুঝিয়ে বলত আমায় কেসটা কি। আমি ওকে বলি ভাই আমি তো সাংবাদিক নয়, এখন আমি টোটো চালক। ঠোঁট কাটা মানবের সোজা উত্তর কাকা, হুগলীর রিপোর্টার বলতে আমি তোমাকেই একমাত্র চিনি আর কেউ তো আজকাল আর রিপোর্টার নেই সব যে চামচা বেলচা হয়ে গেছে। আমার বেশ ভালো লাগে ওর এই সোজা সাপটা কথা শুনে এই বুড়ো বয়সে মিডিয়াতে বাতিল মাল হয়ে।

 সত্যিই সেই মানবের সোজা সাপটা কথা, ওর চশমা পরে দাড়ি মুখের কথা মন দিয়ে শুনছে সিকিউরিটি তরুণ, আমার বৃদ্ধ বাবা, বোলপুরের বাসিন্দা, বর্ধমানের বাসিন্দা, হুগলীর গ্রামের বাসিন্দারা। যে মানব বুকে সাহস নিয়ে খবরের জগতে আজও বেঁচে আছে বুক ফুলিয়ে সাহস করে। যাকে অনেকে ভেবেছিলো মেরে ফেলবে শেষ করে দেবে তাদের সবার মুখে ঝামা ঘষে। আমার গর্ব হয় ওর জন্যে সত্যিই বলছি বিশ্বাস করুন। সে বিজেপির হয়ে কথা বলুক, তৃণমূলের সমালোচনা করুক, সিপিএমকে গাল দিক। যাই করুক ও মানব গুহ একজন বিখ্যাত সাংবাদিক থেকে আরও বিখ্যাত হয়ে গেছে আজ। 

 মানব দেখিয়ে দিয়েছে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেও কেমন ঘুরে দাঁড়িয়ে পাল্টা থাপ্পড় মেরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হয়। ও বুঝিয়ে দিয়েছে যে এটাই হলো আসল কথা জীবনের। যেটা আমি করতে পারিনি ওর মতো। ও সেটা করে বুঝিয়ে দিয়েছে ছেড়ে আসা ইটিভির কর্তাদের। ও বুঝিয়ে দিয়েছে এই বাংলা মিডিয়াতে মুখ বুজে মাথা নিচু করে বসদের পা ধরে কাজ করা অন্য রিপোর্টারদের , মিডিয়াতে কাজ করা সেই হীরক রাজার দেশের খনি শ্রমিক কর্মীদের যে জীবনে এই ভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে হয় নিজের কলজের জোরে। যেটা আমার অন্ততঃ নেই। তাই স্যালুট মানব গুহকে। 

স্যালুট মানব গুহ - অভিজিৎ বসু।
উনিশ অক্টোবর, দু হাজার চব্বিশ। 
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক।

মন্তব্যসমূহ

  1. আরে কাকা, কাঁদিয়ে দিলে তো। বিদ্রোহীদের চোখে আগুন থাকবে তো নাকি, জল এলে হবে? বর্ধমানের এক 'ভেদো বাঙালি'র জন্য 'হুগলীর কাকা'র অফুরন্ত ভালোবাসা। ধুর তোমার মুখ থেকে দু চার পিস 'নির্ভেজাল গালাগাল' ভালো লাগে, এত প্রশংসা হজম হবে না..

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...