সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

এক স্বপ্ন দেখা মানুষের কথা

আমার এই সাদা জীবনের কালো কথা আমি কেনো লিখি, কি জন্য লিখি সে নিয়ে নিজেই মাঝে মাঝে আতান্তরে পড়ে যাই আমি। সত্যিই কি খুব দরকার ছিল এইসব নানা মানুষদের গভীর গোপন কথা লেখার। যে মানুষদের সাথে আমার জীবনের নানা অনুভূতি জড়িয়ে আছে, সুখ, দুঃখ, মান অভিমান হাসি কান্না মিশে আছে একে অপরের হাত ধরে। তাঁদের কথা লেখার কি এমন দরকার। কেউ বলেন এই সব নানা মানুষের অনুভূতির কথা লিখে লাভ কি তোমার। আবার কেউ বলেন হয়তো আমি কোনো উদ্দেশ্য নিয়েই লিখে ফেলি এই নানা কথা। আঁকাবাঁকা অক্ষরে আমার এই আঁকিবুঁকি ব্লগে। নানা জীবনের কথাকে নানা চরিত্রের চিত্রণে হালকা তুলির টানে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি মাত্র। মাঝে মাঝে মনে হয় সত্যিই তো কি লাভ লিখে, লেখা বন্ধ করে দিলেই বা ক্ষতি কী। কারুর তো কিছুই যাবে আসবে না তাতে। কিন্তু এতো আমার নিজের ব্যক্তিগত ভাবনা। 


কিন্তু আজ এমন একজন মানুষের কথা লেখার সাহস পেলাম, সেই সৌভাগ্য হলো আমার। সেটার পর মনে পড়ে গেলো সেই শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের বিখ্যাত কথা, জীবনকে দেখো জীবনই হলো সব থেকে বড় শিক্ষক।যে জীবন দেখার কথা একদিন তিনি আমায় একটি চিঠিতে লিখে বলেছিলেন আজ থেকে প্রায় তিরিশ বছর আগে। হ্যাঁ, সেই জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখা, জীবনকে ভালোবেসে দিন বদলের স্বপ্ন দেখা এক মানুষ, যিনি এখনও হয়তো মনে মনে স্বপ্ন দেখেন ঘরে বসে একা একাই আপনমনে। আর দেওয়ালে ঘুরে বেড়ানো ধূসর টিকটিকি ডেকে ওঠে টিকটিক। আর মনে মনে ভাবেন তিনি টিকটিকি বোধহয় সত্যিই কথায় এমন ডেকে উঠল। 

যে স্বপ্ন একদিন তাঁর বুকের মাঝে চেপে বসেছিল সেই ছাত্রাবস্থায় ছোটকাল থেকেই। যে স্বপ্ন তাঁকে স্বাভাবিক ছন্দে কাটিয়ে দেওয়া জীবন থেকে অনেক কঠিন জীবনের স্বাদ দিয়েছে সারা জীবনভর। হয়তো স্বপ্ন সফল হয়নি, কষ্ট সহ্য করে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছে গেছেন তিনি আজ। তবু মনে হয় যা করেছেন এত বছর ধরে সেটা ঠিক কাজই করেছেন তিনি। কোনো ভুল করেন নি। এরজন্য কোনও আফশোষ নেই তাঁর। 

মানুষের জন্য এই লড়াই, গরীব প্রান্তিক মানুষের জন্য এই লড়াই, জমিদার পরিবার এর সন্তান হয়েও গরীব প্রান্তিক খেটে খাওয়া মানুষের জন্য প্রাণ আকুলি বিকুলি হওয়া। তাঁদের ঘরে ভাত নেই কেনো এই কথা বলে মাকে বারবার জিজ্ঞাসা করা সেই ছোটো বেলায়। আর এটাই বোধহয় তাঁর দু চোখে দিন বদলের স্বপ্নকে জাগিয়ে তুলেছিল। আর তাই তিনি সেই ছোটো বেলায় মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে এমনটা হতে দেওয়া যায়না কিছুতেই। কিছু একটা করতেই হবে। আর তাই সবকিছু ছেড়ে জীবনের চেনা ছন্দ ছেড়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তিনি। তাঁর তখন মনে হয়েছিল বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস। যে ক্ষমতা ভোগ করে তিনি বেশ সুখেই হয়তো তাঁর জীবন কাটিয়ে দিতে পারতেন হাসি মুখে। দিব্যি হয়ত ভোগ করতে পারতেন নিজের জীবনকে। সুখেই দিন কাটিয়ে দিতে পারতেন তিনিও আর পাঁচজনের মতই। 

