সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

এক স্বপ্ন দেখা মানুষের কথা

আমার এই সাদা জীবনের কালো কথা আমি কেনো লিখি, কি জন্য লিখি সে নিয়ে নিজেই মাঝে মাঝে আতান্তরে পড়ে যাই আমি। সত্যিই কি খুব দরকার ছিল এইসব নানা মানুষদের গভীর গোপন কথা লেখার। যে মানুষদের সাথে আমার জীবনের নানা অনুভূতি জড়িয়ে আছে, সুখ, দুঃখ, মান অভিমান হাসি কান্না মিশে আছে একে অপরের হাত ধরে। তাঁদের কথা লেখার কি এমন দরকার। কেউ বলেন এই সব নানা মানুষের অনুভূতির কথা লিখে লাভ কি তোমার। আবার কেউ বলেন হয়তো আমি কোনো উদ্দেশ্য নিয়েই লিখে ফেলি এই নানা কথা। আঁকাবাঁকা অক্ষরে আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে। নানা জীবনের কথাকে নানা চরিত্রের চিত্রণে হালকা তুলির টানে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি মাত্র। মাঝে মাঝে মনে হয় সত্যিই তো কি লাভ লিখে, লেখা বন্ধ করে দিলেই বা ক্ষতি কী। কারুর তো কিছুই যাবে আসবে না তাতে। কিন্তু এতো আমার নিজের ব্যক্তিগত ভাবনা। 


কিন্তু আজ এমন একজন মানুষের কথা লেখার সাহস পেলাম, সেই সৌভাগ্য হলো আমার। সেটার পর মনে পড়ে গেলো সেই শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বিখ্যাত কথা, জীবনকে দেখো জীবনই হলো সব থেকে বড় শিক্ষক।যে জীবন দেখার কথা একদিন তিনি আমায় একটি চিঠিতে লিখে বলেছিলেন আজ থেকে প্রায় তিরিশ বছর আগে। হ্যাঁ, সেই জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখা, জীবনকে ভালোবেসে দিন বদলের স্বপ্ন দেখা এক মানুষ, যিনি এখনও হয়তো মনে মনে স্বপ্ন দেখেন ঘরে বসে একা একাই আপনমনে। আর দেওয়ালে ঘুরে বেড়ানো ধূসর টিকটিকি ডেকে ওঠে টিকটিক। আর মনে মনে ভাবেন তিনি টিকটিকি বোধহয় সত্যিই কথায় এমন ডেকে উঠল। 

যে স্বপ্ন একদিন তাঁর বুকের মাঝে চেপে বসেছিল সেই ছাত্রাবস্থায় ছোটকাল থেকেই। যে স্বপ্ন তাঁকে স্বাভাবিক ছন্দে কাটিয়ে দেওয়া জীবন থেকে অনেক কঠিন জীবনের স্বাদ দিয়েছে সারা জীবনভর। হয়তো স্বপ্ন সফল হয়নি, কষ্ট সহ্য করে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছে গেছেন তিনি আজ। তবু মনে হয় যা করেছেন এত বছর ধরে সেটা ঠিক কাজই করেছেন তিনি। কোনো ভুল করেন নি। এরজন্য কোনও আফশোষ নেই তাঁর। 

মানুষের জন্য এই লড়াই, গরীব প্রান্তিক মানুষের জন্য এই লড়াই, জমিদার পরিবার এর সন্তান হয়েও গরীব প্রান্তিক খেটে খাওয়া মানুষের জন্য প্রাণ আকুলি বিকুলি হওয়া। তাঁদের ঘরে ভাত নেই কেনো এই কথা বলে মাকে বারবার জিজ্ঞাসা করা সেই ছোটো বেলায়। আর এটাই বোধহয় তাঁর দু চোখে দিন বদলের স্বপ্নকে জাগিয়ে তুলেছিল। আর তাই তিনি সেই ছোটো বেলায় মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে এমনটা হতে দেওয়া যায়না কিছুতেই। কিছু একটা করতেই হবে। আর তাই সবকিছু ছেড়ে জীবনের চেনা ছন্দ ছেড়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তিনি। তাঁর তখন মনে হয়েছিল বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস। যে ক্ষমতা ভোগ করে তিনি বেশ সুখেই হয়তো তাঁর জীবন কাটিয়ে দিতে পারতেন হাসি মুখে। দিব্যি হয়ত ভোগ করতে পারতেন নিজের জীবনকে। সুখেই দিন কাটিয়ে দিতে পারতেন তিনিও আর পাঁচজনের মতই। 