কিন্তু না সেটা তো আর তাঁর জীবনের আদর্শ নয়। যে আদর্শকে আঁকড়ে ধরে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন তিনি হাসি মুখে একদম অনাড়ম্বর জীবন যাপন করে। একবারও তাঁর মনে হলো না প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির মাঝে যে আকাশ জমিনের ফারাক রয়ে গেলো এই তাঁর জীবনে। যে জীবনে কোনোদিন হিসেব নিকেষ করতে পারলেন না তিনি কোনোভাবেই। যে জীবন তিনি স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছিলেন। তাই তিনি কেমন যেন ধীরে ধীরে বলতে পারেন আমায়, এই তো বেশ ভালই আছি আমি। বদলে যাক না আমাদের চারপাশের মানুষ দ্রুত। সমাজ বদলে যাক, সংষ্কৃতি বদলে যাক, মানুষ বদলে যাক, কিন্তু হাজার হাজার বছরের ইতিহাস তো বদলে যায়না কিছুতেই। ইতিহাস তো আর একশো, দুশো বছর এর নয়। ইতিহাস তো হাজার হাজার বছর ধরে আবহমান কাল ধরে ধরে রাখে সবকিছুই তার নিজের বুকে।

 মানুষের জীবনের ইতিহাস জড়িয়ে থাকে একে অপরকে আঁকড়ে ধরে ভালোবেসে। যে ভালোবাসার নিগূঢ় বন্ধন, টুকরো টুকরো স্পর্শ নিয়েই তো একদিন তিনি হাসি মুখে ঘর ছেড়েছিলেন তিনি, সংসার জীবন সব ছেড়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মানুষের জন্য। মানুষের কথা ভেবেই। যে আপ্ত বাক্য স্মরণ করে মানুষকে ভালোবাসো। মানুষের জন্য কিছু করো। মানুষের মুখে একটুকরো রুটি তুলে দাও। আর যে কাজে তাঁকে সবথেকে বেশি সাহায্য করেছেন তাঁর সহধর্মিনী তাঁর স্ত্রী। যাঁর কাছে হয়তো তিনি সারা জীবন তাই ঋণী থেকে যাবেন। 

তিনি মনে করেন সমাজে কোনো শ্রেনী বৈষম্য নয়। শ্রেণীহীন একটা সমাজ চাই। যেখানে একদলের হাতে প্রচুর পরিমাণে অর্থ আর অন্য জনের ঘরে একটা দানাপানিও নেই এটা চলতে দেওয়া যাবে না কোনো ভাবেই। এটা যে তাঁকে কষ্ট দিয়েছে সারাটা জীবন ধরেই। আর তাই তাঁর এই জীবন দর্শন। যে দর্শনে ভোগবাদ নয়, আত্মসুখী জীবন নয়। শুধুই নিজের জন্য স্বার্থপর মানুষের মতো বাঁচা নয়। মানুষের কথা ভেবে তাদের জন্য কাজ করে কাটিয়ে দেওয়া একটা গোটা জীবন। যে নিটোল জীবনে আজও অমলিন একটা হাসি হেসে তিনি বলেন, চলে গেলো তো এই ভাবেই ক্ষতি কি বলো। 