কিন্তু না সেটা তো আর তাঁর জীবনের আদর্শ নয়। যে আদর্শকে আঁকড়ে ধরে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন তিনি হাসি মুখে একদম অনাড়ম্বর জীবন যাপন করে। একবারও তাঁর মনে হলো না প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির মাঝে যে আকাশ জমিনের ফারাক রয়ে গেলো এই তাঁর জীবনে। যে জীবনে কোনোদিন হিসেব নিকেষ করতে পারলেন না তিনি কোনোভাবেই। যে জীবন তিনি স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছিলেন। তাই তিনি কেমন যেন ধীরে ধীরে বলতে পারেন আমায়, এই তো বেশ ভালই আছি আমি। বদলে যাক না আমাদের চারপাশের মানুষ দ্রুত। সমাজ বদলে যাক, সংষ্কৃতি বদলে যাক, মানুষ বদলে যাক, কিন্তু হাজার হাজার বছরের ইতিহাস তো বদলে যায়না কিছুতেই। ইতিহাস তো আর একশো, দুশো বছর এর নয়। ইতিহাস তো হাজার হাজার বছর ধরে আবহমান কাল ধরে ধরে রাখে সবকিছুই তার নিজের বুকে।

 মানুষের জীবনের ইতিহাস জড়িয়ে থাকে একে অপরকে আঁকড়ে ধরে ভালোবেসে। যে ভালোবাসার নিগূঢ় বন্ধন, টুকরো টুকরো স্পর্শ নিয়েই তো একদিন তিনি হাসি মুখে ঘর ছেড়েছিলেন তিনি, সংসার জীবন সব ছেড়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মানুষের জন্য। মানুষের কথা ভেবেই। যে আপ্ত বাক্য স্মরণ করে মানুষকে ভালোবাসো। মানুষের জন্য কিছু করো। মানুষের মুখে একটুকরো রুটি তুলে দাও। আর যে কাজে তাঁকে সবথেকে বেশি সাহায্য করেছেন তাঁর সহধর্মিনী তাঁর স্ত্রী। যাঁর কাছে হয়তো তিনি সারা জীবন তাই ঋণী থেকে যাবেন। 

তিনি মনে করেন সমাজে কোনো শ্রেনী বৈষম্য নয়। শ্রেণীহীন একটা সমাজ চাই। যেখানে একদলের হাতে প্রচুর পরিমাণে অর্থ আর অন্য জনের ঘরে একটা দানাপানিও নেই এটা চলতে দেওয়া যাবে না কোনো ভাবেই। এটা যে তাঁকে কষ্ট দিয়েছে সারাটা জীবন ধরেই। আর তাই তাঁর এই জীবন দর্শন। যে দর্শনে ভোগবাদ নয়, আত্মসুখী জীবন নয়। শুধুই নিজের জন্য স্বার্থপর মানুষের মতো বাঁচা নয়। মানুষের কথা ভেবে তাদের জন্য কাজ করে কাটিয়ে দেওয়া একটা গোটা জীবন। যে নিটোল জীবনে আজও অমলিন একটা হাসি হেসে তিনি বলেন, চলে গেলো তো এই ভাবেই ক্ষতি কি বলো। 