আর তারপর তো সবটাই ইতিহাস। যে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজ আর হয়তো লিখতে পারেন না তিনি।কিন্তু বলতে পারেন তিনি জোর গলায় ভুল নয় ঠিক কাজ করেছেন তিনি সারাটা জীবন ধরে। এরজন্য কোনও আফশোস নেই তাঁর আজ এত বছর পরেও। আর তাঁর এই দীর্ঘ জেল যাত্রার জীবন তাই তাঁর কাছে হতাশার নয়, যন্ত্রণার নয় বরং আনন্দের। যে আনন্দকে তিনি স্বেচ্ছায় বরণ করে নিয়েছিলেন। যে জেলের অন্ধ কুঠুরিতে বসে দিন যাপন এর কাহিনী তিনি লিখেছিলেন সেই বিখ্যাত তাঁর লেখা, জেলখানার নোটবই। জীবনের আজও তাই এত বছর পরেও কেমন অবলীলায় তিনি বলতে পারেন, ভাই লেখা বন্ধ করোনা। জীবন তো একটা ছোট্ট উট পেন্সিলের মতই। খুব অল্পই তাঁর আয়ু। এই আছে আর এই নেই। জীবন তো এমনই। তাই এসবের মাঝে লিখে রেখে দাও নিজের অনুভূতির কথা, জীবনের কথা, মানুষের কথা। 

হ্যাঁ, তিনি আর কেউ নন সেই বিখ্যাত সাংবাদিক, লেখক, দার্শনিক, প্রাবন্ধিক আজিজুল হক। যিনি আমার তিন্নিকে নিয়ে লেখা পড়ে আমায় ফোনে বললেন, এই গভীর ভালবাসার কথা। বললেন তোমার ইমাজিনেশন বেশ ভালোই। তাই লেখো তুমি, লেখা বন্ধ করোনা কিন্তু। কথা হলো তিন্নির মার সাথেও আমার। দুজনকেই প্রনাম জানালাম আমি দুর থেকে। মেয়েকে নিয়ে লেখা পড়ে আমার সাথে একটু কথা বললেন ওঁরা দুজন। আর সেই কথা বলার সুযোগ করে দিলো তিন্নি নিজেই আজ আমায়। সত্যিই আমি এমনটি হবে স্বপ্নেও ভাবিনি। বিশ্বাস করুন আজ আমি আপনাদের কিছুই লিখতে পারছিনা আমি নিজের ছন্দে, নিজের হাতে। শুধু এটা মনে হলো এই লেখা লেখা খেলা কিন্তু আমার মতোই একদম ফালতু বা বাতিল নয় তাহলে। যিনি নিজেই সেই কথা বললেন আমায় আজিজুল হক। 

আর সেই তাঁর কথার জোরে বিশ্বাস এর জোরে আজ এই রাতের অন্ধকারে সেই মানুষটার কথাই লিখতে বসলাম আমি। যাঁকে নিয়ে লেখার মত সাহস আমার নেই। যোগ্যতাও আমার নেই। ধৃষ্টতাও আমার নেই। তবু কিছুটা সাহস করেই লিখতে বসলাম আমি। যখন তাঁকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এই ভাবে জীবন কাটিয়ে কি ভুল করলেন তিনি। শুনলাম তিনি বললেন, না আমরা কোনও ভুল করিনি। যাঁরা শুধু একটা সততা, আদর্শ, মূল্যবোধকে সম্বল করেই এই পৃথিবীতে বেঁচে আছি গুটিকয় মানুষ। হাজারও প্রলোভনকে এড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে যাচ্ছি আজও। শুধু মাত্র একটা আদর্শ, বিশ্বাস, আর সৎ থাকার নিরন্তর চেষ্টা করে চলেছি এই ধূলি ধূসর স্বার্থপর পৃথিবীতে। দিন বদলের স্বপ্ন দেখে তাঁরা কোনো ভুল করেনি। শুধু এটা মাথায় রাখতে হবে আমাদের সকলকে মানুষের কথা ভাবতে হবে। আমার মনের মধ্যে থেকে চেপে বসে থাকা একটা পাথর যেনো নেমে গেলো হঠাৎ করেই কেনো কে জানে। 

মনে হলো সত্যিই ভাগ্যিস আমি তিন্নির লেখাটা লিখলাম আমার সাদা জীবনের কালো কথায়। আর তাই তো এই মানুষটার এমন গভীর জীবনবোধের কথা, এমন ভাবনা, এমন পরিচ্ছন্ন চিন্তার সুষ্পষ্ট আত্মবিশ্বাসের প্রত্যয়ের কথা শুনতে পেলাম আমি আজ। একা একাই কেমন আবেগে আপ্লুত হয়ে গেলাম। দু চোখের কোল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল আমার। মনে হলো তাহলে সত্যিই তাহলে এই ভুলের ফাঁদে আটকা পড়ে যে জীবনটা কেমন এলোমেলো এলেবেলে হয়ে গেছে বলে সবাই আমায় বলে সব সময়। একটা মিথ্যে মনগড়া স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে শিরদাঁড়া সোজা করে চলার চেষ্টা করি আমি সেটা তাহলে ভুল নয় একদমই।

 এই নিশুতি রাতে একা একাই কেমন যেন লাগছে আমার। বেশ ভালো লাগছে আমার। রাত শেষ হয়ে ভোর হবে এইবার। রাতের অন্ধকার কেটে যাবে একটু পরেই। শীতের কুয়াশা মাখা ভোর। যে ভোরের অপেক্ষায় আলো ফোটার অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকলাম আমি। আর দুর থেকে সেই মানুষটাকে মনে মনে প্রণাম জানালাম আমি আবারও। তিন্নিকে মনে মনে ধন্যবাদ জানালাম অনেক। আমি শুধু অস্ফুটে বললাম, আমায় একটাই আশীর্বাদ করবেন আপনি, আমি যেনো কোনোদিন বদলে না যাই।  

এক স্বপ্ন দেখা মানুষের কথা - অভিজিৎ বসু।
সাত ডিসেম্বর, দু হাজার চব্বিশ।
ছবি সৌজন্যে ফেসবুক ও গুগল।

মন্তব্যসমূহ

  1. বড় ভাল লাগল এমন লেখা পড়ে।জীবনকে কে কীভাবে দেখেন তার উপরই নির্ভর করে বেঁচে থাকার আনন্দ।নিজেকে নির্মোহ রেখে,অন্যের কথা ভেবে কজন কাটাতে পারে জীবন? ব্লগের এই লেখা একটা বার্তা দিয়ে গেল আমাদের।

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ইটিভির পিনাকপাণি ঘোষ

কিছু মানুষ কত কাছে থেকেও পাশাপাশি এক জায়গায় বাস করেও একসাথে একসময় কাজ করেও যে কত দূরে রয়ে যান নিজের হাসিমুখ নিয়ে আর সেই চেনা ছন্দ নিয়ে সত্যিই বেশ ভালো মজার ব্যাপার কিন্তু এটা জীবনের মেঠো পথে। সেই ইটিভির বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে ঘুরে ঘুরে স্ট্রীট ফুডের ছবি তোলা আর নানা খবর করে খাওয়া দাওয়ার এপিসোড করে একসময়ে বিখ্যাত সাংবাদিক হয়ে যাওয়া ইটিভি নিউজে। আর আমাদের জেলায় বসে সেইসব হাঁ করে দেখা আর কেমন মনের ভেতর অস্থিরতা তৈরি হওয়া। একেই বলে কলকাতার রাজপথের সাংবাদিক বলে কথা।  সেই যে বার রাষ্ট্রপতি এলেন জয়কৃষ্ণ লাইব্রেরী প্রাঙ্গণে সেই অনুষ্ঠানের বিশেষ কার্ড জোগাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করা ইটিভির চাকরি করার সুবাদে। কোনো রকমে সেই কার্ড জোগাড় করে এনে দেওয়া তাঁকে আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। আর সেই একদিন দুপুর বেলায় খুব সম্ভবত করোনা শেষ পর্বে বালিঘাট স্টেশন থেকে অফিস যাওয়ার সময় এসি পঞ্চাশ এর বাস এর ভিতরে দেখা হওয়ায় কত গল্প করা দুজন মিলে পুরনো দিনের। আবার উত্তরপাড়ার সেই বিখ্যাত চায়ের দোকানে আড্ডা দিতে গিয়ে হাসি মুখে দেখা হয়ে যাওয়া রাতের বেলায় কাঁঠালবা...