আর তারপর তো সবটাই ইতিহাস। যে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজ আর হয়তো লিখতে পারেন না তিনি।কিন্তু বলতে পারেন তিনি জোর গলায় ভুল নয় ঠিক কাজ করেছেন তিনি সারাটা জীবন ধরে। এরজন্য কোনও আফশোস নেই তাঁর আজ এত বছর পরেও। আর তাঁর এই দীর্ঘ জেল যাত্রার জীবন তাই তাঁর কাছে হতাশার নয়, যন্ত্রণার নয় বরং আনন্দের। যে আনন্দকে তিনি স্বেচ্ছায় বরণ করে নিয়েছিলেন। যে জেলের অন্ধ কুঠুরিতে বসে দিন যাপন এর কাহিনী তিনি লিখেছিলেন সেই বিখ্যাত তাঁর লেখা, জেলখানার নোটবই। জীবনের আজও তাই এত বছর পরেও কেমন অবলীলায় তিনি বলতে পারেন, ভাই লেখা বন্ধ করোনা। জীবন তো একটা ছোট্ট উট পেন্সিলের মতই। খুব অল্পই তাঁর আয়ু। এই আছে আর এই নেই। জীবন তো এমনই। তাই এসবের মাঝে লিখে রেখে দাও নিজের অনুভূতির কথা, জীবনের কথা, মানুষের কথা। 

হ্যাঁ, তিনি আর কেউ নন সেই বিখ্যাত সাংবাদিক, লেখক, দার্শনিক, প্রাবন্ধিক আজিজুল হক। যিনি আমার তিন্নিকে নিয়ে লেখা পড়ে আমায় ফোনে বললেন, এই গভীর ভালবাসার কথা। বললেন তোমার ইমাজিনেশন বেশ ভালোই। তাই লেখো তুমি, লেখা বন্ধ করোনা কিন্তু। কথা হলো তিন্নির মার সাথেও আমার। দুজনকেই প্রনাম জানালাম আমি দুর থেকে। মেয়েকে নিয়ে লেখা পড়ে আমার সাথে একটু কথা বললেন ওঁরা দুজন। আর সেই কথা বলার সুযোগ করে দিলো তিন্নি নিজেই আজ আমায়। সত্যিই আমি এমনটি হবে স্বপ্নেও ভাবিনি। বিশ্বাস করুন আজ আমি আপনাদের কিছুই লিখতে পারছিনা আমি নিজের ছন্দে, নিজের হাতে। শুধু এটা মনে হলো এই লেখা লেখা খেলা কিন্তু আমার মতোই একদম ফালতু বা বাতিল নয় তাহলে। যিনি নিজেই সেই কথা বললেন আমায় আজিজুল হক। 

আর সেই তাঁর কথার জোরে বিশ্বাস এর জোরে আজ এই রাতের অন্ধকারে সেই মানুষটার কথাই লিখতে বসলাম আমি। যাঁকে নিয়ে লেখার মত সাহস আমার নেই। যোগ্যতাও আমার নেই। ধৃষ্টতাও আমার নেই। তবু কিছুটা সাহস করেই লিখতে বসলাম আমি। যখন তাঁকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এই ভাবে জীবন কাটিয়ে কি ভুল করলেন তিনি। শুনলাম তিনি বললেন, না আমরা কোনও ভুল করিনি। যাঁরা শুধু একটা সততা, আদর্শ, মূল্যবোধকে সম্বল করেই এই পৃথিবীতে বেঁচে আছি গুটিকয় মানুষ। হাজারও প্রলোভনকে এড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে যাচ্ছি আজও। শুধু মাত্র একটা আদর্শ, বিশ্বাস, আর সৎ থাকার নিরন্তর চেষ্টা করে চলেছি এই ধূলি ধূসর স্বার্থপর পৃথিবীতে। দিন বদলের স্বপ্ন দেখে তাঁরা কোনো ভুল করেনি। শুধু এটা মাথায় রাখতে হবে আমাদের সকলকে মানুষের কথা ভাবতে হবে। আমার মনের মধ্যে থেকে চেপে বসে থাকা একটা পাথর যেনো নেমে গেলো হঠাৎ করেই কেনো কে জানে। 