আমাদের সবার মৃনাল দা

সাদা জীবনের কালো কথায় আজ এক বাবা আর ছেলের লড়াই এর গভীর গোপন কাহিনী। এই সাংবাদিকতার পেশায় এসে কত লড়াই, কত অসম যুদ্ধ, করে যে কেউ সংসার টিকিয়ে রাখতে পারে হাসি মুখে কাউকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে। এমন করে কেউ টিকে থাকার চেষ্টা করেন সেটা বোধহয় আমার জানা হয়ে উঠত না কিছুতেই। যদি না এই পেশায় আমি গা ভাসাতাম এমন করে। জীবনের এই নানা টুকরো টুকরো ছবির কোলাজ ভেসে ওঠে এই রাতের অন্ধকারে আচমকা আমার মনের মাঝে। আর আমি চমকে উঠি কেমন করে তাদের সেই কোলাজ দেখে।  এমন এক চরিত্র, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী হয়ে কেমন আলগোছে, হাসিমুখে, নির্মোহ ভাবে, শুধু নিজের কাঁচা পাকা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জীবনটা কাটিয়ে দিলো সে শুধুই আকাশ পানে তাকিয়ে। যে নীল আকাশের গা ঘেঁষে উড়ে যাওয়া সাদা বকের ডানায় লেগে থাকে মেঘের হালকা টুকরো। একদম যেনো সিনেমার পর্দার হিরোর মতোই। দেখে বোঝার উপায় নেই একদম। পেটে খাবার না থাকলেও মুখের হাসিটা অমলিন হয়েই বেঁচে আছে আজও এতোদিন পরেও। আর সেই বিখ্যাত সাদা পাকা নাসিরউদ্দিন স্টাইলের দাড়ি, কালো চুল, আর সব সময় ধোপদুরস্ত ফিটফাট একজন মানুষ। রাত নটা বাজলেই যাকে শ্রীরামপুরে...

শপিং মলের উদ্বোধনে সিঙ্গুর আন্দোলনের দাপুটে মন্ত্রী

নালিকুল স্টেশন বাজারে একটি শপিং মলের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বেচারাম মান্না হাজির। একসময় যাঁর অন্দোলনের ঠেলায় পড়ে দৌড়ে একপ্রকার পালিয়ে চলে যেতে হয়েছিল সিঙ্গুর থেকে টাটা কোম্পানিকে। যে আন্দোলনের দগদগে ঘা আর সেই স্মৃতি ধীরে ধীরে আজ প্রায় মিলিয়ে যেতে বসেছে আমাদের কাছ থেকে। আজ সেই চাষার ঘরের মানুষ না হলেও সেই কৃষক আর শ্রমিকের ন্যূনতম অধিকার নিয়ে যে আন্দোলন শুরু করে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলেন সেই মানুষটাকেই কেমন যেন আজ শপিং মলের উদ্বোধনে দেখে বেশ ভালই লাগলো আমার।  একদম নালিকুল স্টেশনের কাছে ঝাঁ চকচকে শপিং মল। দোকানে সাজানো জিনিস পত্র। আর সেখানেই আমাদের মাননীয় মন্ত্রী বেচারাম মান্না। একদম কেমন একটু আমার অচেনা লাগলো যেন। সেই মুড়ি খেয়ে আলুর তরকারি বা শশা খেয়ে আন্দোলন শুরু করা জমি আন্দোলন এর অন্যতম পথিকৃৎ নেতা আজ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। তাহলে টাটা কোম্পানির বিরুদ্ধে যে জমি দখল নিয়ে আন্দোলন সেই আন্দোলন এর মধ্যে ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা। যদিও সেখানেও সেই সময়ের শাসকদলের কর্মসংস্থানের যুক্তি।তবে এই নতুন শপিং মলের উদ্বোধনে তো আর ...

ভীড়ের মাঝে একা

জীবন জুড়ে শুধুই ভীড় আর ভীড়। নানা ধরনের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় মানুষের গন্ধে, বর্ণে , স্বাদের ভীড়ে আমি একদম একা হয়ে যেতে চাই। যে ভীড় উপচে পড়া রাস্তায় শুধুই হেমন্তের ভোরে শিশিরের ফিসফিস শব্দ, পাখির কিচির মিচির আওয়াজ,ধানসিড়ি ওই নদীটির তীর ধরে ঘুঘুর আকুল মন কেমন করা ডাক, উদাসী শালিকের ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া ওই হেমন্তের হলুদ ধানের মাঠ এর পাশ দিয়ে, হলুদ বসন্ত বৌরীর সেই আমলকীর গাছের পাতায়,আড়ালে আবডালে বসে কেমন যেন আমায় দেখে লজ্জা পাওয়া, আর তারপর চোখ নামিয়ে হঠাৎ করেই তার উড়ে চলে যাওয়া। আর মেঘের কোল ঘেঁষে সেই সাদা বকের, বুনো হাঁসের, আর সেই পানকৌড়ির জলে ভেজা ডানা মেলে উড়ে যাওয়া আকাশ জুড়ে। সত্যিই ওরাও যে ভিড়ের মাঝেই বড়ো একা। একা একাই ওদের যে এই বেঁচে থাকা। কেমন নিপাট হৈ চৈ হুল্লোড়হীন একটা জীবন নিয়ে বেশ মজা করে, আনন্দ করে। আর সেই ভোরের আলোয় আলোকিত হয়ে রাস্তার একপাশে গুটি শুটি মেরে শুয়ে থাকা ওই সাদা কালো ভুলো নামের কুকুরের। যে অন্তত এই সব মানুষদের ভীড়ে ঠাসা রাস্তায় একটু যেনো আলাদা , একটু যেনো অন্য রকমের। একটু একা একাই যেনো ওর এই আলগোছে জীবন কাটিয়...

গৌড় প্রাঙ্গণে আনন্দবাজার

গৌরপ্রাঙ্গনে শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যের আনন্দের মেলা আনন্দবাজার। মহালয়ার ভোরবেলায় ঢাকের বাদ্যি আর সানাইয়ের মন কেমন করা সুরে মেতে উঠলো শান্তিনিকেতনের গৌড়প্রাঙ্গণ। প্রতি বছরের মতো এই বছরও যে হবে আনন্দমেলা আনন্দবাজার। হ্যাঁ সত্যিই যেনো আনন্দের এই হাটে বেচাকেনার পসরা নিয়ে একদিনের জন্য বসে পড়া মন প্রাণ খুলে হৈ হুল্লোড় করে। এই মেলা শুরু হয় 1915 সালের 15 এপ্রিল নববর্ষের দিনে। কিন্তু আগে এই মেলাকে একসময় বলা হতো বৌঠাকুরাণীর হাট। সেই সময় আশ্রমের মহিলারা নিজেদের হাতের তৈরি জিনিস নিয়ে মেলায় বসতেন। মেলার আয়োজন করতেন তারা। আনন্দ করে বেচাকেনা হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সময় একবার গরমের ছুটির আগে এমন মেলা নাকি হয়েছিল। যার নাম ছিল আনন্দবাজার। পরে এই মেলার নামে হয়ে যায় আনন্দমেলা। সত্যিই আনন্দের এই মিলন মেলা।  প্রথমদিকে পাঠভবন ও শিক্ষাসত্রের ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই মেলা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীর সব বিভাগের পড়ুয়ারা এই মেলায় যোগদান করে। এই মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ছাত্রছাত্রীদের বেচা কেনার লাভের টাকার কিছু অংশ জমা পরে বিশ্বভারতীর সেবা বিভাগে। সেখান থেকে এ...