মনে হলো সত্যিই ভাগ্যিস আমি তিন্নির লেখাটা লিখলাম আমার সাদা জীবনের কালো কথায়। আর তাই তো এই মানুষটার এমন গভীর জীবনবোধের কথা, এমন ভাবনা, এমন পরিচ্ছন্ন চিন্তার সুষ্পষ্ট আত্মবিশ্বাসের প্রত্যয়ের কথা শুনতে পেলাম আমি আজ। একা একাই কেমন আবেগে আপ্লুত হয়ে গেলাম। দু চোখের কোল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল আমার। মনে হলো তাহলে সত্যিই তাহলে এই ভুলের ফাঁদে আটকা পড়ে যে জীবনটা কেমন এলোমেলো এলেবেলে হয়ে গেছে বলে সবাই আমায় বলে সব সময়। একটা মিথ্যে মনগড়া স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে শিরদাঁড়া সোজা করে চলার চেষ্টা করি আমি সেটা তাহলে ভুল নয় একদমই।

 এই নিশুতি রাতে একা একাই কেমন যেন লাগছে আমার। বেশ ভালো লাগছে আমার। রাত শেষ হয়ে ভোর হবে এইবার। রাতের অন্ধকার কেটে যাবে একটু পরেই। শীতের কুয়াশা মাখা ভোর। যে ভোরের অপেক্ষায় আলো ফোটার অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকলাম আমি। আর দুর থেকে সেই মানুষটাকে মনে মনে প্রণাম জানালাম আমি আবারও। তিন্নিকে মনে মনে ধন্যবাদ জানালাম অনেক। আমি শুধু অস্ফুটে বললাম, আমায় একটাই আশীর্বাদ করবেন আপনি, আমি যেনো কোনোদিন বদলে না যাই।  

এক স্বপ্ন দেখা মানুষের কথা - অভিজিৎ বসু।
সাত ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক ও গুগল।

মন্তব্যসমূহ

  1. বড় ভাল লাগল এমন লেখা পড়ে।জীবনকে কে কীভাবে দেখেন তার উপরই নির্ভর করে বেঁচে থাকার আনন্দ।নিজেকে নির্মোহ রেখে,অন্যের কথা ভেবে কজন কাটাতে পারে জীবন? ব্লগের এই লেখা একটা বার্তা দিয়ে গেল আমাদের।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আনন্দবাজারের শ্যামল দা

সেই সাদা বাড়ীর অনেক বিখ্যাত সাংবাদিকের মধ্যে একজন শুধু জেলখানার খবর লিখেই যিনি বিখ্যাত হয়ে গেলেন গোটা সাংবাদিক মহলে, বাংলা সংবাদ পত্রের জগতে। সেই জেল রিপোর্টার বলেই অভিহিত হতেন তিনি মহাকরণের বারান্দায়, অলিন্দে আর রাইটার্সের কাঠের সিঁড়িতে হাসিমুখে। যে কোনোও মন্ত্রীর ঘরে হাসিমুখে যাঁর প্রবেশ ছিল অবারিত দ্বার। যিনি প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় দক্ষিণ ২৪ পরগণার জেলার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। পরে জেলা থেকে সোজা কলকাতায় প্রবেশ তাঁর।  সেই একদম ফিটফাট সুন্দর, সুদর্শন,সুপুরুষ, বিয়ে না করেও দিব্যি হাসি মুখে মাকে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দিলেন ভাইপো আর সেই বর্ধমানের বড়শুল এর একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদের কাছে। আর শনিবার হলেই তাঁর সবাইকে থ্যাংক ইউ বলে কলকাতার সেই বিখ্যাত মেস এর জীবন ছেড়ে নিজের গ্রামের বাড়ী চলে যাওয়া তাঁর হাসি মুখে। বলতেন সবাইকে চলো সবাই মিলে গ্রামের বাড়িতে পুকুরের মাছ ধরে খাওয়া হবে বেশ আনন্দ হবে। আমার নিজের গ্রামের বাড়ীতে গেলে কোনোও অসুবিধা হবে না একদম।  আর নিজের শরীর ফিট রাখতে এই বয়সেও কেমন করে যে দুশো কপালভাতি করতেন তিনি কে জানে। একদম সবার যখ...

জামালপুরের প্রদীপ দা

আজ আমার সাদা জীবনের কালো কথায় বর্ধমানের জামালপুরের সেই দাপুটে ঠোঁট কাটা সাংবাদিক প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় এর কথা। সেই বিখ্যাত সুভাষ তালুকদার এর কাগজ সংবাদে মাত্র এক টাকার কাগজে কাজ করা সংবাদ পত্রিকার দাপুটে সাংবাদিক সেই প্রদীপ দা। সেই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বাঁশের ব্যারিকেডের এপারে দূরে দাঁড়িয়েও যে খবর করা যায় সেটা বড়ো মিডিয়ার সাংবাদিকদের হাসি মুখে দেখিয়ে দিয়ে, আর তাদের খবরের ময়দানে গোল দিয়ে শুধু খবরকে ভালোবেসে ছোটো কাগজে কাজ করে চলা সর্বদা হাসি মুখের সেই আমাদের প্রদীপ চ্যাটার্জী দা।  কোথাও কোনো অন্যায় দেখলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে যাওয়া আর এক দৌড়ে বেরিয়ে পড়া ঝোলা কাঁধে সেই খবরের খোঁজে সেই জামালপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের সেই প্রদীপ দা। সেই বিখ্যাত পন্ডিত রবিশঙ্কর আর উদয়শঙ্কর এর আপন মাসতুত ভাই এর ছেলে সেই প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় দাদা। সেই বামদের আমলে জামালপুরের এলাকায় দাপিয়ে খবর করে ছুটে বেড়ানো সেই প্রদীপ দা। সেই তৃণমূল আমলেও একভাবেই ছুটে বেরিয়ে কাজ করা আমাদের সদা ব্যস্ত প্রদীপ দা।  সেই বাবার অসুস্থতার কারনে বড়ো সংবাদ মাধ্যমে কাজ না করেও...

আমার স্যার কাজীদা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ আমার স্যার এর কথা। যার লেখা আজ হঠাৎ চোখে পড়লো একটি কাগজে। আর স্যার এর নামটা দেখেই মনে পড়ে গেলো নানান কথা। হ্যাঁ, সেই কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী। যাঁর সাথে আমার আলাপ আর দেখা হয়েছিল সেই অজিতদার ফ্রিল্যান্স ছকু খানসামা লেনের ফ্রীল্যান্স প্রেস ক্লাবের অফিসে খুব সম্ভবত। হাসিখুশি বেশ অজাতশত্রু এই মানুষটিকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল যে রিপোর্টারদের প্রভূত ক্ষমতা থাকে বোধহয়। তাই পকেটে পেন আর সেই ফোনের ছোট্টো নোটবুক দেখেই আমার মনে হয়, যে ক্ষমতার স্বাদ পাবার জন্য সেই সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে আমার কচি মনে সাংবাদিক হবার বাসনা জাগে সেই সময়।  কোনো প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক নয়, কোনো অফিসে মাছি মারা দশটা পাঁচটার লোয়ার ডিভিশন এর কেরানি নয়, মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ নয়, ল্যাবরেটরিতে টেকনিশিয়ান এর কাজ নয়, এল আই সি বা পোষ্ট অফিস এর এজেন্ট নয়, কোনো মুদি দোকানে হিসেব পত্র লেখার কাজ নয়, স্বাধীন ব্যবসা করা নয়। শুধুই সাংবাদিক হবার স্বাদ।  কাগজে সাদা কালো অক্ষরে নিজের নাম ছাপা হবে, সেই নাম দেখে বুক ফুলে যাবে, পাড়ায় প্রতিবেশীরা সহ স...

কুড়ি থালা দশ টাকা আর রসিক মুলুর জীবন

নাম মুলু হাঁসদা। বাংলা ঝাড়খণ্ড সীমানার চরিচা গ্রাম পঞ্চায়েত এর চর ইচ্ছা রঘুবরপুরের বাসিন্দা মুলু। আজ মুলুর জীবন কথা। গ্রামের নামটা ভারী অদ্ভুত। চর ইচ্ছা রঘুবরপুর। যে গ্রাম অন্য পাঁচটা গ্রামের মতই।সাদামাটা এই গ্রামে দারিদ্র্য, অপুষ্টি আর কর্মহীন জীবনের জলছবি সুস্পষ্ট। আর সেই গ্রামের মহিলারা নিজেদের সংসার রক্ষা করতে গাছের পাতাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। গাছের পাতা মুলুদের জীবনের জিয়ন কাঠি। যে জিয়ন কাঠিতে তারা ভোর হতেই পেটের টানে চলে যায় জঙ্গলে। খস খস শব্দ করে পায় হেঁটে তারা পাতা তোলে। গাছ থেকে টুপ টাপ করে ঝড়ে পড়া পাতাকে একটা একটা করে নিজের শাড়ির আঁচলে ভরে নেয়। তার পর সব পাতাকে বস্তায় ভরে ঘরে ফেরে।  ঠিক যেভাবে তারা পুকুরে নেমে শামুক গেঁড়ি আর গুগলি তোলে। যে ভাবে তাদের উদর পূর্তি হবে বলে। আর এই পাতাও যে তাদের পেট ভরায়। একটা একটা পাতাকে নিজের সন্তানের মতো আলগোছে ছুঁয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খায় মুলু, বলে তোরা না থাকলে কি করতাম কে জানে। মাথার ওপর শাল সেগুনের বিশাল আকারের গাছগুলো চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে আর তারা চুপ করে শোনে মুলুর কথা।  একে অপ...

শুভ মকর সংক্রান্তি

মকর মানেই নতুন জামা কাক ভোরে স্নান, রাত্রি জেগে মিঠে সুরে টুসুমণির গান। মকর মানেই পিঠে - পুলির গন্ধে ম - ম হাওয়া, ডুলুং পাড়ে টুসুর মেলায় দল বেঁধে যাওয়া। মকর মানেই মোরগ লড়াই পাহুড় জেতার সুখ, সন্ধ্যা - রাতে মাংস পিঠের স্বাদে ভরা মুখ। মকর মানেই হাতি - ঘোড়ার পুজো করম তলে, সান্ধ্য হাওয়ায় মন উদাসী দিমির দিমির বোলে। আসলে আজ এই মকর সংক্রান্তির দিন, টুসু মেলার দিন, টুসু গানে নিজেকে মাতিয়ে দেবার দিন। অজয় এর ধারে জয়দেব কেঁদুলির মেলায় ভীড়ের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেবার দিন। অজয় এর জলে ডুব দিয়ে স্নান করে পূণ্য অর্জনের দিন। আর নদীর ধারে মোরগ লড়াই এর দিন। আকাশে ঘুড়ি ওড়ানোর দিন, সুতো লাটাই হাতে আকাশ পানে তাকিয়ে থাকার দিন। কেমন যেনো রাশির একটি স্থান থেকে অন্য রাশিতে স্থান পরিবর্তনের দিন। সূর্যের দেবতাকে সকালে উঠে স্নান সেরে প্রণাম জানিয়ে শক্তি সঞ্চয় এর দিন। সূর্যের উত্তর দিকে চলে যাবার দিন। ধীরে ধীরে শীতকাল চলে যাওয়ার দিন।  এই মকর সংক্রান্তি এর ইতিহাস ও ভারতীয় ঐতিহ্যের গভীর শিকড় রয়েছে। এটি কৃষি চক্র এবং ফসল কাটার মৌসুমের সাথে জড়িত। এই মকর সংক্রান্তি চ...